আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার কাঁপছে , নাকি কাঁপানো হচ্ছে !



শেখ সেলিম - কে এম শফিউল্লাহ বিতর্কের পর এখন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও বিচার বিভাগীয় সংসদীয় কমিটির প্রধান সুরন্জিত সেনগুপ্ত । বিষয় - দুই বিচারক বরখাস্তের ঘটনা। এ নিয়ে আজ দৈনিক যুগান্তরে বেরিয়েছে একটি রিপোর্ট ......... দৈনিক যুগান্তর রিপোর্ট / ১ সেম্টেম্বর ২০০৯ কী আছে সেই চিঠিতে বিএম জাহাঙ্গীর ------------------------------ দুই বিচারককে অবসর প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামই প্রথম ইউও (আন অফিসিয়াল) নোট ওপেন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত এই নোট সংস্থাপন মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে। সেখান থেকে অফিসিয়াল যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে দুই বিচারককে অবসর প্রদানের সারসংক্ষেপে আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন। যুগান্তরের গভীর অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অথচ দুই বিচারককে অবসর প্রদানের বিষয়ে এতদিন বলা হচ্ছিল আইনমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী কিছুই জানতেন না। বৃহস্পতিবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই বিচারককে অবসর প্রদানের বিষয়ে আইনমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিছুই জানতেন না। তিনি এ ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সংস্থাপন সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দায়ী করেন এবং তাদের পরবর্তী বৈঠকে তলব করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান।

এরপর সরকারের মধ্যে সৃষ্ট গৃহবিবাদের পালে দ্রুত বাতাস বইতে শুরু করে। পরদিন শুক্রবার এইচটি ইমাম পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে সাফ জানিয়ে দেন, ওই ঘটনার জন্য তার বিন্দুমাত্র দায় নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছেন মাত্র। তাকে এভাবে সংসদীয় কমিটি ডাকতেও পারে না। ফলে এক মাস আগে দুই বিচারককে অবসর প্রদান এবং তিনদিনের মাথায় পুনরায় অবসর প্রদানের আদেশ বাতিল করার ঘটনার ইতি ঘটলেও নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ঝড়ের নায়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অন্যদিকে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। দু’জন এখন মুখোমুখি। বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যে সরকারের মধ্যে সৃষ্ট বিভ্রান্তি প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দেশজুড়ে চলছে সরব আলোচনা।

থেমে নেই টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য জানতে না পেরে জনগণও রয়েছে ঘোরের মধ্যে। এখন সবার কৌতূহল এইচটি ইমামের সেই চিঠির প্রতি। কি লেখা ছিল সেই চিঠিতে, তাতে কি আইনমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষর ছিল? যুগান্তরের অনুসন্ধানে সেই চিঠির সন্ধান মিলেছে। চিঠিতে যা আছে : ২৭ জুলাই সচিবালয়ে পাস ছাড়া বিচার ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রবেশ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের করিডোরে পুলিশের সঙ্গে হৈচৈ বাকবিতণ্ডার ঘটনায় কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এরপর এইচটি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২৯ জুলাই সংস্থাপন সচিবকে একটি ইউও নোটে (যাকে চিঠি বলা হচ্ছে) দিকনির্দেশনা দেন। জরুরি/অতিগোপনীয় লেখা এক পাতায় ৩ লাইনের ইউও নোটের বক্তব্য হুবহু নিচে তুলে ধরা হলÑ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং অন্যান্য সংস্থা হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিবেচনা করে এতদসঙ্গে সংযুক্ত তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের নিুলিখিত কর্মকর্তাগণকে ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী অবসর আইনের ৯(২) ধারার বিধান মোতাবেক অবসর প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন ঃ ১. মোঃ শাহজাহান হোসেন সাজু, স্পেশাল জজ (জেলা জজ পদমর্যাদা) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত, গাজীপুর। ২. আবদুল গফুর, জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা। ’ এইচটি ইমাম স্বাক্ষরিত এ চিঠি সংস্থাপন সচিব পরদিন ৩০ জুলাই আইন সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন।

সেখানে সংস্থাপন সচিব আইন সচিবকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘সচিব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হইল। ’ সারসংক্ষেপে যা আছে : আইন সচিবের কাছে এ চিঠি আসার পর তিনি প্রথমে বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রাপ্ত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে একটি ফাইল ওপেন করেন। সেখানে এ চিঠিকে উদ্ধৃত করে সংশ্লিষ্ট বিচারকদ্বয়কে অবসর প্রদানে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সারসংক্ষেপ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংবলিত নোটশিট প্রস্তুত করা হয়। একইদিন এই নোটশিটের প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার পর বিচারকদ্বয়কে অবসর প্রদানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হয়।

এক পাতার সারসংক্ষেপে বলা হয়, মোঃ আবদুল গফুর ১৯৮০ সালের ২৮ এপ্রিল এবং মোঃ শাহজাহান ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি সহকারী জজ হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তাদের উভয়ের চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিচারকদ্বয়কে ১৯৭৪ সালের অবসর প্রদান আইনের ৯ এর (২) ধারায় জনস্বার্থে চাকরি থেকে অবসর প্রদানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সানুগ্রহ অনুমোদন চাওয়া হয়। অবসর প্রদানের এ সারসংক্ষেপ অনুমোদন করে একইদিন আইন সচিব, আইন প্রতিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন। এরপর একইদিন আইন সচিবের স্বাক্ষরে পৃথক প্রজ্ঞাপনে বিচারকদ্বয়কে অবসর দেয়া হয়।

এর তিনদিনের মাথায় ৩ আগস্ট অবসর প্রদানের আদেশ বাতিল করা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, অবসর দেয়া বিচার ক্যাডারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করায় প্রধানমন্ত্রী সদয় বিবেচনা করে অবসর প্রদানের আদেশ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রজ্ঞাপন বিতর্ক : অবসর প্রদানের প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত একটি বাক্য জুড়ে দেয়া হয়। অবসর প্রদান দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল- বাধ্যতামূলক অবসর এবং অপরটি ঐচ্ছিক অবসর প্রদান।

এখানে বাধ্যতামূলক অবসর না দিয়ে জনস্বার্থে ঐচ্ছিক অবসর প্রদান করা হয়। তবে সেখানে অবসর আদেশ প্রদানের আগে জনস্বার্থের ব্যাখ্যা হিসেবে ‘যেহেতু জনপ্রশাসনে সদাচরণ এবং শৃংখলা বজায় রাখা অপরিহার্যঃ’ বাক্যটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে অসদাচরণের কোন কিছু হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ না করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এভাবে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অসদাচরণ বা শৃংখলাজনিত কারণে বিচার ক্যাডারের কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রশ্ন এলে সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে মাসদার হোসেন মামলা রায়ের ফলে প্রণীত আইনের বিধি অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিন্তু চাকরির ২৫ বছরে সরকার ঐচ্ছিক অবসর দিলে পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন নেই। অবসর প্রদানের প্রজ্ঞাপনে ‘যেহেতু জনপ্রশাসনে সদাচরণ এবং শৃংখলা বজায় রাখা অপরিহার্য’ বাক্যটি জুড়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৯৫ ভাগ অবসর প্রদানের আদেশকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে সরকার হেরে যায়। জনস্বার্থের প্রকৃত কারণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এযাবত সরকার বেশিরভাগ মামলায় হেরে গেছে। এজন্য এ প্রজ্ঞাপনে জনস্বার্থ বিঘিœত হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত বাক্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে আদালতে রিট হলে সরকার প্রয়োজন মনে করলে তাদের বিরুদ্ধে ২৭ জুলাই সচিবালয়ে পাসবিহীন প্রবেশসহ সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো তুলে ধরতে পারত।

তিনি জানান, সরকার প্রয়োজন মনে করলে এখনও ওই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে। এর মাঝে দেশে দেখা দিয়েছে সোয়াইন ফ্লু। সরকার ও হাসপাতাল করছে ভিন্ন আচরণ। সরকার রোগীদেরকে হাসপাতালে যেতে বললেও, রোগিরা হাসপাতালে গিয়ে ঘুরছে অসহায়ের মতো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক একজন চিকিৎসক হবার পরও , তিনি ডাক্তার ও হাসপাতালগুলোকে বাগে আনতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না ।

সরকার কাঁপছে , নাকি কাঁপানো হচ্ছে ? কি হচ্ছে সরকারে ? কি চাইছেন শীর্ষ নীতিনির্ধারক রা ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.