আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাপিত জীবন

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

হঠাত করেই গরম পড়ে গেলো। আসলে হঠাত বলা যায় না। এমনিতেই এখন গরমের সময়। কিন্তু গরম পড়ি পড়ি করেও দেরী হয়েছে।

অবশ্য জার্মান / ইউরোপিয়ানরা গরম না পড়লেই খুশী। উনারা রোদ্রস্নান শুধু ছুটিতেই উপভোগ করতে চান। গত দুইদিন মোটামুটি ভালোই গরম পড়েছিলো। তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রী। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমান খুবই কম।

বেশ ভালোই মৃদুমন্দ বাতাস। তারপরও উনাদের ত্রাহি মদুসুদন অবস্হা। অনেকদিন বাইরে আছি বিধায় নিজের চামড়ায় এখনো দেশী ভাবটা রয়ে গেছে। উনাদের মতো ঠান্ডা ভালো লাগে না। বৃষ্টি ভালো লাগে শুধু বাসায় অথবা অফিসে থাকলে।

গত সপ্তাহান্তে বাইসাইকেল নিয়ে বেশ দুরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বেশ ভালোই বৃষ্টিতে ভেজা হলো। কয়েকবছর পর বৃষ্টিতে ভেজা। খুব একটা খারাপ লাগেনি। আশা ছিলো যদি একটু জ্বর আসে তাহলে অফিস কামাই দিবো।

কিন্তু জ্বর আসেনি এই ২৭/২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফ্যান ঘুরানোর কোন মানে হয় না। আমার রুম সবার উপরের তলায়। গরম বেশ ভালোই অনুভুত হয়। একটু গ্রামের দিকে থাকি । খোলা পরিবেশ তাই জানালা খুললেই ৩০ মিনিটে ঘর ঠান্ডা।

তারপরও গতদিন প্রথমবারের মতো পাংখা ঘুরালাম কিছুক্ষনের জন্য। দিন এতো লম্বা হয়েছে যে শেষই হতে চায় না। এশা নামায রাত ১১টার পর। নামায পড়ে ঘুমাতে যেতে ১২টা। ফজরের নামায ভোর ৫ ঘটিকায়।

নামায পড়ে আবার ঘুমাতে গেলে অফিস আসার টেনশনে ঘুম মোটামুটি বাতিল। অফিস টাইম মোটামুটি ফ্লেক্সিবল। কোন মিটিং না থাকলে যার যখন খুশি আসে। একজন ভোর ৬টায় তো অন্যজন হয়তো ১১টা অথবা ১২টায় হাজির। আমার টেনশন হয় সকাল সাতটার পর গাড়ি নিয়ে বের হলে মোটামুটি ঢাকা শহরের মতো জ্যাম।

অবশ্য সকালে শহরের ভিতরে ৭০/৮০ কিলো বেগে গাড়ি চালানো যায়। এরচে বেশী স্পিডেও চালানো যায়। কিন্তু ভয় হয় কখন কোন চিপায় ক্যামেরা নিয়ে পুলিশ কাকা বসে থাকেন বলা যায় না। কয়েকদিন পর দেখা যাবে পোষ্টবক্সে আপনার নামে একটি ফটোসহ চিঠি। কপাল খারাপ হলে ফাইনের সাথে সাথে পয়েন্টও কাঠা যাবে।

অফিস পাড়ায় ফ্রি পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়াও মুশকিল। এইসব চিন্তা করে চোখ ডলতে ডলতে অফিসমুখো। মা উঠে ছোটবোনকে স্কুলের জন্য ডেকে চা বসাতে গেলেন। উনাকে ঘুমাতে বলে নিজের জন্য নাশতা রেডি করে এককাপ চা। ঘুমের যে অবস্হা তাতে এই এককাপ চা কিছুই না।

অফিসে এসে কড়া এককাপ কফি খেয়েও ঘুম তাড়ানো মুশকিল। গতসপ্তাহে একজন কলিগ এসে কানে কানে বল্লো আরেকজন কলিগের বিয়ে। অফিসে সাধারনত কারো জন্মদিন অথবা বিয়েতে সেক্রেটারী একটি কার্ড ইস্যু করে একটি ফান্ড তৈরী করে। কলিগ এসে বল্লো সবাই যাতে সেই ফান্ডে বেশী করে ডুনেট করি। বল্লাম ঠিক আছে।

মনে মনে বল্লাম তোমাদের বিয়ে হচ্ছে একটি শখ। হয়তো ২/৩টা বাচ্চা হওয়ার পর শখ হলো বিয়ে করি। তখন ঢাকঢুল পিঠিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসো। আমার বসের দুইটা ছেলে দুই মহিলার কাছে। এখন উনি আর একজনের সাথে থাকেন।

কয়েকমাস থেকে উনার সখ হয়েছে বিয়ে করবেন। সেইটা নিয়ে আমার সাথে অনেক আলুচনা। কয়েকদিনপর আবার সবকিছুতে ভাটা। অবশ্য এইসব খুব একটা খারাপ না। মাথা ফ্রেশ থাকে ।

একজনের সাথে সারাজীবন বোরিং। কিছু হলেও ভাগাভাগির উপায় কম। কষ্ট করেও মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা (কেউ মাইন্ড খাইয়েন না)। ওদের অবস্হা হচ্ছে ভালো লাগলে থাকো না লাগলে আলবিদা। কিন্তু বাচচাদের অবস্হা বারোটা।

ওরা বাবা মায়ের আদর কোনটাই ঠিকমতো পায় না। বাবা যেমন অন্য মেয়ের সাথে মাও তেমনি অন্য ছেলের সাথে। পরশু ১০ ঘন্টাব্যাপি মিটিং। এই একটা জিনিস বড়ই বিরক্তিকর। আগের ডিপার্টমেন্টে বছরে ২/১বার মিটিং হতো।

এখানে তো প্রতি সপ্তাহেই দিনব্যাপি মিটিং। আজ স্হানীয় ম্যানেজার, কাল ইংল্যান্ডের ম্যানেজার, পরশু ফ্রান্সের ম্যানেজার অথবা টিমের সাথে মিটিং। মিটিংয়ে খাবারের আয়োজন থাকলে না হয় কথা ছিলো। শুধু সোডাপানি আর চা-কফি এই দু:খের দিনেও দোস্তের একটি মেসেজ পেয়ে ফোন দিলাম। : কি খবর? -আছি ভালো।

:বউ বাচ্চা ভালো? -হে আছে ভালো সবাই আল্লাহর রহমতে (দোস্ত আবার হুজুর টাইপ। তবে একসময় ব্যাপক পুংটা আছিলো। রোজ ৮/১০টা ডাইল না খাইলে ঘুম হইতো না। অনেক বছর হলো ভালো হয়ে গেছে) :হঠাত মাথায় ফ্লাট কেনার কেড়া উঠলো কেনো? -বড় ভাই একটা গাড়ি কিনলো তাই দেখে। :কতো দিয়ে কিনলো? -৫০ :তাহলে তো বেশি হলো কোথায়? দুবছর আগে না শিপন (আরেক বন্ধু) ওর বাপরে ৬৫লাখ দিয়ে একটা গাড়ি কিনে দিলো।

-ওর কথা বাদ দে। তোর কাছে যা চেয়েছি পাবো নাকি? :হয়তো। ফ্লাটের দাম কতো? - সোয়া কোটি টাকা : (এতো টাকা জীবনে শুনছি কিনা সন্দেহ)। দেশে যেহেতু আছো সুতরাং কিনে ফেলতে পারো। আর আজ হোক কাল হোক বাসা তো একটা দরকারই।

তবে এতো টাকা কে দিবে কাকা?? -ব্যাংক লোন। আর ভাই বন্ধু (আমি) : কানা (আরেক বন্ধু) শুনলাম ভালোই ব্যবসাপাতি করে। ওর কাছে মনেহয় পাবি। আর যদি হঠাত মইরা যাস তাহলে কি হবে (আমাদের কমন ডায়লগ) -ব্যবসার অংশ থেকে পাবি। :তুমি তো আমার এখানে বেড়াতে এসে দেখে গেছো আমি কি রকম কামাই।

এখন তুমিই বলো কিভাবে কি করি? -ঠিক আছে। এখনো ফাইনাল কিছু করিনি। কিছু হলে জানাবো। আরো কিছু আজাইরা আলাপের পর ফোনালাপ শেষ। তারপর চিন্তা করতে বসলাম।

দেশের কিছু মানুষ বেশ সুখেই আছে। এইসব সুখি মানুষদের দেখে ফিরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু অধিকাংশের অবস্হা খুবই খারাপ। পরিচিত একজন বুয়েট থেকে মেকানিক্যালে পাশ করে এখান থেকে ডিগ্রী নিয়ে গিয়ে দেশে একটা ইন্টারভিউয়ের কলই পাচ্ছে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।