আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হজ্বের সেই দিনগুলো - ৩য় পর্ব

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
হজ্বের প্রস্ততি হজ্বে যাবার জন্য ২০০৭ বছরের শুরু থেকেই মানসিকভাবে প্রস্ততি নেয়া শুরু করলাম । এ বিষয়ে আমাকে সবচাইতে বেশী সাহায্য করেছিলো আমার ফুপাতো এক বড়ভাই যিনি ইতিমধ্যে একবার হজ্ব সম্পন্ন করে ২য়বার তার আম্মার জন্য বদলী হজ্বের জন্যে প্রস্ততি নিচ্ছিলেন । চাকুরীগত কারনে আমার জন্য এই বিষয়ে সময় দেয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিলো, বিশেষ করে কোন এজেন্সীর মাধ্যমে হজ্বে যাবো এই বিষয়ে সির্ধান্ত নেয়া । অবশেষে আমার সেই ফুপাত ভাই এর পরিচিত কিছু আত্মীয় এবং বন্ধুর সাথে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম এবং সেইভাবে সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া শুরু করলাম । হজ্বে যাবার জন্য সব চাইতে বেশী জরুরী যেই বিষয়টি আমি মনে করি তা হল কি উদ্দেশ্যে আমি হজ্ব করছি ।

এই হজ্ব কি আমি আমার নিজ সন্তষ্টির জন্য করছি ? এই হজ্ব কি আমি আমার সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করবার জন্য করছি ? এই হজ্ব কি আমি কারও চাপে পড়ে করছি? এই হজ্ব কি আমি শুধুমাত্র একজন মুসলমান হিসেবে ফরয দায়িত্ব তদুপরি আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য করছি? আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে এই হজ্বের উদ্দেশ্য প্রথমত আল্লাহ আমাকে হজ্বে যাবার জন্য শারিরীক এবং মানসিকভাবে যোগ্য করেছেন তার এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমি হজ্বে যাচ্ছি । আমি হজ্বে যাচ্ছি শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্য এবং সর্বশেষে আমি আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমার উপর ফরয একটি দায়িত্ব সম্পন্ন করবার জন্য আমি হজ্বে যাচ্ছি । মানসিকভাবে প্রস্ততি গ্রহনের সাথে সাথে আরেকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত সেটা হল শারিরীক সুস্থতার প্রতি । অনেক সময় দেখা যায় এই হজ্বের বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে নানা ধরনের মন্তব্য শুনে অনেকে হজ্বে যাবার পূর্বেই অসুস্থ হয়ে যান । হজ্ব আল্লাহর ইবাদত সমূহের মধ্যে একটি শারিরীকগত দিক থেকে কষ্টকর একটি ইবাদত ।

কিন্ত তাই বলে এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই । কারন প্রতিবছর নানা দেশ থেকে অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধারা এই হজ্ব করছেন এবং এই বিষয়ে সবচেয়ে জরুরী বিষয় একটি সেটি হল মনের জোর । আর হজ্বে যাবার আগে প্রচুর পরিমানে হাঁটা এবং সুষম খাদ‌্য গ্রহন সেইসাথে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতার উপর পড়াশোনাই একজন হাজী কে সঠিক ভাবে গড়ে তোলে আল্লাহর ঘরে একজন প্রকৃত মেহমান হিসেবে উপস্থিত হবার। হজ্ব বিষয়ক পড়াশোনা হজ্বের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের বাজারে পাওয়া যায় কিন্ত এ বিষয়ে যেই সম্যসায় একজন নতুন হাজী প্রায় পড়ে থাকেন সেটি হল হজ্বের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় তারতম্য । বিশেষ করে কোন কোন বইতে দোয়া দরুদের আধিক্য দেখা যায় বেশী অন্য বইগুলোর তুলনায়।

ফলে কোনটি সঠিক আর কোনটি বেঠিক এই দুইয়ের দোলাচলে পড়ে হাজীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে ভাল হয় যদি বেশ কিছু বই পড়া যায় তাহলে পাঠকের কাছে একটি ধারনা তৈরী হয়ে যাবে । কারন সঠিক বিষয়গুলো অধিকসংখ্যক বইতে একইরকম পাওয়া যাবে । এছাড়া আরো ভালো হয় যদি কোন পূর্বের হজ্বের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন আলেম হাজ্বীর কাছ থেকে কিছু জানা যায়। এছাড়া প্রতিবছর হজ্বের পূর্বে বিভিন্ন এজেন্সী গুলো হজ্ব মেলার আয়োজন করে থাকে ।

সেই মেলায় যেমন একদিকে অনেকগুলো এজেন্সী গুলোকে একস্থানে পাওয়ায় তাদের মধ্যে তুলনা করে নিজ বাজেটে মধ্যে একটি ভাল হজ্ব প্যাকেজ বেছে নেয়া যায় । অন্যদিকে এই এজেন্সীগুলো তাদের নিজ নিজ লিফলেটের পাশাপাশি কিছু হজ্ব বিষয়ক নির্দেশিকা বিনামুল্যে সরবরাহ করে থাকে । সেই বইগুলর মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি ভাল ধারনা লাভ করা যায়। এছাড়া আরো ভাল হয় যদি সম্ভব হয় হজ্বের উপর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারী ফিল্ম "ইনসাইড মক্কা"এই ভিডিওটি দেখার । ভিডিওটি বসুন্ধরা বা যে কোন ভাল একটি কালেকশনের দোকানে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ।

হজ্ব এজেন্সী নির্বাচন একদিকে মানসিক আরেকদিকে শারিরীকভাবে প্রস্ততি গ্রহন চলছে আরেকদিকে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলাম এজেন্সীর সাথে । একটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত এজেন্সী নির্বাচনে । একবারে নতুনদের জন্য সবচেয়ে ভাল হয় পরিচিতিদের মধ্যে যারা একবার হজ্ব করে এসেছেন তাদের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া তাদের নিজ নিজ এজেন্সীগুলো সম্পর্কে । আর কারো পক্ষে যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে তার জন্য উচিত হজ্ব মেলায় গিয়ে সরেজমিনে যাচাই করে নেয়া তার জন্য কোন এজেন্সী সবচাইতে ভাল হবে । সাথে কি নেব অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষন চলে এলো একসময় যেই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন ।

আমার সাথে আমার মা ছিলেন আমার জীবনের প্রথম হজ্বের সংগীনি হিসেবে । আমি আমার প্রস্ততির সাথে সাথে আমার মাকে একই সাথে সাহায্য করছিলাম তাঁর নিজ প্রস্ততির বিষয়ে । একে একে যখন সবধরনের আনুষাংগিক বিষয়গুলো যেমন মোয়াল্লেমের ফী , বিমান টিকিট এবং পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরন করা এই বিষয়গুলি সমাধান করছিলাম । একইসাথে বাজার থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিষ যেমন ইহরামের কাপড় , মুজদালিফায় অবস্থানের জন্য স্লিপিং ব্যাগ এরকম আরো টুকিটাকি বহু জিনিষ কিনতে হচ্ছিলো দোকান থেকে। এই জিনিষগুলো একটি বর্ননা সাথে কোথা থেকে কেনা যায় সেটার একটি তালিকা দেয়া হল আপনাদের সুবিধার্থে ।

১। ইহরামের কাপড় - ০২ সেট ( সূতির কাপরের এক সেট আরেকটি তোয়ালে কাপরের সেট নেয়া যেতে পারে রাতে মুযদালিফার শীতের বিষয়টি মাথায় রেখে) ২। মুযদালিফায় রাতে খোলা মাঠে শোবার জন্য এক সেট স্লিপিং ব্যাগ বা হালকা বিছানা । ৩। সম্পূর্ন ভ্রমনের বিষয়টি মাথায় রেখে পাজামা এবং পান্জাবীর সেট মোট ৪/৫ টি নেয়া যেতে পারে ।

এই পোশাকে স্বাছন্দ্যবোধ না করলে ঢিলেঢালা প্যান্ট শার্ট ও সাথে নিতে পারেন। এবং হজ্বের আগে বা পরে পায়ে দেবার জন্য স্যান্ডল শ্যু নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । কারন মসজিদে প্রবেশের সময় জুতা খোলার ঝামেলা কম হবে। তবে বিমানে ভ্রমনের সময় সমস্যা না হলে স্যান্ডল শ্যু খারাপ নয়। যেমন আমাদের সময় বিমানে গুটি কয়েকজন বাদে আমরা সব হজ্ব যাত্রীদের পোশাক ছিল পাজামা পান্জাবী এবং স্যান্ডল শ্যু ।

মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাল হয় সালোয়ার কামিজের ৪/৫ টি সেট সাথে নিলে । তাছাড়া হেজাবের ২/৩ টি সেট সাথে থাকা ভাল আর কালো হেজাবের পাশাপাশি সাদা হেজাব বিশেষ করে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না নিলে ভাল কারন রোদে কালোর তুলনায় সাদা বা হালকা রং এর কাপরে তাপ শোষন কম হয়। ৪। জুতা রাখার একটি কাপড়ের ব্যাগ। ৫।

২/৩ টি মাথায় দেবার টুপি। ৬। একটি কোমরবন্ধনী ইহরামের কাপড়কে বেঁধে রাখাবার জন্য। এই বন্ধনীতে একটি পকেট থাকে বিশেষ করে টাকা রাখবার জন্য। ৭।

আরেকটি কাপড়ের ব্যাগ গলায় ঝুলিয়ে রাখবার জন্য যেখানে পাসপোর্ট, তাসবীহ ইত্যাদি রাখবার জন্য। এই ব্যাগটি রেডিমেট পাওয়া যায় দোকানে । ৮। টয়লেট্রিজ সামগ্রী যেমন সাবান ,টুথপেস্ট,সেভিং ফোম,রেজার তোয়ালে বা গামছা ইত্যাদি সাথে নেয়া । এক্ষেত্রে বিশেষ করে ভ্রমনের সময় হিসেব করে কাপড় ধোবার জন্য গুড়া সাবানের প্যাকেট কিনলে অনেক ভাল।

যা পরবর্তীতে অনেক কম কষ্টে কাপড় ধোয়ার মত একটি কাজকে সহজ করে দেয় । ৯। গুটি কয়েক বই যেখানেপছন্দের দোয়া দরুদ আছে । এছাড়া সব স্থানে বিশেষ করে মসজিদগুলোতে কোরআন শরীফের সহজলভ্যতা আছে । তাই কষ্ট করে বাংলাদেশ থেকে বহন না করলেও চলবে ।

১০। মোবাইল এবং চার্জার । কিছু সাদা কাগজ এবং কলম সাথে রাখা । ১১। সাথে কালো গগলস নিলে ভাল হয় কারন কোন কোন সময় প্রখর রোদে চোখে সমস্যা হতে পারে ।

হজ্বের কেনাকাটার জন্য ঢাকায় দুটি স্থান বেশ প্রসিদ্ধ । একটি হচ্ছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের পাশের মার্কেট টি আরেকটি হচ্ছে কাকরাইলের তাবলীগ মসজিদের ভেতরে অবস্থিত একটি দোকান। এই জায়গা গুলো ছাড়াও অন্যান্য মার্কেট গুলোতে হজ্বের মওসুমে এই সব জিনিষ কিনতে পাওয়া যায় । এছাড়া আর ও ভাল হয় হজ্বের গাইড বইগুলো থেকে তালিকা থেকে একটা আইডিয়া নিয়ে নিজের পছন্দ মোতাবেক একটি তালিকা পূর্ব থেকে তৈরী করে নেয়া । তবে যে বিষয়টি সব সময় মনে রাখা উচিত যে হজ্বের সফর বা ভ্রমন অন্যান্য দেশ ভ্রমন থেকে একেবারেই অন্যরকম এক ভ্রমন ।

তাই এই ভ্রমনে সাথে কি নেবেন এবং নিবেন না তা নির্ভর করছে আপনার হজ্ব কে কেন্দ্র করে । আরেকটি বিষয় সবসময় হালকা জিনিষপত্র সাথে থাকলে বহনের সুবিধা থাকে সে বিষয়টি মনে রাখা ভাল । চলবে ....।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।