আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিস্মৃতির অতলে একাত্তর এবং আমাদের দায়

সর্বেং সত্ত্বা সুখীতা হন্ত

বছর দুয়েক আগের কথা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে টিভিতে একটা প্রতিবেদন দেখছিলাম। যেখানে ইংরেজি মাধ্যমের কিছু শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে, যে এইদিনে ঠিক কি হয়েছিল?
শিক্ষার্থীদের ইংরেজি টানে বাংলা উচ্চারণ শুনে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম বটে,তবে তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হল যে ২১শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে একজন শিক্ষার্থীও সঠিকউত্তর দিতে পারেনি। কেউ কেউ বলল যে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা এইদিনে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। অনেকে আবার বেফাঁস কিছু বলার ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি “ডোন নো অ্যাবাউট ইট ” বলে লাজুক হাঁসি দিয়েছিল।
সেই দিনের সেইসব ইংরেজি মাধ্যমের বাংলাদেশী ছেলেমেয়েদের চেয়েও বেশি লজ্জা আমি পেয়েছিলাম।

তবে এই ভেবে সান্ত্বনা পেয়েছিলাম যে কতিপয় উচ্চবিত্তের সন্তানেরা বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস না জানলেও, এ প্রজন্মের বেশীরভাগ ছেলেমেয়েই তা জানে।
কিন্তু আমি হতাশ হয়ে লক্ষ করি যে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে উদাসীন, এ বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। পাঠ্য বইয়ে যা কিছু ইতিহাস ছিল, সেটুকুই শুধু তারা মুখস্থ করেছিল; পরীক্ষা শেষে তা আবার ভুলেও গেছে গোল্ডফিশের স্মৃতির মত। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় সিলেবাসে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা,ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংক্ষেপে থাকলেও মাদ্রাসামাধ্যমে এইসব ইতিহাস অনেকটা উপেক্ষিত। যার ফলে আমাদের দেশের এক বিরাট শ্রেণী বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়, ভুলে যায় মুক্তিযোদ্ধারা কি উদ্দেশে এই দেশ স্বাধীন করেছিল।


৫২’র ভাষা আন্দোলন কিংবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভাবলে আমরা যেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে যেমন আমাদের মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে,তেমনটি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মাঝে লক্ষ করি না।
এই ইতিহাস বিমুখীতার ফলাফল অত্যন্ত মারাত্মক হয়েছে। একাত্তরের চেতনা সম্পর্কে আমাদের উদাসীন থাকার সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নিজেদের সুসংঘটিত করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের গভীরে প্রবেশ করিয়েছে তাদের শিকড়। আমাদের চোখের সামনেই তারা পুড়িয়ে ফেলছে তিরিশ লক্ষশহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকা,ভেঙ্গে ফেলছে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের বর্ণমালা। শুধু এসব করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, ধর্মের লেবাস পরিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী তত্ত্ব চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করছে আমাদের সংবিধানের উপর।

ধর্মের অন্তরালে স্বাধীনতাপন্থী কিছু রাজনৈতিক দলের কাঁধে ভর করে তারা ব্যস্তবায়ন করছে একাত্তর বিরোধীতার নীল নকশা। তাইতো আজ যখন আমরা একাত্তরের দালালদের বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছি, তখন এই স্বাধীন দেশেরই এক বিড়াট অংশ এই বিচারের বিরোধীতা করে কাঁপিয়ে তুলছে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল। চারিদিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের আস্ফালন দেখে আমরা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছি।

কিন্তু এমন হওয়ার কথা ছিল না। যদি আমরা একাত্তরের চেতনাকে লালন করতে পারতাম, ছড়িয়ে দিতে পারতাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, তাহলে এই চিত্র আমরা দেখতাম না।

তখন স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা একটা পিঁপড়াও পেতাম না এই বিচারের বিরোধীতা করার।

অনেকে মনে করতে পারে, আশি শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করাই যুক্তিযুক্ত। তাদের এই কথার উত্তর দিতে হলে আমাদের জন্ম ইতিহাসেই ফিরে যেতে হবে। তাদের কথা যদি মেনে নিই, তাহলে যে হিন্দু যুবকটি মুসলিম সহযোদ্ধার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের দিকে লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেনেছিল, তার রাইফেল থেকে ছুটে যাওয়া বুলেট অর্থহীন হয়ে যায়, মূল্যহীন হয়ে পরে তার রক্তে ভিজে ওঠা এই বাংলার মাটি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনতাকামী বাংলার মানুষ রক্ত দিয়েছিল; ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করার উদ্দেশে।



অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, দেশ যখন দারিদ্রতায় ডুবতে চলেছে, রাজনৈতিক নেতারা গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করছে, দুর্নীতি আষ্টেপৃষ্ঠে আমাদের বেঁধে ফেলছে তখন একাত্তরের চেতনা কিংবা অতীতকে টেনে এনে কী লাভ; বরং ওসব সস্তা আবেগ পরিহার করে বর্তমান সমস্যা সমাধান করায় শ্রেয়। কিন্তু তাদের এই ভাবনাটাই ভুল।

বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস থেকে আমরা দিক নির্দেশনা পাব, যারা রক্তের বিনিময়ে এই দেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, তারা কেমন দেশ দেখতে চেয়েছেন এটা আমাদের জানতে হবে। ইতিহাস থেকেই আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারব, যে আমাদের কি করা উচিত। একজন মুক্তিযোদ্ধা শুধু তার একমাত্র জীবনকেই নিজের জীবন ভাবেননি, তার নিজ মালিকানা সম্পত্তিকেই একমাত্র নিজের সম্পত্তি ভাবেননি।

বাংলাদেশের সকল মানুষের জীবনকেই নিজের জীবন ভেবেছেন, সমগ্র বাংলাদেশকেই নিজের সম্পদ বলে ভেবেছেন। তাই তিনি সবার জীবন রক্ষা করতে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করতে পেরেছেন।

আমাদেরও দেশকে ভালবাসতে হবে এভাবে। যখন একজন মানুষ ভাববে যে, তার নিজের নামে যেটুকু সম্পদ আছে, শুধু সেটুকুই তার নয়; বরং তার বাড়ি পার হয়ে যে রাস্তাটা আছে, সেটাও তার, দূরে প্রবাহিত যে নদী, সেই নদীর মালিকানাও তার। এভাবে সমগ্র দেশটাই তার নিজের, অন্য কারো নয়।

তখন এই দেশের প্রতিটি ইট, পাথর তার ভাল লাগবে,প্রতিটি মানুষকেই সে ভালবাসবে, এভাবে সবকিছুর উপর জন্ম নিবে দায়িত্ববোধ। দেশের সবমানুষ যখন এভাবে চিন্তা করবে, দেশের প্রতি ভালবাসার কারনে তখন সে অন্যায় করতে পারবে না। অন্যায়টা করবে কার সাথে, যখন সবটাই তার নিজের? তাহলে সোনার বাংলা গড়তে আর কোন বাঁধা থাকবে না।

একজন মানুষ তখনই এভাবে ভাবতে পারবে, যখন সে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগ সম্পর্কে জানবে। এই দেশ আমাদের উপহার দিতে তারা কী পরিমাণ রক্তই না বিসর্জন দিয়েছেন।

কত কান্না, কত বেদনা, কত হাহাকার, কত আত্নত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। যখন আমরা এসব জানব এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পারব, শুধু তখনই এইভাবে চিন্তাকরতে শিখব। দেশের ইতিহাস না জানলে, দেশের প্রতি ভালবাসা জন্ম নিবে না। তাই সোনার বাংলা গড়তে আমাদের জন্ম ইতিহাস জানা এবং তা লালন করার বিকল্প নেই। এটাই হল একাত্তরের চেতনা।

তাই যারা চেতনা শব্দটি নিয়ে ব্যঙ্গ করে, চেতনা দিয়ে কি চিঁড়া ভেজানো যায়- এসব সস্তা রসিকতা করে, তারা শুধু নিজেদেরই অপমান করছে।

ইতিহাস বিমুখতার কারণ এবং একাত্তর নিয়ে নতুন প্রজন্মের এক বিরাট অংশের উদাসীনতার কারণ কি?

১.অভিযোগের প্রথম তীরটি যাবে রাজনৈতিক নেতাদের দিকে। পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকেরা একাত্তরের ইতিহাসকে আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে, সময়ে সময়ে নিজ স্বার্থের জন্য বিকৃত করেছে। অনেক রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে এই দেশে পাকাপোক্ত ভাবে আসন দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে একাত্তরের চেতনা থেকে আমাদের চিন্তাকে সরিয়ে দিয়েছে।

সাধারণ মানুষেরা রাজনৈতিক অস্থিরতার ভিতর দিয়ে জীবন যাপন করেছে এবং এই সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে আমাদের ধর্মীয় উন্মাদনায় মাতিয়ে একাত্তরের চেতনা থেকে যোজন যোজন দূরে নিয়ে গেছে।

২.একাত্তরের চেতনা, জয় বাংলা এসব স্লোগান শুধু আওয়মিলীগের মুখেই শোনা যায়,মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু এই দলটিই কথা বলে। তাই অনেকে আওয়ামীলীগকে চেতনা ব্যবসায়ী বলে থাকে, কিন্তু যারা এসব কথা বলে তারা সেই চেতনা আওয়ামীলীগ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের মাঝে ধারণ করে না কিংবা প্রচার করে না। বরং এসব দলীয় বিষয় মনে করে চেতনা থেকে শত হাত দূরে থাকে। এর ফলে আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নির্দিষ্ট দলের হয়ে যায়।

তাই যারা আওয়ামীলীগ না করেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, তাদের সহজেই আওয়ামীলীগ বলে বিশেষায়িত করা হয়। জয় বাংলা স্লোগান কেউ দিলে তাকে মানুষ আওয়ামীলীগ মনে করে। কিন্তু একাত্তরে এই স্লোগান ছিল আপামর জনতার। আওয়ামীলীগ একাই যুদ্ধ করেনি, দলবল নির্বিশেষে সব শ্রেণীর বাঙালীই যুদ্ধ করেছিল। তাই আওয়ামীলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধেরচেতনা সমার্থক হওয়ার পিছনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির ব্যর্থতা রয়েছে যার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে একাত্তরের চেতনা নিয়ে দ্বিধা কাজ করে।



৩.এরপর মিডিয়াকে দোষারোপ করা যায়। গণমাধ্যমগুলি সময়ের সাথে সাথে একাত্তর নিয়ে প্রচার প্রচারণা কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেমন দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, নাটক,চলচিত্র ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হত, এখন তেমনটা দেখা যায় না। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সকাল থেকে চারিদিকে মাইকে দেশের গান, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা যেত, এখন আর সেই পরিবেশ নেই।

৪.দেশের কবি-সাহিত্যিকেরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন খুব বেশি সাহিত্য রচনা করেন না।

নাটক, চলচিত্র নির্মাতারাও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ অনেক কম করেন। এ সকল কারণে দিন দিন আমাদের উদাসীনতা বেড়েই চলেছে।

৫.এর পরে সবচেয়ে বড় যে দায় আসে, সেটা আমাদের নিজেদের উপর। রাজনৈতিক নেতারা,মিডিয়া কিংবা সাহিত্যিকরা তাদের উচিত কাজ করতে না পারলেও, আমরা নিজেরাই পারতাম যার যার অবস্থান থেকে আমাদের ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত করতে। আমাদের অগ্রজেরা আমাদের কাছে একাত্তরের গল্প করেনি, সেটা আলস্যর কারণে হোক বা সংকোচের কারণে হোক।

যা কিছু জেনেছি, তা নানা-দাদাদের কাছ থেকে। আমরা যারা বিভিন্ন বইপত্র, দলিল ঘেঁটে কিছুটা ইতিহাস জেনেছি, তা নিজেদের মাঝেই রেখেছি। বড়জোর অনলাইনে কিছুটা প্রকাশ করেছি। কতজনই বা এসব দেখে। তাই এই প্রবাহ থেমে যাচ্ছে।

এর দায় আমরা কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারিনা।

তাহলে একাত্তরের চেতনাকে সমুন্নত রাখা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছানোর উপায় কি? অতীতে যে ভুল গুলি করা হয়েছে সেসব কিভাবে উত্তরণ করা যাবে?

দেরি হয়ে যাক, তবুও সময় যায়নি। সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদেরই করতে হবে এবং এখন থেকেই কাজে নেমে পড়তে হবে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের করণীয় কি হবে সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়।

একাত্তরে বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আমাদের এখন করণীয় হল যার যেটুকু জানা আছে, তাই নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমাদের করণীয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত তুলে ধরছিঃ

১.আপনার এলাকার ১২-১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে মেশার চেষ্টা করুন এবং তাদেরকে একাত্তর নিয়ে প্রশ্ন করুন। তাহলে জানতে পারবেন তাদের ইতিহাস জ্ঞান সম্পর্কে। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে তাদের সাথে সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও আড্ডা দিন এবং আড্ডার বিষয়বস্তু হবে মুক্তিযুদ্ধ।

২.তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান, বিভিন্ন রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাজিত করেছিল সেইসব ঘটনা শোনান।

মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা তাদের রোমাঞ্চিত করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগ তাদের আপ্লুত করবে। এসব গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ইতিহাস এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করুন। এভাবে আস্তে আস্তে বাচ্চারা একাত্তর নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়বে, তখন তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত কিশোর উপন্যাস দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের পকেট থেকে কিছু খরচ হবে, নিজের দায় থেকেই এই খরচটি করতে হবে।

৩.আমাদের সৌভাগ্য যে এখনো কিছু মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছে।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলুন। সময় করে তাদেরকে আড্ডায় দাওয়াত করুন। মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে যুদ্ধের ঘটনা শুনলে বাচ্চারা অনেক বেশী অনুপ্রাণিত হবে।

৪.ছেলেমেয়েদের বই পড়াতে আগ্রহী করতে হবে, তাহলে আশি ভাগ কাজ এমনিতেই হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত গল্প, কবিতা, উপন্যাসের বই কিনে তাদের পড়তে দিন।

বই এক কপি করে কিনলেই হবে, পালাক্রমে সবাইকে পড়তে দিন। বই বণ্টনের দায়িত্ব দিন ঘনিষ্ঠ একজনের উপর।

৫.যুদ্ধের বইগুলি ভালভাবে পড়তে বলুন এবং সপ্তাহে একদিন সেই বই থেকে কুইজের আয়োজন করে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করুন। এভাবে তারা আরও বেশী আগ্রহী হবে একাত্তর সম্পর্কে।

৬.এই কাজগুলিই আপনার বন্ধুকে করতে বলুন।

এভাবে বাংলাদেশের প্রত্যেক এলাকায় কাজ শুরু হয়ে যাবে। কাজগুলি করতে খুব বেশী সময় অপচয় হবে না। অনেক বাঁধা আসবে হয়ত,পরিস্থিতি বুঝে সেসবের মোকাবেলা করতে হবে।

এভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রজন্ম গড়ার কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের ব্যর্থতার দায় আমাদেরই মেটাতে হবে।

যাদের মস্তিস্ক ধোলায়ের কাজ শেষ হয়েছে, তাদেরকে টেনে লাভ হবে না। তাই পরবর্তী প্রজন্মের উপর আমার দৃষ্টি। বায়াসড হওয়ার আগেই যেন তারা সত্য জানতে পারে। এদের হাতে কিশোর কণ্ঠ পৌঁছানোর আগে যেন জাফর ইকবাল স্যারের লেখা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌঁছাতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

আমার লেখা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, কারো কাছে মনে হতে পারে সস্তা সেন্টিমেন্ট, কিন্তু বিশ্বাস করুন এই পদ্ধতিতেই কাজ হবে।

আমি নিজে এটা করার পরিকল্পনা করেছি এবং আমি এই ভাবেই কাজ শুরু করব ১লা জানুয়ারি থেকে। আপনারাও যার যার অবস্থান থেকে যেভাবে পারেন কাজ শুরু করে দিন। কোন দ্বিধা, সংকোচ করবেন না। আমাদের এই সামান্য কষ্টের বিনিময়ে যদি একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী একটা প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা সহজেই গড়ে তুলতে পারব। রফিক, শফিক, বারকাত, মতিউর, নুর মোহম্মদ, জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল এই বীরদের নাম বইয়ের পাতা থেকে যেদিন আমাদের হৃদয়ে স্থাপিত হবে, সেদিনই সম্ভব হবে আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়া।



(চারদিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের পদাচারনা এবং তাদের জয়-জয়কার দেখে আমি হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাগ আন্দোলনে সাধারণ মানুষের স্বত্বস্ফূর্ত অংশ গ্রহন এবং এবারের বিজয় দিবসে মানুষের মাঝে যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি, তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি লেখার প্রয়াস পেয়েছি। মানুষের উপর আমার বিশ্বাস আছে, জয় সুনিশ্চিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.