আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোগের পিছনে লুকিয়ে আর এক রোগ



অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়: কারো পৌষ মাস। আর কারো সর্বনাশ। ওষুধ কারবারীদের পৌষ মাস, আর অন্যদের সর্বনাশ। আর সর্বনাশ তো একদিনে হয় না, তার আগাম লক্ষণ থাকে। সেই দিকে নজর না দিলে যা হয় তাই হচ্ছে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে।

পাশ্চাত্যের ধারণা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একের পর এক নানা বিধান দিচ্ছে, আর আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশ হেঁচে-কেঁদে মরছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের রোগ মোকাবিলায় মডেলের দিকে তাকিয়ে কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক নানা ধরণের নির্দেশ দিয়ে আসছে। আর নিজেদের ক্ষুদ্র পরিকাঠামোর মধ্যে দাঁড়িয়ে সেইসব মানতে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরকে নাজেহাল হতে যাচ্ছে। যে রাজ্যের মানুষ সরকারী হাসপাতালের ওপর যত বেশি নির্ভরশীল, তাদের সমস্যা হচ্ছে তত বেশি। সব দেখেও চুপ মেরে যেতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।

কারণ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ছাড়া সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বিশেষ কিছু বলা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব পায় না। তাই যখন মানব ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এইচ ওয়ান এন ওয়ান টিকার কথা আসে তখন আমাদের রোগ হলে টিকা প্রকল্প নিতে হয় দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চকে (আই সি এম আর)। যেখানে দেশের ৩৮টি জাতীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থার যেকোন একটিতে অনায়াসে দুই মাসে ঐ ধরণের টিকা তৈরি করা যায়। তাও একের পর এক বিজাতীয় ভাইরাস সংক্রমনের পরেও কেন্দ্রীয় সরকারের চোখ খোলে নি। আজও সামান্য বার্ড ফ্লু রোখার টিকা তৈরি করা যায় নি।

বিশ্বের যেসব দেশে বার্ড ফ্লু হয়নি সেখানেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে বানানো হয়েছে জিন পরিবর্তিত বার্ড ফ্লু’র টিকা। আর আমাদের দেশে সোয়াইন ফ্লু’তো ছাড় সামান্য বার্ড ফ্লু ভাইরাস তৈরি হয়ে উঠলো না। এমনকি তৈরি টিকাকেও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ করতে দীর্ঘদিন টালবাহানা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই নিয়ে উদাহরণ আছে ভুরিভুরি। ঠিকঠাক সময়ে কলেরার প্রতিষেধক (রিকম্ববিন্যান্ট) তৈরি করেও তা সাধারণ মানুষের কাজে আসে নি।

চন্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোবিয়াল টেকনোলজির একদা বাঙালি অধিকর্তা ডঃ অমিত বসুর হাতে তৈরি হয়েছিল ঐ কলেরা প্রতিষেধকটি। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবহারিক বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্র কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সি এস আই আর) সরাসরি সংস্থা হওয়ার সুবাদে মাইক্রোবিয়াল টেকনোলজি’র আবিষ্কারকে মুহূর্তের মধ্যে কেন্দ্র সরকার পেটেন্টের আওতায় নিয়ে এলেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে তার চূড়ান্ত ছাড়পত্র এখনো দেওয়া যায় নি। ফলত ঝুলে রয়েছে। এরপরও ১৯৯৪ সালে যখন সুরাতে প্লেগ হলো তখনও চিকিৎসা বিভ্রাট চূড়ান্ত হয়ে দেখা গেছিল। সেকথা অনেকেই জানেন।

তখনও একটি বিদেশী ওষুধকেই ত্রাতা বলে প্রচার করা হয়েছিল সেকথা সকলের জানা। দেশীয় টেট্রাসাইক্লিন নয়, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ থেকে ডক্সিসাইক্লিন আদমানি করতে বেশি নজর দিয়েছিল। কাজ কী হয়েছে কী হয় নি তা নিয়ে মন্তব্য করাটা বাতুলতা। কিন্তু এটা সত্য বিশ্ব থেকে নির্মূল হওয়ার প্লেগ ৫২জনের প্রাণ নিলো। দেশের তাবড় তাবড় জীবানু বিশেষজ্ঞরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাবাজীর জেরে কোন কেন্দ্রীয় গবেষণা কেন্দ্র সাহস করে এগিয়ে এলো না। একই রকমের ঘটনা ঘটেছে বারংবার। বিদেশী ওষুধ প্রস্তুতকারকদের চাপে এখনও ভারতের কোন ওষুধ কোম্পানি সংক্রামক রোগের ওষুধ তৈরি করে না। কারণ অস্পষ্ট। এবার আসা যাক সোয়াইন ফ্লু’র ওষুধ ট্যামি ফ্লু নিয়ে।

২০০৮ সালেও এই ট্যামি ফ্লু দেশে চালানো নিয়েও বারকতক চেষ্টা হয়েছে। সেবারেও কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছেছিল মন্ত্রনা। মুরগী, হাঁস থেকে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু’তে হাতেগোনা কয়েকজন আক্রান্তের জন্য আবার বিদেশ থেকে আনানো হয় ট্যামি ফ্লু ট্যাবলেট। কী এই ট্যামি ফ্লু। এটি একটি ভাইরাস ধ্বংসী ওষুধ পরিভাষায় অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ।

ট্যামি ফ্লু বড়িও নানা ধরণের নানা কোম্পানির হয়। কিন্তু কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রথম পছন্দ ওসালটামিভির। এটি তৈরি করে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি জিলিড সায়েন্সেস। কোম্পানিটা কার। আমেরিকার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ডের।

মার্কিন সখ্যতার জেরে বারেবারেই এই কোম্পানি কখন সরাসরি কখনো ঘুরপথে আমাদের দেশে আমদানি করছে মোটা ডলারের ট্যামি ফ্লু। সোয়াইন ফ্লু চিকিৎসা নিয়েও চলছে সুন্দর কারবার। যে ট্যামি ফ্লু আমদানি করা হচ্ছে ঘুর পথে আনা হচ্ছে অন্য কোম্পানি মারফত। কেন বোঝা যায়। তাতে জিলিড সায়েন্সেন্স নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।

কিন্তু জেনে রাখুন ঐ জিলিড সায়েন্সেন্সের একটি সহকারী ওষুধ কোম্পানি রোচে ফার্মাসিউটিক্যাল। তারাই ওসালটামেভির উপাদান নামটাকে ‘ট্যামি ফ্লু’ ব্রান্ড নামে ভারত সরকারকে বিক্রি করছে। এরজন্য জিলিডকে রোচে দিচ্ছে মোট মুনাফার ২০ শতাংশ। এটা লিখিত চুক্তি। আন্তর্জাতিক বাজারে ১০টি ট্যাবলেট সম্বলিত ট্যামি ফ্লু বড়ির দাম ৬০ ডলার।

রোচে সেই ওষুধ ভারতীয় টাকায় দিচ্ছে ১০০০ টাকায়। আর কেন্দ্রের ইমারর্জেন্সি মেডিক্যাল রিলিফ অফিসে ট্যামি ফ্লু চাহিদাপত্র পাওয়া আসা মাত্র তা সরবরাহ করে দিচ্ছে। কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রী বড়মুখ করে বলেছেন ‘আমাদের হাতে এক কোটি ট্যামি ফ্লু বড়ি মজুত আছে’। তার দাম কত ? ১০০ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে পাঠানো আনানোর বাড়তি খরচ।

এতো পুরোনো হিসাব। এদিকে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক যত বাড়ছে ততই ট্যামি ফ্লু মজুত করার দিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঝোঁক বাড়ছে। দিল্লি স্বাস্থ্য ভবন প্রতিদিন হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছে ট্যামি ফ্লু বিক্রেতা অন্য বহুজাতিক এজেন্টরা। কারণ সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আরো দুই কোটি ট্যামি ফ্লু ট্যাবলেট মজুত করা হবে। রোগ বাড়ুক না বাড়ুক দেখার দরকার নেই ট্যামি ফ্লু মজুত করে কোম্পানির মুনাফা ঘরে দিয়ে এসো।

কারণ ইউ পি এ সরকারের আমলে রোচে ভারতে এসেছে। বিদেশের গন্ধ কাটাতে এই বহুজাতিককে হাত ধরে হায়দ্রাবাদে কারখানা তৈরির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্র। ফলে তৈরি হয়েছে রোচে ইন্ডিয়া। আর সেই মুখের কথা রাখতেই সিপলা, র্যা নব্যাক্সি, হেটারো, ন্যাটকো’কে অন্য বহুজাতিককে কাটিয়ে বরাতের কাগজ পৌঁছাচ্ছে হায়দ্রাবাদে। আর বেশি ভেবেও বা কী হবে ওসালটামেভিরের পেটেন্ট আদপে তো জিলিডেরই হাতে।

ফলে যে যেখানে ট্যামি ফ্লু বানাক মুখ মুনাফা যাচ্ছে জিলিডের পকেটে। শুধু কী তাই সোয়াইন ফ্লু ধরতে কেন্দ্রীয় সরকার যে পরীক্ষা কিট ব্যবহার করছে তাও আসছে বিদেশ থেকে। যে পরীক্ষার মারফত (রিয়েল টাইম পি সি আর টেস্ট) সোয়াইন ফ্লু হয়েছে কিনা চূড়ান্ত করা হয় তা নিয়ে রকমারী গোল আছে। কোনদিনই কেন্দ্রীয় সরকার আক্রান্ত রাজ্যের সরকারকে সেটি মোকাবিলার যৌথ অভিযানে নামে না। এমনকি রাজ্যের নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সামান্য আলোচনা করারও কোন যুক্তি আছে বলে মনে করে না কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দিগগজ কোন সচিব।

অনেক ক্ষেত্রে আবার রাজ্যের বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সুবিধা নিয়েও রোগ হলো কী না, তা বলাকে আটকে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে বার্ড ফ্লু’র সময় বেলগাছিয়ার পশু বিশ্ববিদ্যালয়কে (ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব এনিম্যাল অ্যান্ড ফিসারিজ সায়েন্সেস) পুরোদস্তুর ব্যবহার করেও কেন্দ্র স্বাস্থ্যমন্ত্রক বেলগাছিয়ার পশু বিশ্ববিদ্যালয়কে নমুনা পাখির রক্ত পরীক্ষার অনুমতি দেয় নি। প্রতিদিন ঐ নমুনাকে বায়ুনিরুদ্ধ প্যাকেটে নির্দিষ্ট ওষুধ-বিসুধ দিয়ে পাঠানো হতো ভূপালে। সারাদিন জেলায় জেলায় সংগৃহীত নমুনা হাঁস-মুরগিকে রাতে বিমানে করে ভোপালে পাঠানো হতো ভূপালের হাই সিকিউরিটি এনিম্যাল ডিজিজেজ ল্যাবরেটরিতে। সেখানে নিখুঁত নিরাপত্তার মধ্যে ময়না তদন্ত (নেক্রপসি) করা হতো।

পরদিন তা রিপোর্ট আকারে জানানো হতো আক্রান্ত রাজ্যকে। যেখানে নমুনা সংগ্রহের আধ ঘন্টার মধ্যে জানা শেষ হয়ে যায়, তারজন্য বিশেষজ্ঞদের ‌অপেক্ষা করতে হয়েছে কমপক্ষে ২০ ঘন্টা। শুধু দেরী নয়। এক্ষেত্রে জড়িত সন্মানের প্রসঙ্গটা। কেন্দ্র বললে পজিটিভ, রাজ্য নেগেটিভ বললে তাতে সন্দেহ।

এই আমাদের কেন্দ্র সরকারের রোগ সর্বেক্ষণ দপ্তরের ধারণা। রোগ যাই হোক তা নিয়ে আলাদা পরীক্ষা (ক্রস চেকিং) করার কোন সুযোগ নেই। এবারে সোয়াইন ফ্লু’র ক্ষেত্রে এইটুকুই অতিরিক্ত মিলেছে যে কলকাতার একটি কেন্দ্রীয় সরকারী গবেষণাকেন্দ্রকে ভাইরাস শনাক্তকরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেলেঘাটার ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজেজ (নাইসেড) গলার কফ (থ্রোট সোয়াব) পরীক্ষা করে জানাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রেও খরচটা কম পড়ছে না।

আমদানিকৃত পরীক্ষা কিটের দাম এত বেশি যে পরীক্ষা পিছু খরচ দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার টাকা। সোয়াইন ফ্লু রোগে মানুষ মারা যায় না বলে গালভরা কথা সংবাদমাধ্যমে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী গোলাম নবি আজাদ এখন শুধু বলে চলেছেন দেশে মোট কত বাক্স ট্যামি ফ্লু মজুত রয়েছে তা নিয়ে। হাবেভাবে স্বীকার করে তিনি জানাচ্ছেনও পুনে, আমেদাবাদে, চেন্নাইয়ে সোয়াইন ফ্লু’তে মারা গেছেন। রোগীরা সরাসরি সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাসে মারা যাচ্ছেন কিনা তা নিয়ে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা ডাঃ কৃষেন্দু রায় জানাচ্ছেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ঠিক করতে প্রত্যেকের ময়নাতদন্ত জরুরী।

এবাদেও মৃতের শরীরের রক্ত বা অন্য কিছু বিদেশের কোন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো যেতে পারে। এই কাজে বিখ্যাত আমেরিকার অ্যাটলান্টার গবেষণা সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) হাতযশ আছে। কিন্তু সেই পথ মাড়াচ্ছে না কেন্দ্র। কারণ কী আর কী না তা নিয়ে কথা শেষ হবে না। তবে এটা ঠিক আমাদের নিদিষ্ট ডলার না গুনে নিস্তার নেই।

‘প্যানডেমিক’ বলে কথা। আর এই প্যানডেমিক মানেই ভয়। কারণ শব্দটা নিয়ে। এর ব্যাখা শুনলে আপনিও ভাবতে বসবেন এত সোরগোল কেন। ‘এপিডেমিক’কে বাংলায় বলে মহামারী।

কোন রোগ এক দেশে ছড়ালে তা মহামারী। অন্যদিকে এক রোগ একাধিক দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তাকে বলে প্যানডেমিক। বাংলায় দাঁড়ায় মহামহামারী। এই অ্যাখা বা ব্যাখা দেওয়ার অধিকার একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’র। তাদের পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয় কোন রোগকে কীভাবে ডাকা হবে।

মহামারী বলতে সাধারণ মানুষের কাছে যে একটা ভয় রয়েছে প্রচুর মানুষ মারা যায়, একদিনে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যায়, সেইসব দিয়ে কিন্তু মহামারী ঠিক হয় না। সেই দিক থেকে ডেঙ্গুও মহামারী হতে পারে। হতে পারে ম্যালেরিয়াও। মানুষের মারা যাওয়া বা আক্রান্তের ওপর দাঁড়িয়ে মহামারীর নির্দেশক ঠিক করাটা বোধহয় শুভবুদ্ধির। তাহলে হয়ত ওষুধ কোম্পানির চাপ কমবে।

যে রোগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হার ০.৮৬শতাংশ তা নিয়ে এত লম্ফজম্ফের কী অর্থ তা একমাত্র মিডিয়া জানে। ভারতের মৃত্যুহার এখনো পর্যন্ত যা তা কোন অঙ্কের হিসাবে আসে না। তবু সোয়াইন ফ্লু নিয়ে মাথা ব্যথার শেষ নেই। মাস্কের বিক্রি বাড়ছে। চারিদিকে হাহাকার।

কিন্তু কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একটু কষ্ট করে বলছেন না – সাধারন মানুষের মাস্ক পড়ে লাভ নেই। আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিই মাস্ক পড়ুন। তাতে তার আক্রান্ত কফ-থুথু ছড়াবে না। ফলত বাকিরা থাকবে নিশ্চিন্ত। রোগীও দ্বিতীয় সংক্রামনের (সেকেন্ডারী ইনফেকশন) সম্ভাবনা কমবে।

আর যে ভাইরাস নিয়ে এতকথা সেই ‘এইচ ওয়ান এন ওয়ান’ মারক বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক্কেবারে দুর্বল ভাইরাসের পর্যায়ে পড়ে। কারন ‘এইচ ওয়ান এন ওয়ান’ শরীরে ঢোকা মাত্র দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র জেনে যায় শরীরে সে ঢুকেছে। আর সেইজন্য অ্যান্টবডিও তৈরি হতে থাকে দ্রুত। জ্বরে সাধারণত মানুষের মৃত্যু হয় না। কিন্তু জ্বরে অসুস্থ মানুষ মারা যেতে পারে।

পার্থক্যটা শুধু এইটুকুই। আমরা প্রতিবছরই এই ‘এইচ ওয়ান এন ওয়ান’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বরে পড়ি। ভারতে একজনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পাওয়া যাবে না যার একাধিকবার এই ভাইরাসের সংক্রামন ঘটে নি। ‘এইচ ওয়ান এন ওয়ান’ একটি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস। ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ আর ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘বি’ আমাদের জ্বরজারি করে।

বেশিরভাগই মরশুমী জ্বর। তাহলে চিন্তা এত কেন ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.