আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যান্সার



আপনারা সকলেই ক্যান্সার নামটি শুনেছেন। কয়েক বছর আগেও আমাদের ধারনা ছিল যে ক্যান্সারের কোন চিকিৎসা নেই এবং এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবধারিত। বর্তমানে কিন্তু ঠিক সেই অবস্থা নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে ক্যান্সার রোগটিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে। নিত্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার এবং এর ব্যবহার জনগনের নাগালের মধ্যে এসে গেছে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে ২৩০০ বছরের বেশী সময় আগে হিপোক্রেটাস ল্য করেন কিছু শিরা টিউমারের চারপাশে ছড়িয়ে গেছে যেন একটি কাঁকড়া। এ থেকে গ্রীক ভাষায় ‘কারকিনোমা’ এবং পরে ল্যাটিন ভাষায় ‘ক্যান্সার’ নামের উৎপত্তি। কিন্তু পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ‘ঋক বেদ’এবং ‘অথর্ব বেদ’ এও এর উল্লেখ আছে, খৃষ্ট পূর্ব ১৬০০, সালে মিশরীয়রাও ল্য করেছিল কিছু অস্বাভাবিক টিউমার এবং তার অস্বাভাবিক আচরণ। কোন টিসুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা পার্শ্ববর্তী স্বাভাবিক টিস্যুর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং প্রারম্ভিক স্টিমুলেশন বন্ধ হয়ে গেলেও ঐ টিস্যুর আগ্রাসীমূলক বৃদ্ধি বন্ধ হয় না এমন কোন টিউমার থাকলে তাকে ক্যান্সার বলা হয়। সাধারণ ভাবে বললে একশোর ও বেশী সংখ্যক রোগ পাওয়া যাবে যাদের অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০,০০,০০০ লোক ক্যান্সারে ভুগছেন, প্রতি বৎসর ২,০০,০০০ লোক ক্যান্সারে আক্্রান্ত হচ্ছেন এবং ১,৫০,০০০ লোক মৃত্যুবরণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ মিলিয়নের বেশী লোক রয়েছেন যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগের পরেই ক্যান্সারের অবস্থান মারণ রোগ হিসাবে । শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। ১৯৯১ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী ১৫ বছরের নীচে প্রতি ১০০০০০ জন শিশুর মধ্যে ১৪.১ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

ক্যান্সারের কারন -- আসলে ক্যান্সারের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই তবে বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো হচ্ছে --- ধূমপান, বিকিরণ, সূর্যালোক অর্থাৎ সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি , কিছু রাসায়নিক পদার্থ , কতগুলো ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া, কিছু হরমোন, মদ, বয়স বৃদ্ধি, পারিবারিক ইতিহাস , অপুষ্টি, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত ওজন। কিন্ত ু এর সবগুলোই ক্যান্সার ঘটায় না। ক্যান্সার কোন আঘাত জনিত কারনে হয় না। ক্যান্সার কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।

আপনার কোন রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলেই যে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন তা কিন্তু নয়। দেখা গেছে রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে এমন অনেক লোক কিন্তু কখনোই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন নি। আবার অনেকেই এই রিস্ক ফ্যাক্টর গুলোর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। ফলে তারা সহজেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সাধারণ ভাবে ক্যান্সারের ক্যান্সারের বিপদ সংকেত বললে কি বুঝবো ।

.খুসখুসে কাশি বা ভাঙা কন্ঠস্বর। . সহজে সারছে না এমন কোন ত। .অস্বাভাবিক রক্তরণ। . স্তনে বা শরীরের অন্য কোথাও পিন্ডের সৃষ্টি। .গিলতে অসুবিধা বা হজমের গন্ডগোল।

.মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন। .তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন। সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য আমরা কি করতে পারি। .ক্যান্সারের যে কোন বিপদ সংকেত দু-সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন। .প্রতি বৎসর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।

.মহিলাদের প্রতি মাসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। .জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শমত “প্যাপটেষ্ট” করানো। .অন্ত্রের ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য “এন্ডোস্কপি” করানো; ইত্যাদি। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য পরামর্শ । .ধূমপান বিষপান, অতএব ধূমপান ত্যাগ করুন।

.তামাক পাতা এবং তামাক পাতায় প্রস্তুত জর্দা,দোক্তা, কিমাম ইত্যাদি মুখ ও গলার ক্যান্সারের জন্য দায়ী তাই তামাক বর্জন করুন। .শুধুমাত্র ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করলে ফুসফুসের ৮৫ ভাগ ক্যান্সার সহ বাংলাদেশের ৪০ ভাগ ক্যান্সার কমানো সম্ভব। .মদ্য পানে যকৃত, খাদ্যনালী ও গলার ক্যান্সার হয় তাই মদ্যপান বর্জন করুন। .অধিক চর্বি যুক্ত খাদ্য ও যখন তখন খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। খাদ্য তালিকায় আঁশ যুক্ত খাবার,ভিটামিন এ,সি,ই;জিঙ্ক,সেলেনিয়াম যুক্ত খাবার সংযোজন করুন।

.অধিক সন্তান প্রসব,বহুগামীতা জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। অতএব কম সন্তান ধারন, এবং নিরাপদ যৌন জীবন যাপন করুন। .নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। শরীরের ওজন পরিমিত রাখুন। মন চিন্তামুক্ত রাখুন।

পর্যাপ্ত নিদ্রা ও বিশ্রাম করুন। যদিও যে কোন টিস্যুতেই ক্যান্সার হতে পারে এবং প্রত্যেক রকমের ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট আছে কিন্তু, যে মৌলিক পরিবর্তনের ফলে ক্যান্সার তৈরী হয় তা সব ক্ষেত্রে একই। যখন কোন কোষ বিভাজনের সময় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে এবং নিজস্ব ধারায় চলতে থাকে তখনই ক্যান্সারের শুরু। প্রথমে কোষ বিভাজনের সময় তার পূর্বসূরীর কপিই তৈরী হয় এবং তাতে কিছু অসংগতি দেখা দেয়। এই রকম অস্বাভাবিক কোষগুচ্ছ অনেকদিন ধরে তার উৎপত্তি স্থানে থাকতে পারে যাকে বলা হয় কারসিনোমা ইন সিটু, অথবা এটি পার্শ্ববর্তী টিস্যু কে আক্রমণ করে বসে তখন তাকে বলা হয় ইনভেসিভ ক্যান্সার এবং এ থেকে কিছু কোষ রক্ত নালী এবং লিম্ফ্যাটিক চ্যানেল অর্থাৎ লসিকা নালীর মাধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে যাকে মেটাসটেসিস বলা হয়।

যখন এই টিউমার বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কে আক্রমণ করে তখন তা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু কিভাবে এবং কেন এই পরিবর্তনের সূচনা হয় সেটি বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে ; বর্তমানে আমরা অনেকটাই জানতে পেরেছি । মধ্য ৭০ এর দিকে বিজ্ঞানীরার জিন পর্যায়ের একটি আধুনিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে শুরু করতে পারলেন। বিশেষ করে এমস এবং অন্যান্যরা জিনের পরিবর্তন এবং ক্যান্সারে পরিনত হওয়ার যথেষ্ট প্রমান সহ দেখালেন যে রাসায়নিক কিছু পদার্থ যারা ক্যান্সার উৎপন্ন করে তারা সরাসরি কোষের জিনকে ধ্বংস করতে পারে। এর থেকে ক্যান্সার শুরুর একটা ধাপ/পর্যায় সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পাওয়া গেল।

কারসিনোজেনস অর্থাৎ ’ক্যান্সার তৈরি করে এমন বস্তু সমূহ’ কোষের অভ্যন্তরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনের মিউটেশন বা পরিবর্তন করে এবং এই পরিবর্তিত জিন সমূহ ঐ কোষগুলো এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে। এই অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি র্দীঘ দিন পরে টিউমার হিসাবে আবির্ভুত হয়। এই মডেল দিয়ে এটাও বোঝা যায় যে কিছু কিছু ক্যান্সার বংশগত। যে সব জনগণ মিউটেশনের দ্বারা পরিবর্তিত জিন বহন করে তারা অন্যদের চেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। আমরা বর্তমানে এমন অবস্থায় রয়েছি যে আমরা শুধু ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত জিনগুলো সম্পর্কেই জানি তা নয় বরং এদের কে সরাসরি চিহ্নিত করতে এবং প্রতিরোধ করার অবস্থায় চলে এসেছি।

কোষের পরিবর্তনের ব্যাপারটি আরেকটু বুঝিয়ে বললে বলা যায় যে ক্যান্সার একটি বহুধাপ বিশিষ্ট প্রক্রিয়া - কোষীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে দেখা যায় যে ক্যান্সার কখনই তাৎণিক ভাবে হয় না। বরং কালক্রমে অনেক জটিল জেনেটিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এর শুরু হয়। প্রতিটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এর অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয়। প্রতিটি পরিবর্তনের ফলে প্রাক -ক্যান্সার কোষ সমূহ কিছু বৈশিষ্ট অর্জন করে যারা একত্রে ক্যান্সার এর সৃষ্টি করে। দুই (২) ধরনের জিন ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

স্বাভাবিক অবস্থায় এই জিনগুলি ‘কোষ চক্র’ (সেল সাইকেল) নিয়ন্ত্রন করে। অর্থাৎ যে ঘটনার মধ্যে দিয়ে কোষগুলি বড় হয় এবং বিভক্ত হয়। এক ধরনের জিন যাকে ‘প্রোটো-অনকোজিন’ বলা হয়, যারা কোষ বিভাজনে সাহায্য করে। অন্যটিকে বলা হয় টিউমার দমনকারী জিন যারা কোষ কোষ বিভাজন কে নিরুৎসাহিত করে। এই দুই প্রকার জিন একত্রে শরীরের আকৃতি প্রকৃতি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কোষ বিভাজন করে।

যখন এই প্রোট অনকোজিন অথবা টিউমার সাপ্রেসর জিন সমূহে কোন মিউটেশন (জেনেটিক পরিবর্তন) হয় তখনই বিপত্তির শুরু। ‘প্রোটো-অনকোজিন’ পরিবর্তিত হয়ে ‘অনকোজিন’ এ পরিনত হয়, ফলে অতিরিক্ত হারে কোষ বিভাজন শুরু হয়। টিউমার দমনকারী জিনে মিউটেশন হলে তার স্বাভাবিক কাজ হয় না ফলে যে ক্রান্তিয় ভারসাম্য ছিল, যার ফলে স্বাভাবিক দেহ কাঠামো বজায় থাকতো তা ব্যহত হয়। এই দুয়ের ফলেই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন হয় যার ফলে মানুষের শরীরে ক্যান্সার নামক ঘাতক রোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের শরীরের ভিতরে ক্যান্সার প্রতিরোধের কি কোন ব্যবস্থা রয়েছে?।

হ্যাঁ, আমাদের শরীরের ভিতরে ক্যান্সার প্রতিরোধের ব্যবস্থা রয়েছে আমরা একে বলতে পারি শরীরের ‘ব্যাক আপ’ সিষ্টেম - প্রোটো অনকোজিন এবং টিউমার দমনকারী জিনের সমন্বিত কাজকর্ম ছাড়াও অন্তত আরও তিন রকম পদ্ধতি রয়েছে যার সাহায্যে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথমত ডি এন এ মেরামত করার ব্যবস্থা - এটি শরীরের প্রায় সবকোষেই আছে, যা সবসময় ডি এন এ’ র যে কোন ভুলকে চিহ্নিত করে এবং সংশোধিত করে। সমগ্র জীবনে একজন লোকের শরীরের প্রায় সমস্ত জিনই আক্রান্ত হয় - পরিবেশের মধ্যে থেকে আসা ক্যান্সার উৎপাদক দ্বারা এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা যারা কোষের মধ্যেই তৈরি হয়। ডি এন এ’র প্রতিরূপ তৈরী বা বংশবৃদ্ধির সময়ও ভুলভ্রান্তি হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এইসব ভুলভ্রান্তিকোষের ডি এন এ মেরামত ব্যবস্থার দ্বারা দ্রুত মেরামত হয়।

এই মেরামত ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয় কখনও তখন সেই ভুলটি মিউটেশন হিসাবে স্থায়ী হয় এবং কোষ বৃদ্ধির ফলে এর পরবর্তী জেনারেশনে প্রবাহিত হয়। এই ব্যাকআপ সিষ্টেমের কারনেই ক্যান্সার তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। ডি এন এ মেরামতকারী জিন গুলোতে যদি মিউটেশন হয় তাহলে এই মেরামত কাজটি ব্যাহত হয় অর্থাৎ কোষের মেরামত করার সামর্থ তিগ্রস্থ হয়। যার ফলে মিউটেশন দ্রুত প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় ব্যাকআপ সিষ্টেম - হলো এ্যাপপটোসিস যার ফলে কোন কোন কোষ আত্মহত্যা করে - যদি কোষের কোন প্রয়োজনীয় অংশ ক্ষ তিগ্রস্ত হয় বা এর নিয়ন্ত্র্রন ব্যবস্থা ব্যহত হয়।

এই পর্যবেন থেকে বোঝা যায় যে, যে সব কোষ এই ধরনের ধ্বংস হওয়ার ব্যবস্থাকে পাশ কাটাতে পারছে সেগুলোতে টিউমার হতে পারে। পি-৫৩ নামক জিন এই ব্যবস্থায় সঙ্গে জড়িত। স্বাভাবিক অবস্থায় এই প্রোটিন টি শুধুমাত্র কোষ বিভাজনকেই থামায় না বরং অস্বাভবিক কোষ গুলোতে এ্যাপপটোসিস ব্যবস্থা কে চালু করে। অনেক ক্ষেত্রেই এই পি-৫৩ জিনের নিষ্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে। তৃতীয় ‘ব্যাকআপ’ সিষ্টেম হলো একটি কোষের বিভাজিত হতে পারার সংখ্যা সীমিত এবং এর ফলে বোঝা যায় যে একটি কোষ অসীম সংখ্যায় বিভাজিত হতে পারে না।

এই ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রিত হয় ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ডি এন এ’ র অংশ দ্বারা। যার নাম টেলোমেয়ার। এই অংশটি প্রতিবার কোষ বিভাজনের সময় কমে যায়। যখন এই টেলোমেয়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে কমে যায় তখন তারা কোষের ভিতরে একটা সংকেত দেয় যার ফলে কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দিকের পর্যবেন দেখা গেছে ক্যান্সার কোষ অসীম হারে কোষ বিভাজন করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন এই বৈশিষ্টটির জন্য দায়ী এনজাইমকে যার নাম ‘টেলোমারেজ’ যা প্রতিবার কোষ বিভাজনের ফলে ছোট হয়ে যাওয়া টেলোমেয়ারের পুনস্থাপন করে। একটি পূর্ণতাপ্রাপ্ত কোষে টেলোমারেজ প্রায় থাকে না বললেই চলে কিন্তু ক্যান্সার কোষ এটি থাকে এবং এর ফলে অসীম হারে কোষ বিভাজন হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা । শুধুমাত্র অভ্যাস পরিবর্তন ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব।

সার্জারী, রেডিওথেরাপী ,কেমোথেরাপী হরমোনথেরাপী, ইমিউনথেরাপী ইত্যাদির সাহায্যে অনেক ধরনের ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। এক তৃতীয়াংশ অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের ব্যাথা ও অন্যান্য উপসর্গের উপশম করা সম্ভব। সার্জারী, রেডিওথেরাপী, কেমোথেরাপী, হরমোনথেরাপী ইমিউনথেরাপী এবং জিন থেরাপী’র সাহায্যে বর্তমানে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। প্রকৃত পক্ষে বর্তমানে বেশ কয়েক রকমের ক্যান্সারের পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। সম্পুর্ণ নিরাময় না হলেও চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীদের বেঁচে থাকার হার বেড়েছে ক্রমশ- ১৯৭৪-৭৬ সালে ৪৯.৩ পার্সেন্ট থেকে ১৯৮৩-১৯৯০ সালের মধ্যে ৫৩.৯ পার্সেন্ট হয়েছে ।

কিছু কিছু েেত্র যেমন ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বেঁচে থাকার হার অনেক বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে একটু সচেতন হলেই ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারের মোকাবেলা করা সম্ভব। আমাদের দেশে বর্তমানে ক্যান্সারের সব রকমের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। সবগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা চলছে। ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যায়বহুল ও দীর্ঘ মেয়াদী তাই অহেতুক বিদেশে যাওয়া বা বিদেশী বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করাই যুক্তিযুক্ত।

আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘লাইফ টাইম রিস্ক’ যা দিয়ে বোঝানো হয় যে সমগ্র জীবনে যে কোন ব্যক্তিরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের মধ্যে প্রতি ২ জনে ১ জন এবং মহিলাদের মধ্যে প্রতি ৩ জনে ১ জন ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি অন্যরকম হতে পারে, যেমন যিনি ধূমপান করেন তিনি অধূমপায়ীদের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুন বেশী ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তেমনি ভাবে যাদের ত্বক সাদা /ফর্সা তারা কালো বা বাদামী ত্বকের লোকেদের চেয়ে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

একে বলা হয় ‘রিলেটিভ রিস্ক’। ক্যান্সার সম্পর্কে একটা প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়ে থাকে যে - যদি কোন জনগোষ্ঠীকে কোনভাবে পরিবেশের সবরকম ক্যান্সারের উৎপাদক থেকে রা করা যায় বা কোন বংশগত মিউটেশন না থাকে তাহলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু ? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে দেখা গেছে যে, প্রায় ২৫ ভাগ ক্যান্সার ‘হার্ড কোর’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ দূষনমুক্ত থাকলেও এরা আক্রমণ করবেই কারণ এই সব ক্যান্সারের উৎপাদক শরীরের ভিতরেই তৈরী হয় আর এর পাশাপাশি রয়েছে মেরামতকারী জিনের ভূল। ক্যান্সার প্রতিরোধে কোন আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা । প্রতি বৎসর ৪ঠা ফেব্র“য়ারী পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস --- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য উইলট, কোডিজ এবং মূলার এই তিন বিজ্ঞানী ৪ ধাপ বিশিষ্ট একটা কর্মসূচী প্রনয়ন করেছেন। ১ম স্তর হলো ব্যক্তি পর্যায় - এই বিজ্ঞানীদের মতে ব্যক্তিগত আচরণ সহ অনেক ব্যবস্থাই ব্যক্তি পর্যায়ে নেয়া যেতে পারে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত - যারা ক্যান্সার রোগের চিকিৎসক এবং বিভিন্ন সহায়তা প্রদান কারী সংস্থা - তারা স্বাস্থ্য সেবা এবং মতবিনিময়, আলোচনা এবং বাছাই করণ বা স্ক্রীনিং পদ্ধতির মাধ্যমে এগিয়ে আসতে পারেন। তৃতীয়ত - জাতীয় পর্যায়ে সরকারী সংস্থা সমুহ বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে তিকারক পদার্থের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতি করতে পারে। চতুর্থত - আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যাদি এবং তিকারক বর্জ ও অন্যান্য তিকারক পদার্থের ব্যবহার, বহন, উৎপাদন নিয়ন্ত্রন বা নিষিদ্ধ করণের মাধ্যমে ক্যান্সার সহ অনেক রোগের নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এভাবে আমরা এই বহুমাত্রিক সমাজে নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং ক্যান্সার চিকিৎসার নয়া দিগন্ত খুলে দিতে পারি ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.