আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেড়ি কুকুরের ইন্টারভিউ: গুডবাই জেনারেল চিপস---শফিক রেহমান

ছাত্র

গুডবাই মি. চিপস ( goodbye Mr. chips) - কে সর্বকালের সেরা মুভিগুলোর অন্যতম রূপে ক্রিটিক ও দর্শকরা মনে করেন। ১৯৩৪ সালে জনপ্রিয় ইংরেজ ঔপন্যাসিক জেমস হিলটন একটি ম্যাগাজিনের অনুরোধে মাত্র চার দিনে একটি ছোট উপন্যাস বা নভেলা (Novella) লেখেন। এটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই আটলান্টিক- এর দুই তীরে সাড়া পড়ে যায়। পরিণতিতে হলিউডের মেট্ট গোল্ডউইন মেয়ার (সংক্ষেপে এমজিএম বা MGM ) স্টুডিও ১৯৩৯ সালে এই নভেলা – কে মুভিতে রূপান্তরিত করে। কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন স্কুল টিচার যার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর ছিল না।

তাকে ছাত্ররা অপছন্দ করে। এক সময় তিনি বিয়ে করেন এবং দাম্পত্য জীবন তাকে তার খোলসের বাইরে নিয়ে আসে। জীবনের শেষ দিকে তিনি হন স্কুলের সবচেয়ে প্রিয় টিচার। সবার শ্রদ্ধেয় গুরু ও পথনির্দেশক রূপে তার জীবন অবসান ঘটে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ড- এর ব্রুকফিল্ড বয়েজ স্কুলের পটভূমিকায় লেখা এই নভেলায় জেমস হিলটন দেখিয়েছেন, একজন স্কুল টিচারকে তারা সারা জীবন কিভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বয়:সন্ধিকালে কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক যুবকের উত্তরণে দিকনির্শেনার কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।

এর উপর যদি সেই শিক্ষকটি হন লাজুক ও অন্তর্মূখী তাহলে বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা হতে পারে আরো সমস্যাকুল। এই মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র অভিনয় করে রবার্ট ডোনাট সেই বছরের সেরা অভিনেতার অস্কার পুরস্কারটি পান। মজার কথা এই যে, সেই আদর্শ ইংরেজ শিক্ষকের নাম ছিল চার্লস চিপিং (Charles Chipping) । কিন্তু তাকে স্কুলের সবাই ডাকতো মি. চিপস নামে। তাই সেই নভেলা ও মুভির নাম হয়েছিল গুডবাই মি. চিপস।

সুতরাং এটা নতুন কিছু নয়, বাংলাদেশের বিদায়ী সেনাপ্রধানের নাম মইন উ আহমেদ হলেও কেউ কেউ তাকে মি. চিপস নামেও ডাকেন। তবে আড়ালে। কিন্তু চিপিংয়ের সঙ্গে চিপস-এর ধ্বনিগত মিল থাকলেও মইন উ আহমেদের সঙ্গে চিপসের কোনো মিলই নেই। তবুও তার নাম কেন হলো জেনারেল চিপস? সচেতন পাঠকরা এই প্রশ্নের উত্তর জানেন। ২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ ক্যান্টনমেন্টে আহুত একটি প্রেস কনফারেন্সে তার ভাষণের একটি বড় অংশে আলুর মাহাত্ম বর্ণনা করেছিলেন।

তিনি জানিয়েছিলেন, সাধারণ সেনাদের দৈনন্দিন ডায়েট নিদেনপক্ষে সোয়াশো গ্রাম আলু অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সময় বাংলাদেশের চালের অভাব ছিল। তিনি আন্তরিকভাবে জনসাধারণকে অনুরোধ করেন বেশী পরিমাণে আলু খেতে যাতে চালের চাহিদার উপর কম চাপ পড়ে। শুধু তা-ই নয়। ওই প্রেস কনফারেন্সের শেষে সমবেত সাংবাদিকদের জন্য যে লাঞ্চের আয়োজন করা হয় তাতে শুধু ভাত ও একটি মাছের ডিশ বাদে বাকি প্রায় একডজন আইটেমই ছিল আলুর।

যেমন স্টার্টার হিসেবে ছিল পটেটো সুপ ও পটেটো চিপস। যদিও চিপস কখনোই কোথাও স্টার্টাররূপে সার্ভ করা হয় না এবং এটি মেইন কোর্সের অন্যতম ভেজিটেবল রূপেই সার্ভ হয় তবুও সেদিনের হোস্ট জেনারেল মইনের এই অজ্ঞতাকে উপস্থিত গেষ্টরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। বরং তারা সবাই প্রশংসা করেছিলেন আলুর অন্যান্য রকমের প্রিপারেশনকে। যেমন, আলু নবরত্ন, আলু কোফতা, আলু কাটলেট। বস্তুত আলু চিরকালই বাংলাদেশের কালিনারীতে একটি অবহেলিত ভেজিটেবল রূপে গণ্য হয়ে এসেছে।

কোনো তরকারীতে আলু সংযোজন করা মানেই যেন ওই তরকারীর মান কমিয়ে দেয়। এ জন্যই বড় বাবুর্চিরা বিয়ের বিরিয়ানিতে কিছুতেই আলুর পরিমাণ বেশী রাখতে চান না। তারা মনে করেন, আলুর উপস্থিতিতে তাদের বিরিয়ানির মান খারাপ হতে পারে। আরো একটি কারণে আলু বাংলাদেশে উপেক্ষিত হয়েছে আলুর দোষ কথাটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত আছেন। এটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।

নারীদের পেছনে ঘুর ঘুর করতে সদা উন্মুখ যে পুরুষ তার সম্পর্কে বলা হয়, ওই ব্যাক্তিটির আলুর দোষ আছে। আবার যে পুরুষের সমকামী হওয়ার প্রবণতা আছে তার সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়। ভাষাবিদরা হয়তো বলবেন, আলুর সঙ্গে পুরুষের অন্ডকোষের সাদৃশ্য আছে বলেই আলুর দোষ কথাটি কোনো একসময় চালু হয়ে গিয়েছে। সে যাই হোক। সেদিনের সেই প্রেস কনফারেন্স ও লাঞ্চে জেনারেল মইন যে আলুর দোষের বদলে আলু গুণ থিয়োরেটিক্যালি এবং প্রাকটিক্যালি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তা সবারই সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

তাই সেই পথনির্দেশক প্রিয় ইংরেজি টিচারের মতোই জেনারেল মইনের নাম তারা দিয়েছিলেন জেনারেল চিপস। এই নাম তারা দিয়েছিলেন কোনো শ্লেষাত্নক বা ব্যঙ্গাত্নক অর্থে নয়, সেই ইংরেজ ছাত্রকুলের মতোই শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশের অর্থে। কিন্তু হায়! ওয়ান ইলেভেনে বিকশিত নিরংকুশ ক্ষমতা দখলের অভিলাষ মইন উ আহমেদ যেমন শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করেননি বা করতে পারেননি ঠিক তেমনই আলু জনপ্রিয়করণ আন্দোলনকেও কোনো চুড়ান্ত পরিণতির দিকে তিন নিয়ে যাননি কিংবা যেতে পারেননি। বস্তুত সেই প্রেস কনফারেন্সের পর জেনারেল চিপসের মুখে আর আলুর নাম খুব বেশী আর শোনা যায়নি। জেনারেল চিপস এখন সেনাপ্রধানের পদ এবং আলুর গুণের প্রধান প্রবক্তার ভূমিকা থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

প্রশ্নটা হচ্ছে, এরপর তিনি কি করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে পাঠকদের জানাতে চাই, বাংলাদেশে যখন এই বছরে মে-জুনে জেনারেল চিপসের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছিল ঠিক তখনই বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত চিপস প্রিংগল (pringle বহুবচনে : প্রিংগলস, Pringles )-এর ভাগ্যও নির্ধারিত হচ্ছিল। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার সময় পাঠকদের বলে নিতে চাই পটেটো চিপস ও পটেটো ক্রিস্পস (crisps)-এর মধ্যে তফাতটা কি? পটেটো চিপস হচ্ছে লম্বালম্বি ফালি করে কাটা আলু ভাজি। ইংল্যান্ডে এটি চিপস নামে পরিচিত হলেও আমেরিকা ও ইউরোপে এটি ফেঞ্চ ফ্রাই ( French Fry ) নামে পরিচিত। অবশ্য ইরাকের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে যখন ইউনাইটেড স্টেটস যুদ্ধ শুরু করে তখন সেই অভিযানে ফ্রান্স সহযোদ্ধা হতে রাজী না হওয়ায় আমেরিকায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বদলে তাকে বলা হতো আমেরিকান ফ্রাই। এখন আমেরিকানরা সেই অভিযান ভুলে গিয়ে আবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নামটি ব্যবহার করছে।

ক্রিপস হলো খুব পাতলা করে কাটা আলু ভাজি। ক্রিপস-এর শেপ আলুর মতই সাধারণত গোলাকার বা আলু আকার থাকে। প্রিংগল চিপস বা ক্রিপস প্রায় গোলাকার এবং এটি বিক্রি হয় গোলাকার একটি বক্সে। ঢাকায় বিভিন্ন দোকানে প্রিংগল পাওয়া যায়। প্রিংগল প্রস্তুতকারক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি প্রক্টর অ্যান্ড গ্যামবল-এর বৃটিশ শাখা দাবি করে আসছিল।

আসলে প্রিংগল চিপস নয়। বৃটেনে অধিকাংশ খাদ্য ভ্যাটমুক্ত। কিন্তু চিপস বা ক্রিস্পস ভ্যাটমুক্ত নয়। তাই বৃটেন-এর ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ প্রিংগল ম্যানুফেকচারারের কাছে ১৬ কোটি ডলার ভ্যাট দাবি করেছিল। এই দাবির বিরুদ্ধে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যামবল মামলা করেছিল।

তাদের যুক্তি ছিল, প্রিংগল-এ আলুর অংশ মাত্র ৪০ শতাংশ, বাকিটা হচ্ছে ভুট্টা, চাল ও গমের মিশ্রণ। সুতরাং প্রিংগল পটেটো চিপস বা ক্রিস্পস নয়, প্রিংগল হচ্ছে স্যাভোরি স্ন্যাকস ( Savory snacks )। তাদের এই যুক্তিকে নাকচ করে দেয় বৃটিশ ভ্যাট ও শুল্ক ট্রাইবুনাল। তারা বলে, যদিও প্রিংগলে আলু ছাড়া অন্যান্য উপাদানের অংশ বেশী তবুও এটিকে ভোক্তারা পটেটো চিপস হিসেবেই মনে করে এবং প্রিংগলের জন্মস্থান আমেরিকায় পটেটো চিপস রূপেই বাজারজাত করা হয়। প্রিংগলের ভাগ্য নির্ধারিত হলেও জেনারেল চিপসের ভাগ্য এখনো চুড়ান্তভাবে স্থির হয়নি।

তার বিদায়লগ্নে বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে, প্রিংগলের জন্মস্থান আমেরিকায় তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই জানেন, ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র তার দুই সহযোগী এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। এক, জেনারেল মাসুদ যিনি অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদুত পদে আছেন এবং দুই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারি যিনি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দুতাবাসে কর্মরত ছিলেন এবং যাকে নতুন আওয়ামীলীগ সরকার স্বদেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল। তিনি আমেরিকায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। তার পক্ষে একটি সূত্র জানিয়েছে ব্রিগেডিয়ার বারি আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং তার আবেদনটি আমেরিকান সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

তার বিপক্ষের কিছু সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে মানব অধিকার চরমভাবে লংঘন করার অভিযোগে উত্থাপিত হওয়ায় তাকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট আমেরিকায় পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম না-ও দিতে পারে। তাই যদি হয় তাহলে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সেই একই অভিযোগে জেনারেল মইনের আমেরিকায় রাষ্ট্রদুত নিযুক্তিকে নাকচ করে দিতে পারে। সর্বশেষ প্রকাশিত একটি খবরে জানা গেছে জেনারেল মইন আমেরিকাতেই বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি পদ অথবা সরাসরি জাতিসংঘেরই কোনো চাকরী পেতে পারেন। কিন্তু সেখানেও ওয়ান ইলেভেনে বাংলাদেশের সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ অথবা তারপরে মানব অধিকার লংঘন করার অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে। মনে রাখা দরকার, জেনারেল মইনের সেনা সমর্থিত সরকার বা তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত প্রায় দুই বছরের সেনাতন্ত্রে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবসহ অনেক পলিটিশিয়ান ও বিজনেসম্যান চরম মানব অধিকার লংঘনের শিকার হয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, ১‌৩ জুন ২০০৯- এ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৮) দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্ট স্থবিরতা কাটাতে বর্তমান রাজনৈতিক সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ... বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরে দেশের অর্থনীতিকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে। ওই দুই বছরে দেশে বিনিয়োগে ধস নেমেছিল। মুখ থুবড়ে পড়েছিল শিল্পায়ন ও ব্যবসা - বাণিজ্য। কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ায় বেকার সমস্যা হয়ে উঠেছিল তীব্রতর।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনজীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিসহ। যুগান্তর তার রিপোর্টে এর পরে বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছে ওই দুই বছরে কোন কোন খাতে দেশের কি ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং শুধু রাজনৈতিক ও মানব অধিকার লংঘনের অভিযোগই নয়, জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক মিসম্যানেজমেন্টেরও বিশাল অভিযোগ উঠতে পারে। বিভিন্ন সূত্র আরো বলছে, জেনারেল মইন যিনি, ( জেনারেল মাসুদের কলাণে) অন্ততপক্ষে চারজনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এবং স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে ওয়ান ইলেভেনে তদানীন্তন সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন। ২৪ মার্চে গত বিডিআর বিদ্রোহের সময় কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেনা মহলের আস্থা হারিয়েছেন।

জেনারেল মইন ২০০৭-০৮ সালে ইন্ডিয়ানদের প্রভুত বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন এবং ইন্ডিয়ায় নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন। নিমন্ত্রণ রক্ষার পর তিনি ফিরে এসেছিলেন ছয়টি ইন্ডিয়ান ঘোড়া নিয়ে যার মধ্যে চারটি ছিল স্ত্রী লিঙ্গের। বাংলাদেশের জলবায়ুতে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বেশী হয়ে যায় বলেই হয়তো ইন্ডিয়ানরা দুটি পুরুষ ঘোড়া দিয়েছিল এবং পরোক্ষভাবে তাদের বহুগামীতাকে প্রশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল। না হলে তারা জোড়ায় জোড়ায় ঘোড়া দিতো অর্থাৎ তিনটি স্ত্রী ও তিনটি পুরুষ ঘোড়া দিতো। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ জানে না ওই চারটি স্ত্রী ঘোড়া কি প্রসব করেছে? আরো ঘোড়া নাকি শুধুই ঘোড়ার ডিম? আমার ধারণা, ওই বহুল প্রচারিত ইন্ডিয়ান গিফটের এই লো প্রোফাইলে দাতারা খুশি হয়নি।

তবুও বিভিন্ন সূত্রের মতে, ইন্ডিয়ানরা চেয়েছিল জেনারেল মইনের আরেকটা এক্সটেনশন হোক। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর মেয়াদ পুর্তির পর জেনারেল মইন এক বছরের এক্সটেনশন পেয়েছিলেন এবং সেই প্রেস কনসারেন্সে বলেছিলেন, জাতির স্বার্থে তিনি এক্সটেনশনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। এখানে আরেকটি বিষয় পাঠকদের মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। জেনারেল মইনের প্রধান বেনিফ্যাক্টর ও পৃষ্ঠপোষক জেনারেল মাসুদ হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভাই সাইদ ইস্কান্দারের সাক্ষাৎ ভায়রাভাই। ধারণা করা হয়, এই আত্মীয়তার সুবাদে মাসুদের মাধ্যমে মইনের সেনাপ্রধান পদে আবির্ভাব ঘটেছিল।

ঠিক সেই কারণে বিএনপির একটি বড় অংশ সাইদ ইস্কান্দারের বিরোধী এবং সম্প্রতি ঘোষিত বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে সাইদ ইস্কান্দারের নাম দেখে তারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন যে ব্যাক্তিটির অবিমৃষ্যকারিতার জন্য ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘকাল সাবজেলে থাকতে হলো সে-ই ব্যাক্তিটি কোন কারণে পূনর্বাসিত হলেন? সে যাই হোক। ফিরে যাই রিটায়ার্ড জেনারেল মইন ভবিষ্যতে কি করবেন সেই প্রসঙ্গে। প্রথমে বিবেচনা করুন, জেনারেল মইনের পূর্বসুরিরা অর্থাৎ আগের সেনাপ্রধানরা রেটায়ার্ড করার পর কি করেছেন? জোট সরকার নিয়োজিত সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী ২০০৭-০৮ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের সময় দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) –এর চেয়ারম্যান রূপে মশহুর হয়েছিলেন। দুদক যে দূর্নীতি বিরোধী রোড শো করেছিল, তিনি হয়েছিলেন তার রিং মাস্টার।

কিন্তু তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে যায়। ফলে দেশ জুড়ে একজন সৎ নেতার যে ইমেজ প্রতিষ্ঠায় মশহুদ মহা ব্যস্ত হয়েছিলেন তিনিই দূর্নীতির রোড অ্যাকসিডেন্টে পতিত হন। তারপরও তিনি আকড়ে ধরে রাখে তার পদ। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর তিনি অজ্ঞাত কারণে সেই পদ থেকে বিদায় নেন। তার আগে আওয়ামীলীগ সরকার নিযুক্ত জেনারেল হারুন জোট সরকার আসার পর প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদুত হন।

এখন তিনি একটি বিতর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন। তার পূর্বসুরি জেনারেল মুস্তাফিজ যিনি আত্মীয় সূত্রে শেখ হাসিনার ফুপা ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এমপি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তিনি ব্যবসায়ে মন দেন এবং কিছুকাল আগে ক্যান্সারে মারা যান। জেনারেল মুস্তুাফিজের আগে সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মাহবুব।

তিনি ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে এমপি নির্বাচিত হন এবং পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার হন। খালেদা জিয়ার বিপর্যয়ের সময়ে তিনি তার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং অন্যতম প্রধান সংস্কারপন্থিরূপে পরিচিত এবং লাঞ্ছিত হন। খালেদা জিয়ার মুক্তির পর তিনি আবার মূল ধারায় বিএনপিতে ফিরে আসেন, গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন এবং এখন স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার রূপে একটি আসন অলঙ্কৃত করছেন। তার আগে সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল নাসিম। তিনিও খালেদা জিয়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং ২০শে মে ১৯৯৬-এর ক্যু-তে জড়িয়ে পড়েন।

ফলে তিনি পদচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি লো প্রোফাইলে আছেন। তার আগের সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দীন ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত এবং মন্ত্রী হন। জেনারেল নুরুদ্দিনের আগের সেনাপ্রধান জেনারেল আতিকুর রাজনীতিতে যোগ দেননি। তবে তার আগের আরেক সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ সেনা পদ থেকে অবসর নেয়ার পর অনেক কিছুই করেছেন।

এর অন্যতম হচ্ছে রাজনীতি করা ও প্রেসিডেন্ট হওয়া, কবিতা লেখা ও বই প্রকাশ, প্রেম, বিয়ে ও পিতৃত্ব দাবি করা। তিনি এখনো নিজের মহিমায় রাজনীতিতে উজ্জ্বল আছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জেনারেল মইন কোন পথ বেছে নিবেন? আমেরিকা অথবা মানব অধিকার লংঘনের কারণে আমেরিকা রাজি না হলে অন্য কোনো দেশে রাষ্ট্রদুত হবেন? সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিবেন? রাজনীতিতে এলে আওয়ামীলীগ ছাড়া তার অন্য কোনো বিকল্প আছে কি? তিনি কি শুধুই লেখালেখিতে মনোনিবেশ করবেন! ক্ষমতায় থাকাকালে সার্ভিস রুল ভেঙ্গে তিনি দুটি বই লিখে ফেলেছেন এবং সর্বশেষ বইয়ে জানিয়েছেন, মহানবীর সঙ্গে স্বপ্নে তার দেখা হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হয়েছিল জানা যায়নি। অথবা মইন কি কোনো রোমান্টিক অ্যাকশানে জড়িয়ে যাবেন? অথবা নিছক ব্যবসা? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে।

ইতিমধ্যে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই একই মালিকানার বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার অতি বিপ্লবী দুই সম্পাদকের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় সাংবাদিকতার যে ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই স্রোতের বিপরীতে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারী প্রকাশিত আমার দ্বিতীয় ইন্টারভিউয়ের শেষাংশটি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তার নিবন্ধের শেষ লাইনে সুস্পষ্ট পথ বাতলে দিয়েছে। তারা দ্রুত গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য উপদেশ দিয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না বিপ্লবী ও সংস্কারপন্থিদের দ্বারা। সেটা সম্ভব হতে পারে দুই নেত্রীর অধীন দুই প্রধান দলের দ্বারা। মনে রাখতে হবে, এই দুই নেত্রীকে যতো দোষেই অভিযুক্ত করা হোক না কেন, তাদের বড় অবদান হচ্ছে দুটি পার্টিকে জাতীয় পর্যায়ে পরিণত করা।

এটা এরশাদ পারেননি সামরিক শাসক হওয়া সত্ত্বেও এবং একটানা প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় থেকেও। তার জাতীয় পার্টি নামে জাতীয় হলেও কার্যত উত্তর বাংলার একটি আঞ্চলিক ও বহু বিভক্ত পার্টি রূপে থেকে গিয়েছে। বৃটেনের লেবার ও টোরি এবং আমেরিকার ডেমক্রেট এবং রিপাবলিক পার্টির মতোই বাংলাদেশ বিএনপি ও আওয়ামীলীগকে টিকিয়ে রাখার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন শুধু খালেদা ও হাসিনা। সম্ভবত সে কারণেই শেষ পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের শুভবুদ্ধি হবে এই দুই নেত্রীকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ দুই নেত্রী আগেই পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারেন যে, নির্বাচনের ফল তারা মেনে নিবেন।

নির্বাচন অভিযানকালে উভয় দলের নেতাকর্মীরা পরস্পরের প্রতি সহণশীল আচরণ করবেন। শান্তিপূর্ণভাবে সহবস্থান করবেন। নির্বাচনের আগে ও পরে হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচী বাদ দিবেন। নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী পক্ষ নিয়মিতভাবে যোগ দেবে এবং সংসদের বিভিন্ন কমিটিতে সরকার পক্ষ ন্যায়সঙ্গত ছাড় দেবে বিরোধী পক্ষকে। এছাড়া এককভাবে আওয়ামীলীগ নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে কিভাবে তার দলের ইসলামী মৌলবাদকে (খেলাফত মজলিশ) প্রশ্রয়দানের ইমেজ দুর করা যায়।

এই দুইনেত্রী যদি এসব গভীরভাবে বিবেচনা না করে আবার সেই আগের মতোই চলতে থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে বর্তমানে যারা ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে আছেন অর্থাৎ তিন আহমেদ, নির্বাচনের পর তারা কি করবেন? তারা কি মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন? হ্যাঁ, তা-ই। দেশ এবং নিজেদের মঙ্গলার্থেই তারা মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন। আমি নেড়ি কত্তা। ওই ইন্টারভিউয়ের মাত্র এক বছর পরই আমার ভবিষ্যত বাণী সঠিক হয়েছে।

মাইনাস টু হয়ে গিয়েছেন প্লাস টু। শেখ হাসিনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া হয়েছেন বিরোধী নেত্রী এবং আইএমএফ (IMF) এবং ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন নায়ক হয়েছেন মাইনাস থ্রি। প্রথমে ড: ফখরুদ্দিন আহমদ রিটায়ার করে আমেরিকায় চলে গিয়েছেন এবং পত্রিকায় প্রকাশ, এখন থেকে সেখানেই তিনি সপরিবাবে বাস করবেন। কিছু পত্রিকা বলেছে, তার আমেরিকান নাগরিকত্ব আছে এবং সেই সুবিধাটি তিনি নিতে পারেন।

এই তথ্যটি যদি সত্য হয় তাহলে ড: ফখরুদ্দিন একটি অনৈতিকতার অভিযোগে পড়বেন। কারণ তার সরকার গঠিত হওয়ার সময় ড: সুফিয়া খাতুন অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হলেও শেষ পর্যন্ত হতে পারেননি। তখন অভিযোগ উঠেছিল, বৃটিশ নাগরিকত্ব আছে ড: সুফিয়ার। সেই সময় ড: ফখরুদ্দিন নিজের দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ে নীরব ছিলেন। অনেকেই আশা করেন, এ বিষয়ে অস্পষ্টতাটি ড: ফখরুদ্দিন দুর করবেন।

গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে ড: ইয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেন। এখন তার মানসিক ভারসাম্যতা বিষয়ে তার স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন। সবশেষে বিদায় নিলেন জেনারেল মইন উদ্দিন আহমেদ। আমি তার সুখী ও শান্তিময় জীবন কামনা করি। ভবিষ্যতে কি করবেন তা তিনিই জানেন।

তবে তাকে অনুরোধ করবো, তিনি যেন বাংলাদেশে আলুর গুণ প্রচার করার কাজে নিজেকে পুন:নিয়োজিত করেন। নি:সন্দেহে এতে বাংলাদেশের খুব উপকার হবে। শুধু আলুর চাষ ও খাওয়াই নয়, আলু কিভাবে রাধতে হয় সেসব তথ্যও প্রচার করতে পারেন। ফিরে যাই ফেঞ্চ বিষয়ে। জেনারেল মইন জেনে রাখতে পারেন কিভাবে ভালো চিপস ফ্রাই করতে হয়।

প্রথমে বড়জোর চার ইঞ্চি লম্বা সাইজে আলু ফালি করে কাটবেন। তারপর বেশ কিছুক্ষণ একটি বাটিতে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন যেন স্টার্চ কমে যায়। এরপর ফ্রাইং প্যানে তেল ৩২০ ডিগ্রি গরম হলে ছোট ছোট ব্যাচে আলু দুই থেকে তিন মিনিট ভাজবেন। তারপর সব ভাজা আলু ঠান্ডা হতে দেবেন এবং টেম্পারেচারে ফিরিয়ে আনবেন। এরপর ফ্রাইং প্যানের তেল আবার গরম করবেন।

এবার বেশী গরম করতে হবে। তেল ৩৭৫ ডিগ্রি গরম হলে এতে আবার ছোট ছোট ব্যাচে আলু দুই থেকে তিন মিনিট ভেজে পেপার টাওয়েলে রাখবেন যেন তেল সব শুষে যায়। তারপর আপনার রুচি মতো কিছু লবণ ছিটিয়ে দেবেন ভাজা আলুর ওপর। যারা ভাজাভাজির ঝামেলা পোহাতে চান না তারা আগোরা সুপার মার্কেটে গিয়ে ম্যাককেইন (McCain) চিপস কিনতে পারেন। এই ব্রান্ডের চিপস ম্যাকডোনাল্ডস-এ সার্ভ করা চিপসের প্রায় সমান স্ট্যান্ডার্ডের।

জেনারেল মইন যদি আগামীতে এসব আলু তথ্য প্রচার করতে পারেন তাহলে তিনি জেনারেল চিপস রূপে জনসমাদৃত হতে পারবেন। জেনারেল চিপস নামের যোগ্য অধিকারী হতে পারবেন। গুডবাই জেনারেল মইন ওরফে জেনারেল চিপস অ্যান্ড গুডলাক। ইন্টারভিউ নিয়েছেন শফিক রেহমান ১৪জুন ২০০৯ সূত্র: মৌচাকে ঢিল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.