আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উত্থাপিত ৮ দফা ।



জেলায় জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা, দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রধান কলেজ সমূহকে পূর্ণাঙ্গ ও স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত করা, স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল ও ক্লাসরুম নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে কলেজগুলোতে সারাবছর ক্লস চালু রাখা, আবাসন-পরিবহন সংকট নিরসন সহ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট উত্থাপিত ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজসমূহের আঞ্চলিক কনভেনশন ও আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করে ৩ জুলাই ২০০৯ বেলা ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দত্ত নান্টু। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফখরম্নদ্দিন কবির আতিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল, দপ্তর সম্পাদক ইমরান হাবিব রম্নমন, অর্থ সম্পাদক রাহাত আহমেদ, মলয় সরকার, শম্পা বসু প্রমুখ। *************************************************** সংবাদ সম্মেলণের বক্তব্য সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানবেন। ছাত্র সংখ্যার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের উচ্চশিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠান বিচারে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১৮শতাধিক কলেজকে পরিচালনা করে- সেখানে ১০ লক্ষাধিক ছাত্র অধ্যয়নরত। অথচ এই ডিগ্রী-অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোতে উচ্চশিক্ষা দূরের কথা, সাধারণ পাঠদানও ঠিকমত হয় না। বছরের বেশির ভাগ সময় কলেজগুলোতে ক্লাস বন্ধ থাকে পরীক্ষার কারণে। বাকী সময়ও ঠিকমত ক্লাস হয় না পর্যাপ্ত শিক্ষক ও ক্লাসরুমের অভাবে। হল-হোস্টলের অভাবে মেসে থাকার খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের।

দূরদূরান্তের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা নাই বেশির ভাগ কলেজে। লাইব্রেরি-সেমিনার-ল্যাবরেটরিসহ উচ্চ শিক্ষার আয়োজন পর্যাপ্ত নয়। অথচ বছর বছর বাড়ছে বেতন-ফি। বাস্তবে জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার পরিবর্তে কলেজগুলো পরিণত হয়েছে পরীক্সা কেন্দ্রে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে উচ্চ শিক্ষার অত্যাবশ্যকীয় আয়োজন ও মান নিশ্চিত করতে পারেনি।

উপরন্তু দুর্নীতি, দলীয়করণ, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ধারাবাহিকতায় একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এ প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে হয়রানি, দীর্ঘসূত্রিতা আর ভোগান্তির প্রতিশব্দ। আপনারা জানেন, সরকার এ বছরের মার্চ মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রথমে বলা হয়েছিল সারাদেশের কলেজগুলোকে ৬টি বিভাগে বিদ্যমান ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করা হবে। সম্প্রতি এই অবস্থান পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে ৬টি বিভাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে কলেজগুলোকে পরিচালনা করা হবে।

এই বিষয়ে আমাদের বক্তব্য ইতোমধ্যে আমরা কমিটিকে জানিয়েছি। প্রথমতঃ কলেজসমূহে পরীক্ষার হল ও ক্লাস রুম নির্মাণ, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, সারা বছর ক্লাস চালু রাখা, আবাসন-পরিবহন সংকট নিরসন, লাইব্রেরি-সেমিনার-ল্যাবরেটরিসহ অবকাঠামোগত আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। এই একাডেমিক সংকট নিরসন না করে যেই পদ্ধতিতেই প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করা হোক তাতে সমস্যা কমবে না। দ্বিতীয়তঃ নজিরবিহীনভাবে ১৮০০ কলেজ পরিচালনার চাপে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বিকেন্দ্রীকরণ অবশ্যই দরকার।

আমাদের দাবি, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধিভুক্ত হওয়া উচিৎ। তাহলে তাদের স্বায়ত্তশাসন থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পরিচালনা এবং তত্ত্বাবধানে শিক্ষার মানও বাড়বে। কিন্তু মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ১৮০০ কলেজ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। অপর দিকে,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত কোন প্রতিষ্ঠান নয়, এর আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোও হবে অনুরূপ আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত ধারণার পরিপন্থী।

তাই আমরা দাবি করেছি, জেলায় জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে কলেজগুলোকে অধিভূক্ত করা হোক। আশু পদক্ষেপ হিসেবে দেশের প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা যায়। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কলেজের নাম উল্লেখ করা যায়। যেমনঃ ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বিএম কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, করটিয়া সা’দত কলেজ, আজিজুল হক কলেজ, বিএল কলেজ, এডওয়ার্ড কলেজ, এমসি কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ, রাজেন্দ্র কলেজ ইত্যাদি। পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন এ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কলেজসমূহকে অধিভুক্ত করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসমূহের সংকট নিরসনে ৮ দফা দাবি এবং প্রধান কলেজসমূহকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণাসহ জেলায় জেলায় পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজসমূহকে অধিভূক্ত করার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট পরিচালিত আন্দোলনের মাধ্যমেই এ বিষয়ে সারাদেশে আলোড়ন তৈরী হয়, স্পষ্ট হয় দাবির যৌক্তিকতা। ৮ দফা পরিণত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারি-অভিভাবকদের প্রানের দাবিতে। দেশের অধিকাংশ কলেজে ২ দফা সর্বাত্মক ধর্মঘট ও ২০০৩ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে দুই শতাধিক কলেজের প্রতিনিধি ও হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং সকল শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশনসহ ধারাবাহিক আন্দোলনের চাপে সরকার ৫০০০ শিক্ষক নিয়োগ ও স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণা বাস্তবায়নসহ ৮ দফা আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং কলেজভিত্তিক আন্দোলন-কর্মসূচী পালিত হয়েছে ধারাবাহিকভাবে।

এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজ সমূহের জেলা ও আঞ্চলিক কনভেনশন। এ সকল কনভেনশনে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক-কলেজ প্রতিনিধি-অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকবেন। ১০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর প্রানের দাবি আদায়ের এ কর্মসূচী প্রচারে অতীতের মতই আপনারা ভূমিকা রাখবেন প্রত্যাশা করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট উত্থাপিত ৮ দফা দাবিঃ ১· স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল, ক্লাস রুম নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত শিড়্গক নিয়োগ করে সারা বছর ক্লাস চালু রাখ। ৩মাসের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ কর।

২· লাইব্রেরি ও সেমিনারে নতুন সংস্করণের পর্যাপ্ত বই চাই। ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার, মিলনায়তন, হেলথ্‌ সেন্টার ও ব্যায়ামাগার চাই। ৩· আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হল নির্মাণ এবং মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন কর। হলের ডাইনিং-এ সরকারি ভর্তুকি বাড়াও। যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন চাই।

৪· অনার্স-ডিগ্রি কোর্সে সেশন জট নিরসন কর। সকল অনার্স কলেজে নতুন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু কর। বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি তুলে দেয়া যাবে না। ৫· শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা, সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা, নিরাপত্তা ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত কর। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ন্যায্য দাবি মেনে নাও।

৬· ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ এবং ভর্তিক্ষেত্রে অনিয়ম দূর কর। সরকারি-বেসরকারি সকল কলেজে বছর বছর ফি বাড়ানো চলবে না এবং অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর নামে নতুন ফি আরোপ করা চলবে না। ৭· সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত কর। ৮· জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কর ও সকল জেলার প্রধান কলেজকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে কলেজসমূহকে অধিভুক্ত কর। কর্মসূচী ৬ আগষ্ট ’০৯ - বগুড়ায় আঞ্চলিক কনভেনশন।

স্থানঃ জেলা পরিষদ মিলনায়তন, উদ্বোধন ও র‌্যালী - সরকারি আজিজুল হক কলেজ। ৮ আগষ্ট ’০৯ - সিলেট জেলা কনভেনশন। স্থানঃ ২ নং বার লাইব্রেরী মিলনায়তন। উদ্বোধন - শহীদ মিনার ১০ আগষ্ট ’০৯ - নারায়নগঞ্জে মতবিনিময় সভা। ১০ আগষ্ট ’০৯ - গাইবান্ধা জেলা কনভেনশন।

স্থানঃ পাবলিক লাইব্রেরী হল, উদ্বোধনঃ শহীদ মিনার। ১২ আগষ্ট ’০৯ - নোয়খালীতে আঞ্চলিক কনভেনশন। স্থানঃ নোয়খালী পৌর হল। ১৭ আগষ্ট ’০৯ - দিনাজপুরে আঞ্চলিক কনভেনশন। স্থানঃ দিনাজপুর সরকারি কলেজ।

১৮ আগষ্ট ’০৯ - রংপুরে আঞ্চলিক কনভেনশন। স্থানঃ রংপুর টাউন হল, উদ্বোধন ও র‌্যালী কারমাইকেল কলেজ। ১৮ আগষ্ট ’০৯ - খুলনা বিএল কলেজে কনভেনশন। ১৮ আগষ্ট ’০৯ - চাঁদপুরে আঞ্চলিক কনভেনশন। স্থানঃ চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

১৯ আগষ্ট ’০৯ - কুষ্টিয়ায় আঞ্চলিক কনভেনশন। স্থানঃ পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ। ১৯ আগষ্ট ’০৯ - মৌলভীবাজারে জেলা কনভেনশন। স্থানঃ পৌরসভা মিলনায়তন। ২৪ আগষ্ট ’০৯ - ঢাকা আঞ্চলিক কনভেনশন।

স্থানঃ টিএসসি মিলনায়তন, উদ্বোধন ও র‌্যালী- অপরাজেয় বাংলা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.