আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হজ্বের সেই দিনগুলো-১ম পর্ব

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

পটভুমিকা: বছর ঘুরে আবার আসছে হজ্বের মওসুম। সেই সুদূর পবিত্র মক্কা এবং মদীনা থেকে ভেসে আসছে আমন্ত্রন বার্তা । আল্লাহর ঘরে মেহমান হবার জন্য যারা নিজেকে প্রস্তুত করছেন বা করবেন তাদের জন্য মূলত আমার এই নিজ অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে এই পোস্ট। আশা করি সীমিত জ্ঞানের আলোকে লেখা বলে ভুল হলে সংশোধন করবেন। আর ভাল লাগলে পোস্টের স্বার্থকতা।

এই লেখার মাঝে থাকবে ইতিহাসের কিছু ঘটনা,নিজের একান্ত কিছু অনুভূতি,কিছু টিপস যা হজ্বের সময়ে কিছু অনর্থক কষ্টকে লাঘব করবে আর অসংখ্য ছবি কিছু নিজের তোলা আর কিছু ইন্টারনেট থেকে সংগ্রকৃত। “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ..। “ শৈশবে দেখা সেই হজ্বের দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে । সাদা ইহরামের কাপড় পরিহিত লাখো হাজীর কন্ঠে একই সুর আর মনে সেই একই তাওহীদের বাণী । লাখো কন্ঠে সম্মিলিত গর্জন “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক —– আমি হাজির হে আল্লাহ, আমি হাজির ।

আমি হাজির, নেই কোন শরীক তোমার ,তুমি এক । আমি হাজির সকল নেয়ামত সে শুধু তোমারই । সকল সাম্রাজ্যর মালিক একমাত্র তুমি। নেই কোন তোমার শরীক ” সুপ্ত বাসনার সূত্রপাত সেই থেকে । ধর্ম বিষয়টি যদিও কখোনো আমার উপর পরিবার পক্ষ থেকে সেভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়নি ।

কিন্ত ছোটবেলা থেকেই দাদীর কাছ থেকে হাতে খড়ি হয়েছিলো ধর্মীয় আচার আচরণ বিশেষ করে নামাজ শিক্ষার। নিয়মিত না হলেও নামাজ পড়তাম ছোটবেলা থেকেই । কোন ধরনের চাপ না থাকা স্বত্তেও বরং দাদীর অনুপ্রেরনায় ভালবাসতে শুরু করলাম পিতৃপ্রদত্ত ইসলাম ধর্মকে। ছোটবেলা থেকে লক্ষ্য করতাম প্রতিবছর হজ্বে যে সকল হাজী বিশেষ করে আমাদের দেশ থেকে অংশ নিতেন তার অধিকাংশ ছিলেন ৬৫ এর উর্ধ্বে । ফলে ধারণা করে নিয়েছিলাম হজ্বে যাবার উপযুক্ত বয়স হয়ত এটাই ।

কিন্ত বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার এই ধারণা ভুল বলে প্রমানিত হল। যদিও এখনও আমাদের দেশে অনেকের মাঝে আজও এই ধারনা পোষন করতে দেখা যায়। আর এই ধারনার পেছনে কাজ করে থাকে নানাবিধ কারন । কেউ কেউ আছেন সব বুঝেন এবং জানেন কিন্ত এই ভয়ে হজ্বে যান না কারন হজ্ব থেকে এসে তাকে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে এবং উছৃন্খলতা পরিহার করে একজন মুসলমান হিসেবে জীবনযাপন করতে হবে । আর কেউবা এসবের ধার ধারেন না মোটেও তারা মূলত হজ্বে যান কারন নামের পাশে আলহাজ্ব শব্দটি তাদের রাজনৈতিক,সামাজিক এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য।

আর এর প্রমান হজ্ব থেকে আসার সময় কতিপয় হাজীর লাগেজে ,ব্যাগেজে এবং সর্বত্র নামের আগে আলহাজ্ব শব্দটির প্রকট ব্যবহার । আর কারও কারও অভিপ্রায় আরো হাস্যকর তারা মনে করেন হজ্বে যাবার উপযুক্ত সময় বৃদ্ধকালে ,মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে সম্পূর্নভাবে উপভোগ করে সেটা ন্যায় বা অন্যায় যে পথেই হউক । তারপর হজ্বে গিয়ে সব গুনাহ মাফ চেয়ে বেহেশত নিশ্চিত করা । হজ্ব কেন? একজন সাধারন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের হজ্ব সম্পর্কে এইটুকু মৌলিক জ্ঞান থাকা দরকার যে ,হজ্ব হচ্ছে ইসলামের মূল ৫টি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ বা খুঁটি । একটি ঘরের অস্তিত্ব যেমন এর খুঁটির উপর নির্ভর করে এবং এর আবশ্যকীয় যে কোন একটি খুঁটির অভাবে যেমন ঘরটির অস্তিত্বর ভারসাম্যর ব্যাঘাত ঘটে ।

ঠিক তেমনি ইসলামের যে ৫টি খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে তার একটি খুঁটির নাম হজ্ব। অতএব আমি যদি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করি এবং এই ইসলাম নামক ঘরটির ছায়ায় স্থান নিতে চাই তাহলে এর প্রতিটি খুঁটির সাথে নিজেকে আত্মিক এবং শারিরীকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে । এই ঘরের প্রতিটিট নিয়ম কানুন আমাকে মেনে চলতে হবে । এখানে একটি প্রশ্ন মনে স্বাভাবিক ভাবে জাগতে পারে । ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ১টি হল নামাজ আর বাকী ৪টি হল যাকাত ,রোজা,হজ্ব এবং সবার আগে আল্লাহর একত্ববাদের উপর ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা ।

এখন প্রতিটি মুসলমান নামাজ ,রোজা এবং ঈমান স্থাপনের কাজগুলি করতে পারলেও সবার পক্ষে কি যাকাত প্রদান এবং হজ্ব পালন করা কি সম্ভবপর হয় ? কারন এই দুটো সম্পূর্নভাবে নির্ভর করে সামর্থ্যর উপর। যাকাত প্রদানের বিষয়টি যেমন সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমান না থাকলে প্রযোজ্য হয়না ঠিক তেমনি হজ্ব পালনের আর্থিক বা শারিরীক সামর্থ্য না থাকলে একইভাবে সেই মুসলমানের উপর হজ্ব ফরয হয়না । তবে ক্ষেত্রে বিশেষে যদি শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ্য থাকলে এবং শারিরীকভাবে সামর্থ্য না থাকলে সেক্ষেত্রে একজন অসুস্থ বা বয়স্ক মুসলমান আরেকজন হাজীর মাধ্যমে বদলী হজ্ব করিয়ে নিতে পারে । তাই আল্লাহ যখন কোন মুসলিম পুরুষ বা মহিলাকে হজ্বে পালনের সামর্থ্য দেন তার উচিত সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত হজ্বের প্রস্তুতি গ্রহণ করা । মহিলাদের ক্ষেত্রে হজ্বে যাবার সময় অবশ্যই সফর সংগী হিসেবে ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক হয়না এমন আত্মীয়ের সাথে যাওয়া উত্তম।

মনে রাখতে হবে যখন থেকে একজন মুসলিমকে হজ্বে যাবার সামর্থ্য আল্লাহ তাকে দান করেন তখন থেকেই সেই মুসলিম আল্লাহর কাছে প্রতিটি মূহুর্তের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন তাঁর নিজ সময়ক্ষেপনের জন্য । যাকে আল্লাহ তার নিয়ামতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং পরিপূর্ণ করেন । এবং হজ্বে যাবার সামর্থ্য দান করেন । তখনই তার জন্য হ্জ্ব ফরয হয়ে যায় । এবং কে জানে এই বছরের পরেই হয়ত তার সামর্থ্যকে কেড়ে নেয়া হবে অথবা সেই ব্যক্তি চির বিদায় নিবে এই পৃথিবীর বুক থেকে ।

তাই সময় থাকতেই আল্লাহর ঘরে মেহমান হবার আমন্ত্রণ পত্র যারা পেয়েছেন ,তাদের উচিত দেরী না করে আল্লাহ পাকের দরবারের দাওয়াত কবুল করে নেয়া । মনে রাখবেন এই আমন্ত্রণ আল্লাহ পাক অনেকের ভাগ্যে এই জীবনে দান করেন না যা আপনি পেয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।