আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশি পহেলা বৈশাখ ট্রেনে আর, বাঙালী পহেলা বৈশাখ বাসে!!

মুক্ত কর ভয়/ আপনা মাঝে শক্তি ধর/ নিজেরে কর জয়।

আগে যখন ঢাকায় থাকতাম না, তখন ভরসা ছিল টিভি। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই টিভি চালিয়ে দিতাম ছায়ানটের অনুষ্ঠান দেখব। তখন শুধু ঢাকার অনুষ্ঠান দেখাত। হঠাৎ একবার জানলাম এবার চ্যানেল আই চট্টগ্রামের ডিসি হিলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান লাইভ দেখাবে।

আমাদের গানের স্কুল থেকে ওখানে অংশগ্রহণও করছে। এবং, গানের দলের কোন এক ছোট-খাট অংশে আমিও আছি!! উত্তেজনায় আমার রাতের ঘুম হারাম!! পরদিন সুন্দরমত সেজে-গুজে গেলাম!! সবাইকে বলে দিলাম টিভিতে দেখাবে, দেইখো সবাই!! আমাদের স্কুলের সময় ছিল সাড়ে দশটায়। কিন্তু, আফসুস!! তখন নাকি খবর দেখানোর সময়। তাই, আমাদের স্কুলকে আর দেখানো হবে না। তারা সব গুছিয়ে চলে গেল আমাদের চোখের সামনে দিয়ে!! এর অনেকদিন পর, ঢাকায় আছি প্রায় ৩ বছর।

এর মাঝে পয়লা বৈশাখ করলাম মাত্র গতবার। এবার আগে থেকেই ঠিক করে রাখলাম ঢাকায় থাকব, দুপুরে-বিকেলে ব্লগার আড্ডায় যাবো, সারাদিন টো-টো। উনার সাথে কথা বলা ছিল, এবার পয়লা বৈশাখে আসা হবে না। টিউশনি নাই, তাই এবার আর গিফট-ও নাই!! হঠাৎ, গত সপ্তাহের শুরু থেকে কি হল.. "আসতেই হবে, তোমাকে আসতেই হবে। কিছু জানি না।

আসবা, আসবা, আসবা। " [খট করে লাইনটা কেটে মোবাইটা অফ করে দিল। ] কি করি, কি করি!! ঠিক করলাম। একটু শয়তানি করি!! : দেখো, আমি যদি আসি, তাইলে কিন্তু সব খরচ তোমার। আমি কিছু কিনতে পারব না।

সারাদিন যে ঘুরবো, তার জন্য কোন টাকা-পয়সা নাই!! আমি আপাতত ফতুর!! - তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনছি। কাল পাঠিয়ে দিব। তুমি ঐটা পড়ে আসবা। আমি চুপ। আমি জানি, সে নিজেও কী সমস্যায় আছে।

তাও কিভাবে যেন টাকা জমিয়ে আমার পাঞ্জাবি কিনে ফেলেছে!! একদিন কথা প্রসঙ্গে জানিয়ে দেয়, বউদির কাছ থেকে কমলা রঙের একটি শাড়ি নিয়ে আসছে!! কাজেই আমার কাছে তার চাওয়ার কিছু নাই। শুধু আমি যেন সেদিন তার কাছে থাকি!! যতই ভাব ধরি, ঠিকই ইচ্ছা ছিল এবার অন্য কিছু দেব। সেই মত রোজ ফোন করে বলি, আমি আসছি না। তোমার জন্য কিছু কেনা হবে না। মেজাজ খারাপ করে বসে থাকে।

আর, ফোন অফ!! আমার মজা লাগে!! ক্লাস শেষ করেই আমি ছুটি আজিজ সুপার, নিউমার্কেট, দোয়েল চত্বর!! পাই না, পাই না। কোথাও আমার পছন্দমত মাটির চুড়ি নাই। একজনের প্রেয়সীকে ফোন করে জানতে চাই, "কোথায় পাওয়া যেতে পারে এগুলো??" "গাউসিয়ায় দেখো। আড়ং-এর মত বুটিক শপ-গুলোতে দেখো। পেতে পারো।

" আবার শুরু হয় ছোটাছুটি। রোজ দুপুরে ক্লাস শেষ করেই হাঁটা দেই মিরপুর রোডে। গাউসিয়া থেকে শুরু করে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে আড়ং পর্যন্ত!! অবশ্য একদিনে না। একদিন যেখান থেকে ফিরে আসি, পরদিন শুরু হয় আবার সেখান থেকেই!! এভাবে সবগুলা মার্কেটে আমার পদচারণা!! সমস্যা হল, চুড়ি পছন্দ হয়, কিন্তু হয় বড়, নাহলে রঙ অন্য!! অবশেষে ৮ দিন ঘুরে ঘুরে শেষ-মেষ যা কেনা হল: ১০ জোড়া মাটির চুড়ি ২ জোড়া মাটির কানের দুল ২ জোড়া জয়পুরি কানের দুল তারপর সোজা প্যাকেট করে কুরিয়ার!! ফোন করলাম। : তোমার জন্য চুড়ি কিনেছি।

পাঠিয়ে দিছি। তুমি নিয়ে এসো। - লাগবে না। তুমি আসবা না। আমি এগুলা নিয়ে কি ঘোড়ার ডিম করব!! : আহা, নিয়ে আসো না।

এত কষ্ট করে জোগাড় করলাম। তুমি নিবা না?? - না। তুমি আসবা কিনা বল?? : উহু!! - রাখি। : শুন। শুন।

- কি ছে?? : টিকেট কাটছি। কাল রাতে ট্রেন। ভোরে পৌঁছবো। [এবার আমিই ফোন রেখে দিই!! ] সারারাত ট্রেনে ঘুমালাম। ঘুম ভাঙল তখন বাজে ভোর ৪.৫৩।

নতুন বছরের প্রথম সূর্যালোক দেখলাম আমি ট্রেনে বসে। ফোন করে ঘুম ভাঙালাম না। এস.এম.এস করলাম। ইতিমধ্যে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সবাইকে উত্তর করলাম।

তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল বেলা ১১.১৫ তে। সারাদিন ঘোরা-ঘুরি, গান শোনা, দুপুরে খাওয়া-দাওয়া, সন্ধ্যায় হাঁটাহাটি। আমি যখন আবার ঢাকায় ফিরতি বাসে উঠি, তখন বাজে প্রায় ১০টা। সে বাস আমাকে ঢাকায় নামিয়ে দেয় সাড়ে ৩টার দিকে। হলে আসতে আসতে পূর্বাকাশে মনে হয় কিছুটা আলোকছটা দেখা দিচ্ছিল।

আমি আর পেছনে তাকানোর অবকাশ পাইনি। হলে এসেই ঘুম। বাঙালীর পয়লা বৈশাখের তখন সূচনা। পাদটীকা: সকালে মায়ের ফোন। বাবার ফোন।

দাদার ফোন। আমি তখনও ঘুম। সাড়ে ৯টায় ঘুম থেকে উঠে মাকে ফোন করলাম। মা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাল। আমিও জানালাম।

মা জানালো, আজ ভালো-মন্দ রান্না হবে। তুমি তো ওখানে!! আমার মনে একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম। ইস, যদি বাসায় থাকতাম!! তার সাথে থাকার সময়টুকু একান্তই আমাদের। তাই, ঐ স্মুতিটুকু আমার কাছেই থাক। শুরুতে যে চ্যানেল আই'র কথা বলেছিলাম।

কেন?? কারণ, এখনও আমি আর কোন অনুষ্ঠান দেখি বা না দেখি, পহেলা বৈশাখে খুব আগ্রহ নিয়ে আমি ছায়ানটের অনুষ্ঠান দেখি। এখনও সানজিদা খাতুনের কথায় আমি অনুপ্রেরণা পাই। নতুন বছরের পথ চলার একটু পাথেয় আমি সংগ্রহ করি ছায়ানটের অনুষ্ঠান থেকে। নুশেরা আপু তনুজা দি অপ্সরা আপু আখসান ভাই হিমালয় শূণ্য আরণ্যক হাসান মাহবুব সব্যসাচী প্রসূন জায়েদুল আলম সালাহ উদ্দিন শুভ্র একলব্যের পুনর্জন্ম মাস্টার মশাই নীল দর্পন কবিতার আড্ডা শাওন৩৫০৪ সহ.. আর যারা যারা আমার ব্লগে এসেছেন, পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন.. সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.