আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহোয়্যারে বাংলা বানান বিভ্রাট: চাই একটু সচেতনতা



বেশি ভণিতা না করে আসল কথায় চলে আসি। সামহোয়্যারইন ব্লগে থাকার সময় হয়ে গেল আড়াই বছর,যা না লিখেছি পড়েছি তার অনেকগুণ বেশি। এইটুকু বলতে পারি,কাজকর্ম নেই বলে প্রায় সব ব্লগারের ব্লগেই ঢুঁ মারা হয়,ব্লগ নিয়ে নানারকম গবেষণা করার সময়ও মেলে। লেখার মান নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা নিজের নেই বলেই মনে করি,তাছাড়া বিষয়টা আপেক্ষিকও,কার কাছে কোনটা ভালো লাগে সেটা সংজ্ঞায়িত করাও অসম্ভব। বড় কথা হচ্ছে, লেখার মান নিয়ে কেউ খোদকারি করতে আসবে না বলেই ব্লগে লেখা, এটা আমার যা-ইচ্ছা-তাই-লেখার খাতা,অন্যের সেখানে মাতব্বরির অধিকার নেই।

তবে ২-১টা বিষয় আছে যেটা মোটামুটি একটা মান স্থির করা সম্ভব, বানান জিনিসটা তার মাঝে একটা। নিজে ছিলাম বাংলা বানান আর ব্যাকরণে বেশ দুর্বল, সারাজীবন পরীক্ষায় এই বিষয়ে বাঁশ খেয়ে এসেছি। তবে ব্লগে এসে দেখলাম, বেশিরভাগ ব্লগারই এই পথের যাত্রী। অবশ্যই, ব্লগে যেসব "ব্লগীয়" পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে ব্লগারদের মন্তব্য আর কথোপকথন বা ব্যঙ্গাত্মক লেখার মাধ্যমে,সেগুলোর কথা বলছি না। ফান পোস্টে ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্লগীয় পরিভাষা ব্যবহার করি আমরা,সেটার কথাও বাদ।

পারস্পরিক কথোপকথনে "কর্তাসি, পার্লামনা, ব্লগাইতাসি, ক্যাম্নে কি" এধরণের শব্দ বা বানান নিজেও ব্যবহার করি,অন্যকে ব্যবহার করতে দেখলেও পরিবেশটা বেশ সহজ লাগে। কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে লেখার মাঝে বানান বিভ্রাটের কথা, যে শব্দগুলো অভিধানে আছে সেগুলো ভুল বানানে লেখার কথা। অর্থাৎ কিনা,ইচ্ছাকৃতভাবে যে শব্দগুলো আমরা ভুল বানানে লিখতে চাই না সেগুলোর কথা। একটু উদাহরণ দেয়া যাক। কেউ হয়তো একটা চমৎকার গল্প লিখলেন,বা কবিতা,বা একটা গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ, যেটায় কোন ব্লগার তার একটা বক্তব্য আমাদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন বা কোন তথ্য দিতে চাইছেন।

সেখানে একগাদা বানান ভুল হোক, সেটা নিশ্চয়ই লেখক নিজেও চাইছেন না,পাঠকের জন্যও সেটা খুব একটা দৃষ্টিসুখকর অভিজ্ঞতা নয়। এতো গেল ব্লগারদের কথা। কিন্তু ব্লগাররা নিজের অজান্তেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছেন আরো অনেকের কাছে। নিজের কথা বলতে পারি, আমি নিজে আজকাল রেফারেন্সের জন্য অন্য অনেক মাধ্যম বাদ দিয়ে সরাসরি ব্লগের রেফারেন্স দিয়ে থাকি। একটা ঘটনা বলার লোভ সামলাতে পারছি না,বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবার জন্য চলমান অর্থনৈতিক মন্দার উপর ভাল ২-১টা প্রবন্ধ খুঁজছিলাম।

ইন্টারনেটে বাংলা আর্টিকেলের যাচ্ছেতাই অবস্থা,খুঁজলে একটাও মেলে না, সোজা ব্লগে খোঁজা শুরু করলাম। মিলেও গেল,শওকত হোসেন মাসুম, দিনমজুরের ব্লগে চমৎকার ২-৩টা লেখা মন্দার উপর, ওদিকে সচলায়তনে পেলাম সুবিনয় মুস্তফির আরো একটা দারুণ সিরিজ। কৃতজ্ঞতা তাঁদের কাছে,পরীক্ষায় মন্দার ওপর যে ক'টা প্রশ্ন এসেছে, প্রতিটার জবাবই তাঁদের লেখাগুলোর উপর ভিত্তি করে ভালোভাবেই দিয়ে এসেছি। ঘটনাটা উল্লেখ করার কারণটা হলো,আজ আমি ব্লগে পড়াশোনার বিষয়বস্তু খোঁজ করছি,হয়তো আরো বেশ কিছু ব্লগার সেটা করেন,ক'দিন পর আরো কিছু নেট ব্যবহারকারী আমাদের পথ ধরে এখানে খুঁজবেন, একটা সময় ব্লগ পড়ে না এমন লোকজনও খুঁজবেন। এটা এখন আমাদের অনেকেরই জানা যে গুগলে বাংলাতে লিখে কোন কিছু সার্চ দিলে সাধারণত প্রথম লিংকটাই আসে উইকি বা ৩-৪টা বাংলা ব্লগের কোন পোস্টের লিংক।

এই পোস্টগুলো হয়ে যাচ্ছে একেকটা তথ্যভাণ্ডার, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সম্পদ। ভেবে দেখুন অমি পিয়ালের মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভের কথা,ব্লগার ম্যাভেরিকের শব্দ আর গণিত বিষয়ক পোস্টের কথা,অথবা আমাদের নিজেদেরো অনেক পোস্ট আছে যেগুলো ভবিষ্যতে কারো না কারো জন্য রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। অথবা বাদ দিলাম এসব,কারো একটা গল্প-কবিতা বা যে কোন পোস্ট ভাল লেগে গেলেই আমরা সেটা শেয়ার করছি ফেসবুকে, মেসেন্ঞ্জারে,গ্রুপে। ব্লগে আসছেন প্রতিষ্ঠিত লেখকরাও,কেউ কেউ। এরকম কোন পোস্টে এসে বাইরের একজন পাঠক যখন দেখবেন অসংখ্য বানান ভুল,সংশ্লিষ্ট ব্লগারের জন্যই সেটা একটা বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হবে।

এমন না যে সবসময় ব্লগার বানানটা জানেন না বলেই ভুল করেন, টাইপিংয়ের ভুল বা তাড়াহুড়োর জন্যও ভুল থেকে যায়,আমার নিজেরও সেটা ঘটে। কিন্তু ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু,ব্লগারদের দিকে পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি। বিশেষ করে লেখাটা যদি ভাল হয়,এমন কোন লেখা যেটা কেউ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে,সেখানে কিন্তু পাঠকের বাড়তি মনোযোগের কারণে ভুলগুলো আরো বেশি করে ধরা পড়ে। নিজের কথাই বলি,লেখার সময় দাঁড়ি-কমা বিশেষ দিতাম না,ব্লগার আশরাফ ভাই ক'দিন পেছনে লাগলেন,বিরামচিহ্ণ নিজ উদ্যোগে ঠিক করে দিলেন। ঠিক করে নেবার পরে দেখি,আসলেই তো,পোস্ট টা দেখতে বা পড়তে এখন বেশ আরাম হচ্ছে,আমি যে বিরামচিহ্ণের ব্যাপারে একেবারেও অসচেতন,সেটাও বেশ চাপা পড়লো।

আমাদের কি করণীয়,সে ব্যাপারে সম্মানিত ব্লগারদের কোন পরামর্শ দেয়ার ধৃষ্টতা আমি করবো না। শুধু বলবো,নিজেরাই একবার ভাবুন। আপনার লেখাটি পড়ছে আপনারই কোন বন্ধু,প্রিয়জন,হয়তো আপনাদেরই কোন অনুজ বা সহপাঠী। পড়ছে আপনার অচেনা কোন পাঠক,লেখাটি ভাল লাগলে সে হয়তো পাঠাচ্ছে আরো অনেকের কাছে। লেখাটির আবেদন কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না,১০-১৫ বছর পরেও হয়তো নেটে কোন একটি বিষয় সার্চ করে কেউ একজন আপনার লেখাটিই খুঁজে বের করলো।

সেখানে কি বানান ভুল থাকাটা আপনাকে খুব আনন্দ দেবে? না, ভাষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা হচ্ছে না,আন্ঞ্চলিক ভাষাতে কিছু লেখা হলে সেটার কথা আলাদা,কিন্তু অভিধানে আছে এমন শব্দগুলো তো আমরা শুদ্ধ করে লিখতে পারি,লেখা দরকারও। প্রয়োজন শুধু একটুখানি সচেতনতা,একটুখানি মনোযোগ। জোর দিয়েই বলতে পারি,ব্লগাররা এখন ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার প্রতিনিধিত্ব করেন। না,আন্দাজে বলা নয়,জেনেশুনেই বলা। তাদের লেখাগুলো দেশে-বিদেশে পঠিত হয়,এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায়,ব্লগের বিকাশের মাত্রই শুরু,আরো অনেক অনেকদূর যাবে।

কাজেই ব্লগের মাধ্যমে আন্তর্জালে সঠিকভাবে বাংলাভাষাকে তুলে ধরার দায়িত্বকে আমরা কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। প্যাঁচাল শেষ করি। বানানটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,সেটা ধরা শুরু করেন সামহোয়্যারে সম্ভবত ব্লগার নুশেরা এবং আহমেদ মোস্তফা কামাল। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নানাজনের লেখায় বানান বিভ্রাটগুলো ধরিয়ে দিতে থাকেন তাঁরা,ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতই। তাঁদের এই পদ্ধতিই বেশ কার্যকর হতে পারে,যদি আমরা একটু বড় পরিসরে কাজটা করি।

খুব সাধারণ বানানও কিন্তু আমরা ভুল করি, অসচেতনভাবে লেখার কারণে। আবার বাংলা ব্যাকরণবিদও হয়তো কোন একটা বানান ভুল করে বসেন,যেটা হয়তও আমাদের মত সাধারণ কোন ব্লগার ধরিয়ে দিতে পারেন। কেন আমরা সেটা করবো না? লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই। মনে হয়না কোন ব্লগার এতে খুব বেশি মনোক্ষুণ্ন হবেন,আখেরে আমাদের সবারই তাতে উপকারই হচ্ছে,আমরাও হয়তো বানানটা জানতাম না,মুফতে শেখা হয়ে গেল। নুশেরা আপা আর আহমেদ মোস্তফা কামালের কল্যাণে আমারো বেশ কিছু বানান শেখা হয়েছে,শেখা হয়েছে বেশ কিছু নতুন শব্দও।

শিখতে নিশ্চয়ই আমাদের আপত্তি নেই,তাই না? বরং অন্য জায়গার তুলনায় ব্লগারদের এ ব্যাপারে যথেষ্টই উদার মনে হয়েছে। আচ্ছা,বানানের গোলমালটা কোথায় সবচেয়ে বেশি? পর্যবেক্ষণ আর নিজস্ব দুর্বলতা থেকে জানি,সবচেয়ে ভেজাল হয় ণ-ত্ব আর ষ-ত্ব বিধানে। কোন একজন ব্লগার এটা নিয়েই একটা পোস্ট দিয়ে ফেলুন না! দরকার হলে বাংলা ব্যাকরণ বই থেকেই অধ্যায়টা তুলে দিন। পড়ার দরকার নেই,শুধু যখন সন্দেহ হবে,নাহয় একবার মিলিয়ে নেবেন সবাই সেখান থেকে। সন্দেহ জাগে এমন বেশ কিছু বানান নিয়ে ব্লগার ম্যাভেরিক একবার প্রমিত বাংলা বানান রীতিঃ সচরাচর সমস্যা করে এমন শব্দের একটি সম্ভার পোস্ট টি দিয়েছিলেন, সংগ্রহে রাখতে পারেন সেটিও,নিজেও দিতে পারেন এমন একটা পোস্ট, সবার কাজে লাগবে।

সবচেয়ে বড় কথা,লেখাটা প্রকাশ করার আগে একবার নিজে পড়ুন,টাইপোগুলো থাকবে না। না,নিজের জন্য নয়,আমাদের পাঠকদের কথা ভেবে একটু কষ্ট করুন,কারণ আপনি যখন একজন ব্লগার,আপনার দায়িত্ব আমাদের পাঠকদের জন্য সামান্য হলেও বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু। সেই সাথে,আবারো বলি,অন্যের ব্লগে বানান বিভ্রাট দেখলে শুদ্ধ করে দিন,নিজের ব্লগেও সেটা করতে উৎসাহ দিন,দরকার হলে দল বেঁধে করুন। দল বেঁধে আমরা তো কত কিছুই করি,নাহয় এবার একটু শিক্ষাই দিলাম। সবার স্বার্থে নিজের ভুলটা শুধরে নিতে নিশ্চয়ই আমাদের খারাপ লাগা উচিৎ নয়,তাই না? [ডিসক্লেইমার: দয়া করে এটাকে কেউ উপদেশ বা পরামর্শমূলক লেখা ভাববেন না,সেক্ষেত্রে ক্ষমাপ্রার্থী।

এটাকে অনুরোধমূলক পোস্ট হিসেবে দেখলে এবং অনুরোধটা সদয় বিবেচনার মাঝে রাখলে কৃতজ্ঞ হবো]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.