আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবোল তাবোল-১ (নোয়াখাইল্লা হোলা!)

সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।

অষ্টপ্রহরের যাপিত জীবনের গল্প! চিটাগাং এর স্থায়ী বাসিন্দা অর্থাৎ কীনা যারা চাঁটগাঁইয়া (চিটাইঙ্গা) নামে পরিচিত, বাংলাদেশের দুই জায়গার মানুষের প্রতি তাদের ভয়াবহ এলার্জী আছে। এক. নোয়াখালী দুই. বরিশাল। বরিশাল নিয়ে আরেকদিন। আজ নোয়াখালী! (প্রথমেই বলে রাখি, কোন জায়গার মানুষই খারাপ না; অন্ততঃ আমি বিশ্বাস করি না।

এখানে যা কিছুই বলেছি তা শুধুমাত্র মজা করবার জন্যই। অধিকন্তু, আমার নানাবাড়ি নোয়াখালী হওয়ায় আমি নিজেকে "হাফ-নোয়াখাইল্লা" বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়স্থ 'বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির' সম্মানিত (!) উপদেষ্টা পদ ও অলংকৃত করে ছিলাম কিছুদিন। ) নোয়াখালী মানুষদের নিয়ে আসলেই অনেক মজা হয়। প্রথমেই কারো দেশের বাড়ি নোয়াখালী (লক্ষ্মীপুর-ফেনীও এর অন্তর্ভুক্ত ধরে) জানা গেলে, আপনাতেই কেন যেন একটা দাঁত বের করা হাসি চলে আসে মুখে! তার উপর কত রকম গাল-গপ্পো যে ছড়ানো আছে! যেমন এটা।

এক হুযুর গিয়েছেন এক জায়গায় ওয়াজ করতে। শুরুতেই তিনি বলে দিলেন যে, নোয়াখালীর কোন লোক উপস্হিত থাকলে তিনি ওয়াজ করবেন না! সকলেই অবাক! বলে কী? যাই হোক, হুযুর মানুষ; কখন কোন বদ্‌দোয়া লেগে যায় সেই ভয়ে নোয়াখালীর লোকজন সেখান হতে মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো। নিশ্চিত হয়ে, হুযুর সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ শুরু করলেন। ওয়াজের মাঝপথে বললেন, "ভাইসব, এক স্থানে আল্লাহর কুদরতি এক বৃক্ষ আছে যার পাশ দিয়া একখান ছোট্ট নদী বইয়া যায়। সেই বৃক্ষ! এমন কেরমত তার, আহারে; একখান পাতা যদি পানিতে পড়ে, হইয়া যায় কুমীর আর যখন মাটিতে পড়ে তখন হইয়া যায় বাঘ!" সাথে সাথে এক শ্রোতা দাঁড়িয়ে বললেন, "হুযুর, গোস্তাখী মাফ, একটা প্রশ্ন ছিল।

ঐ কুদরতি গাছের একটা পাতা পড়ার পর যদি এমন হয় যে, অর্ধেক পানিতে আর বাকীটা পানিতে তাহলে কী হবে?" হুযুর সাথে সাথে গরম! "আমি না কইলাম, নোয়াখালীর কোন লোক থাকলে আমি ওয়াজ করুম না!" যাই হোক, চিটাগাং এর মানুষজনের সাধারণ ধারনা, নোয়াখালির লোকজন একটু পেঁচানো (ক্রিটিক্যাল) স্বভাবের হয়! উপরের বর্ণিত ঘটনাটি সত্য-মিথ্যা যাই হোক, নোয়াখালীর লোকজনের ক্রিটিক্যাল (!) স্বভাব বোঝানোর জন্য খুব বেশি ব্যবহৃত হয় এই ঘটনা! তবে, ব্যক্তিগত জীবনে বেশীরভাগ নোয়াখাইল্লাকে আমার সহজ-সরল ও পরোপকারী বলেই মনে হয়েছে। অবশ্য একজন ছাড়া। আমার এলাকারই এক বন্ধু, নাম সুমন। ওর সাথে ছোটবেলা হতেই কথা বলবার সময় আমরা সবাই খুব ভয়ে ভয়ে থাকি! কেন, জানেন? এমনিতে ছেলেটা ভালো। সংসারী।

মায়ের অসুস্থতায় রান্না-বান্না থেকে শুরু করে ঘর মোছা পর্যন্ত সবই করে। সমস্যা কেবল এক জায়গায়! মনে করুন, বন্ধুদের আসরে আপনি কোন বিষয়ে একটি মন্তব্য করলেন এবং সুমন ও সেখানে উপস্থিত। প্রথমেই সুমন আপানার মন্তব্যের বিরোধিতা করে একটি প্রতি-মন্তব্য ছুঁড়ে দেবে এবং সেটি এতটাই অপ্রাসংগিক হবে যে, আপনি তার সাথে তর্কে যেতে বাধ্য। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন, সুমন এখন সে কথাই বলছে, যা আপনি শুরুতে বলেছিলেন আর আপনি নিজেই এখন সে কথার বিরোধিতা করে চলেছেন! এ পর্যায়ে সুমন হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করে আপনাকে বলবে, "বাদ দাও মিয়া, না জেনে কথা বল! তোমাদেরকে নিয়ে আর পারি না" আর আপনি থ' মেরে বসে থাকবেন! অবিশ্বাস্য হলে ও, এ অসাধ্য সে কিভাবে সাধন করে তা এখনো বের করতে পারিনি, তবে আমাদের বন্ধু মহলের সবারই কমবেশি এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। যাই হোক, নোয়াখালীর প্রসংগে ফিরে আসি আবার! নোয়াখাইল্লাদের আরেকটা মজার বিষয় হলো, 'প' আর 'হ' জনিত সমস্যা।

যেমন হানি (পানি), হাগল (পাগল)। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, এই সূত্র অনুযায়ী 'পেঁপেঁ' শব্দটার ভাগ্য কী হওয়া উচিৎ? এ ব্যাপারে ও একটি গল্প মনে পড়ে গেল। নোয়াখালী বাড়ি এমন এক শিক্ষকের ক্লাসে ছাত্রের নির্দোষ প্রশ্ন, "স্যার, আপনি 'পার্থক্য' শব্দকে সবসময় 'হাত্তইক্য' বলেন কেন?" শিক্ষকের তড়িৎ জবাব, "এরে হাগল, 'পাত্থইক্য' আর 'হাত্তইক্য'র মইধ্যে হাত্তইক্য কীয়া?" তবে, সত্যি কথা বলতে কি, স্কুলে জীবনে যে সকল শিক্ষক আমাকে উজাড় করে পড়িয়েছেন তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই নোয়াখালীর। আমার মাঝে মননশীলতা ও ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতা তৈরীতে এঁদের অবদান অপরিসীম। সবশেষে, বলছি বিশেষ কোন জনগোষ্ঠিকে হেয় প্রতিপন্ন করবার জন্য আমি এ লেখার অবতারনা করিনি।

কেননা, আমি বিশ্বাস করি , "জন্ম হোক যথা তথা; কর্ম হোক ভাল"। জয়বাংলা; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। দুই পক্ষই খুশী থাক! ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।