আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকার জাদুঘর সমগ্র - (এক খণ্ডে ১৭টি জাদুঘরের আদ্যোপান্ত)

বোকারা ভাবে তারা চালাক, চালাকরা ভাবে তারা চালাক। আসলে সবাই বোকা। বোকার রাজ্যে আমাদের বসবাস
জাদুঘর শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে আসা, অর্থ মায়াজাল। উর্দুতে জাদুঘরকে বলা হয় আজবখানা। অতীতে জাদুঘর আজবখানা ছিল কি না জানা না গেলেও বর্তমানে এর অর্থ ব্যাপক।

আর জাতীয় জাদুঘরের অর্থ তো আরো বিস্তৃত। জাতীয় জাদুঘর কোনো জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, কৃষ্টি, সংগ্রাম ও সংস্কৃতির নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে নিরাপদ পরিবেশে প্রদর্শনের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রথম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। ভারতবর্ষে জাদুঘরের ধারণা আসে ইংরেজদের মাধ্যমে। এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

১৮১৪ সালে কলকাতায় তাদের উদ্যোগে প্রথম জাদুঘর 'এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম' প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এর নামকরণ হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। পূর্ববঙ্গে প্রথম জাদুঘর 'বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর' প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে দিঘাপতিয়ার রাজকুমার শরৎ রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায়। কলকাতায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রায় এক শ বছর পরে ঢাকায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় জাদুঘর ১৯১২ সালে লর্ড কারমাইকেল ঢাকা সফরে এলে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর কাছে ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

ঢাকাবাসীর এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা হয়। সেদিন লর্ড কারমাইকেল তৎকালীন সচিবালয়ের একটি কক্ষে (পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন এবং বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) ঢাকা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। ১৯১৪ সালের ২৫ আগস্ট ঢাকা জাদুঘর প্রথমবারের মতো দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯১৫ সালে এ জাদুঘর নিমতলীর বারোদুয়ারিতে স্থানান্তর হয়। এরপর থেকে জাদুঘরে নিদর্শন সংগ্রহে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সে সময় এ জাদুঘরে নিদর্শন সংগ্রহ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার। ১৯৬৬ সালে শাহবাগে ঢাকার কেন্দ্রীয় জাদুঘর নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা জাদুঘরকে একটি স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ১৯৭০ সালে ঢাকা মিউজিয়াম (বোর্ড অব ট্যাস্টিজ) অর্ডিন্যান্স ঘোষণা করা হয়। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় জাদুঘর নির্মাণের প্রয়োজনটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শাহবাগের নবনির্মিত ভবনে জাতীয় জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকা জাদুঘরের সংগৃহীত নিদর্শনগুলো জাতীয় জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয় তখন। একই সঙ্গে সারা দেশ থেকে নিদর্শন সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এভাবে নিদর্শনের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৬ হাজারে। প্রায় সাড়ে আট একর পরিমাণ জমির ওপর গড়ে ওঠা চারতলাবিশিষ্ট এ ভবনে নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য রয়েছে ৪৫টি গ্যালারি। দোতলা, তিনতলা ও চারতলায় অবস্থিত এ গ্যালারিগুলোতে ৩০ হাজার নিদর্শন উপস্থাপিত আছে।

বাকি নিদর্শনগুলো আছে গুদামজাত অবস্থায়। পালা করে এসব নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়। ঠিকানা শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ। ফোন নম্বর- ৮৬১৯৩৯৬-৯৯, ৮৬১৯৪০০, ফ্যাক্স- ৮৮ ০২ ৮৬১৫৫৮৫, জিপিও বক্স নম্বর- ৩৫৫। ই-মেইল- ওয়েবসাইট- http://www.bangladeshmuseum.gob.bd সময়সূচী • গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) শনিবার-বুধ (সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৫.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।

• শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) শনিবার-বুধ (সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ) • রমজান মাসে: শনিবার-বুধবার (সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ) • বৃহস্পতিবার এই জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ। টিকেট • বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট ৭৫ টাকা। • আর দেশী দর্শনার্থীদের জন্য এটি ১০ টাকা।

• ৩ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য টিকেটের মূল্য ৫ টাকা। • পহেলা বৈশাখ, ২৬ শে মার্চ ও ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পায় এখানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুনবাগিচার একটি সাবেকী ভবন ভাড়া নিয়ে যথাযথ সংস্কার শেষে দ্বার উদঘাটন হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের এই প্রয়াস গোড়া থেকেই ব্যাপক মানুষের সমর্থন ও সহায়তায় ধন্য হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরের সীমিত পরিসরে প্রায় ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহভাণ্ডারে জমা হয়েছে ১৫,০০০-এরও বেশি স্মারক।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুরে মুসলিম বাজার ও জল্লাদখানা বধ্যভূমি খননের কাজ সম্পন্ন করে এবং পরে (২০০৮ সালে) জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিপীঠ নির্মাণ করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্য ভাণ্ডার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার। হৃদয় আলোড়িত করা জাদুঘর-প্রদর্শনী ও বিভিন্নমুখি কর্মতৎপরতা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিণত হয়েছে দেশে-বিদেশে নন্দিত প্রতিষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আন্তর্জাতিক জাদুঘর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইট্স্ অব কনসান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব মিউজিয়ামের সদস্য।

আইকম-বাংলাদেশের সদস্য। বর্তমানে একটি ভাড়া বাড়িতে জাদুঘরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকসমূহ যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাদুঘর ট্রাস্টের অনুকুলে ০.৮২ একর ভূমি বরাদ্দ দেয়। আন্তর্জাতিকমানের সকল সুবিধাসহ একটি আধুনিক জাদুঘর সেখানে নির্মিত হবে।

বিগত নভেম্বর ২০০৯-এ উন্মুক্ত স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপত্য-নকশা নির্বাচন চূড়ান্ত করেছে। বর্তমানে জাদুঘর ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকানা ৫, সেগুন বাগিচা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ। টেলিফোন- ৯৫৫৯০৯১, ফ্যাক্স- +৮৮০-২-৯৫৫৯০৯২, ই-মেইল , ওয়েব সাইট- http://www.liberationwarmuseum.org টিকেট • জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। • প্রধান গেইটের বাম পাশে জাদুঘরের কাউন্টারটি অবস্থিত।

• টিকেট মূল্য ৫ (পাঁচ) টাকা। • পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে। • জাদুঘরে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র কাউন্টারে জমা রাখতে হয়। সময়সূচী • গ্রীষ্মকালীন: সোমাবার থেকে শনিবার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। • শীতকালীন: সোমাবার থেকে শনিবার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

• শুক্রবার ও শনিবার জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশী থাকে। • এছাড়া ১লা বৈশাখ, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৭ই মার্চ, ১৫ই আগষ্ট এসব দিনগুলোতে বেশী ভিড় হয়। • রবিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের যে বাড়িতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন, স্বাধিকারের সংগ্রামে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সে বাড়িটি আজ তাঁর নানা স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। বর্তমানে এটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।

১৯৬১ সালের ১ লা অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচন, ১৯৭১ এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, এই সবগুলো ক্ষেত্রেই শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা প্রনয়ন, দলের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা শোনা এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি। দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা এই বাড়িতে ভিড় করেছেন ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে। “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” – ৭ই মার্চের বিখ্যাত সেই ভাষণের রুপরেখাটি বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এখানকার কনফারেন্স টেবিলে বসে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি তখনও তিনি এই বাড়িটি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকেন।

এই বাড়ি থেকে অসংখ্যবার পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। সর্বশেষে গ্রেপ্তার করেছিল ৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাতে। বলা হয়ে থাকে তিনি ধরা দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন তাঁকে না পেলে এই সৈন্যরা নিরস্ত্র জনগণের উপর নারকীয় তান্ডব চালাবে। আর এই বাড়িতেই তাঁকে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে এবং নাম দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। কয়েক ধাপে জাদুঘরটির উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম এবং বর্তমান পর্যায়ে একতলায় দুটি এবং দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ জাদুঘরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে আরও কক্ষযুক্ত হবে। মূল ভবনের পেছনে চার তলা একটি ভবন নির্মানের কথা রয়েছে জাদুঘরের জন্য। নতুন ভবনে একটি লাইব্রেরী ও অডিটোরিয়াম রয়েছে। তবে এখনো চালু করা হয়নি। জাদুঘর ভবনটিতে ঢুকে এক তলাতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।

একতলায় জাদুঘরটির প্রথম কক্ষে ছবির মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে বলা যায়। সেই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলাপচারিতা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এই কক্ষটি ছিল ড্রইং রুম। যেখানে বসে বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করেছেন। এই কক্ষের পাশের কক্ষটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর।

এখানে বসে তিনি লেখালেখিও করতেন। এখান থেকেই তিনি ৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় এখনো চোখে পড়বে সেই রাতের তান্ডবলীলার নিদর্শন। এছাড়া এখানে শিল্পীর তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। দোতলায় গিয়ে প্রথমেই যে কক্ষটি পাওয়া যায় সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর বাসকক্ষ।

এর পরের প্রথমে কক্ষটি ছিল তাঁর শোবার ঘর, তারপরের কক্ষটি কক্ষটি শেখ রেহানার শোবার ঘর। এ কক্ষগুলোয় এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের নানা স্মৃতি চিহ্ন। এটি কেবল একটি পারিবারের স্মৃতি চিহ্ন নয়। এগুলো একটি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখানে থাকা বিভিন্ন প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের খেলার জিনিস।

যেমন- বল, হিকষ্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবি ইত্যাদি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তো রয়েছেই। আরও নিদর্শন প্রদর্শনীর জন্য আনার কথা রয়েছে। ঠিকানা বঙ্গবন্ধু ভবন, বাড়ি# ১০, রোড# ৩২ (পুরাতন), ১১ (নতুন)। ফোন- ৮৮-০২-৮১১০০৪৬ ফ্যাক্স- ৮৮-০২-৮৩১৩৮৬৬ টিকেট • টিকেটের মূল্য ৫ টাকা।

• ৩ বছরের কম বয়সীদের কোন টিকেট লাগে না। . • শুক্রবার ১২ বছরের কমবয়সীদের কোন টিকেট লাগে না। • টিকেট কাউন্টার প্রথম দরজার পশ্চিম পাশে অবস্থিত। সময়সূচী • সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। • জাদুঘরটির সাপ্তাহিক বন্ধ বুধবার।

• শুক্রবার ও শনিবার ভিড় বেশি হয়। সামরিক জাদুঘর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আবহমান বাংলার চিরাচরিত সামগ্রিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এ দেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য আর উন্নয়নের ক্রমবিকাশ সংরক্ষণ ও প্রচার করার জন্য ১৯৮৭ সালে ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর। সামরিক জাদুঘরের গুরুত্ব এবং দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সামরিক জাদুঘরটি ১৯৯৮ সালে নগরের গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রস্থল বিজয় সরণিতে স্থাপন করা হয়। জাদুঘরে সীমানা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ট্যাংক পিটি-৭৬।

রাশিয়ার তৈরি এই ট্যাংকটি পানিতেও ভেসে চলতে সক্ষম। এই ট্যাংকটি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকা থেকে বাংলাদেশ বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তান দখলদারবাহিনীর নিকট হতে উদ্ধার করা হয়। সৌজন্যে এরিয়া সদরদফতর, কুমিল্লা। ট্যাংক পিটি-৭৬ ছাড়াও সামরিক জাদুঘরের মাঠের উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে সুসজ্জিতভাবে আরো ১৬টি ট্যাংক ও কামান প্রদর্শিত হচ্ছে। এগুলো খোলা আকাশের নীচে কেবল পাকাভিটি করে রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে ৭৫ মি. মি. প্যাক হাউগান, ট্যাংক ক্রুইজার আর এ এম জিপিও সেক্সটন, ট্যাংক এ আর ভি মার্ক-টু শেরমান এম-৩২ বি-১, ট্যাংক ক্রুইজার মিডিয়াম ৭৬ মি. মি. গান মার্ক-টু শেরমান, মোটর গ্যারেজ ৪০ মি. মি. সাপোর্ট ক্রুইন এম ১৯ এ১, ১৭ পাউন্ডার ট্যাংক বিধ্বংসী গান, ২৫ পাউন্ডার গান, এস পি আর্টিলারী ২৫ পাউন্ডার সেঞ্জটন এম-৫ এবং ৩৭ মি. মি. কামানসহ ট্যাংক হালকা স্টুয়ার্ড মার্ক-৪ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৌজন্যে প্রাপ্ত বলে পরিচিতি পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও উন্মুক্তভাবে জাদুঘর মাঠের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার ১০৫/৫২ সি এম ক্রুপ গান, ১৯৭৩ সালে মিসর কর্তৃক আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ব্যবহৃত ব্যারেল ১০০ মি. মি. ট্যাংক গান এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর ৬টি ছোট-বড় কামান। মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত জাপানের অনুদানকৃত মোটর লঞ্জ ‘এম এল সূর্যোদয়'। এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মূল জাদুঘর ভবনের দোতলায় রয়েছে ৮টি গ্যালারি।

প্রথম গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে হাতকুঠার, তীর, ধনুকসহ আদিম যুগের অস্ত্রশস্ত্র। দ্বিতীয় গ্যালারিতে ডিবিবিএল গান, এসবিবিএল গান, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত হাতিয়ারসহ যুদ্ধাস্ত্র; তৃতীয় গ্যালারিতে এলএমজি, এসএমজিসহ মাযারি অস্ত্র এবং চতুর্থ গ্যালারিতে মর্টার, স্প্যালো, এইচএমজিসহ ভারী অস্ত্র সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। পঞ্চম গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে সশস্ত্রবাহিনীর শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক-পরিচ্ছদ, র‌্যাংক, ব্যাজ, ফিতা ইত্যাদি। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিল, সেক্টর কমান্ডারগণের পোর্ট্রেট, কিছু ব্যবহার্য বস্তু ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক ৬ষ্ঠ গ্যালারিতে। সপ্তম গ্যালারিতে নাম দেয়া হয়েছে ‘বিজয় গ্যালারি'।

এতে সশস্ত্রবাহিনীর যেসব ব্যক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন সেসব বীরশ্রেষ্ঠদের পোর্ট্রেট ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং অষ্টম গ্যালারিতে রয়েছে প্রাক্তন সকল সেনাপ্রধানের তৈলচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ-বীরপ্রতীকদের নামীয় তালিকা ইত্যাদি। একমাত্র জাদুঘর ভবনের নীচতলায় প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী যে গাড়িটি নিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেন সেই জিপ গাড়িটি। ‘যশোর ব ১৪৬' নম্বরধারী এই গাড়িটির স্ট্যান্ডবোর্ডে বলা হয়েছে, এটি ১/৪ টন ৪*৪ কাইজার উইলিজ জিপ ওয়াগানার। এটি যশোর শিক্ষা বোর্ডের সৌজন্যে প্রাপ্ত। এর পাশপাশি রয়েছে গোলন্দাজবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ১৪.৫ মি. মি. কোয়াড বিমান বিধ্বংসী কামান, ১২০ মি. মি. মর্টার ব্রান্ডেট এ এম-৫০, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ব্যবহৃত ৬ পাউন্ডার ট্যাংক বিধ্বংসী কামান, ১০৬ মি. মি. রিকয়েললেস রাইফেল (আর আর)সহ জিপ জি এস-উইলিস ৪/৪ মডেল এম ৩৮ এ-১ ইত্যাদি।

সামরিক জাদুঘরের নীচ তলায় পশ্চিম পাশের কক্ষে একাংশে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে মুজিব কর্নার। এখানে স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ৩০টি আলোকচিত্র অঙ্কিত আছে। সামরিক জাদুঘরের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় নীচ তলায় পূর্ব প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে টাচপেট কর্নার। জাদুঘরের আরেক আকর্ষণ হলো পাক সেনাবাহিনী থেকে উদ্ধারকৃত স্টাফ কার মার্সিডিজ বেঞ্জ ও সিলিন্ডার ২০০০ সি সি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট লে. জে. জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এটি ব্যবহার করতেন।

টিকেট ও সময়সূচী • এই জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোন টিকেট লাগে না। • সপ্তাহের পাঁচ দিন শনিবার, রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর খোলা থাকে। • গ্রীষ্মকালে সকাল ১০.৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। • শীতকালে ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। • বুধবার এবং শুক্রবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।

ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মরণে এই জাদুঘর। আনুষ্ঠানিক নাম- ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জাদুঘরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পশ্চিম পাশে এবং পলাশী মোড়ের উত্তর পাশে অবস্থিত। জাদুঘরটির দক্ষিণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।

২০১২ সালের ২৫ মার্চ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতল এ জাদুঘরটিতে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোয় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন মিছিল, সভা ইত্যাদির আলোকচিত্র, ভাষা শহীদদের আলোকচিত্র, প্রিয়জনকে লেখা চিঠি ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে। সবুজ ঘাসে ঢাকা ভবন প্রাঙ্গন আবুল বরকত এর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরটির জন্য একটি লাইব্রেরী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এখানে ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থাকছে। সোহরাওয়ার্দী পাতাল জাদুঘর ১৯৭১ এ পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধাকে স্মরণ করার লক্ষ্যে যখন একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, তখন সংশ্লিষ্ট স্থপতি উদ্যানটির ক্ষতি কমানোর জন্য অধিকাংশ স্থাপনা মাটির নিচে ঢুকিয়ে দেবার পরিকল্পনা করেন। এর ফলশ্রুতিতেই বর্তমান পাতাল জাদুঘর। ভবন প্রাঙ্গনের শুরুতেই রয়েছে প্রবেশপথ এবং শিখা চিরন্তন। এরপর সিড়ি ভেঙ্গে নিচে মূল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে হয়।

ভবনের বায়ে দেয়ালের গায়ের পোড়া মাটির ম্যুরালে অংকন করা দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস চোখে পড়বে। পাতাল জাদুঘরে প্রবেশের প্রথমই হাতের ডানে রয়েছে অডিও ভিজুয়্যাল রুম, তারপরের প্রথমে বড় খোলা গ্যালারীতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির ছবি ও লিখিত দলিল এবং এখানেই হাতের বামে রয়েছে চমৎকার ওয়াটার ফল। গ্যালারীতে যাওয়ার পথের দুপাশের দেয়ালে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া নির্যাতনের নর্মম চিত্র। পরের খোলা গ্যালারীতে রয়েছে ডঃ হেনরি কিসিঞ্জারের কাছে পাঠানো স্যামুয়েল এম হসকিনসন এর গোপন দলিল। এখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩.৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যে টেবিলের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্ঝলের কমান্ডার লেঃ জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খনা নিয়াজী আত্নসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করেন তার একটি অনুকৃতি টেবিল।

আরো রয়েছে গোপন বেতার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার দালিলিক প্রমান এবং সেই ঐতিহাসিক আত্মসমর্পনের মুহুর্তের বড় একটি ছবি। সময়সূচী ও টিকেট • প্রতিদিন বিকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পাতাল জাদুঘর। • শুক্রবার ও শনিবার এবং সকল সরকারী ছুটির দিনে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। প্রবেশ • শাহবাগের শিশু পার্কের পেছনের রাস্তা থেকেই এই জাদুঘর কমপ্লেক্সের মূল প্রাঙ্গন শুরু। • বর্তমানে জাদুঘরে বিনা টিকেটে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে।

• একক এবং দলভিক্তিক প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। • জাদুঘরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য আলাদা পথ ব্যবহার করতে হয়। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সর্বস্তরের প্রযুক্তিকে এদেশে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে আগারগাঁও শেরেবাংলানগরে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। এর আগে ১৯৬৬ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরিতে এদেশে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক জাদুঘরের যাত্রা শুরু। এটি শুরু হয়েছিল খুব স্বল্প কিছু সংগ্রহ দিয়ে।

বর্তমানে এই সংগ্রহশালা বেড়ে হয়ে উঠেছে অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভিতরে ঢুকলে শুরুতেই দর্শকদের চোখে পড়বে নিচ তলাতে ছয় কোনাকার কাচের ঘরে ছাদ থেকে ঝুলছে ৬১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৭ কেজি ভরের ফুকোর দোলক। এর একপাশে অ্যাকুরিয়ামে রয়েছে হরেক রকম রঙিন মাছ। যা দর্শনার্থীদের সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের আকাঙ্খার জন্ম দেবে। মনে হবে যদি মাছের মত সাঁতরে বেড়ানো যেত সমুদ্রের তলদেশে।

মনে পড়ে যাবে কারও কারও রাশিয়ার বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক আলেক্সান্দার বেলায়েভের সায়েন্স ফিকশান ‘উভচর মানুষ’-এর কথা, যে মানুষ একই সাথে সমুদ্রের বৈচিত্রপূর্ণ তলদেশে ঘুরতে পারে আবার চাইলে পৃথিবীতেও বাস করতে পারে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এখানকার সংগ্রহশালাকে বিভিন্ন গ্যালারিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছে ভৌত গ্যালারি। এই গ্যালারিতে বিজ্ঞানের নানা সূত্রের প্রমাণ দেখানো হয়েছে। রয়েছে নিউটনের প্রথম ও তৃতীয় গতি সূত্রের প্রদর্শনী।

এছাড়া এই গ্যালারিটিতে বিভিন্ন সংরক্ষিত জিনিস প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নামে কয়েকটি কর্নার রয়েছে, যেমন- সত্যেন্দ্রনাথ বসু কর্নার, কুদরত-ই-খুদা কর্নার ও আনুশেহ আনসারি কর্নার। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্নারে রয়েছে এই মহান বিজ্ঞানীর ব্যবহৃত এক্সরে টিউবের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বিপরীত পাশেই কুদরাত-ই-খুদার কর্নারে আছে তাঁর ব্যবহৃত চশমা, ঘড়ি, কলম, সিল, সিলের প্যাড, পেপার ওয়েট প্রভৃতি। এছাড়া এই গ্যালারিতে আছে বৈদ্যুতিক ঘন্টা, সিনেমাস্কোপ, হ্যালির ধুমকেতুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও বর্ণনা, ভাসমান বাগানসহ ভৌত বিজ্ঞানের বিচিত্র বিষয়। শিল্পপ্রযুক্তি গ্যালারি ও তথ্য প্রযুক্তি গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে সমুদ্রের গভীরতা নির্নয়ের যন্ত্র, পুরাতন গ্রামোফোন, আছে ১৯৬৫ সালে বিটিভির ব্যবহৃত প্রথম ক্যামেরা।

আছে একটি ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপ, যার মাধ্যমে বস্তুর দশ লক্ষ গুন বড় প্রতিবিম্ব দেখা সম্ভব। আছে চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা, চিনির কল, কর্ণফুলি কাগজ কল এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মডেল, ৬০০ কেজি ওজনের বলাকা বিমানের একটি ইঞ্জিন, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধুকে উপহার দিয়েছিল। শিল্প প্রযুক্তি গ্যালারি থেকে একটু এগুলে সঙ্গেই রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি গ্যালারি। এই গ্যালারিতে আছে বিভিন্ন কম্পিউটার। যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠবে কম্পিউটারের বিবর্তন।

এখানে আছে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে আনা প্রথম এনালগ কম্পিউটার আইবিএম ১৬২০। পরমাণু কমিশন একসময় এটি ব্যবহার করত। এছাড়াও রয়েছে আইবিম ১৪০১, দেখতে অতিকায় আলমারির মতো। এই গ্যালারিতে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক টাচস্ক্রিন কম্পিউটার। যেখানে টাচ করলেই দর্শনার্থীরা দেখতে পান জাদুঘরের সব তথ্য।

আছে একটি পুরাতন মুদ্রণ যন্ত্রসহ তথ্য প্রযুক্তির বিচিত্র নিদর্শন। বিজ্ঞানকে যাদের কাছে মনে হয় নিরস বা কাঠখোট্টা তাদের কথা বিবেচনা করেই জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে ‘মজার বিজ্ঞান গ্যালারি’ নামে একটি গ্যালারি। এখানে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীরা মুখোমুখি হবেন বিচিত্রসব মজার বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের। এখানে রয়েছে মজার কয়েকটি আয়না, যার সামনে দাঁড়ালে নিজের চেহারা কোনটায় বামুন, কোনটায় লম্বা, কোনটায় আবার সঙ্কুচিত দেখায়। আয়নায় এই সমস্ত কর্মকা- দেখে এমনিতেই যে-কারো প্রাণে হাসির উদ্রেক হয়ে যায়।

এখানে এমন যন্ত্র আছে যার মাধ্যমে ছায়াকে রঙিন দেখা সম্ভব। পৃথিবীর বাইরে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি নেই এই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনা, রয়েছে অনেক জিজ্ঞাসা। এছাড়া পৃথিবীতে জীবের উদ্ভবই কিভাবে হলো তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই। এই জাদুঘরে জীববিজ্ঞানের জন্য রয়েছে আলাদা একটি গ্যালারি। এই গ্যালারিতে ঢুকলে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন ৪০ ফুট দীর্ঘ এক নীল তিমির কঙ্কাল।

এটি বঙ্গোপসাগর থেকে ১৯৮৮ সালে সংগৃহিত। যারা এতদিন যাবৎ বইপুস্তকে তিমির বিশালত্ব সম্পর্কে জেনে এসেছেন বা লোকমুখে শুনেছেন, তাদের মিলবে একটি মাঝারি আকৃতির তিমি কতখানি বিশালাকৃতির হতে পারে তা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ। রয়েছে ১৯৯৬ সালের প্যানজেটিক ডলফিন। তরুণ বিজ্ঞানীদের উৎসহিত করার জন্য এখানে আছে একটি গ্যালারি। এই গ্যালারিতে তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত যেসব প্রকল্প জাতীয় বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সপ্তাহে প্রদর্শিত হয়েছে তাই-ই এই গ্যালারিতে স্থাপন করা হয়েছে।

এখানে প্রদর্শীত উল্লেখযোগ্য বস্তুর মধ্যে রয়েছে কাঠ সমতলকরণ মেশিন, রোড ব্যারিয়ার, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস গ্রাইন্ডিং মেশিন, এয়ারকুলার, এয়ার ক্লিনারসহ আরও নানা কিছু। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে একটি গ্রন্থগারও আছে। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রচুর বই রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কিছু এনসাইক্লোপিডিয়া। তাছাড়া রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কম্পিউটার-বিজ্ঞান, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, লাইফ সায়েন্স ইত্যাদি বিষয়ক বই।

গ্রন্থগারটি অফিস চলাকালিন সময়ে খোলা থাকে। মেঘমুক্ত রাতের আকাশ মানেই লক্ষ লক্ষ গ্রহ-নক্ষত্রের মিলনমেলা। তারাভরা ওই আকাশ প্রতিনয়তই আমাদের মনে সৃষ্টি করে নান বিস্ময়ের। বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষমাত্রই ইচ্ছে হয় ওইগুলি সম্পর্কে জানতে, ইচ্ছে হয় যদি সম্ভব হতে ওইগুলিকে আরেকটু ভালভাবে দেখার। সেই ইচ্ছেটাই পূরণ করার তাগাদা থেকে প্রতি শনি ও রবিবার সন্ধ্যা থেকে দুই ঘণ্টা জাদুঘরের ছাদে চাঁদ, শুক্রগ্রহ, মঙ্গলগ্রহ, শনিগ্রহ, এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, রিংনেবুলা, সেভেন সিস্টার্স, জোড়াতারা আর তারার ঝাঁক দেখানো হয় টেলিস্কোপের সাহায্যে।

টেলিস্কোপে এই আকাশ পর্যবেক্ষনে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। এছাড়াও জাদুঘরে রয়েছে একটা সায়েন্স পার্ক। এই পার্কটা কেবল শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে আছে মিউজিক্যাল টিউব, আর্কিমিডিয়ামের স্ক্রু, সিমপ্যাথেটিক সুইং, সুইং পেন্ডুলামসহ অনেক মজার মজার খেলার ব্যবস্থা। অবস্থান জাদুঘরটি আগারগাঁতে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বাংলদেশ অফিসের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশ বেতার অফিস পার হয়ে উত্তর দিকে জাদুঘরটি অবস্থিত।

সময়সূচী • শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে। • সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার এবং সকল সরকারী ছুইটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। টিকেট ও কাউন্টার • মূল ফটকের দক্ষিণ পাশে টিকেট কাউন্টার। • এখানে জনপ্রতি টিকেট মূল্য ৫ টাকা। • ৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের টিকেট লাগে না।

• এখানে বিনা পয়সায় পরিদর্শনের কোন সুযোগ নেই। • সূর্য ও চন্দ্র গ্রহনের দিন এই জাদুঘরে দর্শনার্থীর ভিড় বেশী হয়। সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্প-বাণিজ্যের মিলনমেলা হিসেবে একসময় সমৃদ্ধশালী ছিল। এ স্থানটিতে আগমন ঘটেছিল বহু দরবেশ, সাধক ও পর্যটকের।

তাদের পদচিহ্ন আজও সোনারগাঁওয়ের পথেপ্রান্তরে ছড়িয়ে রয়েছে। অনুপম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ও সবুজের সমারোহে এক অপরূপ নৈসর্গিক লীলাভূমি সোনারগাঁও। একটা সময় যখন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সোনারগাঁও তার নিজস্ব ঐতিহ্যের স্মৃতিটুকু হারাচ্ছিল, তখন এখানে আগমন ঘটে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের। শিল্পাচার্য স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতায় সোনারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও জাদুঘর)। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনবলে তৎকালীন সরকার সোনারগাঁও পানামনগরে অস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন।

পরে এটিকে ১৯৮১ সালে পানাম নগরের কাছাকাছি শ্রী গোপীনাথ সর্দার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ১৯৯৮ সালের ৬ মে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁও জাদুঘর) দর্শনার্থীদের জন্য মোট ১১টি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে দুর্লভ সব ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরতি আছে। গ্যালারিগুলো হলো নিপুণ কাঠখোদাই গ্যালারি; গ্রামীণ জীবন গ্যালারি; পটচিত্র গ্যালারি; মুখোশ গ্যালারি; নৌকার মডেল গ্যালারি; উপজাতি গ্যালারি; লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন গ্যালারি; তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজসপত্র গ্যালারি; লোকজ অলঙ্কার গ্যালারি; বাঁশ, বেত, শীতলপাটি গ্যালারি ও বিশেষ প্রর্দশনী গ্যালারি।

এগুলো ছাড়াও ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে ফাউন্ডেশনে নতুন আরও দুটি গ্যালারি স্থাপন করা হয়। নতুন দুটি গ্যালারিকেই ভিন্নমাত্রায় সাজানো হয়। প্রথমটিতে কাঠের তৈরি প্রাচীন ও আধুনিককালের নিদর্শন দ্রব্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে সোনারগাঁওয়ের ইতিহাসখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা নকশিকাঁথা প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়েছে। তাছাড়া ফাউন্ডেশন চত্বরে রয়েছে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য ও দৃষ্টিনন্দন লেক।

ফাউন্ডেশন চত্বরে কারুপল্লী গ্রাম ও কারুশিল্প গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প, লাইব্রেরি এবং ডকুমেন্টশন সেন্টার রয়েছে। কারুপল্লী গ্রামে ৩৫টি শনের ঘর রয়েছে। সেখানে দেশের নানা অঞ্চলের দ কারুশিল্পীরা বিভিন্ন কারুপণ্য সরাসরি তৈরির পাশাপাশি আগত দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। ফাউন্ডেশন চত্বরে সর্বশেষ যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় তার নামকরণ করা হয় সোনারগাঁও কারুশিল্প গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আবহমান গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের নিজস্ব মেধায় সৃষ্ট শিল্পকলা, লোকজ ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরণ, প্রদর্শন এবং তার উৎপাদন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ জীবনধা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।