আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালী হলি মা রাসবিহারী

ফেসবুক আইডি:নাই
কালী বা কালিকা হিন্দু শাক্ত দেবী। ইনি দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা। শাক্ত বিশ্বাস অনুসারে ইনি আদ্যাশক্তি। পুরাণ ও তন্ত্র গ্রন্থগুলিতে এঁর বহু রূপভেদ দেখা যায়। তবে সাধারণত চতুর্ভূজা, খট্টাঙ্গ-নরমুণ্ডধারী, বরাভয়দাত্রী ও শবোপরিস্থ মূর্তিই অধিক পূজিত হয়।

কালীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, ইনি লোলজিহ্বা। আবার কোনও কোনও গ্রন্থে তাঁর শান্ত-সমাহিত রূপকল্পও অঙ্কিত হয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বঙ্গদেশে কালীর বিভিন্ন রূপ পূজিত হয়ে থাকে; যথা – দক্ষিণাকালী, শ্যামাকালী, শ্মশানকালী, রক্ষাকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, গূহ্যকালী ইত্যাদি। এঁদের মধ্যে দক্ষিণাকালী ও শ্যামাকালী সর্বাধিক জনপ্রিয়।

শরৎকালে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীর বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হলেও যে-কোনও অমাবস্যা তিথিতে ও মঙ্গলবারে কালীপূজার বিধান আছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী ও মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজাও বিশেষ উৎসাহে পালিত হয়। কালীর সাধকগণও বঙ্গদেশে বিশেষ শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। এ-দেশের প্রসিদ্ধ কালীসাধকগণ হলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস, রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ। কালীর গুণকীর্তন শ্যামাসংগীত বাংলা ভক্তিগীতির জগতে একটি অন্যতম জনপ্রিয় ধারা।

হিন্দু সাধকগণ তো বটেই, অনেকক্ষেত্রে মুসলমান কবিগণও এই ধারায় নিজ নিজ অবদান রেখেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর একাধিক কবিতা ও গানে কালীর উল্লেখ করেছেন; আবার তাঁকে বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শ্যামাসংগীতকারও মনে করা হয়। রাজধানী কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের নগরে ও গ্রামে কালীমন্দির ও কালী আরাধনার প্রাধান্যের কারণে ভারতের অপরাপর অঞ্চলে ‘কালী কলকাত্তাওয়ালী’ (অর্থাৎ, কলকাতানিবাসী কালী) বলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। একটি মত অনুযায়ী ‘কলকাতা’ নামটিও ‘কালীক্ষেত্র’ কথাটির অপভ্রংশ। কলকাতার কালীঘাট মন্দির, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি; দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির, আদ্যাপীঠ; বর্ধমানের অম্বিকা কালনায় কমলাকান্তের কালীবাড়ি প্রভৃতি বঙ্গদেশের প্রধান প্রধান কালীক্ষেত্র।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের অধুনা ধ্বংসিত রমনা কালীমন্দিরও একটি অতিপ্রাচীন কালীমন্দির হিসাবে পরিচিত হত। ‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ, যার অর্থ “কৃষ্ণ, ঘোর বর্ণ” (পাণিনি ৪। ১। ৪২)। মহাভারত অনুসারে, এটি দুর্গার একটি রূপ (মহাভারত, ৪।

১৯৫)। আবার হরিবংশ গ্রন্থে কালী একটি দানবীর নাম (হরিবংশ, ১১৫৫২)। ‘কাল’, যার অর্থ ‘নির্ধারিত সময়’, তা প্রসঙ্গক্রমে ‘মৃত্যু’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এর সমোচ্চারিত শব্দ ‘কালো’র সঙ্গে এর কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু লৌকিক ব্যুৎপত্তির দৌলতে এরা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গেছে।

মহাভারত-এ এক দেবীর উল্লেখ আছে যিনি হত যোদ্ধা ও পশুদের আত্মাকে বহন করেন। তাঁর নাম কালরাত্রি বা কালী। সংস্কৃত সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক টমাস কবার্নের মতে, এই শব্দটি নাম হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে আবার ‘কৃষ্ণবর্ণা’ বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। --------------- কালী হলি মা রাসবিহারী রামপ্রসাদ সেন কালী হলি মা রাসবিহারী নটবরবেশে বৃন্দাবনে। পৃথক প্রণব নানা লীলা তব, কে বুঝে এ কথা বিষম ভারি।

। নিজ তনু আধা, গুণবতী রাধা, আপনি পুরুষ আপনি নারী। ছিল বিবসন কটি, এবে পীত ধটী, এলো চুল চূড়া বংশীধারী। । আগেতে কুটিল নয়ন-অপাঙ্গে, মোহিত করেছ ত্রিপুরারি।

এবে নিজ কাল, তনুরেখা ভাল, ভূলালে নাগরী নয়ন ঠারী। । ছিল ঘন ঘন হাস, ত্রিভূবন-ত্রাস এবে মৃদু হাস, ভুলে ব্রজকুমারী। পূর্বে শোণিত-সাগরে নেচেছিলে শ্যামা, এবে প্রিয় তব যমুনাবারি। ।

প্রসাদ হাসিছে, সরসে ভাসিছে, বুঝেছি জননী মনে বিচারি। মহাকাল কানু, শ্যামা শ্যাম তনু, একই সকল বুঝিতে নারি। ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.