আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু মহামারীর আশঙ্কা

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

কিছুক্ষণ আগে বিডিনিউজ-এর ওয়েবসাইটে ঢুকেছিলাম। ঢুকেই সোয়াইন-ফ্লু নিয়ে একটি লেখা চোখে পড়লো। ব্লগারদের জন্য সেই লেখার পুরোটিই এখানে তুলে দিলামঃ ঢাকা, আগস্ট ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- আড়াই মাস আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারী ঘোষণার পর এখন বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু মহামারীর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সোয়াইন ফ্লু'র ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিপদসীমার দ্বিতীয় পর্যায়ে (কান্ট্রি লেভেল-২) অতিক্রম করেছে।

মহামারী পর্যায়ে না পৌঁছালেও তার আগের অবস্থানে রয়েছে। এদিকে দেশে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনে ৩১ জন বেড়ে শনিবার ১৯৪ এ উন্নীত হয়েছে। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা মহামারীর সতর্ক বার্তা দেন। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিলে সোয়াইন ফ্লু দেখা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৫ জন মারা গেছে।

আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। সেমিনারে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, "সোয়াইন ফ্লুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিপসীমার কান্ট্রি লেভেল-২ অতিক্রম করেছে। আমরা নিজেরা এইচ১এন১ লেভেল-৩ ধরেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিপূর্ণ মহামারী না হলেও তার আগের পর্যায়ে রয়েছি বলা চলে। লেভেল-৩ হলে সর্বাত্মকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

" তিনি বলেন, "আমরা এখনো কান্ট্রি লেভেল-২ এ থাকলেও আসলে লেভেল-৩ এ চলে গেছি। তবে এক্ষেত্রে এখনও কোনও সতর্কাবস্থা জারি করা হয়নি। কারণ এটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই জারি করা হতে পারে। কারণ এতে হয়তো এয়ারপোর্ট ও ইমিগ্রেশন পয়েন্ট বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের দরকার হবে। সে জন্য মাল্টি সেকটরাল টাস্কফোর্স, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

"আমরা বা শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তবে এই পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকার জন্যে একটা অ্যাকশন প্লান তৈরী করা হয়েছে। তবে সেটি শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরেই কার্যকর হতে পারে। " মুশতাক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে লেভেল-৬ চরম অবস্থা, যা তারা সারাবিশ্বে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুর যে লেভেল নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে লেভেল-৩ চরম অবস্থা।

তিনি বলেন, "সোয়াইন ফ্লু রোগের যে সব লক্ষণ, সর্দি-কাশি বা জ্বর, তা সারাবছর ধরেই বাংলাদেশে দেখা যায়। ফলে এ ধরনের প্রতিটি রোগীকে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারব না। তাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত সব রোগীকেই সোয়াইন ফ্লু হয়েছে ধরে নিয়ে, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা ও সতর্কতা নিতে হবে। " কারও সর্দি-কাশি দেখা দিলেই তার পরিবারের সদস্যদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুশতাক। তবে এ রোগ নিয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, "যেদিন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারী ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকেই আমরা সতর্ক হয়েছি।

রোগ প্রতিরোধে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধও রয়েছে। " তিনি জানান, ২৯ লাখ ক্যাপসুল মজুদ আছে। দেশের পাঁচটি ওষুধ কোম্পানিও ওষুধ তৈরি করে চলেছে। ১১টি হাসপাতালে রোগী ভর্তিও ব্যবস্থা রয়েছে। আইইডিসিআর'র পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এইচ-১এন-১ ভাইরাসে শনিবার নতুন করে ৩১ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে।

" ২৪ ঘণ্টায় এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তকরণ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ১৩ জন, বুধবার ২২ জন, বৃহস্পতিবার ৫ জন ও শুক্রবার ১৯ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। তবে এর মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ১৮ জুন দেশে প্রথম সোয়াইন ফ্লু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়।

বিএসএমএমইউর সেমিনারে সোয়াইন ফ্লুর ইতিহাস, সম্ভাব্যতা, লক্ষণ ও প্রতিকারের ওপর মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ভাইরোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুম। সেমিনারে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম, পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চৌধুরী আলী কায়সার, মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৈয়দ আতিকুল হক ও মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান মো. রুহুল আমিন মিয়া। নজরুল ইসলাম বলেন, "সোয়াইন ফ্লু'র জীবাণু সারাবিশ্বে যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বিশ্বায়নের এই সময়ে বাংলাদেশকে এর বাইরে থাকতে পারবে না। ভারতে রোগটি মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে বাংলাদেশেরও ঝুঁকি রয়েছে।

" "স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে যাচ্ছে এবং আসছে। এ কারণেই বাংলাদেশে রোগটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে", বলেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ২ থেকে ৫ দিন পরে সোয়াইন ফ্লু সনাক্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। তবে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তারা জানান, এইচ১এন১ ভাইরাস আগে আমেরিকার আটলান্টার সিডিসি থেকে সনাক্ত করিয়ে আনতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ঢাকাতেই দুটি আরটি পিসিআর মেশিন রয়েছ। ফলে দ্রুত রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। অধ্যাপক প্রাণ গোপাল বলেন, "মহামারী আকারে যদি রোগটি ছড়িয়ে পড়ে, সে জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ডি ব্লকের ১৬ তলায় ১০০ শয্যা স্থাপনের মতো জায়গা খালি করা হয়েছে।

সেখানে একটি জরুরি আইসিইউ স্থাপন করা হবে। " সোয়াইন ফ্লুর বিস্তার প্রতিরোধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিমান ও স্থলবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, কাশি, কফ সোয়াইন ফ্লু রোগের লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এইচ১এন১ নামের এ ভাইরাস ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

যত্রতত্র কফ, থুথু না ফেলা ও বিশেষ করে হাঁচি-কাশির পর সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেণ্ড সময় নিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। চলতি বছরের এপ্রিলে মেক্সিকোয় প্রথম সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.