আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিস্মৃতির আড়ালে পিলখানা

কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পায়

আমরা কত সহজেই সব ভুলে যাই। বিস্মৃতির আড়ালে চলে যায় কত নারকীয় ঘটনাসমূহ। যেমন আমরা ভুলে গেছি পিলখানার নৃশংসতার কথা। বর্তমান সময়ে সেখানে কি হচ্ছে, কি হতে পারে তার সম্পর্কে কেউ কোন কথা বলছি না। মিডিয়া আর ব্লগ সর্বত্রই চলছে এ ঘটনা ভুলে যাবার প্রবণতা।

ঘটনা ঘটে যাবার পর থেকে আমরা এখনও আশ্বস্ত হতে পারছি না এর সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় বিচার হবে কিনা। সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিহত হবার পাশাপাশি সাধারণ বিডিআর জওয়ানদের জীবনে যে দুর্যোগ নেমে এসেছে তা বর্ণাতীত। প্রায় প্রতি সপ্তাহে একজন দু’জন বিডিআর সদস্য মৃত্যুবরণ করছে, জীবিতদের মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অমানবিক এই নির্যাতনের বর্ণনা লেখার মতো ভাষা আমার জানা নেই। গত এক সপ্তাহে যে ১০০ জনের উপরে সদস্যকে হাসপাতাল ও জেলখানায় প্রেরণ করা হয়েছে তাদের কেউই শাররীকভাবে হাটতে চলতে সক্ষম নয়।

কেন তাদের এই অবস্থা হলো তার কৈফিয়ত সংশ্লিষ্ট জওয়ানদের পরিবার থেকে জানতে চাওয়ার মতো সৎ সাহস কারও বোধ করি নেই। তাহলে কি তারা সবাই দোষী? মানবাধিকার লঙ্ঘনের এহেন নির্মম প্রক্রিয়া বাংলাদেশে আর হয়েছে কিনা তা জানা নেই। হাবিয়া দোজখের সাজা তারা ভোগ করছে। পিলখানার আশে পাশের মানুষ গভীর রাতে শুনতে পাচ্ছে মানুষ নামের এই অভাগাদের আর্ত চিৎকার। ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

কেউ কথা বলার সাহস দেখাচ্ছে না। পরিবারের সদস্যরা তাদের সাথে দেখা করতে পারছে না। দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের ছুটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে। চার মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোন মামলার চার্জশীট দেয়া হয়নি।

সিআইডি তদন্ত শেষ হতে আর কত সময় লাগবে তা কেউ জানে না। এর সাথে সবচেয়ে নির্মমতা হলো বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের কোন খরব কোন মিডিয়াতে প্রকাশ হচ্ছে না। এপর্যন্ত প্রায় ৩৮ জন জওয়ান নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছে, সরকার ও বিডিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদের মৃত্যুর জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং এ মৃত্যুর কারণ বের করা হবে। তাতে কি লাভ? যার মরে গেছে তারা তো গেছেই, কেউ বলতে পারবেন নিহত সদস্যদের পরিবারের কেউ কোন সরকারী সাহায্য বা ভবিষ্যতের কোন আশ্বাস পেয়েছেন কিনা? পাননি, পাবেনও না। যে ছেলেটি সীমান্তে পাহাড়ায় রাতের পর রাত জেগে ছিল সে এখন মৃত্যু নির্যাতন নামক ভয়ংকর পরিস্থির মুখোমুখী রাত দিন কাটাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য কি কোন সুখবর আছে? নেই, কারণ তারা তো সবাই হত্যাকারী, লুটেরা, এক কথায় দেশদ্রোহী! মৃত্যুপুরীর ভয়ংকর বর্ণনা দিতে গিয়ে বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে কেউ কেউ। পিলখানায় অবস্থানরত জওয়ানদের এখন প্রহর গুনতে হচ্ছে মৃত্যুর অথবা অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের। কে দোষী কে নির্দোষ তা প্রমাণের জন্য সেনা কর্মকর্তাদের জেরার মুখে নানান নির্যাতনের কাহিনী জানা যাচ্ছে ভ্ক্তুভোগী পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে। অথচ তাদের সকলেই দোষী ছিল না। তাহলে কেন এই নির্মমতা! কেন এই নির্যাতন! এর কি কোন জবাবদিহিতা নেই? অন্যদিকে জেলখানায় আটকদেরও প্রহর গুণে সময় কাটছে।

পরিবারের সদস্যরা প্রতি ১৫ দিন পর দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে। তাদের সাথেও ভাল ব্যবহার করা হচ্ছে না। কতিপয় বিপথগামী জওয়ান সেই সাথে রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানীতে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার দায় ভার যেমন সকল সদস্য নিতে পারে না, তেমনি এখন ক্ষমতাসীনদেরও দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। মনে রাখাতে হবে ক্ষমতা কারও জন্য চীরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। একদিন প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সরকারী ছত্র ছায়ায় পতিত সেনা প্রধান নির্বাকার চিত্তে যে নির্মম নিষ্ঠুর দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তাকেও ইতিহাসের কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হবে। ভারতীয় ঘোড়া তাকে বেশীদুর নিয়ে যেতে পারবে না। এটা ভুলে গেলে চলবে না, সেনা-বিডিআর সকলে এদেশেরই সন্তান। কতিপয়ের অপরাধের জন্য গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।

অন্যদিকে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করলে আমাদের কত বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশটি আমাদের ভালমন্দ সবাই এদেশের মানুষ। তাই আসুন সবাই সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত, অন্তত: একটি ভাল কাজ করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.