আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা কবিতার গোড়াপত্তন ও এর অর্থবোধকতার পর্যায় সমূহ

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।

আমাদের ছোটবেলায় পদ্মা নদী খুব উত্তাল, বিশাল ও ভয়াবহ ছিল। নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম, ‘বাবা, গাঙের কি ঐ পাড় নাই?’ বাবা হেসে জবাব দিতেন, ‘আছে।

অনেক দূরে। দেহা যায় না। ’ আমি তখন গাঙের বুকে পালতোলা নাওয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবতাম, আহা, একদিন যদি ঐ পাড়ে যাইবার পারতাম! কলেজবেলায় গ্রামে গিয়ে মাঝে মাঝে পদ্মাপাড়ে যেতাম বন্ধুদের সাথে বেড়াতে। পদ্মা ডুবে গেছে চরের বালুতে। কলাপাতায় সবুজের ঢেউ দেখি, আর শুকনো তীরে দাঁড়িয়ে দেখি পদ্মার বুকে সাদা বালু খাখা করছে।

চিকন খালের মতো মরা নদী বুড়ির মতো ধুঁকে ধুঁকে হেঁটে যাচ্ছে যেন। অনেকদিন পর দেখা। গুলিস্তান থেকে শুরু। বাবু বাজার ব্রিজ কিংবা পোস্তগোলার চীনমৈত্রী সেতু পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়ক ধরে চলতে থাকুন। শ্রীনগর।

সদর পার হয়ে কামারগাঁও ছাড়িয়ে শাইনপুকুর। দোহার উপজেলা শুরু। কিছুদূর গিয়ে নারিশা। ছোটবেলায় এখানে অনেক এসেছি। ছোট চোখে নদীর ঐ পাড় ধু-ধু করতো।

কলেজবেলায় এখানে ধু-ধু বালুচর। আজ। নারিশা গ্রাম ভেঙে ডুবে যাচ্ছে নদীগর্ভে। গ্রামবাসীর প্রাণান্ত চেষ্টা তা প্রতিরোধে। গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ি।

পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি ওপাড়ে সূর্য পাটের উপরে, স্রোতোময়ী পদ্মার শরীরে ঢেউয়ের ভাঁজে ভেঙে পড়া রোদ চিকচিক করছে। এই পথে, একটু দূরে প্রমীলাদের বাড়ি। স্কুলজীবনে শুধু প্রমীলার সাথে কাকতালে দেখা হবার সম্ভাব্যতায় এখানে ঘোরাঘুরি করতাম। আর আছে সায়ন্তনীদের বাসা। ওর মতো সুন্দরী মেয়ে আমার চোখে আর একটাও পড়ে নি আজও।

মিনাদের বাড়ি আর ইমরানদের বাড়ি পাশাপাশি। মিনার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। ইমরান বাবা হয়েছে বছর দুই আগে, ও এ-খবর দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে। আর সোহানা? রাতুলের চাচাত বোন সোহানা। স্কুলজীবনের পর ওর সাথে আর দেখাই হলো না।

প্রমীলা বলে, ‘সোহানার দিনে দিনে বয়স কমে। ’ শামীম ওর সাথে প্রেম করতো। ওদের দু পরিবারে অহিনকুল পরিস্থিতি সারাজীবন। ও-বাড়ির মেয়ে এ-বাড়িতে? এ-বাড়ির ছেলে ও-বাড়িতে? পৃথিবী উল্টে গেলেও না। এসএসসির পর পর ওর বিয়ে হলো এক গণিতজ্ঞের সাথে।

রাতুলের সাথে দেখা করতে গেছি; এগিয়ে এলো ভুবনমোহিনী সোহানা ওর হৃদয়হরা হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে। ‘তুই না খুব চিকন আছিলি? মাত্র কয় মাসেই এতো মোটা হইয়া গেছস?’ আমার কথা শেষ হবার আগেই, ‘স্টুপিড!’ বলে এক ঝামটায় আমার গাল টেনে দিয়ে পৃথিবীকাঁপানো একটা হাসি হেসে ঘাড় বাঁকিয়ে বেণী দুলিয়ে চলে গেলো সোহানা। ওর সেই হাসি চোখের সামনে ভাসে, ওর কথা মনে হলেই। আমাকে ভর্ৎসনা করে রাতুল বলেছিল, ‘তুমি এতো বোকা কেন? ও প্রেগন্যান্ট হইছে বোঝো না?’ আরো অনেকে। শাপলা।

ঝিনুক। একেকটা মেয়ে একেকটা অনবদ্য কবিতা, ভিন্ন ভিন্ন রস ও স্বাদের। এই দেখুন, কোনো ছেলের নামই আমার মাথায় আসছে না এখন। আমরা মেয়েদের কথা বেশি মনে রাখি; ওরা আমাদের নিয়ে কী ভাবে তা জানতে খুউব খুউব সাধ হয়। আমার মতো সবগুলো ছেলেই হয়তো এমন করেই সবগুলো মেয়ের কথা ভাবে।

আর মেয়েগুলো? ওরা মনে হয় আমাদের আর মনে রাখে না। আমরা যেমন বউয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আর তার বুকের উপর শুয়ে একবার হলেও ওদের প্রত্যেকের কথা ভাবি, ওরা কি স্বামীর বুকে মাথা রেখে একটি মুহূর্তের জন্যও মনে করেছে আমাদের কথা? আমার কথা? ওরা খুব স্বার্থপর। ওরা স্বামীদের সাথে বেইমানি করে না, আমরা যেমন বউদের সাথে করি। ওরা নয় প্রেমিকা, নয় বান্ধবী। ওরা আমাদের কেউ না।

একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রমীলা বলেছিল, ‘তোরা এতো নিষ্ঠুর কেন রে? তোদের কথা ভেবে ভেবে মরি... । ’ তারপর ওর কণ্ঠ গলে যেতে থাকে, করুণ ফিসফিসে স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘তোর কথা কতো ভাবতাম... খুব নিষ্ঠুর রে তুই!’ আমি যখন পদ্মার গভীর থেকে স্কুলবান্ধবীদের ছিনিয়ে নিয়ে আসছিলাম, দেখি আমার সরলা বউ আর সন্তানেরা উজ্জ্বল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আনন্দে ঝলমল করছে। এখানে একটা কবিতার ভাব জাগে। সর্বপ্রথম যে শব্দটা মাথায় টোকা বা উঁকি দিল, সেটা হলো- ‘দিধিষু’। কবে কোথায় এই শব্দটা পড়েছিলাম মনে নেই।

অর্থটাও ততো পরিষ্কার নয়। কিন্তু ‘দিধিষু’ দিয়েই কবিতা শুরু করি। দিধিষু শরীর নদীর বিভায় ঘুমিয়ে পড়ে পাখিদের অগোচরে। জলের জোনাকিরা কোমল বাতাসে ভেঙে ভেঙে মাছের সারিতে মিশে যায়। এই হলো কবিতা।

এর কী অর্থ দাঁড়ায় তা জানি না। আদতে এর কোনো অর্থ নেইও। সব কবিতার অর্থ থাকে না। অহনার সাথে যদি আবার আরেকদিন, কালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কোনো এক চরের কন্দলীবনের হরিৎ ছায়ায় অলৌকিকভাবে দেখা হয়ে যায়, এ দু চরণ কবিতা ওকে শোনাবো। এ কবিতা শুনে সে যারপরনাই খুশি হবে; খুশির ঘোরে বহুক্ষণ কেটে যাবে, তারপর যথাস্বভাবে বলবে, ‘এবার এর অর্থটা আমাকে বুঝিয়ে বল্।

’ আমি অহনাকে অতি চমৎকারভাবে কবিতাটার অর্থ বুঝিয়ে দেব। সে বিস্ময়ে ডগমগ হয়ে শুধু এ কথাটাই বলবে, ‘তোর মতো কবি হয় না রে পাগল; তুই একদিন অনেক বড় কবি হবি!’ ২৩ এপ্রিল ২০০৯ (পরিমার্জিত ও পুনর্পোস্টিত, নতুন কিছু নেই, সেজন্য )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.