আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেচারা! ইয়াজউদ্দীন

রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

ইতিহাসের একটা কলংকজনক ইতিহাস তৈরী করেছেন ব্যক্তিটি। গতকাল বাংলাভিশনে কাজী জেসিন এর উপস্থাপনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়াজ উদ্দীন আহমেদ একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কয়েক মুহুর্ত দেখে অন্য চ্যানেলে গিয়েছিলাম। কারণ বেচারা! কি বিব্রতকর মুহুর্ত কাটিয়েছেন অনুষ্ঠানটিতে। তা একঝলক দেখেই বুঝতে পারছিলাম।

তার উপর কাজী জেসিনের একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা এবং বেচারা, ইয়াজউদ্দীনের অসহায় অবস্থা দেখে কিউরিসিটি থাকলেও অনুষ্ঠানটা দেখিনি। বার বার মনে হচ্ছিল, যে যেটার জন্য উপযুক্ত নয়, সে সেখানে থাকলে আসলে মানুষের অবস্থা কি হয়, ইয়াজউদ্দীন সাহেব তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। দিনের প্রথম প্রহরে অনলাইনে সংবাদ পড়তে গিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে দেখলাম, একটা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে ঐ অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নির্দ্দেশে শুভ কাজ হিসাবে তিনি ওয়ান ইলাভেনে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। তারপর খবরটিতেও যা লেখা হয়েছে, তাতে তার অসহায়ত্বের চিত্রটা খুব বেশি পরিস্ফুটিত হয়েছে।

খবরটা পড়েই উৎসাহিত হলাম ব্লকে লেখার। কারণ যে কথাগুলি বলা হয়নি বলে আমার মনেহয়েছে, তাই এখানে লেখার চেষ্টা করছি। প্রবাদ আছে, বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু অনেক ভাল। ইয়াজ উদ্দীনের ক্ষেত্রে তা সমানভাবে প্রযোজ্য। বেচারা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন; সেটাই ভাল ছিল।

ব্যক্তিগতভাবে আমার যা মনে হয়েছে, জনাব ইয়াজ উদ্দীন আহমেদ খুবই সরল সোজা গোবেচোরা মানুষ, রাজনীতির পঙ্খিলতায় কিংকর্তব্যবিমুঢ়। যখন তাকে প্রেসিডেন্টের অফার দেয়া হয়েছিল, তখনই তা ফিরিয়ে দেয়া ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু কে জানত, এতো ঘটনা ঘটবে! তাই হয়তো এতোবড় একটা পোষ্ট (চাকুরিজীবী বলে কথা), কে ছাড়তে পারে বলুন? বনে গেলেন দেশের প্রেসিডেন্ট। যারা তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, সে সময়টায় মাঝখানে একবার দুরারোগ্য অসুস্থতার চক্করে পড়া ছাড়া তেমন কোন অসুবিধা পোহাতে হয়নি জনাব প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু ক্ষমতা যখন গেল তত্তাবধায়ক সরকারের হাতে, তখনই শুরু হলো সমস্যা।

সমস্যাটা ঘনীভূত হলো চরমে যখন তত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যগণ পদত্যাগ করলেন। বেচারা ইয়াজ উদ্দীনের উচিত ছিল, তখনই ক্ষান্ত দেয়া। বোকাদের একটু জেদ বেশি হয়। সেই জেদ ধরে গো ধরতে পারতেন তিনি, আমি আর প্রেসিডেন্ট থাকবো না। আইন কি বলে বলুক, আমাকে সরানোর আইন তৈরী করা হোক।

তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা যা করেছিলেন। কিন্তু ভয় হয়ত তাকে সর্বক্ষণ তাড়িত করেছে। তাই সেই গো ধরতে সাহস দেখাননি। হয়ত এমনও হতে পারে, যারা পেছন থেকে এসব করাচ্ছে, তাদের সাহসে তিনি বলীয়ান ছিলেন। কারণ মেরুদন্ডহীন মানুষ সবসময় শক্তিশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন এবং তাদের কথামতো উঠবস করেন।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি তাই করেছেন, বিএনপি চলে গেলে চক্করে পড়ে আবার সেই চক্করের অদৃশ্য শক্তিদাতাদের সাহসে সাহসী হয়ে উঠেছিলেন এবং অনুগত ভৃত্যের ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারেননি, যে তিনি ভৃত্য ছিলেন না, ছিলেন প্রভু। যারা শক্তির দাপটে প্রভুকে অস্থির করে তুলছিল, তাদের ক্ষমতা যদি অসীম হয়, তবে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে রণে ক্ষান্ত দেয়া। কিন্তু সেটা তিনি করেন নি। কিংবা বুঝতে পারেননি তিনি নতুন চক্করে পড়তে যাচ্ছেন।

হয়ে গেলেন নিজেই শাসনক্ষমতার অধিকারী। নিজের ইচ্ছাই কি? মনে হয়না। কারণ উনার তখন কোন ইচ্ছা অনিচ্ছ্বা কাজ করতো বলে মনে হয়না। ক্ষমতাবানদের ইচ্ছাই তিনি পরিচালিত হচ্ছিলেন রোবটের মতো। জারি করলেন জরুরি অবস্থা।

তিনি বলেছেন, সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় শুভকাজ করেছেন তিনি। খালেদা ও হাসিনাকেও গ্রেফতার করার নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। দাবী করেছেন, তার নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয়নি। ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্য কথা, তার ইচ্ছা ছাড়া কোন কাজ যে হয়নি, তা উনি না বললেও সংবিধান সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারা তা জানেন।

কারণ রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টের আদেশ ছাড়া জরুরি অবস্থা জারি করা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তিনি কি নিজে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নাকি তাকে সিদ্ধান্ত নেয়াতে বাধ্য করা হয়েছিল। উত্তরগুলি ইতিহাসের জন্য জরুরি। কিন্তু তিনি তার উত্তর দেবেন কিভাবে? ঘটনার পিছনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কি সম্পূর্ণ অবগত, যদিও প্রতিটি ঘটনা ঘটেছে তারই মাধ্যমে।

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, তিনি ঘটনার সাক্ষী হলেও ঘটনার পিছনের ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বলে মনে হয়না। তিনি সংবিধান লংঘন করেছেন কিনা, সংবিধানে কি আছে, সেগুলি সম্পর্কে তিনি হয়তো সেসময় মাথাই ঘামাননি। শুধুমাত্র পরামর্শ পরোক্ষভাবে আদেশ পালন করেছেন মাত্র। কিছুটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উনাকে তখন যদি বলা হতো, সেনাবাহিনী নামিয়ে সারাদেশের মানুষকে মেরে ফেলেন; তিনি তাই আদেশ দিতেন। বোকা লোকের সমস্যা এটাই।

বেচারা, কি পরিমাণ অন্যায় করেছেন, তা হয়তো অনুমানও করতে পারছেন না তিনি। এসব নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলে ওনাকে শাস্তি দিতে হবে না, এমনিতেই উনি পাগল হয়ে যাবেন। হয়ত ইতিমধ্যে কিছুটা লক্ষন দেখা দিয়েছে। যদিও বই লিখবেন উনি, বলেছেন। বইটা প্রকাশ পেলে হয়ত অনেক সাক্ষ্য মিলবে।

তবে ঘটনার সাক্ষী চোখে যা দেখেন, তাই বলেন, কিন্তু চোখের আড়ালের কথা, কিভাবে বলবেন। তবে ধারণা করা যাবে বইটি পেলে। জানিনা, সে বইও লেখা হবে কিনা আগামী ১০ বছরে, যদিও দ্রুত তিনি তা লিখবেন বলেছেন। এটাও সত্যি কথা, তিনি শিঘ্রই লিখবেন, কিন্তু বস যদি বলেন, লেখা যাবে না, তাহলে? তাই বলছি, ১০ বছরেও লেখা হবে না। এতক্ষন যেসব কথা লিখলাম, তা লেখার উদ্দেশ্যে আমি লিখতে বসিনি।

যা বলতে চাই, তা হলো ঃ প্রতিদিন রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ নিয়ে আমরা অভিজ্ঞ মন্তব্য, মতামত প্রদান করলেও রাজনীতি কিন্তু ততোটা সহজ নয়। ইয়াজ উদ্দীন সাহেব সমস্যাটা হয়ত বুঝতে গিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন। রাজনীতির চক্কর এটাই। তাই সাধু সাবধান! আপনাকে যদি কখনো প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করা হয়; প্রয়োজনে পায়ে পড়ে মাফ চেয়ে নেবেন, তাতেও যদি কাজ না হয়, তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। তা নাহলে রাজনীতির চক্কর আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে মৃত অবস্থায়।

বর্তমানে ইয়াজ উদ্দীন সাহেব আছেন! একে কি বেঁচে থাকা বলে, এর চেয়ে যে সারাদিনে একবেলা ভাত খেয়ে ক্ষুধার মধ্যে বাস করছে, তার জীবনও অনেক ভাল। সাধু সাবধান! ইয়াজ উদ্দীনের মতো নির্বোধ হবেন না নিশ্চয়ই!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।