আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রব্যমূল্য : আসল কাজে কেউ রাজী নয়

মাঝে মাঝে মন নিয়ন্ত্রনহীন হতে চায়; কিন্তু...............

খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং নিমড়ববিত্তের জন্য রেশনিং ব্যবস'া চালু সময়ের দাবি রমজান যত ঘনিয়ে আসছে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম যেন ততই আলগা হচ্ছে। প্রায় সব জিনিসের দাম, বিশেষ করে রোজার মাসে যেগুলোর ব্যবহার বেশি হয় সেগুলোর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাছ-মাংসের বাজারে সাধারণ মধ্যবিত্তের পড়্গে ঢোকা কঠিন হয়ে গেছে। সবজিও মহার্ঘ হয়ে পড়েছে। ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, সবধরনের ডাল, ছোলা, বুট, চিনিসহ সব জিনিসেরই দাম সাধারণ মানুষের μয়ুমতার তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।

চালের দাম বছরের শুরম্নর দিকে একটু কম থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরম্ন করেছে। মোটা চালের দাম ১৮ টাকা থেকে বেড়ে ২২ টাকা হয়েছে। আর মধ্যবিত্তের পছন্দ সরম্ন চালের দাম তত্ত্বাবধায়ক আমলের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে দ্রব্যমূল্য আবারো জনসাধারণের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারও তার লাগাম টেনে ধরার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে চলেছে।

বিশেষ করে, বাণিজ্য মন্ত্রী, যিনি ইতোমধ্যেই বাচালতায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন, তিনি তো প্রতিদিনই নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন' এসবে কোনো কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আসলে, দ্রব্যমূল্য নামের পাগলা ঘোড়ার লাগাম কখনও কি কেউ টেনে ধরেছিল? নিকট অতীতে এর কোন নমুনা পাওয়া যাবে না। বিএনপি- জামাত জোট সরকারের আমলে এর দাপট আমরা দেখেছি, পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক আমলে যা আরো বেড়ে গিয়েছিল। চারদিকে ত্রাহি মধুসূদন রব উঠলেও কোন সরকারই এর লাগাম টেনে ধরেনি, যদিও তত্ত্বধায়ক সরকার ড়্গমতায় বসেছিল জোট সরকারের ওই ব্যর্থতা দূর করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে।

তবে, গত অক্টোবর থেকে বিশ্বমন্দার প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম দারম্নণভাবে নেমে যায়। আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণে তার অনিবার্য প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ে। কিন', লড়্গণীয়, আনত্মর্জাতিক বাজারে বিভিনড়ব পণ্যের দাম যে-হারে কমেছিল এখানে সে-হারে কমেনি। যেমন, তখন জ্বালানি তেলের দাম আনত্মর্জাতিক বাজারে প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেল। এখানে কমলো মাত্র ১০ শতাংশ, আনত্মর্জাতিক বাজারে আটার দাম কেজিপ্রতি ১২/১৩ টাকা পড়লেও এখানে ভোক্তাদেরকে তা কিনতে হয়েছে ২২ টাকায়, ভোজ্য তেলের লিটার প্রতি আমদানি খরচ ৫৫ টাকা বা তার কিছু কম-বেশি হলেও ভোক্তারা ৭৪/৭৫ টাকার নিচে পায়নি।

যা হোক, পরিসি'তিগত ওই সুবিধা পেয়েই বর্তমান সরকার বিগত ক’মাস দ্রব্যমূল্য তথাকথিত সহনীয় পর্যায়ে রাখার কৃতিত্ব দাবি করেছে, যদিও বাসত্মবে তাদের তা পাওয়ার অধিকার নেই। তারা বরং ওই সময়টাতে ভোক্তাদের বদলে ওই সমসত্ম পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদেরকেই ছায়া যুগিয়েছে; যে-কারণে, এখন যখন আনত্মর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য আবার একটু একটু বাড়ছে তখন ওদেরকে কোনমতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে, আনত্মর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়তে শুরম্ন করেছে মাত্র কিছুদিন আগে। আর ওই পণ্য এখানে আমদানি হয়েছে অনত্মত ৩/৪ মাস বা তারও বেশি সময় আগে। ফলে পণ্যের দামের ড়্গেত্রে একটা বিশাল সুবিধা তারা পেয়েছে।

কিন' এখন যখন দেশীয় বাজারে তা ছাড়া হচ্ছে তখন তার দাম ধরা হচ্ছে এখনকার আনত্মর্জাতিক বাজারের দামকে ভিত্তি ধরে। এটা একটা বিরাট জালিয়াতি। কিন' তা ঠেকানোর জন্য সরকার কী করছে? বাণিজ্যমন্ত্রী জুলাই মাসের শেষ ও আগস্টের শুরম্নর দশ দিনে বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রম্নপের সাথে চারবার বৈঠক করেছেন। প্রতিটি সভায় জনগণকে একই কথা শোনানো হয়েছে যে চিনত্মার কিছু নেই, প্রয়োজনের চেয়েও বেশি মজুদ আছে, দাম বাড়ানো হবে না ইত্যাদি। কিন', বাসত্মবতা হল একেকটা বৈঠকের পর বিভিনড়ব নিত্যপণ্যের দাম কেজি বা লিটারপ্রতি অনত্মত দুই থেকে চার টাকা করে বেড়েছে।

সমসত্ম পত্রিকার মনত্মব্য হল, এভাবে চললে রমজান মাসে তা আরও বহু পরিমাণে বেড়ে যাবে। এসব আশঙ্কা প্রকাশ করার পর বাণিজ্যমন্ত্রী এখন তাঁর পূর্বসূরীদের মতো মিডিয়াকে দায়ী করছেন। তিনি বলেছেন, পত্র-পত্রিকায় অতিরিক্ত লেখা-লেখির কারণে নাকি অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে। ফলে দাম বেড়েছে বিভিনড়ব পণ্যের। কী আজগুবি কথা! তার এ বক্তব্য শুনে বরং অসাধু ব্যবসায়ীরা মিটিমিটি হাসছে।

তিনি তাদের নসিহত করেছেন ‘মুনাফাখোর’ না হয়ে ‘মুনাফাকারী’ হওয়ার জন্য। কথাটা কি এমন হয়ে গেল না, পথের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বেয়াড়া গরম্নকে একজন বলছে, ‘এই গরম্ন সরে দাঁড়া, না হলে ফুল ছঁড়ব’! এসব নসিহতের মধ্য দিয়ে মুনাফাখোরদের প্রতি কী বার্তা পাঠানোর চেষ্টা হয় তা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়া লাগে না। বিগত সরকারগুলোর সময়ে দ্রব্যমূল্য মাত্রাতিরিক্ত বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এসবের মধ্যে প্রায় সব বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতা (বর্তমানে সরকারের মন্ত্রীরাও যার বাইরে নয়) একটা কারণকে প্রধান বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেটা হল, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে বাজার জিম্মি হয়ে পড়া।

এটা ভাঙার জন্য বহু সুপারিশও তখন এসেছিল। কিন' প্রায় সবাই তখন বাজারে সরকারের হসত্মড়্গেপের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। আমাদের মত ছিল, মুক্তবাজারের ব্যবস'া বহাল রেখে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভবপর হবে না, দ্রব্যমূল্যও ব্যাপক জনগণের μয়ুমতার মধ্যে আনা যাবে না। তবে যদি অনত্মত খাদ্য দ্রব্যের ব্যবসায় রাষ্ট্র তার হাতে নিয়ে নেয় তাহলে এর সাময়িক একটা সুরাহা হতে পারে। তখন রাষ্ট্র সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে বিভিনড়ব খাদ্যপণ্য কিনে নেবে, আমদানির প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রই তা করবে।

এসব পণ্য বিপণন অর্থাৎ সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর কাজটাও করবে রাষ্ট্র। এভাবে, একদিকে ফড়িয়াদের কবল থেকে উৎপাদক, আরেকদিকে মুনাফাখোরদের কবল থেকে ভোক্তাকে বাঁচানো যায়। খাদ্যপণ্যের যেকোন কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগও বন্ধ করা যায়। অনেকে বলেছেন, সরকার অনত্মত টিসিবিকে একটা সুষ্ঠু ব্যবস'াপনার মাধ্যমে সμিয় করে একটা সমানত্মরাল পণ্যμয় বা আমদানি ও ভোক্তাপর্যায়ে বিতরণ ব্যবস'া চালাতে পারে। এর পাশাপাশি, নিমড়ববিত্তদের জন্য দুর্নীতিমুক্ত রেশনিং ব্যবস'াও চালু করা যায়।

আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার আনত্মরিক হলে এ ব্যবস'ার মাধ্যমে ভোক্তাদের পব্র ল যন্ত্রণা অল্প হলেও উপশম করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হল, সরকারও ড়্গমতায় এসেই এ ব্যবস'া কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন' বাসত্মবে কী ঘটেছে? ওই ঘটনার পর সাত মাস চলে গেলেও পরিসি'তির সামান্যও পরিবর্তন ঘটেনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রোজার আগে আগে ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্য টিসিবি নিজে আমদানি করে ভোক্তাদের কাছে বিμি করবে। তখন প্রশড়ব ওঠেছিল, রোজার আগে কেন, কেন এখনই নয়? কিন', এর কোন সদুত্তর তো মিলেইনি, এখনও ওই ব্যবস'া কার্যকর করার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না।

সমকাল গত ১০ আগস্ট খবর দিয়েছে, টিসিবির মাল এখনও জাহাজেই ওঠেনি, দেশে আসবে কবে? এমনিতেই টিসিবি যে পরিমাণ আমদানি করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। বাজারের আগুনে এর পানি ঢালার ড়্গমতা কয়েক ফোঁটার বেশি নয়। তার ওপর সময় ফুরিয়ে গেলে তা এনে কী কাজে লাগবে? এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আসল কাজে কেউই রাজী নয়। সিন্ডিকেট ভাঙা বা বাজার নিয়ন্ত্রণের ড়্গমতা বা ইচ্ছা বর্তমান সরকারেরও নেই। কারণ এরাও যে একই গোয়ালের গরম্ন।

বিগত সময়ে যে লোকগুলোকে তেল-পিঁয়াজ-ডাল ইত্যাদি পণ্যের বাজার অসি'র করার জন্য দায়ী করা হয়েছিল, তারাই এখন বাণিজ্যমন্ত্রীর পাশে বসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে জনগণকে প্রবোধ দিচ্ছে। আমরা প্রায়ই টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখছি। এদের তবিয়ত বহাল রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ কোন মাত্রায়ই সম্ভব নয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বা মহাজোট সরকার না বুঝলেও সচেতন দেশবাসীকে তা বুঝতে হবে। এ কারণে দ্রব্যমূল্যকে বেশিরভাগ মানুষের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং নিমড়ববিত্তদের জন্য রেশনিং ব্যবস'া চালুর দাবির পাশাপাশি ওদের হাত থেকে দেশটাকে মুক্ত করার সংগ্রাম জোরদার করাটাও সময়ের দাবি।

খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং নিমড়ববিত্তের জন্য রেশনিং ব্যবস'া চালু সময়ের দাবি। ভ্যানগার্ড প্রতিবেদন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.