আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিখ্যাতদের মজার কাহিনী-৩



আগের পর্ব : বিখ্যাতদের মজার কাহিনী-২ # ১ জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনের দিকে ঝুঁকে উবু হয়ে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওভাবে উবু হয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে বলল, ‘আপনার নিশ্চয় ওভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হচ্ছে। বাজারে এখন এ রকম অনেক চেয়ার আছে যেগুলোতে আপনি হেলান দিয়ে বেশ আয়েশের সঙ্গে লিখতে পারেন। ও রকম একটা আনিয়ে নিলেই তো পারেন। ’ লোকটার দিকে খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, ‘তা তো পারি।

তবে কি জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়। পাত্রের জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়। ’ # ২ একবার কালিদাশ নাগ ও তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েকে বাড়িতে রেখে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ মজা করে জিজ্ঞেস করলেন, শিশু নাগ (সাপ) কোথায় রেখে এলে? আরেকবার তাঁর বাড়ির চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বনমালী দেরি করে আসায় একটু রাগের ভাব ধরে বললেন, ‘চা-কর বটে, সু-কর নয়।

’ আরেকবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছে শান্তিনিকেতনে। তারা আদর করে কবিগুরুর পা টিপতে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন,‘পাণিপীড়ন না পা-নিপীড়ন?’ প্রথমে না বুঝলেও পরে তারা দুজন কবিগুরুর কথায় অনেক মজা পেয়েছিল। # ৩ আমার কৃষি পত্রিকা সম্পাদনার ইতিহাস মার্ক টোয়েন নিজের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত কৃষি পত্রিকার অস্থায়ী সম্পাদকের কাজটা নিয়েই নিলাম। স্থায়ী সম্পাদক ছুটি কাটাতে তখন অনেক দূরে। শুরুতে কাজটা যত কঠিন মনে হয়েছিল, কাজ করতে গিয়ে আর তত কঠিন লাগল না।

একদিন বিকেলে বেরোনোর পথে অফিস গেটের জটলা থেকে একটা চাপা কন্ঠের মন্তব্য কানে এল, ‘এই সেই লোক। ’ এ ঘটনায় খুব খুশি হলাম। পরদিন অফিসে ঢোকার সময়ও দেখি সেই একই ব্যাপার। তারা আমাকে শুনিয়েই বলছে, ‘দেখো, লোকটার চোখটা দেখো। ’ ‘বাহ্, বেশ মজা তো!’ মনে মনে বলি আমি।

লোকের নজরে পড়েছি দেখে খুবই গর্ব হলো। পরদিন অফিসে ঢুকেছি আধঘন্টাও হয়নি। সরাসরি আমার সামনের চেয়ারে এসে বসলেন লম্বা দাড়িওয়ালা রাগী চেহারার এক বুড়ো! বুঝলাম, আমাকে কিছু বলতে চান। মাথা থেকে টুপি খুলে তার মধ্য থেকে তিনি আমার সম্পাদিত পত্রিকার একটি কপি বের করতে করতে বললেন, ‘ওহে, তুমিই কি এই পত্রিকার সম্পাদক?’ ‘নিশ্চয়ই’, একটু গর্বের সঙ্গে উত্তর দিই আমি। ‘আগে কি কোনো কৃষি পত্রিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে?’ ‘না’, সঙ্গে সঙ্গে আমার জবাব।

‘তা ভালোই বুঝতে পেরেছি। ’ বুড়ো নাকের ওপর চশমাটা বসিয়ে কাগজটা সামনে ধরে অত্যন্ত কড়া গলায় বললেন, ‘এটা কি তোমার লেখা?’ জিজ্ঞেস করেই পড়তে শুরু করলেন বুড়ো, ‘শালগম কখনোই গাছ থেকে টেনে ছেঁড়া উচিত নয়। তাতে এই চমৎকার ফলটার খুবই ক্ষতি হয়। বরং কোনো ছোট্ট ছেলেকে শালগমের গাছে চড়িয়ে ঝাঁকিয়ে এই ফল পাড়া ভালো। ’ একটু ঝাঁঝের সঙ্গেই জবাব দিই আমি, ‘কেন, আমি কি সত্যি কথা লিখিনি? আমি নিশ্চিত প্রতিবছর লাখ লাখ ঝুড়ি আধাপাকা টসটসে শালগম এমনি করে টেনে ছেঁড়ার জন্য নষ্ট হয়ে যায়।

বলেন, তার চেয়ে যদি একটি ছেলেকে দিয়ে ঝাঁকানো হতো গাছগুলো…’ এ কথা শুনে রেগে কাঁই হয়ে উঠলেন বুড়ো। তাঁর চিৎকার আর গালাগালিতে চুপসে গেলেও কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলি, ‘ও, গাছে ফলে না বুঝি? তা আমি কি বলেছি গাছে ফলে শালগম? ওটা লেখার অলংকার। আসলে আমি বলতে চেয়েছি, শালগমের লতা ধরে ঝাঁকানো উচিত। ’ এবার থমথমে মুখে উঠে দাঁড়ালেন বুড়ো। এরপর হাতের পত্রিকাটা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে মেঝেতে পায়ের নিচে ফেলে হিংস্রভাবে মাড়ালেন তিনি।

এতেও তাঁর রাগ কমল না বিন্দুমাত্র। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, হাতের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কিছু আসবাবপত্র ভেঙে ফেললেন। তারপর আমার সঙ্গে আরও কিছু ইতর প্রাণীকে তুলনা করে বেরিয়ে গেলেন। খুবই চটে গেছেন তিনি, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কারণটা কী? ১৫ মিনিটও কাটেনি।

দেখি টেবিলের সামনে বিদঘুটে চেহারার ছন্নছাড়া এক লোক দাঁড়িয়ে। মাথায় রুক্ষ এলোমেলো চুল। গালে দুই সপ্তাহ না কামানো দাড়িগোঁফের জঞ্জাল! কিছু বলার আগেই ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে সে চুপ থাকতে বলে আমাকে। কয়েক সেকেন্ড ধরে জুলজুল চোখে আমাকে খুঁটিয়ে দেখে বলল, ‘এই যে, তুমিই এটা লিখেছ তো? এক্ষুনি এটা পড়ে শোনাও তো আমাকে। দারুণ বিপদে পড়েছি, রক্ষা করো!’ পড়তে শুরু করলাম কাগজটা।

দুই-এক লাইন পড়ার পরই ওর চেহারায় একটা আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ করলাম। তার চোখ-মুখ থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা সরে গিয়ে ফুটে উঠেছে শান্তি আর স্বস্তির ছাপ। তার এই পরিবর্তনে উৎসাহিত হলাম। ধীরে পড়তে লাগলাম, ‘এবার তরমুজ সম্বন্ধে দু-চারটি কথা বলি। স্কোয়াশ ছাড়া তরমুজই হলো কমলালেবু গোষ্ঠীর একমাত্র ফল, যা নিউ ইংল্যান্ড প্রদেশের আদিবাসীদের খুবই প্রিয়।

কেক তৈরি করতে এই ফলকে তারা গুজবেরির থেকেও বেশি পছন্দ করে। এটা অনেক বেশি পুষ্টিকর। বর্তমানে বাড়ির সামনের উঠানে এই গাছ লাগানোর রেওয়াজ দ্রুত উঠে যাচ্ছে। কারণ গবেষণা করে দেখা গেছে, ছায়া দেওয়ার পক্ষে এই গাছ একেবারে অনুপযুক্ত। ’ এ পর্যন্ত পড়া হতেই অদ্ভুত দর্শন ব্যক্তিটি উত্তেজিতভাবে লাফিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে ঝাঁকানি দিয়ে বলল, ‘ব্যস, ব্যস, এখন বুঝতে পারছি, সম্পূর্ণ সুস্থ আমি।

আজ সকালে যখন তোমার লেখাটা পড়ছিলাম, তখন বদ্ধমূল ধারণা হলো, সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গিয়েছি আমি। ’ একটু পরেই পত্রিকার আসল ও স্থায়ী সম্পাদক সাহেব ঢুকলেন। করুণভাবে চারপাশের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে বিষণ্ম কন্ঠে বললেন, ‘জানালার ছয়টা কাচই ভেঙেছে দেখছি! হায় হায় রে! চেয়ার, পানির কলস, গ্লাস, লাইট কিছুই আস্ত নেই! তাও না হয় সহ্য করা গেল। কিন্তু আমার পত্রিকার নাম-যশ যে চিরকালের জন্য শেষ হয়ে গেল, এ কী করে সহ্য করি আমি? এ কথা সত্যি এ কদিনে পত্রিকার চাহিদা বেড়ে গেছে দারুণভাবে। যা আগে কখনো হয়নি।

খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। কিন্তু কে চায় পাগলের খ্যাতি?’ এরপর আমাকে বললেন, “দেখো, বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখো। মানুষে ভর্তি হয়ে আছে অফিসের সামনে। বাড়ির প্রাচীর, ছাদ, এমনকি গাছে উঠেও অপেক্ষা করছে বহূ লোক। সবাই দেখতে চায় তোমাকে।

এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে বদ্ধ পাগল কাউকে দেখেনি তারা জীবনেও। আবার জিজ্ঞেস করছি, কেন বলনি যে তুমি ‘কৃষিকথার’ ‘ক’-ও জানো না? অসহ্য হয়ে বললাম আমি, ‘আপনাকে কিসের কৈফিয়ত দেব? শুনুন, গত ১৪ বছর আমি সম্পাদকের ব্যবসা করছি। এই প্রথম শুনলাম, সম্পাদক হতে গেলে কিছু জানতে হয়। নাটকের সমালোচনা কারা করে জানেন? জুতোর ব্যবসায়ী আর হাতুড়ে ডাক্তাররা। যারা নিজের জীবনে একটি ছত্রও লেখেনি, তারাই সমালোচনা করে।

অর্থনীতির ওপর বড় বড় সম্পাদকীয় কারা লেখে শুনবেন? যারা জীবনে কোনো দিন উপার্জনও করেনি, খরচ তো করেইনি। যারা কখনো বন্দুক ছুঁয়েও দেখেনি, তারাই যুদ্ধবিদ্যা আর রণকৌশলের ওপর গবেষণা আর বিশ্লেষণমূলক লেখা ছাড়ে। আপনি আর আমাকে সংবাদপত্র সম্পর্কে নতুন করে কিছু বোঝাবেন না। এ ব্যবসার আদ্যোপান্ত জানি আমি। শুনুন, এ ব্যবসাতে যে যত কম জানে, সে তত বেশি চেঁচায়।

আর তত বেশি মাইনেও আদায় করে। যাকগে, আমি চলে যাচ্ছি। তবে আপনাকে মানতে হবে, আমি আমার কথা রেখেছি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ২০ হাজারে পৌঁছে দেব আপনার পত্রিকার বিক্রি। আর দুটি সপ্তাহ সময় পেলে সেটাও হতো।

আরও বলেছিলাম, আপনার পত্রিকাকে সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলব। তা-ও করেছি। এমন ধরনের পাঠক তৈরি করেছি, যারা কোনো দিন খুলেও দেখেনি এই পত্রিকা। ’ লম্বা বক্তৃতা দিয়ে বেরিয়ে এলাম পত্রিকা অফিস থেকে। আর এখানেই শেষ হলো আমার কৃষি পত্রিকা সম্পাদনার ইতিহাস! মার্ক টোয়েন: সাহিত্যিক ও সুবক্তা।

টম সয়্যার তার বিখ্যাত সৃষ্ট চরিত্র। অনেকেই তাঁকে আমেরিকান সাহিত্যের জনক বলে থাকেন। জন্ম-৩০ নভেম্বর ১৮৩৫, মৃত্যু- ২১ এপ্রিল ১৯১০। ............. সংগৃহীত

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৯১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।