আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপারনোভা - যে কারনে আমাদের অস্তিত্ত্ব সম্ভব হয়েছে -শেষ পর্ব

Everyone is entitled to my opinion.

সুপারনোভা - পাদ্রী রবার্ট ইভান্সের বিশ্ব - পর্ব ১ (Click This Link) সুপারনোভা - মহাপ্রলয় ঘটাতে সক্ষম, কতটুকু নিরাপদ আমরা - পর্ব ২ (Click This Link) গতপর্বে আমরা দেখেছি যে সুপারনোভা বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। কারণ, একটি বিশেষ ধরনের সুপারনোভাকে (Ia) স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডল হিসাবে ধরে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সম্প্রসারনের হার নির্নয় করে থাকেন। আরও একটি বিশেষ কারনে সুপারনোভাগুলি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাবিশ্বের শুরুতে বিগ ব্যাং প্রচুর পরিমানে হালকা গ্যাস তৈরী করলেও কোন ভারী উপাদান বা এলিমেন্ট তৈরী করেনি। সেগুলোর উৎপত্তি হয়েছিলো বিগ ব্যাংয়ের আরও অনেক অনেক পরে।

অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা কোনভাবেই বুঝতে পারছিলেন না পরে সেগুলো কিভাবে তৈরী হলো। সমস্যা হলো কার্বন এবং আয়রন সহ অন্যান্য ভারী এলিমেন্ট বা উপাদান তৈরীর জন্য দরকার ভয়ানক উত্তপ্ত কিছু, এমনকি সবচেয়ে উত্তপ্ত নক্ষত্রের কেন্দ্রের চেয়েও উত্তপ্ত কিছু। আর এই উপাদানগুলি না তৈরী হলে দুঃখজনক হলেও সত্যি আমারাও হতাম তাৎপর্যহীন। যখন একটা নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয় তখন সেটা প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে - প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি বা তারও বেশি। আর এই অতি উচ্চ তাপমাত্রায় নিউক্লিও সিনথেসিস পদ্ধতিতে ভারী এলিমেন্ট বা উপাদান গুলো তৈরী হয়ে থাকে এবং মহাশুন্যে ছড়িয়ে যায়।

১৯৫৭ সালে বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল দেখান কিভাবে সুপারনোভা বিস্ফোরনের সময় এই ভারী এলিমেন্টগুলি তৈরী হয়। আর তার পরেই বিজ্ঞানীদের পক্ষে সম্ভব হয় আমরা কিভাবে এলাম তার সম্ভাব্য দৃশ্যপট গুলি নির্মান করা। বিস্ফোরিত নক্ষত্রগুলি যখন মহাশূণ্যে এই ভারী এলিমেন্ট গুলি ছড়িয়ে দেয় তখন এরা নতুন এক গ্যাসীয় মেঘ বা আন্তর্নক্ষত্রিক মাধ্যম সৃস্টি করে এবং পরবর্তিতে এই গ্যাসীয় মেঘগুলি একত্রিত হয়ে সৃস্টি করে নতুন একটি সৌর জগতের । প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে এক বিশাল গ্যাসের ঘূর্ণি এবং ধূলিকণা, আমরা এখন যেখানে আছি সেখানে, প্রায় ১৫ বিলিয়ন মাইল জুড়ে বিস্তৃত মহাশূণ্যে জড়ো হয় এবং বাড়তে থাকে। মোটামুটি পুরোটাই, আমাদের সৌরজগতের ৯৯.৯% ভরই, এক জায়গায় সংগঠিত হয় এবং সৃস্টি করে সূর্য্যের।

আর ভেসে বেড়ানো অন্যান্য রয়ে যাওয়া গ্যাস এবং ধূলিকণা থেকে দুটি মাইক্রোস্কপিক কণা ভাসতে ভাসতে কাছাকাছি চলে আসে এবং ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক বলের কারণে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। আর সেটাই ছিলো আমাদের গ্রহের সৃস্টির সবচাইতে আদি মূহুর্ত। পুরো বিশৃঙ্খল সৌরজগৎ জুড়েই তখন প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে এরকম অসংখ্য ঘটনা। এই সমস্ত ধূলিকণার সংঘর্ষের ফলে একটু একটু করে তৈরী হচ্ছিলো আরেকটু বড় বড় পিন্ডের। আর একটা সময় এই পিন্ডগুলি আরও বড় হতে হতে তৈরী হলো ছোট ছোট মহাকাশীয় পাথরখন্ডের।

এই অন্তহীন ধাক্কা এবং সংঘর্ষ কখনও কখনও এগুলোতে ফাটল ধরাত বা ভেঙ্গে ফেলত অথবা পুণরায় জোড়া লাগাত। আর এভাবেই এলোমেলো ভাবে চলতে থাকে অন্তহীন বিন্যাস এবং পুনর্বিন্যাসের। প্রতিটা সংঘর্ষেরই একটি বিজেতা ছিলো আর কোন কোন বিজয়ী আকারে আরও বড় হতে থাকলো এবং একটা পর্যায়ে যেয়ে এমন আকার ধারণ করলো যে, যে কক্ষপথে সেটি ভ্রমন করছিলো সেটিতে আধিপত্য বিস্তার করা শুরু করলো। এই সবই ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুত। ছোট একটা ক্লাস্টার থেকে শত শত মাইল বিস্তৃত একটা শিশু গ্রহে পরিণত হতে সময় লেগেছে মাত্র হাজার বছর।

এরপর আরও ২০০ মিলিয়ন বছর বা তারও কম সময়ে পৃথিবী সৃস্টির কাজ মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিলো। যদিও সেই সময় পৃথিবী ছিলো উত্তপ্ত এবং গলিত অবস্হায়। আর তখনও মহাশূণ্যে ভেসে বেড়ানো ধ্বংসাবশেষ নিয়মিতই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরত। ঠিক এই সময়ে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটা বস্তু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরে এবং পৃথিবীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে পৃথিবী থেকে আলাদা করে ফেলে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছুটে যাওয়া পদার্থগুলো পুনরায় জোড়া লাগলো এবং বছর না ঘুরতেই একটা গোলাকার পাথরের আকার নিলো যেটা আজও আমদের সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে।

সৃস্টি হলো চাঁদ। চাঁদের বেশিরভাগ পদার্থই এসেছে পৃথিবীর উপরিভাগের আস্তর থেকে, মধ্যভাগ থেকে নয়। আর সে কারণেই চাঁদে লোহার পরিমাণ খুবই কম, যেখানে পৃথিবীতে লোহা আছে প্রচুর পরিমাণে। পৃথিবী যখন এখনকার চেয়ে এক তৃতিয়াংশ আকারের সমান ছিলো তখনই এর বায়ূমন্ডল গঠনের কাজ শুরু হয়। সে সময় বায়ু মন্ডলে প্রধানতঃ ছিলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেন, এবং সালফার।

যেগুলো কিনা কোনভাবেই প্রাণ ধারনের উপযোগীতার সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায় না। কার্বণ-ডাই-অক্সাইড একটা শক্তিশালী গ্রীণ হাউস গ্যাস। এটার একটা ভালো দিকও ছিলো। সূর্য্যটা তখন আরও অনেক কম উত্তপ্ত ছিলো। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গ্রীণ হাউস ইফেক্টের সুবিধাটা না থাকলে পৃথিবীটা চিরস্হায়ীভাবে বরফ হয়ে থাকত আর জীবন সৃস্টির প্রথম পদক্ষেপটা হয়ত কখনই সম্ভব হতনা।

কিন্তু, জীবন শুরু হয়েছে। পরবর্তি ৫০০ মিলিয়ন বছর তরুণ পৃথিবী ক্রমাগতভাবে ধুমকেতু, উল্কাপিন্ড, এবং অন্যান্য মহাকাশীয় ধ্বংসাবশেষ দ্বারা আক্রান্ত হতে থাকলো । যার ফলশ্রুতিতে সাগরগুলো ভরে গেলো পানি এবং অন্যান্য জীবন গঠনের সহায়ক উপাদানে। আরও চার বিলিয়ন বছর পরে মানুষ ভাবতে লাগলো কিভাবে সবকিছুর শুরু হয়েছিলো। আর তার পরের গল্পটা সবারই জানা।

সমাপ্ত সূত্র: এ শর্ট হিস্ট্রী অব নিয়ারলী এভরিথিং -- বিল ব্রাইসন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।