আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর পরে পুনর্মূল্যায়ন - এটা ঈশ্বরের রীতি না; মানুষেরই রীতি।



লুবনা চর্যা সুমন প্রবাহন আত্মহত্যা করেছে, এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না। আত্মহত্যা একটা নেশা। যে কোনো স্বাধীন নাগরিক এ নেশাটা নিতে পারে। তাহলে চলো একটা মাছরাঙা হয়ে ঘুরে আসি এই নেশার রাজ্যে - ফ্যান্টাসি কিংডমে - মাত্র এক মুহুর্তের ব্যাপার। মাছরাঙা তার উৎসুক মাথাটা ঢুকিয়ে দ্যায় জলের স্বচ্ছ দেয়ালে।

সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জীবন... চলছে, যেমন চলে আমাদের জীবন : কাসরুম, লুকিয়ে সঙ্গম, প্রবল বিচ্ছিন্নতা, দুইটা গরুযুক্ত লাঙ্গলের গাড়িতে চড়ছে চাষা, জোছনায় শীতল পাটির উড়ন্ত কার্পেটে বাউল গান, কল্কে আদান প্রদান করলে চির শত্রুও হয়ে যায় চির সখা, শিল্পের প্রতিযোগিতা, বিরক্তিকর জ্যাম, আটপৌরে দায়িত্ব পালন - এইসব আরও অনেক কিছু। বেশ তো ভালই। কদর্যটাও সুন্দর; কারণ, শূন্যতায় তো কদর্যও নেই! তাই বলি সুমন এ কাজটা না করলেও পারতো। অতি সংবেদনে প্রবাহিত হয়ে সুমন প্রবাহনের মতো আমরাও মন খারাপ করি, অভিযোগ করি, হতাশা কিংবা প্রতিবাদের স্বরলিপি লিখি; সব মিলিয়ে কেলাসিত হয় প্রচ্ছন্ন এক ঘৃণা। কিন্তু আমরা যে ঘৃণা করবো এটা আমাদের পিতামাতারা জানতো না ।

তাই অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না, জোর করে পথে আনতে চায়। ফলে আমরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যাই। এই ফিলিংস সম্পর্কে টোকাই শিশুদের কাছে প্রশ্ন তুলি। ওরা অবলীলায় দার্শনিকের মতো উত্তর দ্যায়, যেন এইটা একটা বলার মতো কিছু হইলো? ছোট ডানায় নিজের মতো করে ওড়ে আস্তাকুড়ের আশেপাশে, সন্ধে বেলায় রেষ্টুরেন্টের দামী দামী এটো খাদ্য খেয়ে শালুক ফুলের মতো হাসে। ওদের দেখেও সুমন শিক্ষা নিতে পারতো।

সুমন এই কাজটা ক্যানো করতে গ্যালো? অতো বেশী কবি হইতে ওরে কে কইছিলো? ও কি জানতো না পৃথিবীটা ঠিক কাব্যিক না, চার্লি চ্যাপলিন যেমন হাস্যকর স্ট্রাগল চালিয়ে যায় লোহা লক্করের আস্তানায়। লোহা লক্করের শ্বাপদ, লোহা লক্করের সরীসৃপ লোহার দাতে হা করে আছে। তুমি মগ্ন হয়ে পড়লেই তোমাকে শিকার করে ফেলবে। এজন্য দীর্ঘ দীর্ঘ শতাব্দী ধরে তোমাকে জেগে থাকতে হবে, মানে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে তোমার অস্তিত্বের প্রয়োজনে। আবারও Survival of the fittest?? সুমনের মনে হয়েছিলো : ক্যানো হবে? আমাদেরও মনে হয় : এমনটা ক্যানো হবে? বিবর্তনের সিড়ি বেয়ে এটা এসেছে, আমরা কেউ ঘোড়ার মতো পিঠে করে বয়ে আনি নি।

অথচ তার ভোগান্তি পোহাতে হয় সবখানি। হয়তো সামন্ত সমাজের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা ও এ্যাকে অপরের বিষয়ে যথেচ্ছ হস্তক্ষেপে বিরক্ত হয়ে মানুষেরা আত্মবিভোর বা আত্মকেন্দ্রিক হতে চেয়ে আবিষ্কার করেছিলো ব্যক্তি স্বাধীনতা। শেষে নিজের ফাদে নিজেই ধরা। কিন্তু আরও গভীর করে ভাবতে হবে - কিভাবে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে অক্ষুন্ন রেখেও সামষ্টিকতাকে ছোয়া যাবে? সুমন থাকলে ওকে সাথে নিয়েই ভাবা যেতো। ভাবতে ভাবতে ও হয়তো আত্মহত্যার কথা ভুলে যেতো।

সুমন প্রবাহনের কবিতা সুমনের আত্মার কেটলি হতে অজস্র ধূম্রকুণ্ডলীর বাতাসে মিশতে চাওয়া। কারণ, বাতাস তো আন্তর্জাতিক। এই লেখায় আমি সম্ভবত অনেক উদ্ধৃতি উল্লেখ করে ফেলবো। কিন্তু বলার আসলে কি আছে! সুমনের কথা সুমনই বলুক - সুমনের কবিতায় মানুষের মীথ থেকে উঠে আসা সার্বজনীন কিছু শব্দের উপস্থাপন দেখি; যেমন : বোধি, আত্মা, মানুষ, কবি, প্রজ্ঞা, জাতিস্মর, শূন্য, মহাশূন্য ইত্যাদি... ভূতগ্রস্থ মহাশূন্যে ঝাঁপিয়ে মেলেদি' দু'হাত শুনশান পতন নামে অস্তিত্বের চরাচরে পতন ডানার এ ঝাঁপে হারিয়ে ফেলি সময় বুকের ভিতর ওৎ পাতে সময়হীন মহাকাল স্থানিকতা শূন্য এ যাত্রায়, যা দেখি সেখানে চোখ নয় যেখানে চোখ সেখানে দৃষ্টি নয়। (পতন) আর আসবেন তিনি; হাজারও মানুষের প্রত্যাশা এই হাজারও মানুষ বৃষ্টিমুখী অগ্রহায়ণের রোদে পোহাবেন শীত মৃত মানুষদের কল্যাণ হোক বলবেন তিনি।

(ইমাম) আমরাও যাব ঠিক হয়তো বাণিজ্যে নয় যেভাবে প্রাচীন প্রজ্ঞা দূরগামী হতো (মৃত্যুক্ষুধা) সাদা পাত্রে ধরা আত্মা আমার যেন সবুজ আপেল (কেউ নই শূন্য মাতাল) দ্যাখো আমার পকেটটা হাতিয়ে দ্যাখো কি আছে সেখানে ইচ্ছে করলে তুমি আমার লিঙ্গটাও হাতিয়ে দেখতে পারো কেননা মানুষ তো নই আমি। (ভ্যান চালক) কোন খোঁজ ব্যর্থ নয় চোখে রেখো অই ভস্ম হে বোধি, বৃক্ষ আমার! হে প্রকৃত রণ! ফিরে আসবো সংকোচনে পাটি গোটাতে গোটাতে ছায়াপথে পথে কালো গহ্বর নিয়ে হাতে (কেউ নই শূন্য মাতাল) অসংখ্য নঞর্থক শব্দের সমৃদ্ধতা আছে সুমনের কবিতায়। নঞর্থক পৃথিবীর নঞর্থক ইন্সট্রুমেন্টস, যেমন : যায় দিন ভালো আসে দিন কালো (বুকের বোতাম খুলে দিলেই মাছ ছিলো) ঐ যে পৃথিবী নীল গ্রহ আমার (কেউ নই শূন্য মাতাল) ভাঙনও ভেঙ্গে যাবে একদিন বিশ্বাস মাত্র। যদিও চারিদিকে চৈত্রের চৌচির রক্তের কণিকায় কণিকায় বিশ্বাস হত্যার প্রেত নাচে। (চারিদিকে চৈত্রের চৌচির) হাটে হাটে যত শ্যাম তার বেশী শকুন।

(হাড়ে-পাঁজড়ে রূপকথা) বুকে বিষ নিয়ে মুখে মিষ্টি আমার (টাইম মেশিন) নিজের ঘরে নিজেই কবর খুঁড়ি শুয়ে পড়ি কবরের হা-এ আমায় ঘিরে উৎসব নাচায় মৃত কংকালেরা চোখে চোখ রেখে পায়ে আমিও নাচি আর হঠাৎ বেরিয়ে পড়ি কবর ফেটে দেখো নখ গজিয়েছে, দেখো দাঁত কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাতে পাবি তাকে ছোঁ যে আমাকে ছোঁয় তাকে মৃত্যু ছোঁবে। (আওয়াজ) রেভুল্যূশন অ'র ডেথ মৃত্যু যে দুঃখ আনে ওরকম একটি দুঃখ আমারও তৈরির ইচ্ছে নির্লজ্জ গোপন প্রাণে। (আমাদের পোশাক, কমরেড) কিছুতেই অন্যরকম হতো না যদি বায়ে ভর করে হাঁটতাম তবে ডানেও একই ফলাফল হতো কিছুতেই অন্যরকম হতো না অনিবার্য আমার পায়ে পায়ে হাঁটে। (দোলনা) এগুলো আসলে নঞর্থকতা, না কি নঞর্থকতার প্রতি অভিযোগ? তেমনি কিছু বিস্ময়ের সমাবেশ দেখি সুমনের কবিতায়। এগুলো প্যাসিমিস্টও, আবার অপটিমিস্টও।

প্যাসিমিস্ট বিস্ময়গুলো আগে খুজে দেখি : বৃষ্টি দেখে আর আশ্চর্য হবো না শীত নামলেও না বরং রোদ পোহানো বিস্ময়কর কিছুটা জলত্যাগে শিশ্নের নালায় যে প্রবাহ সেটা বিস্ময়কর। (নিকোটিনের আহ্বান) একদিন আমি ভাবনাকে মিলতে দেখি বস্তুর সাথে হতভম্ব হয়ে পড়ি বস্তু আর জীবের সংকেতে সংকেতে বিপন্ন বোধ করি এভাবে নিষ্ঠুর আর বিপন্ন মানুষ কখনও দেখিনি (বাস) এর প্রতিপিঠে অপটিমিস্ট বিস্ময় : বস্তুবাদী পৃথিবীর সাফল্য আমি জানি জেনে যতটা অবাক তারও চেয়ে গভীর বিস্ময় ওই সূর্যের আলো (কয়েক মিনিটের সুখ) ঘুরে ফিরে প্রকৃতির ছায়া ঢালে সুমনের ব্যক্তিক ছায়ায় - পর্যটন কর্পোরেশন কি ভাবছেন মাতালদের নিয়ে; নাইবা ভাবলাম ভাবতে পারি দীঘি নিয়ে, মাছ নিয়ে জোনাকিরাও থাকতে পারে শালবনে (বারো অগ্রহায়ণ : ১৪১২) বরং কিছুক্ষণ বড়শি হাতে ছোট নদী, খালে কাটুক সময় মাছদুপুর আজ নামুক মহাকালের লগ্ন কুড়িয়ে। (আমার গ্রাম) সুমন তো নিজেই প্রকৃতির একটা পার্ট। তারপর আবার সে তার অস্তিত্ব নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে প্রকৃতির অন্যান্য পার্টস-এ। চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠে সূর্য তার রোদের ঝাঁপি তুলতে বিকেল করে মাঠ জুড়ে টমেটোর ছোপ ছোপ লাল।

চোখ থেকে ধীরে চুন-সুরকী খসে খসে পড়ে। (চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ) 'ঠেলে ধরি ঢেউয়ের দেয়াল' কবিতাটা তো পুরোই একটা আ্যনিমেশন। তার থেকে কিছু অংশ - হুম্ করে ওঠে সমুদ্রসিংহ ছুটে আসে ঢেউয়ের হাতি পালে পালে। ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে ঠেলে ধরি ঢেউয়ের দেয়াল দিক বদলাল তাই পৃথিবীর হাওয়া। (ঠেলে ধরি ঢেউয়ের দেয়াল) তবুও আমি খিঁচে মেজাজে সারাটা বেলা' চারুকলা নেমে যাই পাতালপুরীতে, শুয়ে থাকি বসে পড়ি 'বাড়ি নাই' - গান গাই।

আমাকে বুঝতে পারে ঘিরে থাকা গাছ দেবতারা ঝুঁকে পড়ে বলে, মন খারাপ ? (কলকিতে পোড়ে আত্মা আমার) গাছ দেবতারা যদি ঝুকে পড়ে জিজ্ঞেস করে, মন খারাপ? তাহলে তো যে কারোর ই মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। সুমন কিছুকাল আ্যস্ট্রোনোমিকাল আ্যসোসিয়েশনেও ঘোরাঘুরি করেছে। মহাবৈশ্বিক ব্যাপার বা বিভিন্ন নাম নত্রের গ্লাস হতে রোদ্দুরের মতো ছলকে পড়তে দেখি ওর কবিতায়। সূর্য! দেখি তোমাকেও কখনও কন্যা রাশিতে কখনও তুলা, বৃষ-মেষ-বৃশ্চিকে দেখি গ্রহণের অক্টোপাসে, তবু প্রশ্নহীন, পকেটে অসংখ্য ছায়াপথ ভেসে যাই ছুটে ছুটে যেন ধূমকেতু-আন্তঃনাক্ষত্রিক। ক্রমপ্রসারমান ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে।

বেড়াই। সাদা কিংবা কালো- গুহা গহ্বরে, (কেউ নই শূন্য মাতাল) রেডিওর দ্যুতি ছড়াতে ছড়াতে এই যে ছুটছি, ছুটে যাচ্ছি আলোর গতিতে গোপন কোয়াসার। (কেউ নই শূন্য মাতাল) কৃষ্ণপরে আকাশ রাতে গ্যালাক্সিটার প্রান্ত টেনে চাদর জড়াই লোকে বলে, পাতা জুড়ে জোনাকির ঢল। হেসে উঠলে ঘুমের হা-এ ঢুকে পড়ে ডজন দুই কৃষ্ণ গহ্বর (চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ) কিছুদিন থিয়েটারেও কাজ করেছিলো। তার ছাপ - আমাকে মেলায় নিয়ে যেয়ো নিয়ে যেয়ো মঞ্চে (হার্ড টক) সুমনের জীবনে মায়ের প্রভাব ব্যাপক।

ফ্রয়েডীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সরে এসেও আমরা এর তাৎপর্য বুঝি। মায়ের মৃত’্যতে সুমন দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো, মরুদ্যান উধাও হলে ছায়াপ্রার্থী পাখিদের যে অবস্থা হয়। মা-ই ছিলো মানবীয় পরিমণ্ডলে তার সবচেয়ে সফল যোগসূত্র। 'মা' কবিতাটি সম্পূর্ণ এখানে উদ্ধৃত হলো : সাদা বক ওড়ে সাত আকাশের বাঁকে দুধ-ভাত হোগলা পাতার মাদুরে মা যদি ডাকে। (মা) আর এখানে তো আরও তীব্র আকুতি - অন্ধকার রাতে নিজস্ব নত্রের পাহারায় অনেক চেনা কবরের অচেনা অন্ধকারে কংকালের গলা জড়িয়ে ধরি মা, আমার গায়ে খুব জ্বর! (পতন) বাবা ছিলো সবচেয়ে ব্যর্থ যোগসূত্র! মানুষের চোখে মুখে প্রাণ নেই এ মৃত্যুমুখো মানুষ দেখতে ভালোলাগে না তেলাপোকা ডিম পাড়ে এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে সামনে ঘোরাফেরা করে প্রতিমুখ বাবার গায়ে কাফনের গন্ধ (নিকোটিনের আহ্বান) চিন্তিত মেধায় কেঁদে তোমার মা আজ শয্যাশায়ী তোমার বাবাকে মা করো ফিরে এসো ঘরে' (নিখোঁজবিজ্ঞপ্তি) ক্ষমা করার প্রশ্ন ক্যানো আসে? তার মানে, অভিমান ছিলো।

সুমন চেয়েছিলো বাবার সম্পদ থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে নিজের শিকড় দিয়েই মাটি থেকে জলকণা পেতে। আমি পিতার সম্পদে ভর করতে যেয়ে কখন হারিয়ে ফেলেছি নিজেরই মেরুদণ্ড আর ঈশ্বর তুমি কৃপা করো, দরোজা খোলো আমি নিজের পথেই দাঁড়াতে চাই সম্মানের গালিচায় (কয়েক মিনিটের সুখ) সুমনের কবিতাগুলো প্রধানত মনোলগ। ডায়ালগ বা বহুলগ নয়। শহরকেন্দ্রিক এই আ্যলাইনেশনের চিত্র আমরা পাশ্চাত্য কবিতায়, নাটকে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, দর্শনে এমনকি সংগীতে বহু আগে থেকেই দেখি। আমাদের সাহিত্যে জীবনানন্দ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাদের সমসাময়িক কাল হতে শুরু।

ভাবতে অবাক লাগে, এই আমরাই একসময় সবার জন্যে ছাড়া ভাবতে পারতাম না। যার ভিতর 'সৎ' বিষয়টা ছিলো, অর্থ্যাৎ বেশি 'আমি আমি' ভাব ছিলো - তাকে সবাই ঘৃণা করতো। তাকে পরিত্যাগ করা হতো। আশির দশকের কবিতায় নি:সঙ্গতার একটা স্পষ্ট অবয়ব তৈরী হয়েছে। তারপরে নব্বই এবং নব্বই পার হয়ে এই দশকের শেষপ্রহরে সুমন প্রবাহনের আত্মহনন - সময়টা হিসেব করলে নি:সঙ্গতার ম্যাকলারেন কারের গতিবৃদ্ধির হারটা অনুভব করা যায়।

একাকীত্ব বোধ তৈরীর অনেক আগে থেকেই আমি একা (একা) যেন বহুকাল হলো অনেক দুপুর আমার পা চিরে শেকড় নামে চামড়া ফেটে গজ গজ করে ডালপালা। তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ (চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ) জানা হয়তো নেই তোমার আমি হাওয়া হতে রঙধনুর ডাক পাই আগুন জ্বলে গ্যারেজের শুয়ে থাকি টঙে এখনও রোডে গল্প চলে আমি অনুপস্থিত। (হার্ড টক) বারবারই সুমন চেষ্টা করেছে সমমনাদেরকে নক করতে। নিজের অসুস্থতার বাক্স তাদের কাছে উন্মুক্ত করতে। কিন্তু এ ধরনের একটা বাক্স আমাদের প্রত্যেকেরই আছে।

তাই কেউই অন্যের বাক্সের তত্ত্বাবধান করতে আগ্রহী হয় নি। তার আরেকটা কারণ হচ্ছে, এ বাক্সের খোলে বন্দী আছে কিছু সংক্রামক ভাইরাস। সুমন নিজেও সেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। অহেতুকই সে ওটাকে নিজের অসুস্থতা ভেবে মনোকষ্টে ভুগেছে। বরং ওটা একটা জ্বলজ্বলে সালফারযুক্ত বীভৎস খুলি, আর আমরা একেকটা আয়না।

আয়নাতে রিফেকশনটা আসে; আমরা তখন ভুল করে নিজেকেই দায়ী করি। পাহাড় কেমন আছে জানি না দীর্ঘকাল দেখা হয় না তাকে আমার ব্যাধি দেখিয়ে বলবো আমি অসুস্থ। (১৯৪২ - এ লাভস্টোরি) কী এক সর্বভুক তেলাপোকার মতো অস্তিত্বের ক্ষীণতা অস্থির নিয়তি যেন পিছু ছাড়ে না কিছু দেখে শান্তি নেই কিছু ছুঁয়ে শান্তি নেই দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে কোথাও শান্তি নেই শান্তি পেয়েও যেন শান্তি নেই। (পতন ও প্রার্থনা) রাজনীতি সম্পর্কে সুমনের স্বচ্ছ এবং সহজ কনসেপ্ট বিস্মিত করে। জনসংযোগহীন একটা মানুষ - সে সংযুক্ত ছিলো সর্বত্র, সবকিছুতে।

একটা ক্ষুধার্ত কুকুর রাস্তায় হাঁটছে - আমার মন্বন্তরের ব্যথা মনে হয় (শ্রমঘামে নিষ্পাপ বেদনা) জেরুজালেমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে পৃথিবীতে শান্তি ফিরবে কিনা এ নিয়ে আমি কোন কুতর্কে যাবো না শুধু জানি জেরুজালেমে ইতিহাস চিরকাল অশান্ত যেন চিরকাল কান্না সেই ঢেউ পৌঁছে যায় পৃথিবীর -কানায় কানায় (ইমাম) এবং ধনিকের তালিকায় ফিদেল ক্যাস্ত্রো এলে আমি তার মর্ম উদ্ধারে থাকি ! (যেন আমিই ছিলাম) জেনারেল আমার মৃত্যুযন্ত্রণা বেশিক্ষণ স্থায়ী না হয় জেনারেল দ্রুত; দ্রুত করো আর আত্মায় ভর করে চলে যাবো নিঃশব্দে অস্পৃশ্যালয়ে (রাত একটা পনেরো মিনিট) জেনারেল এসব কথা হয়তো আপনি জানেন আপনার উপস্থিতিতে আমি বলে উঠি, ইয়েস্ স্যার এবং হাঁটি, বাম ডান... বাম... এবং আমি ফাঁসি কাঠে জেনারেল ফাঁসির কাঠে আমার দীর্ঘশ্বাস আপনি মনে রাখবেন। আমার ফায়ারবক্সটা খুঁজে পাচ্ছি না জেনারেল সিগারেট জেনারেল ম্যাচটা ধরুন আমার হাতটা উড়ে গেছে। (রাত একটা পনেরো মিনিট) কী প্রহসন! তপ্ত ভূখণ্ডে পা, তপ্ত সূর্যে ঠেকিয়ে মাথা সুমন শিশুত্বে চেয়েছে পরিত্রাণ, ভেবেছে এভাবে হয়তো সম্ভব। তবু আমি যত আলাপই করি অর্থাৎ যে ভঙ্গিতে তোমার একান্ত হয়ে রই মনে রেখো! শিশুরা আমায় অলৌকিকভাবে রক্ষা করলো। (রোদের গন্ধ) শিশুদেরকে সুমন সরাতে চেয়েছে সার্বিক ভাঙন থেকে।

কেননা, তারা তো উত্তর প্রজন্ম। তারা এখনও দূষণমুক্ত। মনে হয় সুদীর্ঘ আদিম হতে এই যে মানবযাত্রা এর শেষফল এই শিশু যতনের হীরামণি ! (রাত একটা পনেরো মিনিট) শিশুতোষ মজায় মেতে উঠতে দেখি সুমনকে, তখন তার সব অবসাদ কেটে গ্যাছে। কিন্তু বাড়ন্ত দেয়ালে জোনাকি কোণঠাসা হলে আমরা গাছের সমাদর বাড়াব আমরা আরও আরও ঋতুপ্রবণ হব মেঘ আসলে বলব ' কানা মেঘারে' ! (জমি যে জমিদার) সোনালী বিড়ি ধরানোটা খুবই ভালো লেগেছে - মাঠে যাই বরং, ক্ষেতের আল বেয়ে হাটু জলে ছল ছল জল-শব্দে হেঁটে যাই একটু জিরিয়ে নিই ক্ষেতের টঙে স্টোভের ছাই আগুনে, ধরিয়ে নিই সোনালী বিড়ি। (চারিদিকে চৈত্রের চৌচির) এ্যাতো দগ্ধ একটা মানব সন্তান যখন বুভুক্ষুর মতো লেখে শান্তির কথা, তখন ক্যামোন লাগে? বরং খুব সকালে নয় ভোরে উঠবো চাদর মুড়ি দিয়ে কুয়াশায় ভাঁপা পিঠা খাব বরং কিছুটা পথ হেঁটে একটা সিগারেট ধরাবো মোড়ের দোকানে চা রোদ উঠলে চাদরের গায়ে সূর্য জড়াবো, ফিরে আমার বিছানায় শুয়ে থাকবে দীর্ঘঘুম।

(পেন্সিল স্কেচ) একদম সাধারণ, অথচ কী স্বপ্ন আচ্ছদিত! পড়ার পর আমারও ইচ্ছে করছে কুয়শার পরত পরত ঝিল্লী সরিয়ে পথের পাশে ভাপা পিঠা ভোজন শেষে একটা সিগারেট ধরাতে। সেতুর উপর আমরা ক’জনা ডানা মেলে গাঙচিল হয়ে উড়ি (পতন ও প্রার্থনা) বাঁশি বাজে খুব বাঁশি বাজে খুব আমি সুরের পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ি (রাত একটা পনেরো মিনিট) তাতে কি তুই একটু ভালো থাকবি? সুমনের মধ্যে যে আগ্নেয়গিরিটার অঙ্কুরন ও বৃদ্ধিসাধন ঘটেছিলো, সেটা বিস্ফোরন ছাড়াই ভ্যানিশ হতে পারতো - যদি এসব কথা শেয়ার করার মতো সে কাউকে পেতো। কবিতায় তো লেখাই যায়, কিন্তু মানুষের তো মানুষ বন্ধুরও দরকার হয়। এক্ষেত্রে বারবার তাকে বিমুখ হতে হয়েছে। আক্ষেপ করে বলেছে - কেউ নেই তোমার বন্ধু কোন।

নিজেকে এই কথা জানিয়ে চুপচাপ বসে থাকি বিছানায়। (ফিরে দেখা) এই অবস্থাটা কাটাতে কল্পনা করেছে - কেন যে গাছ জন্ম হল না একবার পাশাপাশি দাড়াতে পারলে আর দূরত্বের ভয় থাকতো না। (বন্ধুত্ব ও দূরত্ব) প্রেম নিয়ে কী লিখবো, তাই ভাবছি। বিষয়টা আমার কাছে এ্যতোটাই দ্ব্যর্থবোধক এবং বায়বীয় যে, কিছুই বলার নাই। আবার যেটুকু ধারণা প্লাস কল্পনা ছিলো, তাও এ্যাতো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে - আসলেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছি।

কিন্তু সুমন সত্যিই প্রেমে পড়েছিলো। আমি এমন বিকল অসুস্থ নিকট কারাগারে ভাবছি প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গহীনতায় যারা জানে কোন এক নারী প্রিয়তার কথা অথচ মুখ ফুটে বলি নি কখনো তবু না বলা কথাও রাষ্ট্র হয়ে যায় (আমি আসছি) বন্ধুরা তো জানবেই। এইসব অদরকারী খবরগুলা বন্ধুরাই রাখে। সুমন চেয়েছিলো বিশ্বাসকে টিকে থাকতে দ্যাখার আশ্বাস; শীতলতা, আর একটু ছায়া.... কটকটে রোদে কি তাকানো যায়? একদিন আমার গায়ে আগুন ধরে যায় কামনায় লোমকূপ বেয়ে ঘাস গজিয়ে ওঠে সমুদ্রগর্ভে নেমে পড়ি ডলফিন ডলফিন তোর শরীর ছুঁয়ে স্রোতে ভাসি (পেন্সিল স্কেচ) এখানে তো ক্যামোন একটা অগ্নিলিপ্ত শিহরণ- থাকো কিংবা নাই থাকো তোমাকেই ছুঁয়ে থাকি ছোঁয়া! কি এমন আণবিক খেয়া যে আমায় লেজারের আঙরাঙ্গা করে তোলে আর ভেঙে দেয় মন্ত্রে মন্ত্রে শৃঙ্খল নির্দেশ। (হাড়ে -পাঁজরে রূপকথা) এক পরাবাস্তব ভয় গ্রাস করেছে সুমনকে, আমাদের সবাইকে।

ভয়টা অবশ্য অতি বাস্তবই। ভয়ই বলে দেবে, ক্যানো এ্যাতো ভয়? পিঁপড়ে খেয়ে গেছে ঘাসফড়িং প্রজাপতি যত এমনকি তেলাপোকা আমি পিঁপড়েদের বলে দিয়েছি আমার কাছে চক আছে কিছু দৃশ্যের বিরল বাস্তবতার মুখোমুখি। (নিকোটিনের আহ্বান) জানলায় ফাঁক গলে যে রোদ জ্যামিতি খেলে মেঝেতে মোটা লেজের একটা টিকটিকি ভয় দেখায় এখানে রহস্যময় দোকানগুলো খোলা আছে তারা লোকে লোকে রহস্য বিক্রি করে (নিকোটিনের আহ্বান) শিকারি কার্তুজে ডাল থেকে খসে পড়ে হলুদ পাখির আত্মা বুঝি আত্মার বেদনা ভর করে। উপত্যকা ঘিরে নামে মৃত্যুঢোঁড়া সাপ কাফন ডানার চাদর মেলে দেয় প্রেতের শাসন দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে গুটিকয় রক্তচোষা বাদুর ভাম ঝকমারি আলোর অশ্লীলতায় চোখ ফেটে রক্ত বইতে থাকে (আওয়াজ) ওর আপত্তিগুলো, ক্ষোভগুলো স্যাটায়ারে পরিণত হয় এভাবে : হায় আশা পালালে তুমিও 'করতলের ঘা যে চাতুর্যে ফাঁকি দেয় মশা। ' (নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি) বীমা কোম্পানি আসে না আমার কাছে পায়ের বীমা করাতাম না হাঁটতে হাঁটতে পায়ের যতটুকু মূল্য বাড়ল তা বুঝিয়ে দিতে।

(বারো অগ্রহায়ণ : ১৪১২) তবু শখের বিমান উড়ে গেলে পর হ্যাঙারে বসে গাড়ি ভাবে - যুগটা বিমানের (বুকের বোতাম খুলে দিলেই মাছ ছিলো) অন্ধকারে থাকি অন্ধকার মাখি অন্ধকারে ঠাঁই অন্ধকারে দেখি থাকেন তিনি আলোকিত সাঁই এ খেলায় বড় মজে উঠি, দারুণ পুলক শান্তি চেয়ে আমি ধনুক প্রবণ। (হে শূন্য) ক্ষেপে গিয়ে প্রতিশোধও নিতে চেয়েছে - দোযখের কসম আমার কিরিচে অগ্নিময় হবে কিছু মানুষের লাশ আর আমি হাসতে হাসতে পৃথিবীর কাছে নিজেকে খুনি প্রমান করে বলবো গুডবাই পৃথিবী। (চলে যাবো দূর বলয়ে) স্রোত যেন বা নদী বয় শিরায় উপশিরায় ড্রাকুলা কাল আমি মোম পোড়াবো সূর্যদেহে। (অন্ধকার গলিপথে) বহুবিধ প্রত্যাখ্যানের কান্তিতে নিপীড়িত হয়ে সুমন যখন বিম্বিত তরল পদার্থে রুপান্তরিত হয়, তখন সে প্রার্থনা করে... পাল তুমি কোথায়! আমাকে পাল তোলো পাল তোমার পালে। (মণিহীন কাফন মানুষ) ভোর দাও প্রভু দেখা দাও যাপনলিপিতে যেখানে উত্থান যে কোনও পতিত পার্বণে তোমারই আশায় দিন বয়ে যায় ঝরাপালকে ঝরাপাতায়।

(পতন ও প্রার্থনা-২) মিলন হোক কোনও ঊর্ধ্বলোকে যেখানে শুনশান বাতাস কথা কয় (পতন ও প্রার্থনা-২) রহস্যময়তার এত ভার সইছে না যে আর, তুমিও অংশ হও আমার যাতনার। (পতন ও প্রার্থনা-২) বন্ধু টেনো না রিকশার হুড বৃষ্টিপরীর গানে ভিজুক আজ পুরোটা শহর। (পতন ও প্রার্থনা-২) স্নিগ্ধ এক বাঙালি জোনাকি সুমনের সহচর। অন্ধকার মেঠোপথে তার আলোতে সুমন উপকৃত হয়। শালিক তুমি সমাজ গড়ো পালকের সমাজ চর্র্যাপদ হয়ে আমি এখানে এই যে বাঙালি আমরা রিকশা ভালোবাসি- রিকশার চিত্রকর- ভালোবাসি (বারো অগ্রহায়ণ : ১৪১২) আমার হজমের দাপট প্রবাদিত হয় মাঠে মাঠে কৃষ্ণকুলে জমা হয় কুমার পাড়ার হাড়ির খুলিতে।

(চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ) ধানের অজস্রে ভীত গোলা প্রতাপশালী মাছের নদী আর গাভীর দুধে তটস্থ গোয়ালা পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, আল-বেরুণী কিংবা হিউয়েন সাং পৃষ্ঠাজুড়ে সে রাজ্যের যশ প্রতিপত্তি। (প্রত্ন সাম্রাজ্য) সুমনের লেখায় একটা ব্যতিক্রমী জিনিস ল্য করি, সেটা হচ্ছে আরবী-ফারসী-উর্দু শব্দের কিঞ্চিৎ ব্যবহার। এ ধরনের শব্দ ব্যবহার আজকাল তেমন দেখি না। তবু সত্য তবু সত্য 'হোস নে কারও এন্তেজারি' (কয়েক মিনিটের সুখ) এই নাও কিছু অক্ষর সম্বল আমার কিছু যাদুকরী ছবি আর একখণ্ড কিতাব (পতন ও প্রার্থনা) আরও আছে। 'হারিকেনের চিকনি' এই আঞ্চলিক শব্দটার ব্যবহার বেশ মধুর।

এখন নিশি রাতে আমার কবি হারিকেনের চিকনি বেয়ে গলে গলে ছড়িয়ে পড়ে (জেগে জেগে ছুটে বেড়ায় মেঘে মেঘে) শূন্যতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই সুমনের মধ্যে। এটা কোনো বস্তুগত শূন্যতা না। এটা বোধ করার শূন্যতা, যা উৎড়িয়ে যায় জ্ঞানের সীমা। যা পাসপোর্টের সীমা লঙ্ঘন করে বস্তুজগত বা প্রাণীজগৎ - যেখানেই ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারে। ফলে তার মনোজগৎ কাজ করে ভিন্ন এক মাত্রায়।

সবাই তা বুঝতে পারে না। ফলে সুমন বা সুমনের মতো জনকে এসব কথা চেপে যেতে হয়। যে কারণে চর্যাপদের কবিরা নিয়োছিলো সন্ধ্যাভাষার আশ্রয়। সূক্ষ্মতা আজকাল বড় ভয় পাই যে বন্ধনে আমি অসীমের বাঁধনে তার রূপ আমি লোকালয়ে ভয়েই বলি না (রজনীগন্ধা) বললেই তো পাগল, সিজোফ্রেনিক ইত্যাদি উপাধিতে চিহ্নিত হবার আশঙ্কা... ভাবি, শূন্য হয়ে এক থেকে আজ অই সাত- খণ্ড। নিজেরই তৈরি যে নরক - কোন, গ্যাসচেম্বার হাইরাইজ কুঠুরিতে ফেরো ক্লান্ত ফাইল তুমি তোমার গ্রাউন্ড ফোরের নিচে খুঁজে পাই ডাইনোসরের পা-পায়ের ছাপ (কেউ নই শূন্য মাতাল) যখন আমি বুঝতে পারি মাটির ঘ্রাণ মানুষের সীমানা পড়তে পারি পাতা ও পতঙ্গ তখন কে আমার পায়ে পড়িয়ে দেয় এমন বিভ্রম (কয়েক মিনিটের সুখ) পথে পথে পৃথিবীর যত পথ দলে দলে মিশে গেছে ওই চোখের গহন শৈশবে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে ডানার বিস্তারে ভাসমান অসংখ্য ছায়াপথ, সৌরলোক গ্রহাণুপুঞ্জে ধাবমান যত সৌন্দর্যের ভিড়-নুলো ভিখারি ওই চোখের সম্মোহনে।

ওই দৃষ্টি-পেশিল পাইথন গভীর সামুদ্রিক চাপে শত শত মৃত্যুকে গেঁথে ফেলে। ধমনী শিরায় কি এক জোয়ার-ভাটার তোড়ে উছলে দেয় ধাঁধা লাগে আর তাতে দিকে দিকে ভূমিষ্ঠ হই আমি। (হাড়ে -পাঁজরে রূপকথা) একনিষ্ঠ হয়ে পতিত হতে হতে পতনের দীর্ঘপথে সুমন কিছু আপ্তবাক্য নিপে করে উপর থেকে ঝুকে তাকিয়ে থাকা হিংসুক দেবদূতদের চোখে-মুখে। গৌণই মুখ্য রাখে সবকাল মহাকাল সংখ্যালঘু খুব নিঃসঙ্গে সুস্থ হয়। (পতন ও প্রার্থনা ২) চির মানবের সাযুজ্য আমি জানি তাই ভিন্ন কিছু কিছুতেই ভাবি নি।

(রজনীগন্ধ্যা) বিলীন হয়েছে, হবে জন্মের পর নিরানব্বই ভাগ বীজ টিকে আছে তার ওপারের একজন। (কেউ নই শূন্য মাতাল) পথ তো বৃত্তাকার কালও তাই শুধু পোশাক পাল্টায় (পতন ও প্রার্থনা-২) বৃক্ষবাসী পাখির মতো সুমন ফিরতে চেয়েছে গোধূলিতে কিংবা সূর্যাস্তের পরও একটু দেরী করে। ফিরতে চেয়েছে শিশিরমাখা পৃথিবীর কাছে, অন্য এক ভোরকে ফিরে পাওয়ার সাহসে। আমি নিজের কবরের পাশে বসে থাকি আর দেখি মার্বেল দুপুর। জাতি-উপজাতি ভেদ।

ভেদে আমার মন নেই। মাঠে ধূলোখেলা। প্রিয়তমাসু তোমাকে লিখছি, আসব আমি ডানপিটে এক বিকেল পেরিয়ে যেখানে সূর্য করে মেঘের সাথে খেলা বসে থাকি নির্জনে কোনও এক পাখিবেলায়। (বসুন্ধরা) রেঁনেসাস নিয়ে কিছুই ভাবিনা আর রেঁনেসাস গৃহবন্দি কীর্তনখোলা নদীতে আমাদের স্নান -বৃথা নয়। বৃথা নয় কাঠবিড়ালি (হার্ড টক) স্বল্প যতিচিহ্নে সুমনের কবিতাগুলো কবিত্বসুলভ ফ্যান্টাসি নয় এ্যাকেবারেই।

এর যতো লাবণ্য, কেদ, অভিযোগ, সন্দেহ, মর্ষকামিতা, কৌতূহল, সাংগীতিকতা - সবই একজন স্বপ্নাহত মানুষের নিউরোনের টাইপ রাইটার থেকে খসে পড়া। শেষের দিকের সুমনের লেখায় যথেষ্ট পরিবর্তন আসছিলো। কিন্তু সুমন এই আংশিক পরিবর্তনে তৃপ্তি পায় নি, ও চেয়েছিলো সর্বাংশে তুমুল পরিবর্তন। মনে পড়ছে, সুমনের নির্বাপনের পর ওর বাড়িতে কয়েকজন বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম। সুমন তার বিছানায় শুয়ে ছিলো।

একজন নিবিড় স্বজন, যে সুমনকে তার বিশ্বাসমতে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো, সে সুমনের হাতের বেকে যাওয়া আঙ্গুলগুলো সোজা করে দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আঙ্গুলগুলো জেদীর মতো আবার বেকে গ্যালো। লোকচুর অগোচরে সুমন আবারও প্রতিবাদ করলো। দেখে আমার হাসি পেলো। মরে গিয়েও সুমন প্রবাহন কথা শুনবে না।

সুমন তো অবাধ্য। সুমন, শ্রদ্ধা করি তোকে দোস্ত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.