আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাপিত জীবন

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

অফিসের কাজ সাধারনত বাসায় নিয়ে যাই না। অফিস শেষের মোটামুটি রুটিন হচ্ছে টিভি দেখা। শুয়ে বসে কার্টুন চ্যানেল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল, অথবা টেকনোলজি। অবশ্য লেপটপ সবসবমই কাছাকাছি থাকে।

গতকালও একই রুটিন। চ্যানেল ঘুরাতে হঠাত বাংলাদেশের ডায়লগ শুনে একটু থামলাম। টিভি টেক্সে দেখলাম ছবির নাম Eisenfresser। ট্রান্সলেট করলে দাড়ায় লোহাখোর। নামটা শুনেছিলাম।

আমাদের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের অবস্হান যে কোথায় না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এতো এতো কষ্টের পরিশ্রমের টাকা পায় না ওরা। অন্যদিকে হাতে তসবি, মাথায় টুপি, সুভ্র সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে মালিকের লম্বা লম্বা কথা শুনে মনে হয়েছিলো শুয়রের বাচ্চাটাকে যদি এক ঘন্টার জন্য সাধারন শ্রমিকদের সাথে কাজ করানো যেতো। স্হানীয় কন্ট্রাকট্ররগুলো আরো বড়ো হারামির বাচ্চা। এতো এনাজি মনে হয় সৃষ্ট্রিকর্তা ওদের দিয়ে দিয়েছিলেন।

তা না হলে মোটা চালের ভাত খেয়ে এতো কঠিন কাজ করে কিভাবে? উফ, কি যে কষ্টের জীবন। এইসব শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই জার্মান টিভিতে কখনো বাংলা শব্দ শুনলে ছোটবোন দৌড়ে আসে। মাঝে মাঝে নিজেও ডেকে নিয়ে আসি। গতকাল আর ডাকতে সাহস হলো না। এই দেশে জন্ম হওয়া কাউকে এইসব দেখালে দেশের জন্য মায়ার পরিবর্তে হয়তো ঘৃনা জন্মাবে।

নিজেই দেখে লজ্জা পাচ্ছি। হয়ত পরিবেশের সাথে মন-মানষিকতা পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েকমাস আগে দেশ থেকে দোস্ত বেড়াতে আসছে। আমার কিছু কাজে সে তার ড্রাইভারকে ফোন করে বিভিন্ন আদেশ দিচ্ছে। পাশেই বসে ওদের কথা শুনছিলাম।

ফোন শেষ হওয়ার আগে ইশারায় বল্লাম ড্রাইভারকে জিঞ্জসে করতে ও ভালো আছে নাকি? ওর ফ্যামেলির লোকজন ভালো আছে নাকি? দোস্ত মুছকি হেসে জিঞ্জেস করলো। ফোন রেখে বল্লো, ড্রাইভারকে এইসব জিঞ্জসে করতে হয় না কি? দিলাম একটা ঝাড়ি। এই হচ্ছে চাকর মনিব সম্পর্ক। হয়তো দেশে গেলে আমিও এইরকম হয়ে যাবো। আমাদের (মুসলমানদের) দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ (মদ, শুয়র, রক্ত) জিনিস খেয়ে ইউরোপিয়ানরা যেরকম সমাজ ব্যবস্হা তৈরী করেছে তাতে আমাদের মুসলমানদের প্রতিটি দেশে হানাহানি, শ্রমিকের বেতন না দেওয়া, আইন-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তার অবস্হা দেখে মনে হয় না কোন কিতাবে (কুরআন, হাদিসে) শ্রমিকদের ব্যাপারে আল্লাহ অথবা রসুল কিছু বলেছেন।

গতবছর দেশ থেকে আসার সময় ওমরা করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের অবস্হা স্বচক্ষে দেখে সৌদিদের প্রতি বিতৃষ্ণা লুকোতে পারিনি। এতো এতো খারাপ অবস্হায় মানুষ বসবাস করে। আর ওরাই ইসলামের নামে বড়ো বড়ো কথা বলে। মানুষে মানুষে ভাই ভাই সম্পর্ক(!!)। শালা, সবকয়টিকে শুয়রের খোয়াড়ে রেখে দেওয়া উচিত।

অফিসে কি কাজ করলাম না করলাম মাসের ২৭/২৮ তারিখ বেতন ঠিকই এসে যাচ্ছে। আইনের শাসন, মানবতা, শ্রমিকের প্রতি সহমর্মিতা সবই ওদের কাছে। গতমাসে ম্যানেজার এসে বল্লো, আমার একশ ঘন্টা অতিরিক্ত কাজ হয়ে গেছে। এখনি যদি এই অবস্হা হয় তাহলে বছর শেষে দুইশ ঘন্টা হয়ে যাবে। তাই আমি যেনো দেরী করে অফিসে এসে তাড়াতাড়ি চলে যাই।

অথবা কয়েকদিন অনুপস্হিত থাকি। তাতে আমার ঘন্টা কমে যাবে। কয়েকদিন ১০ঘন্টার বেশি কাজ করেছিলাম বলে ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৮টা পর্যন্ত কাজের সময়। আমি একদিন ৮:৩০ পর্যন্ত ছিলাম।

সেইজন্য আরেক ওয়ার্নিং। নিজে ফাও কিছু অযুহাত তুলে বল্লাম কাজ শেষ হচ্ছিলো তাই এই অবস্হা। উনি বল্লো একদিনে কাজ শেষ করতে হবে এইরকম কথা কোথাও নেই। এই বছর দেশে যাওয়ার প্লান এখনো করিনি। একদিনও ছুটি নেওয়া হয়নি।

তাই নিয়ে ম্যানেজার টেনশনে আছে। কয়েকদিনই আমাকে ছুটি ফাইনাল করার জন্য বলেছে। আমি শুধু রমযানের এক মাস ছুটি ফাইনাল করেছি কিন্তু আরো প্রায় ১৫/২০ দিন ছুটি থেকে যায়। ইচ্ছে করেই নেই না। এই হলো মোটামুটি কামলা জীবন।

জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকদের সাথে আমার শ্রমের + মালিকের পার্থক্য। জাহাজ ভাঙ্গা মানুষের কষ্ট দখে মনে হলো-মুসলমান তো দুরের কথা; শুয়োর, মদ খাওয়া মানুষগুলোর মতো মানুষ হতে আমাদের এখনো কয়েকশ বছর লাগবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।