আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কারা কালী সাধক। (উৎসর্গ: রাঙা মীয়া।)

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

হিংস্রতা রুখতে যখন আমরা নিজেরাই হিংস্র হয়ে উঠি-তখন আমাদেরও বড় বিভৎস দেখায়। মহাদেবী কালীও এককালে হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন বলেই তাঁর অমন বিভৎস রুপ। মা কালীর বিভৎস রুপটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে দেয়: জগতের অন্য একটি রুপ বড়ই নির্মম।

মা কালীর বিভৎস রুপ নিয়ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নিয়ত সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্টায় অবিচল থাকি। কালীর কন্ঠে নৃমুন্ডু, দেহ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত; চারটি হস্ত । দুটি দক্ষিণ হস্তে খটাঙ্গ ও চন্দ্রহ্রাস। দুই বাম হস্তে চর্ম ও পাশ। কালী দীর্ঘদন্তী, রক্তচক্ষু, বিস্তৃত মুখ, ও স্থূল কর্ণ।

কালীর বাহন কবন্ধ অর্থাৎ মস্তকবিহীন শব। জগতে অকল্যাণ নেমে এলে কালী তার স্বমূর্তিতে আবিভূর্ত হবেন। অশুভ নাশ করবেন। ব্রিটিশ আমলে কালী তাই করেছিলেন! খ্রিস্টের জন্মের হাজার বছর আগে প্রাচীন বাংলার মানুষ কথা বলত অষ্ট্রিক ভাষায়। আর্যরা এ অঞ্চলে এসেছিল অনেক পরে।

“পূজা” শব্দটা সে কারণেই অষ্ট্রিক, আর্য নয়, অর্থাৎ সংস্কৃত নয়। আর্যদের ধর্ম মানেই পশুবলি, যজ্ঞ। পূজা মানে সেই রকম কিছু নয়। কাজেই পূজার ধারণা প্রাকআর্য ও অবৈদিক। তন্ত্রের সঙ্গে পূজার যোগ নিবিড়।

আর তন্ত্র মানেই বেদবিরোধী। পূজা মানে মা। মা আর পূজা অভিন্ন। পূজা মানে মায়ের পূজা। পরিশীলিত ভাষায়- মাতৃপূজা।

যে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে একটি সাত-আট বছরের মুসলমান বালিকাকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। সেই নিষ্পাপ ও পবিত্র মেয়েটি ছিল এক মাঝির কন্যা। (দ্র: ড. আর এম দেবনাথ: সিন্ধু থেকে হিন্দু। (পৃষ্ঠা, ৮১-৯১) যা হোক। পূজা বলতে আমরা প্রধানত দূর্গা / পূজা কালী বুঝি।

তার মানে কালী মায়ের পূজা, দূর্গা মায়ের পূজা। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালী মাতৃতান্ত্রিক। (যে কারণে তন্ত্র ও মাতৃপূজার উদ্ভব এ অঞ্চলেই। ) দূর্গা ও কালী-এ দু’জন হলেন বাঙালির মাতৃদেবী। শরৎ থেকে বসন্ত -এ ৬ মাস বাঙালীর পূজার সময়।

সে সময়টায় বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় দূর্গা ও কালী মন্দিরে মন্দিরে মন্ডপে মন্ডপে পূজা পান। দূর্গা ও কালী কি বিশেষ কোনও পার্থক্য রয়েছে? এক কথায়, দূর্গা অন্নদাত্রী উর্বরা শক্তির দেবী। আর কালী- ঘূর্ণি প্রলয়ের। দূর্গা পূজা যেখানে সম্মিলিত সামাজিক উৎসব-কালী পূজা সেখানে সাধকের একান্তই সাধনার বিষয়। এই সাধনা কথাটার সামান্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

২ তন্ত্র মানে ত্রাণ বা মুক্তি। যে শাস্ত্রানুযায়ী সাধনা করলে জীবের মোক্ষ বা মুক্তি লাভ হয়, তাকেই বলা হয় তন্ত্র। একপক্ষ অবশ্য মনে করেন কলিযুগে বেদের মন্ত্র হ্রাস পেলেই তবে তন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। তবে এটি শ্রৌতজ্ঞানভিত্তিক বলে তন্ত্রকে পঞ্চম বেদও বলে। যাক।

তন্ত্র বাংলার সাধকদের চিন্তাপ্রসূত বিদ্যা। তন্ত্রের দুটি ভাগ। হিন্দুতন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্র। হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল বাংলায়। বাংলায় ৭ম ৮ম শতকের বৌদ্ধরা বৌদ্ধতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিল ।

বৌদ্ধতন্ত্রের মূল পীঠস্থান ছিল বিক্রমপুর ও সিলেট। হিন্দু তন্ত্রর উদ্ভব আরও পরে। মধ্যযুগে। এই চতুদর্শ-পঞ্চদশ শতকে। হিন্দু তন্ত্রকে বলা হয় শিবোক্ত শাস্ত্র।

মানে হিন্দু তন্ত্রর সঙ্গে মহাদেব বা শিবের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। আর, মহাদেবী হিসেবে কালীর উত্থান তান্ত্রিক মত থেকেই। তন্ত্র যেহেতু শিবের সঙ্গে যুক্ত, তাই পুরো তান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কালীও জড়িত। কেননা, কালী হলেন শিবের স্ত্রী। প্রখ্যাত পন্ডিত শ্যামাচরণ ভট্টাচার্যের মতে, “কু” ধাতু থেকেই ‘কাল’ শব্দটির উৎপত্তি।

‘কালের’ অর্থ মহাকাল অথবা মৃত্যু অর্থাৎ মহাদেব (শিব)। এই কাল শব্দের পিছনে “ঈপ” প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে “কালী” পদটি। পন্ডিত শ্যামাচরণ ভট্টাচার্যের মতে মহাকাল বা শিবের বিশেষ শক্তিই হচ্ছেন কালী। হিন্দু পুরাণেও কালী ও শিবের সম্পর্ক ঘনিষ্ট দেখানো হয়েছে। ৩ ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে (সিন্ধু সভ্যতা/ পাঞ্জাব) শিবকে দিয়ে হিন্দু ধর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

যার সমাপ্তি ঘটেছে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে (আসাম ত্রিপূরা বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে) দূর্গা ও কালীর উত্থানের মাধ্যমে । এ দু’জন দেবীর ধারণার বিবর্তনের পিছনে যে ব্যাপক ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে - সে বিস্ময়কর ইতিহাসে বাঙালির জটিল সামাজিক ইতিহাসও জড়িত। বাঙালী সমাজে মা কালীর ধারণা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বহু বছরের পরিক্রমায় বহু লোকায়ত দেবী কালীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের আত্মস্থ করতে গিয়ে কালীর রুপও বদলে গেছে।

According to David Kinsley, Kali is first mentioned in Hinduism as a distinct goddess, related to war, around 600 CE. Scriptures like Agni Purana and Garuda Purana describe her terrible appearance and associate her with corpses and war. Bhagavata Purana calls her the patron deity of thieves. She was worshipped initially by tribals and low-caste Hindus, in "wild places". An architectural work dating between the sixth to eighth century prescribes her temples be built near cremation grounds or houses of low-caste people (Chndalas). Kali or goddesses with similar iconography like Chamunda, appear in different Sanskrit works, dating from seventh to twelfth century, as lovers of blood sacrifice, adorned with human skulls and corpses and residing near cremation grounds. Kali appears as the wrath of goddess Durga or Parvati, notably in the Devi Mahatmya and Linga Purana.[3] http://en.wikipedia.org/wiki/KÄ�lÄ« ৪ তখন বলেছি যে, তন্ত্রের দুটি ভাগ: হিন্দু তন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্র। এবং হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল বাংলায়। প্রখ্যাত পন্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন চৈতন্যদেবের সমসাময়িক। (১৪৮৫-১৫৩৩) ‘তন্ত্রসার’ নামে একটি বই লিখেছিলেন তিনি। সে বইতে তিনি কালীপূজার বিভিন্ন পদ্ধতির বর্ননা দেন।

বর্তমানে আসাম, ত্রিপূরা, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ধতিকে কালীপূজা হয় তা মূলত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ-এরই পদ্ধতি। পঞ্চদশ শতক থেকেই কালীপূজা বাংলায় ব্যাপক প্রচার পেতে থাকে। নবদ্বীপ বা নদীয়ার মহারাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তার সময়কাল, ১৭১০-১৭৮২। তিনি বাংলায় কালীপূজার একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

এ সময় বাংলার জমিদার ও সামন্ত শ্রেণিও কালী সাধনায় গভীর উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে বাঙালি কবি, গায়ক ও সাধকরাও পিছিয়ে থাকেননি। তারাও বাঙালী সমাজে কালীর প্রচলনে এগিয়ে আসেন। কালী মূলত শক্তির সাধনা বলেই কালীসাধনার অন্য নাম শাক্ত। শক্তি থেকে শাক্ত।

শাক্ত সঙ্গীতের প্রথম কবি ছিলেন রামপ্রসাদ (১৭০২-১৭৮১)। তাঁর রচিত শাক্ত গানে জন্য বাঙালী সমাজে কালীর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গিয়েছিল। শাক্তদের পরে অবশ্য মুখোমুখি হয়েছিল গৌড় বাংলার ভক্তিবাদী বৈষ্ণবদের। তন্ত্রসাধনার পাশাপাশি দ্বাদশ শতক থেকেই বাঙালি বিষ্ণুীয় ভক্তিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। বাঙালি কবি জয়দেবই প্রথম ‘রাধা’ কল্পনা করলেন তাঁর সংস্কৃত ভাষায় লেখা "গীতগোবিন্দম" কাব্যে।

এর প্রায় চারশ বছর পরে নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যদেব প্রায় একক ভাবেই বাংলার বৈষ্ণব আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করলেন। সপ্তদশ শতাব্দী অবধি বৈষ্ণব আন্দোলন বাংলায় খুবই প্রভাবশালী ছিল। বাংলা তখন ভক্তিরসে প্লাবিত হয়েছিল। তখন মুসলিম আমল। মুসলিম অভিজাতরা বাংলা শাসন করলেও বাংলাকে কখনও পরবাস ভাবেননি, বরং তারা বাংলাকে মাতৃভূমিসমই মনে করতেন।

সেই সময়কার ইতিহাস বিশ্লেষন করলে আমাদের মনে হয় যে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ পরোক্ষভাবে চৈতন্যদেবের ভক্তিবাদী আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতাই করেছিলেন, বাধা দেননি। সেই সময়টায় বাঙালির কাছে মুসলিম শাসন বিজাতীয় ছিল না বলেই বাঙালির সমাজে শক্তির ব্যাপক উত্থানের প্রয়োজন পড়েনি। এর পর অবস্থা গেল বদলে। অষ্টাদশ শতকে। সেই সময়টায় ইংরেজদের লোভী দৃষ্টি পড়ল সুজলাসুফলা বাংলার ওপর ।

বাংলায় তারা কেবল লুন্টন করতেই এসেছিল, বাংলাকে কখনোই তারা মাতৃভূমিসম মনে করেনি। মুসলিম শাসকদের সঙ্গে এখানেই ইংরেজদের পার্থক্য। ইংরেজ আমলের সূচনায় বাঙালী সমাজে বৈষ্ণববাদী ভক্তি আন্দোলনের বদলে শাক্তসাধনার উত্থান লক্ষ্য করি। সেই সময় বাঙালি কেবল ভক্তিতেই সন্তুষ্ট হয়ে থাকল না-বিদেশি শাসনের প্রেক্ষাপটে তার দরকার হয়ে পড়ল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির। কজেই বৈষ্ণব ‘রাধাকৃষ্ণের’ বদলে কালী ও কালী সাধনা অসীম গ্রহনযোগ্যতা পেল বাংলার জনমানসে।

কালী একাধারে মানবী, মঙ্গলময়ী ও আনন্দময়ী। আবার সকল শক্তির আধারও কালী। অশুভ ইংরেজ তাড়াতে বৈষ্ণব ভক্তি কিংবা মা দূর্গার শ্রীময়ী রুপ কোনও কাজে আসবে না। অশুভ ইংরেজ তাড়াতে উদগ্র শক্তির প্রয়োজন। বিভৎস ধ্বংসের তান্ডব প্রয়োজন।

কাজেই ব্রিটিশবাংলায় মা কালীর প্রলয়নৃত্যের হন্যমান উত্থান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। পলাশীর যুদ্ধ, বক্সারের যুদ্ধ ও ১৭৬৫ সালে দীউয়ানি লাভের মাধ্যমে সুবা বাংলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দখলে চলে গেল বাংলা। সে সময়ই বিদ্যাপতি চন্ডীদাসের পরেই বাংলা শাক্তবাদী রামপ্রসাদকে পেল। মনে থাকার কথা- রামাপ্রসাদের সময়কাল, ১৭২০ ১৭৮১। পরবর্তীকালে বেশ কজন শাক্তপন্থি কালীসাধক বাংলায় কালী সাধনার ব্যপক প্রচার ঘটালেন।

তাদের মধ্যে রামকৃষ্ণপরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬) অন্যতম। বাংলা সাহিত্যেও কালী শক্তির উত্থান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। বিশেষ করে বঙ্কিমএর লেখায় স্ফূরিত হতে লাগল কালীবাদ। 'আনন্দমঠের' রাজনৈতিক তত্ত্বটি আসলে ছিল কালীবাদ। কালীসাধকের মতন তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক নেতারা আন্দোলনসংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছিলেন মহাদেবী কালীর কাছ থেকেই ।

"অনুশীলন" ও "যুগান্তর" এর মতন ব্রিটিশবিরোধী গুপ্ত সংগঠনের আত্মত্যাগের অফুরন্ত উৎস ও প্রেরণা ছিলেন মা কালী। এদের সবারই লক্ষ ছিল একটাই। ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের হটানো । তাইই কিন্তু হয়েছিল। আজ আমরা জানি, ফাঁসীর মঞ্চের দিকে যেতে যেতে কার নাম জপেছিলেন ক্ষুদিরাম? আজ আমরা জানি, জগতে আবার অন্ধকার ঘনালে কার বিভৎসরুপটি স্মরণ করতে হবে! ৫ দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে।

তবে কি কালীর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল? না। কালীর প্রয়োজন আজও রয়ে গেছে। তার কারণও আছে। বলছি। বাংলা আজও কৃষিভিত্তিক।

কৃষকের জীবন, আমরা জানি, অনিশ্চয়তার জীবন। নিয়ত সে খরা আর জলপ্লাবনের মুখোমুখি হয়। কিংবা আর্সেনিক, নকল সার কিংবা ঋন শোধ করার তাগিদ তার জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ। সে দুৎসহ জীবনের মুখোমুখি হতে হলে চাই শক্তি, চাই সাহস। কাজেই আজও কৃষকসমাজের নিত্য সঙ্গী কালী।

মা দূর্গার পূজা হয় বছরে একবার। কালীর পূজা তাই নিত্যদিনের। কালীর পীঠস্থানও আছে। সাধকের কাছ থেকে ঠিকানা জেনে কৃষক সে পীঠস্থানেও যায়। বড়ই চমকপ্রদ সে কালী মায়ের পীঠস্থানের ইতিহাস।

৬ পুরাণমতে এ জগতে জীবের স্রস্টা দশজন প্রজাপতি। তাদের মধ্যে একজন হলেন দক্ষ। দক্ষযজ্ঞ বলে একটা কথা শুনে থাকবেন আপনারা। সেই দক্ষ। তো, দক্ষের কন্যার নাম সতী।

সতীর স্বামী শিব। শিব দরিদ্র। তো, দক্ষ একবার রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সে যজ্ঞে ঋষি প্রজাপতি ও কিন্নরকে আমন্ত্রন করলেন। কেবল নিমন্ত্রণ পাননি সতী ও শিব।

নারদের মুখে সতী কথাটা জানল। দারুন অপমানিত বোধ করলেন সতী। শিবের অনুমতি নিয়ে যজ্ঞে গেলেন সতী। সেখানে শিবের সমালোচনা হচ্ছিল। সতী সবার সামনে যোগবলে দেহত্যাগ করলেন।

শিবের কানে দুঃসংবাদটি পৌঁছেছিল। তিনি ভীষন ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন। তারপর দক্ষের (শ্বশুরের) মাথা কেটে ফেলেন। প্রবল ক্রোধে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেন। মানে যজ্ঞস্থল তছনছ করলেন।

তারপর সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য আরম্ভ করলেন। জগৎ ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে যায় আর কী। নারায়ণ তখন সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করেন। শিব তারপর শান্ত হন। পুরাণমতে সতীর দেহখন্ড ভারতের ৫১টি স্থানে ভূপাতিত হয়েছিল।

এই ৫১টি স্থানই কালীসাধকের মহাপীঠস্থান বা মহাতীর্থ। ৭ বাংলাদেশে পীঠস্থান সব মিলিয়ে ৫টি। ১/ যশোর। খুলনা/ঈশ্বরপুরী। ২/ করতোয়া তট।

বগুড়া /শেরপুর। ৩/শ্রীশৈল সিলেটের জৈন্তারপুর । এরপর গেলে পীঠস্থানটি খুঁজবেন আশা করি। ৪/ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। চন্দ্রনাথ পাহাড়।

এখানে সতীর দক্ষিণ বাহু পড়েছিল। ৫/ সুগন্ধ। বরিশালের শিকারপুর। পশ্চিমবাংলায় চৌদ্দটি। তার মধ্যে কালীঘাটের নাম শুনে থাকবেন।

৮ কিন্তু, কালীর রং কেন কালো? যেহেতু কালো রং সব শুষে নেয়। ব্ল্যাক হোলের মতন। Kali is the feminine of kala "black, dark coloured" (per Panini 4.1.42). It appears as the name of a form of Durga in Mahabharata 4.195, and as the name of an evil female spirit in Harivamsa 11552.The homonymous kala "appointed time", which depending on context can mean "death", is distinct from kala "black", but became associated through folk etymology. The association is seen in a passage from the Mahabharata, depicting a female figure who carries away the spirits of slain warriors and animals. She is called kalaratri (which Thomas Coburn, a historian of Sanskrit Goddess literature, translates as "night of death") and also kali (which, as Coburn notes, can be read here either as a proper name or as a description "the black one").Kali's association with blackness stands in contrast to her consort, Shiva, whose body is covered by the white ashes of the cremation ground (Sanskrit: smasana) in which he meditates, and with which Kali is also associated, as smasana-kali. http://en.wikipedia.org/wiki/KÄ�lÄ« ৯ এ লেখার শিরোনাম: কারা কালী সাধক। তা হলে কালী সাধক কারা? এক অর্থে যারা মহাদেবী কালীর সাধানা করেন। এটি সংকীর্ণ অর্থ।

বৃহত্তর অর্থে- পৃথিবীজুড়ে যারা অন্যায়অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তারাই কালীসাধক। দূর্বলদের ওপর সমাজে নিয়ত অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে বলে শক্তির প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। ১০ এ লেখাটি আমি বিশিস্ট ব্লগার রাঙা মীয়া কে উৎসর্গ করেছি। তার দুটি কারণ। (১) তিনি আমাকে কালীসাধকদের নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন।

(২) সম্প্রতি তিনি ধর্ষন সম্বন্ধে একটি মর্মস্পর্শী লেখা পোস্ট করে তিনি আমাদের ঘুমন্ত চেতনায় ঘা দিয়েছেন। আমার তখন মনে হল-মাতৃপূজা, শক্তির সাধনা ও ধর্ষনের প্রতিরোধের মধ্যে কোথাও যেন একটা যোগসূত্র রয়েছে। ১১ মনে থাকার কথা। স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে একটি সাত-আট বছরের মুসলমান বালিকাকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। সেই নিষ্পাপ ও পবিত্র মেয়েটি ছিল মাঝির কন্যা।

জানি, জীবনের কঠিন সমস্যাগুলির সমাধান অত সহজ নয়। তথাপি কল্পনা করি: কোনও নির্জন স্থানে দীর্ঘক্ষণ স্বামী বিবেকানন্দ এবং সেই মুসলিম বালিকাটি রয়েছে। তখন কী কী ঘটতে পারে পাঠিকা? সহৃদয় পাঠক? উৎস: ১/ ড. আর এম দেবনাথ: সিন্ধু থেকে হিন্দু। (পৃষ্ঠা, ৮১-৯১) ২/ বাংলাপিডিয়া। Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.