আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপারনোভা - : পাদ্রী রবার্ট ইভান্সের বিশ্ব - পর্ব ১

Everyone is entitled to my opinion.

রাতের আকাশটা যেদিন খুব পরিস্কার থাকে এবং চাঁদের আলোও থাকে কিছুটা ম্রিয়মাণ, সদা হাস্যোজ্বল এবং শান্ত স্বভাবের মানুষ পাদ্রী রবার্ট ইভান্স অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহর থেকে ৫০ মাইল পশ্চিমে ব্লু মাউন্টেইন এলাকায় অবস্হিত বাড়ীর পিছনের ডেকে তারঁ ঢাম্বুশ আকারের টেলিস্কোপটি টেনে নিয়ে একটি অভূতপূর্ব কাজ করতে বসে যান। তিনি সুদূর অতীতের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর মৃত্যুপথযাত্রী নক্ষত্র গুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করেন। অতীতের দিকে ফিরে দেখাটা আসলে খুবই সহজ। রাতের আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকান, যা কিছু দেখা যাচ্ছে তার সবটুকুই ইতিহাস - সারা আকাশটা জুড়েই। যে নক্ষত্রগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো বর্তমান সময়ের না বরং চোখের মণিতে পড়া আলো যখন তাদের উৎস ছেড়ে চলে এসেছিলো সেই সময়ের।

আমরা শুধু নিশ্চিত করে এটুকুই বলতে পারি আমাদের অতি বিশ্বস্ত ধ্রুবতারার জীবন প্রদীপ হয়ত গতমাসেই বা ১৮৫৪ সালে অথবা চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কোন এক সময়ই জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেছে। কিন্তু সেই সংবাদটি এখনও আমদের কাছে এসে পৌছেনি। আমরা খুব বেশি হলে এটুকু বলতে পারি যে, ৬৮০ বছর আগে আজকের দিনটিতেও ধ্রুবতারা স্বমহিমায় তার আলো বিকিরণ করে যাচ্ছিলো। নক্ষত্ররা মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। আজ পর্যন্ত বহু মানুষ এই মহাকাশীয় বিদায় মূহুর্তগুলিকে চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু বব ইভান্স তাদের যে কারও চাইতে আরও অনেক বেশি দক্ষতার সাথে এই কাজটি করতে পারেন।

দিনের বেলায় পাদ্রী ইভান্স অস্ট্রেলিয়ার " ইউনাইটিং চার্চের" হয়ে আধা-অবসরপ্রাপ্ত সহৃদয় এক যাজক হিসাবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি উনিশ শতকের ধর্মীয় আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও ফ্রিল্যান্স গবেষনার কাজ করেন। কিন্তু রাতের বেলায় তিনি অচিন্তনীয় ভাবে বদলে যান। হয়ে যান রাতের আকাশের অতিমানবীয় মেধার অধিকারী এক টাইটান। শিকার করে বেড়ান সুপারনোভা।

আমাদের অতি আপন সূর্য্যের চেয়েও অনেক অনেক গুন বড় একটা বিশালাকার নক্ষত্রের জীবন সায়াহ্নে যখন তার কাঠামোটি হটাৎ করেই ভেঙে পরে এবং অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারনা করে বিস্ফোরিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই প্রায় ১০০ টা সূর্য্যের সমান শক্তি নিঃসৃত করে এবং তার আপন গ্যালাক্সিতে সবচাইতে উজ্ঝ্বল নক্ষত্র হিসাবে কিছু সময়ের জন্য জ্বলতে থাকে তখন সেই নক্ষত্র টিকে বলে সুপারনোভা। ইভান্স বলেন, "যদি এক ট্রিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমা এক সাথে বিস্ফোরিত হয় তবে তার সাথে সুপারনোভার তুলনা করা যায়। " যদি আমাদের ৫০০ আলোকবর্ষের মধ্যেও কোনো সুপার নোভা ঘটে তবে বলা যায় আমাদের দিন শেষ। ইভান্স অনেকটা ঠাট্টা করেই বলেন, "সে দিন আমাদের খেলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। " কিন্তু মহাবিশ্বটা আসলে এত বিশাল বড় আর সুপারনোভা গুলিও ঘটে এত দূরে দূরে যে আমাদের ক্ষতির কোন সম্ভাবনাই নেই।

বস্তুতঃ পক্ষে বেশির ভাগ সুপারনোভাই ঘটে এতটাই অকল্পনীয় দূরে যে সেগুলোর আলো আমাদের চোখে খুবই দূর্বল ঝিলিক হিসাবে ধরা পরে। গড়ে প্রায় একমাসের মত সময় ধরে যখন সুপারনোভা গুলি দৃশ্যমান থাকে, সে সময়টাতে আকাশের অন্যান্য নক্ষত্র থেকে তাদের আলাদা করে চেনার উপায় হচ্ছে যে সেগুলো আকাশের এমন এক জায়গায় অবস্হান করে যে জায়গাটি আগে শূণ্য ছিলো। আর পাদ্রী ইভান্স রাতের আকাশের গম্বুজে নক্ষত্রদের ভীড়ের মাঝ থেকে এই ব্যতিক্রমী এবং অনিয়মিত ভাবে উদয় হওয়া সুপারনোভা গুলিকে খড়ের গাদা থেকে সূঁচ খোজার মত করে খুজে বের করেন। এটা যে কত বড় একটা কৃতিত্বের কাজ সেটা বুঝতে হলে কল্পনা করুন একটি সাধারণ মাপের খাবার টেবিল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে। এখন কেউ যদি একমুঠো লবণ টেবিলটা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় তাহলে এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লবণ দানা গুলোকে একটি নক্ষত্রপুন্জ্ঞ বা গ্যালাক্সি হিসাবে ভাবা যেতে পারে।

এখন কল্পনা করুন আরও ১৫০০ টি টেবিল যেগুলোকে এক সারিতে সাজিয়ে রাখলে প্রায় দুই মাইল লম্বা হবে। প্রত্যেকটি টেবিল জুড়েই এলোমেলো ভাবে লবণের দানা ছড়ানো ছিটানো আছে। এখন একটা অতিরিক্ত লবণ দানা যদি কোন একটি টেবিলে রাখেন তবে বব ইভান্স টেবিল গুলির দিকে এক পলক তাকিয়েই বলে দিতে পারবেন কোন দানাটা নতুন যোগ করা হয়েছে। এই নতুন লবণ দানাটাই হচ্ছে সুপারনোভা। আকাশের কোন নক্ষত্রটি কোথায় আছে এটা মনে রাখবার ক্ষেত্রে ইভান্সের মেধাশক্তি এতটাই ব্যতিক্রমী যে নিউরোলজিস্ট অলিভার স্যাক্স মস্তিস্কের ইন্দ্রিয় সমস্যায় আক্রান্ত কিন্তু অসাধারন কৃতিত্বের অধিকারী কিছু মানুষকে নিয়ে লেখা তাঁর "An Anthropologist on Mars" বইয়ের একটি অধ্যায়ে মনোবৈক্যলের অধিকারী কিন্তু অসাধারন গুনীদের (Autistic-Savant) নিয়ে আলোচনায় পুরো একটি প্যাসেজে ইভান্সকে নিয়ে লিখেছেন।

সাথে সাথে তিনি এও বলতে ভুলেননি যে তিনি মনে করেন না যে ইভান্স মনোবৈক্যলে ভুগছেন (Autistic)। ইভান্স কখনও স্যাক্সকে সামনা সামনি দেখেননি। তিনি Autistic কিংবা Savant হতে পারেন এই সম্ভাবনার কথা শুনে মৃদু হাসেন। কিন্তু তিনি নিজেও তাঁর এই অসাধারন গুনের ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম । তিনি বলেন, "আমি সহজাত প্রবৃত্তি বশেই আকাশের কোন তারাটা কোথায় আছে খুব সহজেই মনে রাখতে পারি।

কিন্তু এমন আরও অনেক জিনিষ আছে যে গুলোতে আমি খুবই দুর্বল। যেমন আমি মানুষের নাম একদমই মনে রাখতে পারিনা। " ইভান্সের স্ত্রী এলেইন-ও স্বামীর সাথে একমত। তিনি কৌতুক করে বলেন, "ইভান্স কোন জিনিষটা কোথায় রেখেছে এটা মনে রাখতে পারে না। " চলবে............... ** এটি মূলত অনুবাদ কিন্তু ভাব প্রকাশের সুবিধার্থে আমি কিছু কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু তথ্যও সংযোজন বা বিযোজন করেছি।

সূত্র: এ শর্ট হিস্ট্রী অব নিয়ারলী এভরিথিং।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।