আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগ্রহশালার ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কার

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি ,তাই যাহা আসে কই মুখে ।

আমার জেলা জলপাইগুড়ি থেকে ছড়িয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহের আগুন: ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ শুধুমাত্র ব্যারাকপুর এবং বহরমপুরের সেনা ছাউনিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না । ওই বছরের এপ্রিলে মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসির পর বিদ্রোহের সেই আগুন ছড়িয়েছিল বঙ্গদেশের বিভিন্ন প্রান্তে । সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল চট্টগ্রাম, ঢাকা, জলপাইগুড়ি এবং ত্রিপুরাতেও । অথচ এই তথ্য কোনোদিনও পৃথিবীর আলো দেখেনি, না আছে পাঠ্যবইতে তার উল্লেখ ।

সযত্নে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল এই ঐতিহাসিক তথ্য । কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সংগ্রহশালার গবেষকরা প্রমাণ্য নথি সহ এই তথ্যের হদিস পেয়েছেন । এই গবেষণায় যুক্ত ঐতিহাসিক বরুণ দে জানিয়েছেন, 'সিপাহি বিদ্রোহের সময়কাল প্রকৃতপক্ষে অনেকটাই বিস্তৃত । উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশে সিপাহি বিদ্রোহ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা গেলেও সে অর্থে অজানা ছিল বাংলায় এর উত্থান । ' এর কারণ ব্যাখ্যায় বরুণবাবু দায়ী করেছেন চিরাচরিত সেই অপচেষ্টাকে, যার মাধ্যমে গোটা দেশে এই ধারণাকে চালু রাখা গেছে যে বাঙালিরা ব্রিটিশদের বশ্যতা স্বীকার করতে ভালোবাসতো ।

ঐতিহাসিক অমলেন্দু দের মতে, 'কোনো কোনো ভারতীয় ইতিহাসবিদ ব্যারাকপুর ও বহরমপুরের বাইরে বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল বলে ইঙ্গিত দিলেও যথোপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেননি । সেক্ষেত্রে এই নতুন তথ্য আমাদের ইতিহাসকে পুনর্নজর দিতে সাহায্য করে । ' পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগ্রহশালার ঐতিহাসিক এবং আধিকারিকরা পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট ঘেঁটে যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বাংলায় 'স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ' ( সিপাহি বিদ্রোহকে এই আখ্যাই দিয়েছিলেন দামোদর সাভারকার ) অনেক ব্যাপক আকার নিয়েছিল । সংগ্রহশালায় প্রাপ্ত এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বলছে, ১৮৫৭ সালের এপ্রিলে ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে মঙ্গল ও ঈশ্বরী পাণ্ডের ফাঁসির পরপরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আগুন দাবানলের মতো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বঙ্গদেশে । ঐ বছরের সেপ্টেম্বরেই সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ।

সিপাহিদের বিদ্রোহে মারা যান বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ সামরিক কর্তা । চট্টগ্রামে সিপাহিরা পরিকল্পনা করেছিল ট্রেজারি দখল নেওয়ার । অকস্মাৎ এই সেনা অভ্যুত্থানে হতভম্ব হয়ে পড়েন ব্রিটিশ আধিকারিকরা । এরপর বেশ কিছুদিন ট্রেজারি সেনা দখলে থাকার পর সংঘটিত সেনাবাহিনী দিয়ে বিদ্রোহে ইতি টানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । জলপাইগুড়িতেও ঠিক এর দুই মাস পরেই সেনা বিদ্রোহ হয় ।

এক্ষেত্রে সিপাহীদের লক্ষ্য ছিল চলতি বিশ্বাসকে কার্যত ভ্রান্ত প্রমাণ করা । বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের সিপাহীরাই যে শুধু এই বিদ্রোহে নেই, তা প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তারা । জলপাইগুড়ির সেনা ছাউনি কার্যত ধ্বংস করে এই বিদ্রোহে সাধারণ মানুষকেও জড়ো করেছিলেন সেনারা । এক্ষেত্রেও সেনা বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে কলকাতা থেকে বিশাল বাহিনী উত্তরবঙ্গে পাঠিয়েছিল কোম্পানি । ১৮৫৮ সালের জানুয়ারিতে সেনা বিদ্রোহ শুরু হয় ত্রিপুরায় ।

এখানে সিপাহিদের সংঙ্গে সমর্থন ছিল রাজ পরিবারেরও । উল্লেখযোগ্য হল গবেষকরা হাতে পেয়েছেন সে সব শহিদ সেনাদের নাম যাদের জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগ্রহশালার নির্দেশক অতীশ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, 'অনেকেই মনে করেন মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসির সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহে ইতি পড়েছিল । কিন্তু এই নথি থেকে পরিষ্কার কোম্পানির সর্বশক্তিকে উপেক্ষা করে প্রতিটি সেনা বিদ্রোহ নিখুঁত পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছিল এবং অন্য রেজিমেন্টের সেনারাও বিদ্রোহে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছিল । আমাদের হাতে যা প্রমাণ্য তথ্য আছে তাতে স্পষ্ট চারটি সেনা বিদ্রহই ।

'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.