আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত খিযির রেজালুল-গায়ব বা রূহানী জগতের ঐ সমস্ত মহান সত্তার অন্তর্গত, যাদেরকে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বে নিয়োজিত রেখেছেন

আবজাব বিষয়বস্তুর ব্লগ এটি। ভালো কিছু খুঁজে সময় নষ্ট করবেন না।

পবিত্র কুরআনে হযরত মূসার আ. জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনায় দুই নদীর সঙ্গমস্থলে যে রহস্য পুরুষের সাক্ষাতের কাহিনী বলা হয়েছে, হাদিস শরীফের বর্ণনায় দেখা যায় যে, ঐ রহস্যপুরুষের নাম ছিল হযরত খিযির। পবিত্র কুরআনে শুধুমাত্র 'আমার প্রিয় বান্দাগণের মধ্যে এক বান্দা' বলা হলেও বুখারী ও মুসলিম শরীফসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের বর্ণনায় সে বান্দার নাম খিযির বলে উল্লেখিত হয়েছে। তবে খিযির কি তার প্রকৃত নাম না উপাধী এ নিয়েও বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়।

অধিকাংশ বণনাকারীর মতে তার নাম খিযির হলেও কেউ কেউ তার নাম বালিয়া ইবনে মালহাম এবং উপাধী খিযির বলেছেন। উল্লেখ্য যে, খিযির অর্থ সবুজ। বর্ণিত আছে যে, ইনি যেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন সেই ভূখ- উষর মরুময় হলেও সবুজে ভরে উঠে, এজন্য তাকে খিযির নামে অভিহীত করা হয়েছে। খিযির কি নবী ছিলেন না ওলী এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। মুহাদ্দেস ও মুফাসসেরগণের অধিকাংশের মতে তিনি একজন নবী ছিলেন।

কেননা, পবিত্র কুরআনে যে ভাষায় এবং যেরূপ গুরুত্ব সহকারে তার প্রসঙ্গটি বিবৃত হয়েছে, তা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার সর্বোচ্চ সম্মানিত বান্দা নবীগণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া স্বাভাবিক। খিযির সম্পর্কিত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়টি হচ্ছে, তিনি কি চিরজীবি, অর্থাৎ এখনও জীবিত আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন, না অন্যান্য সকল নবী রাসূলগণের ন্যায় (একমাত্র হযরত ঈসা আ. ব্যতীত) তারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে গেছে? হাদিস এবং তফসীরের অধিকাংশ ইমামগণের মতে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে কোন কোন হাদিস-তফসীরবিদ এবং সুফী সাধকগণের বিরাট এক অংশ বলে থাকেন যে, হযরত খিযির জীবিত আছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির বিশেষ কল্যাণে নিয়োজিত আছেন। ছুফীগণের অনেকেরই অভিমত হচ্ছে, হযরত খিযির রেজালুল-গায়ব বা রূহানী জগতের ঐ সমস্ত মহান সত্তার অন্তর্গত, যাদেরকে আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বে নিয়োজিত রেখেছেন। কিন্তু ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়্যেম এবং ইবনে হিব্বান উন্দুনুসী রহ. ন্যায় শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দেসগণ হযরত খিযিরের সশরীরে জীবিত বা রূহানীভাবে সক্রিয় থাকার ধারণা নাকচ করেছেন।

অন্যদিকে ইমাম শাফেয়ী রহ. তার মুসনাদে এই মর্মে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পরপরই এক অপরিচিত ব্যক্তি হাজির হয়ে সাহবায়ে কেরামকে সান্ত¡না দিতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট সবুরই হচ্ছে প্রতিটি বিপদ এবং হারানো সম্পদের ক্ষতিপূরণ। সুতরাং এই কঠিন শোকের সময় আপনারা একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করুন। কেননা, মহা বিপদের প্রতিদান নিতে যারা বঞ্চিত হয়ে যায়, তাদের চাইতে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। একই বর্ণনা শব্দের সামান্য বিভিন্নতাসহ বাইহাকী শরীফেও রয়েছে। সাহাবীগণ বলেছিলেন, কঠিন শোকের সেই মুহূর্তটিতে আগত সেই ব্যক্তি ছিলেন হযরত খিযির আ.।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম যুহরী বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে যে, কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দাজ্জাল আবির্ভূত হয়ে সমগ্র দুনিয়ায় চক্কর লাগাতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত মদীনা শরীফের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করবে। এ সময় মদীনা থেকে একজন সুদর্শন যুবক বের হয়ে দাজ্জালের মোকাবেলা করবেন। দাজ্জাল অনেক চেষ্টা করেও সেই যুবকের মোকাবেলায় জয়যুক্ত হতে পারবে না। হাদিসের ভাষায় 'সর্বোত্তম সেই ব্যক্তিই' হবেন হযরত খিযির আ.।

এ ধরনের আরও বহু বর্ণনা এবং ছুফী-দরবেশগণের অসংখ্য ব্যক্তিগণ অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত খিযির আ. সশরীরে না হলেও অন্ততঃ রূহানীভাবে পৃথিবীর বুকে সক্রিয় রয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পৃথিবীর বুকে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, এরূপ তথ্য অস্বীকার করা যায় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.