আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মইনের ক্ষমতা দখলের লোভ ছিল ঐ পরিমাণ সাহস ছিল না

ফেসবুক আইডি:নাই
গণরোষের শিকার থেকে পালিয়ে বাঁচতে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক ইনডেমনিটি নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তবে সেখানেও ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী বাংলাদেশীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানাতে তার পিছু ধাওয়া করেছে। দেশে ওয়ান-ইলেভেনের রূপকার জেনারেল মইনের গাদ্দারী ও জাতিদ্রোহিতামূলক কর্মকান্ডের তদন্ত করে উপযুক্ত বিচারের দাবি জোরদার হয়েছে। ইতোমধ্যেই সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে মানহানি ও ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করায় আদালত তার ডিওএইচএস-এর বাড়ি কেন ক্রোক করা হবে না মর্মে শোকজসহ তাকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেনারেল মইনের পক্ষে তার পরিবারের সদস্যরা মামলা পরিচালনার জন্য লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের শরণাপন্ন হলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

অবশ্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক জেনারেল মইনের আত্মীয়দের জানিয়ে দেন যে, ক্ষমতায় থাকতেই তিনি ঐ জেনারেলকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের একদিন আইনী সহায়তা চাইতে তার কাছে আসতে হবে। উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার হক জেনারেল মইন সমর্থিত ফখরুদ্দীনের কেয়ারটেকার সরকারের গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়েছেন। এদিকে প্রবাসে বাংলাদেশীরা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ও কুশপুত্তলিকা দাহ এবং দেশে জেনারেল মইন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কু-কর্মের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ধূমায়িত হবার পটভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা সাপ্তাহিকের সাথে সাক্ষাৎকারে জেনারেল মইন আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু কথা বলেছেন। তার ঐ বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং ইতিহাসের একটি রূঢ় সত্যকে বেপরোয়াভাবে বিকৃত করার নমুনা বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নাকচ করে দিয়েছেন। জেনারেল মইন বলেছেন : ১. বাংলাদেশে আমিই একমাত্র সেনাপ্রধান, যে ক্ষমতার লোভ দেখাইনি।

২. আমার কোন রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল না। ৩. নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমি ওয়াদা রক্ষা করেছি। ৪. জনগণের ক্রান্তিকালে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের প্রধান রূপকার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন বিদেশের নীলনকশা অনুযায়ী অতীতের মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারেননি। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের সেনা প্রধানের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল চিত্ত জেনারেল হিসেবে মইন ক্ষমতা দখল করার সাহস দেখাতে পারেননি।

তৃতীয়ত সেনাবাহিনীর অধিকাংশ জেনারেল ও মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা ‘ত্রাতার' ভূমিকা নিতে এসে ক্ষমতা দখলের পক্ষে সমর্থন দেননি। তবে ওয়ান-ইলেভেনের মূল লক্ষ্য ছিল সংবিধান-নির্ধারিত নির্বাচন বানচাল করে একটি পাঁতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের পরিপূর্ণ একটি তাঁবেদার সরকারকে ক্ষমতায় বসানো। জেনারেল মইনকে বাংলাদেশ বিরোধী চিহ্নিত বিদেশী গোষ্ঠী এ নীল নকশা বাস্তবায়নে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এসব কারণে জেনারেল মইন সত্যই তুলনাহীন। সংবিধান নির্ধারিত প্রস্তুতি সম্পন্ন একটি জাতীয় নির্বাচন ভন্ডুল করা, জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ রুদ্ধ করা, জাতীয় রাজনীতিকদের চরিত্র হনন ও তাদের পণবন্দি করে সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা ও পলিসি ধ্বংস করে জেনারেল মইন যে সফলতা লাভ করেছেন, বাংলাদেশের কোন সেনাপ্রধানই তা পারেননি।

এদিক থেকে জেনারেল মইন অবশ্যই অনন্য, অতুলনীয়। সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদকে বলা হয় চরিত্রগতভাবে আবেগপ্রবণ, নারী লোলুপ এবং দুর্বল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাজনীতিকের মতোই জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। বিতর্কিত ও নিন্দিত হলেও এখনও এরশাদ রাজনীতিতে সক্রিয়। অথচ জেনারেল মইন তার অবসর গ্রহণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা লাভের মাত্র ৫/৬ মাসের মধ্যে দেশ ছেড়ে পলায়নের সিদ্ধান্ত নেন।

এখানেও জেনারেল মইন একজন দুর্বল চিত্তের মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জাতির কাছে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করে জেনারেল মইন যদি বিশাল ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে থাকেন, তাহলে তিনি সে বিজয়টা দেশের মানুষের সাথে থেকে উপভোগ করছেন না কেন? কেন, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন? তার মনে যদি অপরাধবোধ না থাকে, তাহলে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে স্বপরিবারে স্বেচ্ছা নির্বাসনে কেন চলে গেলেন? সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান এরশাদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতা না থাকলে আওয়ামী লীগ কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় আসতে পারতো না। ২৯ ডিসেম্বরের ডিজিটাল নির্বাচনী কারচুপিতে আওয়ামী লীগ-মহাজোট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন লাভ করে সরকার গঠন করার পরও জেনারেল মইনকে দেশে নিরাপত্তা দিতে চায়নি কেন? কেন সরকার সেনা প্রটোকলে চুপিসারে রাতের আধাঁরে জেনারেল মইনকে বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশে পার করে দিল? এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা দিয়া বলেছেন, জনগণের ভোটে চারদলীয় জোট পরাজিত হয়নি। চারদলীয় জোটকে পরাজিত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের তদারকীতে সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বদলে একটি বিশেষ জায়গায় নিয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ভৌতিক ভোটে আওয়ামী লীগকে বিশাল বিজয় দেয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে বলেছেন, ব্যালট জালিয়াতি ও নির্বাচনী কারচুপির কাজ তদারকী করেছেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগটা মূলত জেনারেল মইনকে কেন্দ্র করে উঠেছে। এদিকে সিইসি ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করলেও তিনি স্বীকার করেছেন যে, সেনাপ্রধান তাদের ওপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ট্রেন্ড বিবেচনা করে ভারত জেনারেল মইনকে জেনারেল এরশাদের মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করার অনুমোদন দেয়নি। ১৯৮২ সালে তদানীন্তন সেনাপ্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করার আগে নয়াদিল্লীর সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। সংবিধান নির্ধারিত নির্বাচন বানচাল করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তার অধীনে দেশ শাসনের নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে আখেরে তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানে জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তিকেই জনগণ ম্যান্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় আনতো।

১৯৯০-এর এরশাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর যেভাবে বিএনপিকে জনগণ ক্ষমতার দৃশ্যপটে নিয়ে এসেছিল, মইন নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বৈরশাসন বিরোধী যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সুফলও জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তির পাবার সম্ভাবনা থাকায় প্রতিবেশী দেশটির থিংকট্যাংক সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও নিবিড় সমর্থনে একটি উদ্বাস্তু সরকার ক্ষমতায় রেখে বিগত ৩৮ বছর যাবত কোন সরকারের কাছ থেকেই যা অর্জন করতে পারেনি, সেই সব এজেন্ডা বাস্তবায়নে জেনারেল মইনকে কলুর বলদ এবং সশস্ত্র বাহিনীকে বালির পাঁঠা বানিয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক সামরিক ডিজাইন অনুযায়ী জেনারেল মইনকে ক্ষমতার নেপথ্যচারী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। সুতরাং জেনারেল মইনের ‘আমি কোন ক্ষমতার লোভ দেখাইনি' বলে নিজের মহত্ত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তার অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাই প্রমাণ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ক্রান্তিকালে বেনাভোলেন্ট সামরিক ডিক্টেটরকেও সমর্থন করতে পারেন। তবে বিদেশের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ বিকানো কোন জেনারেলের মোনাফেকীকে কখনও সমর্থন করেন না।

জেনারেল মইনের ব্যাপারেও তাই হয়েছে। তার লোভ চরিতার্থে সেনাবাহিনীর সমর্থনও জেনারেল মইন পাননি। রাজনীতিকদের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতনকারী সেনা অফিসাররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন যে, তারা টর্চার সেলে কসাইয়ের ভূমিকা পালন না করলে তাদের চাকরি হারাতে হবে। অথবা কমান্ড ভায়োলেট করার জন্য কোর্ট মার্শালের শিকার হতে হবে। জেনারেল মইন সমর্থিত দু'বছরের ফখরুদ্দীন সরকারের নিজস্ব কোন এজেন্ডা ছিল না।

এজেন্ডা ছিল জেনারেল মইন ও তার কতিপয় সহযোগীর। আর এই এজেন্ডাও জাতীয় সেনাবাহিনীর নয়, জেনরেল মইন তার উদ্দেশ্য সাধনে জাতীয় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীকে কলংকিত করেছেন, সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের কিনারায় ঠেলে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জেনারেল মইন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়া সপ্তাহব্যাপী ভারত সফর করেছেন। ভারতীয়রা বশংবদ এক গাধার বদলে ৬টি তাগড়া ঘোড়া উপহার দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙ্গে দিয়েছে। মিলিটারী টু-মিলিটারী সহযোগিতার মোড়কে জেনারেল মইন যৌথ টহল, যৌথ সামরিক মহড়ার পার্টনার হয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে।

ভারত চেয়েছে, বাংলাদেশের নিজস্ব কোন প্রতিরক্ষা নীতি-কৌশল ও প্রতিরক্ষা শক্তি থাকবে না। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা বলয়ের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশ টিকে থাকবে। ১৯৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের যেসব এজেন্ডা মেনে নেয়নি। জেনারেল মইন তার সবই গোপন সমঝোতায় মেনে নিয়ে এসেছেন বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই শীর্ষ নেত্রীর ভারতকে ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে একটা সীমা রেখা আছে বলে ভারত তাদের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করেছে।

এজন্য দু'নেত্রীকেই কারাগারে নিক্ষেপ করে, রাজনীতি ধ্বংস করে, রাজনীতি ধ্বংস করে ক্ষমতায় আসা জেনারেল মইনের কাছ থেকে তাদের এজেন্ডাগুলো আদায়ে সম্মতি নেবার কৌশল অবলম্বন করেছে। প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রাসী কূটনীতির পথে এতকাল যে সামরিক বাহিনী বাঁধা হয়েছিল, জেনারেল মইনকে ক্ষমতার দৃশ্যপটে এনে ভারত সেই বাঁধা অপসারণ করেছে। প্রথমতঃ ক্যামোফ্লেজ করার জন্য শেখ হাসিনাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ শেখ হাসিনাকে ভারতের শতভাগ বশংবদ এবং জেনারেল মইন সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নীতি অবস্থান অনুসরণ করার ব্যাপারে সম্মতি আদায়ের কৌশল হিসেবে ইন্ডিয়ান পাপেট জেনারেল মইন দিল্লীর ইশারায় শেখ হাসিনাকেও খাঁচাবন্দী করে। ভারত এক্ষেত্রে সাপ হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছে।

অনেকেরই মনে থাকার কথা, জেনারেল মইন ভারত সফরে গিয়ে ভারতের নীলনকশা অনুযায়ীই বলে আসেন যে, ভারত সরকার যেন দুই নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে কোন অনুরোধ না জানায়। এটা শেখ হাসিনার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির কৌশল বলে অনেকে মনে করেন। এদিকে জেনারেল মইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে বলেছেন, শেখ হাসিনা যদি নিরপরাধ প্রমাণ হয়ে মুক্তি পান, তবে তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। একদিকে শেখ মুজিবকে ‘জাতির জনক' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চাটুকারিতা, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের মাধ্যমে ৩৮ বছরের পুরনো ও মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি টেনে এনে জাতিকে বিভক্ত করার অন্তর্ঘাতের অনুঘটক হিসেবেও জেনারেল মইনের ভূমিকা সুবিদিত। জেনারেল মইনের আরও সাফল্য হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তির ওপর একের পর এক আঘাত হেনে তাদের নির্মূল করার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন।

শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে প্রায় পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এর নেপথ্য নায়ক জেনারেল মইন। এর লক্ষ্য বেগম খালেদা জিয়ার পর শহীদ জিয়ার রাজনীতি যেন কেউ উত্তরাধিকারীত্ব বহন করতে না পারে। জেনারেল মইনের নিজের যদি কোন রাজনৈতিক অভিলাষ না থাকে, তাহলে কাদের পক্ষে তিনি এসব রাজনৈতিক নিপীড়ন ও প্রতিহিংসা চালিয়েছেন; জেনারেল মইন বিএনপির অবিসংবাদিত নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে হঠিয়ে দিয়ে মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে বিএনপি দখলের অভিলাষ পোষণ করেন। সেনা প্রধানের চাপেই নির্বাচন কমিশন মান্নান ভূঁইয়ার দলছুট সংগঠনকে মূল দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

জেনারেল মইনের সর্বশেষ কামড়, শহীদ জিয়াকে বরাদ্দ করা শহীদ মইনুল রোডের ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র। তবে বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারের হত্যা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব শূন্য করে ভারতের তাঁবেদার ও আশ্রিত বানিয়ে রাখা আওয়ামী লীগের নতজানু পলিসির কারণে তাদের পক্ষে জেনারেল মইনের আত্মঘাতী পথ থেকে সরকার সরে আসতে পারছে না। জাতীয় সেনাবাহিনীকে বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা হত্যা তদন্তের সুযোগ না দিয়ে জেনারেল মইন সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও শপথের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বিডিআর সদর দফতরে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী অফিসার হত্যা ও তাদের স্ত্রী-কন্যাদের নির্যাতন সত্ত্বেও জেনারেল মইন সেনা ‘‘অভিযানের নির্দেশ না দিয়ে ষড়যন্ত্রের নাটের গুরু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। শত শত সেনা সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজনদের অভিশাপ নিয়ে জেনারেল মইন বিদেশের নিরাপদ দূরত্বে আবস্থান করে ‘গণতন্ত্রের ত্রাতা' হিসেবে নির্লজ্জভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

তবে এক এগারোর এই রূপকার লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে তুলে দেবার কথা বলে ট্রেনের লাইনই উপড়ে ফেলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নিরাপত্তাকে ভারতীয় গ্রাসের মুখে অসহায় করে রেখে গেছেন। বাংলাদেশের বিকাশমুখী অর্থনীতি ধ্বংস করে দুর্নীতির জুজু দেখিয়ে জেনারেল মইনরা যে সন্ত্রাস চালিয়েছেন, তার ক্ষত কতদিন শুকাবে, বলা কঠিন। সেলিম চৌধুরী, গবেষক
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.