আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানসিক রোগ : অবসেসিভ-কমপালসিভ নিউরোসিস

সব বিষয়ে জানতে ও শিখতে আগ্রহী একজন উদার মনের মানুষ।
সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একদিন হঠাৎ প্রশ্ন এল তার মাথায় - মানুষের জন্যে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, না, পৃথিবীর জন্যে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে? সে বুঝতে পারল, এ প্রশ্ন একেবারেই নিরর্থক। কিন্তু চিন্তাটা আর মন থেকে যায় না। সে বাড়িতেই হোক, ক্লাসেই হোক, খেলার মাঠেই হোক, চিন্তাটা তাকে রেহাই দিচ্ছে না কিছুতেই।

সুমনের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, তা অবসেসিভ নিউরোসিস। অবসেসন এক রকম চিন্তা, ধারণা অথবা কল্পনা যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোগীর মনে অনবরত আসে। নিতাই দাশ নামে এক স্কুল শিক্ষক প্রায় এক মাইল দূরে স্কুলে যেতেন একই পথে পায়ে হেঁটে। মজ্জাগত একটি অভ্যাসের ফলে প্রতিদিনই বাড়ির একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে স্কুলের একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত পা গুণে গুণে হেঁটে স্কুলে আসতেন। কোনো দিন মাঝ রাস্তায় এসে যদি ভুলে যেতেন কত হাঁটা হয়েছে, তাহলে ফিরে গিয়ে বাড়ির সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আবার হাঁটা শুরু করতেন।

এভাবে গুণে গুণে হাঁটার যে কোনো দরকার নেই, তা তিনি জানতেন । তবুও এটা না করে তিনি পারতেন না। নিতাই দাশের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে, তা কমপালসিভ নিউরোসিস। কমপালসন একটা কাজ যা রোগীকে বারে বারে করে যেতে হয়, অথচ সে এ কাজ করতে চায় না। অবসেসন এবং কমপালসন একই রোগীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, অথবা একই সঙ্গে একই সময়ে থাকতে পারে।

এজন্যেই এ দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে - আবসেসিভ-কমপালসিভ নিউরোসিস। একজন ২২/২৩ ব্যসের যুবকের হঠাৎ মনে হলো, যদি তার বাঁ দিক দিয়ে কোনো গাড়ি চলে যায়, তাহলেই মারা যাবে তার বাব। সে ভালোভাবেই জানে বাঁ দিক দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সাথে তর বাবার মৃত্যুর সম্পর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু বুঝেও কিছু হচ্ছে না। তাই তাকে এমনভাবে রাস্তায় চলতে হয় যেন কোন গাড়ি তার বাঁ দিকে যেতে না পারে।

এভাবে পথ চলতে গিয়ে তার কত যে কষ্ট। কারো কারো এমন হয় যে, কোনো একটা কাজ করলেন বটে, কিন্তু করবার পরেই মনে হয়, বোধ হয় ঠিকমত করা হয়নি কাজটা। যদিও তিনি জানেন, ঠিকই করেছেন। তারপরেও বারে বারে দেখেন কাজটা, দেখতে বাধ্য হয়। যেমন, আলমারীটা বন্ধ করে তালাটা লাগিয়েছেন ঠিকই - তবুও বারে বারে টেনে দেখতে হবে ঠিকমত লাগানো হয়েছে কিনা।

এভাবে এরোগের আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে যা এখনে আর উল্লেখ করলাম না। উৎকন্ঠা উদ্দীপক আবসেসিভ চিন্তার প্রশমন ঘটতে পারে এমন কোনো কাজ যখন রোগী আবিষ্কার করে, তখন ঐ কাজটি বারবার ঘটিয়ে ঐ উৎকন্ঠাকে প্রশমিত রাখাবার চেষ্টা চলে। এর ফলে ঐ কাজটি অভ্যাসে পরিণত হয়। এইভাবে কমপালসিভ লক্ষণের সৃস্টি হয়। এন্টিডিপ্রেসিভ ওষুধ প্রয়োগে এরোগে সুফল পাওয়া যায়।

মনোচিকিৎসা সময় সাপেক্ষ বটে, কিন্তু উপকার দেয় যথেষ্ট। আচরণপরিবর্তনকারী চিকিৎসা প্রয়োগেও যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায়। পুরানো পোস্ট: ১। মানসিক রোগের কারণ ২। মানসিক রোগের পূর্ব লক্ষণ ৩।

মানসিক রোগের উপসর্গ ৪। মানসিক রোগের অন্যান্য উপসর্গ ৫। মানসিক সুস্থ লোককে কিভাবে চেনা যায় ৬। মানসিক রোগের শ্রেণীবিভাগ ৭। অবাস্তব ভয় বা ফোবিয়া ৮।

অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ ৯। ব্যক্তিত্বের বিকার ১০। বিষন্নতা ও ম্যানিয়া ১১। টেনশন বা মানসিক চাপ তথ্যসুত্র: মানসিক রোগ অজানা অধ্যায় - ডাঃ সজল আশরাফ মনের সুখ-অসুখ - ডঃ শিবেন সাহা ইন্টারনেট
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.