আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চৈতালী অবশেষ…

কোন আপডেট নেই।
তেঁজগা থানার এসআই, শফিকুলের মুখে বিরক্তির ছাপটা বেশ স্পষ্ট। টেবিলে রাখা সর-ভাসা প্রায় ঠান্ডা চা। একটু আগে ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ায় মাথার উপরের সিলিং ফ্যানের ক্রমশ কমে আসা ঘূর্ণন। আর রুমের সামনে হাতকড়া পরানো পাবলিকের পিটুনিতে আহত পকেটমারটার কাৎরানি, এসবের কোনটাতেই এইমূহুর্তে শফিকুলের মনোযোগ নেই।

তার সমস্ত বিরক্তি আর মনোযোগ ধরে রেখেছে সামনের টেবিলের নীল রঙের ব্যাকপ্যাকটা। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর কোন সিদ্ধান্তে পৌছুতে না পেরে চায়ের কাপটা ঠেলে পাশে সরিয়ে রেখে ব্যাগটা টেনে নেয় শফিকুল। সবচেয়ে উপরের পকেট থেকে কিছু খুচরো কাগজ আর কলম-পেন্সিলের একটা ইতঃস্তত সমাবেশ মেলে। চেন আটকে পরের কমপার্টমেন্ট খুলতেই কালো মলাটের একটা মাঝারি সাইজের ডায়েরি উঁকি মারে, ব্যাগের শেষের অংশে মেলে কয়েকটা সাধারণ লেখার খাতা আর একটা বই। সাথে ভার্বাটিমের দুটো সিডির বক্স আর ক্যালকুলেটর।

সিডির খাপের উপরে মার্কার দিয়ে ইংরেজীতে বড় বড় করে লেখা মুর্শেদ চৌধুরী, ল্যাব রিপোর্ট। বিরক্তিতে ভ্রু-আরো কুঁচকে শফিকুল ডায়েরিটা আবার বের করে। নাম-ঠিকানা লেখার জায়গাটায় শুধু একটা ইমেইল এড্রেস লেখা। বোঝা যায়, খাতার মালিকের নাম পরিচয় নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা নেই। দ্রুত হাতে শফিকুল ইমেইল এড্রেসটা কাগজে টুকে রেখে পৃষ্ঠা উল্টে চলে।

প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা এলোমেলো লেখা। ...কিছু নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা। তারিখ দিয়ে হিজিবিজি কিছু লেখা। এরপরের পৃষ্ঠাগুলো অনিয়মিতভাবে- ডায়েরি লেখার মত করে প্রতিদিনের কাজকর্মের কথা লেখা। এসব থেকে আন্দাজ করা লেখক সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের ছাত্র।

পুরোটা পড়ার মত ধৈর্য্য শফিকুলের হয় না। সে পুলিশের স্বভাবসুলভ ব্যাস্ততায় পৃষ্ঠা উল্টে যায়। মাঝ থেকে বেশ কয়েকপাতা ছেড়া -এটা বোঝা যায়। ছেড়া পাতাগুলোর পরের পাতায় শফিকুলের দৃষ্টি আটকায়। এখানে লেখাগুলো যে বেশ স্থিরতার সাথে লেখা, সেটা গোটা গোটা অক্ষরগুলো দেখে সেটা বোঝা যায়।

পানির গ্লাস ঢেকে রাখা পিরিচটা সরিয়ে একটা চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে শফিকুল পাতাটা পড়তে আরম্ভ করে। ... ২৮ মার্চ ২০০.. এখন ঠিক রাত একটা বাইশ বাজে। ঘন-ঘন ঘড়ি দেখছি। হটাৎ করেই যেন আমার চারপাশের সময় আস্তে চলা আরম্ভ করেছে। এটাকেই কি টাইম ডাইলেশন বলে? ...হয়তবা! সম্ভবত তনুকে ট্রেনে তুলে দেবার পর থেকেই এমনটা ঘটছে।

আগেও অনেকবার তনুকে তুর্ণা এক্সপ্রেসের এগারোটার ট্রেনে তুলে দিয়ে ফিরে এসেছি, কিন্তু এবারের সাথে কি আগেরবারগুলোর কোন তুলনা হয়? প্রায় সাড়ে তিন বছরের বন্ধুত্বের সম্ভবত সমাপ্তি অথবা নতুন কোন নাম দেবার চেষ্টা করেছি আজকে। হুট করেই হয়ে গেল সব কিছু। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে ওর কামরার বাইরের জানালার সামনে দাড়িয়ে তনুর মুখটা দেখতে দেখতে হটাৎ করেই মনে হল... এই মুখটার দিকে চেয়ে থেকেই হয়ত ক্লান্তিহীন আরো কয়েকটা জনম পার করে দিতে পারব। চারপাশে রেলস্টেশনের কোলাহল, হইচই, বিদায় নেওয়ার আয়োজন... সবকিছু মিলিয়ে গিয়ে কোন এক শব্দহীন জগতে মিলিয়ে গিয়েছিলাম। হাত বাড়িয়ে জানালার পাশে রাখা তনুর হাতের উপর আস্তে করে হাতটা রেখে সম্ভবত কিছু বলেওছিলাম।

ওর ঈষৎ বিস্ময়মাখা চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে আরো কয়েকটা নিঃশব্দ মূহুর্ত কাটানোর পরই ট্রেনটা দুলে উঠে। আস্তে আস্তে ট্রেনের সাথে কয়েকপা এগুনোর পরেই, আলতো করে হাতটা টেনে নিয়ে তনু প্রত্যেকবারের মতই সাবধানে ফেরার কথার বলে অপলক তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আবার যখন চারপাশের শব্দগুলোর মাঝে ফিরে আসি, তখন ওর কামরাটা বেশ দূরে চলে গেছে। ট্রেনটাও বেশ ঈর্ষার ভঙ্গিতে ওকে আমার কাছ থেকে আরো একটু দুরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। হৃদয় নামের অবাস্তব অংশটাকে প্রথমবারের মত খুব বাস্তব কোন শারীরিক অংশ মনে হতে লাগল।

কারণ বুকের বা-পাশে চেপে ধরে রাখার মত যে চিনচিনে ব্যাথাটা হচ্ছিল, সেটাকে হৃদপিন্ডনামের রক্তমাখা একতাল অনৈচ্ছিক পেশীর ছন্দপতন না ভেবে ...তনুর জন্য কষ্ট লাগা- ভাবতেই বেশি ভাল লাগছে। ৩০ মার্চ ২০.. দমবন্ধ করা অনুভূতি ব্যাপারটার বেশ হাতে-কলমে একটা শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে এ কয়েকদিনে। সেদিন রাতের পর থেকে তনুর কোন সাড়া না পেয়ে বুঝতে পেরেছি ...কোথাও সুর কেটে গেছে। ফোন করার্ ইচ্ছেটাও ছন্দপতনের সংকোচের আড়ালে মরে গেছে। নিজের মাঝে তনুর নিঃশব্দতাকে নানাভাবে ব্যাক্ষা করতে গিয়ে সম্ভাব্যতার সবকটি পর্যায়ের সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা করেছি।

চারপাশের সবকিছু্ই কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। হুট করেই সব কিছু বদলে গেছে যেন। চারপাশের সবকিছুই আগের মত আছে, কিন্তু কোথাও যেন বিশাল একটা শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ডায়েরির আগের কয়েকটা পাতা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললাম। ...সেদিনের পর থেকে লেখাগুলোই শুধু থাক।

ক্লাসে যাচ্ছি। কাজ করছি। আড্ডা দিচ্ছি। খাচ্ছি, ঘুমুচ্ছি ...বা এসবের ভান করছি। আসলে যেটা করছি, তার নাম অপেক্ষা।

২ এপ্রিল ২০০.. আচ্ছা আজকের দিনটা কি অন্যরকম ভাবে আরম্ভ হয়েছিল? দিনের শুরুটা খুব কমই দেখা হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েটের পর থেকে ভোরে ওঠার অভ্যেসটা কমে গেছে। ...তবুও ভাবতে ইচ্ছে করছে আজকের দিনটা হয়ত আর দশটা দিনের মত করে শুরু হয়নি। ভেবে নিচ্ছি... শহরের কাকগুলো আজকে সকালটাকে ক্ষমা করে নিঃশব্দ থেকেছিল। বা বাতাসের ধুলোকণাগুলোও কোন বৃষ্টি ছাড়াই আজকে বাতাসটাকে মুক্তি দিয়ে ঝরে গিয়েছিল।

সম্ভবত সকালের কোমল রঙটাও আজকে অনেক বেশি মোহময় ছিল। সূর্য্যও সম্ভবত দিনটাকে আলাদা করার খেলায় তার মায়াময় উষ্নতার পরশ বুলিয়ে গেছে। ...হাঃ হাঃ হাঃ। ...এসব আকাশকুসুম করে ভাবতে খারাপ লাগছে না। কবি-টবি হলে হয়ত আরো একটু রঙ চড়াতে পারতাম দিনটার বর্ণনায়... তবুও আজকে সব কিছু হটাৎ করেই অন্যরকম হয়ে গেল।

আজকে বিকেলে একটা এসএমএস পেয়েছি তনুর কাছ থেকে। ...কয়েকটা শব্দ মাত্র, যার কোনটার মধ্যেই আমার প্রশ্নের বা চাওয়ার কোন উত্তর নেই। তার পরও শব্দগুলো মনের গুমোটবাধা অংশের ভার কিছুটা হলেও হালকা করল। “ছয় তারিখে ক্লাস শেষ হবে কয়টায়?” ...ছয়টা শব্দ, মাত্র ছয়টা শব্দ ...হুট করে কেমন পুরো একটা দিনকে বদলে দেয়!! ...ভালবাসা নামের আদিম আর ব্যাক্ষাতীত অনুভূতিটার কি এতই ক্ষমতা? ৩ এপ্রিল ২০.. আজ সকালের ক্লাসে খুব মেজাজ খারাপ করার মত ঘটনা ঘটল। কোন কথা বার্তা ছাড়াই তানভির বলে বসল, ‘কিরে মুর্শেদ, তোর সব কিছু অন্যরকম লাগে ক্যান? প্রেম-ট্রেম করছিস নাকি? ডাক্তারনীর সাথে কিছু নাকি?’ কথা শেষ করে গা-জ্বালানো হাসি।

সন্ধানীর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার কাজে প্রথম তনুর সাথে দেখাটা সবার একসাথেই হয়েছিল। সেই সূত্রে সবাইই তনুর বন্ধু। আগে কখনো এমন হয়নি, এত রাগ আর বিরক্তিও হয়নি। ...আজকে তানভিরের কথা শুনে হুট করেই রাগ উঠে গেল। ...সবার মাঝে কাউকে আলাদা করে ভাবলে সম্ভবত এমনই হয়।

তনুর মেসেজের জবাব পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপর আর কোন কথা নেই। সংকোচ কাটিয়ে আজকে লিখে পাঠিয়েছিলাম, ‘ক্যামন আছ? এক মিনিট কথা বলা যাবে কি?’ ...কথা বলার জন্য অনুমতি চাইতে হয়নি আগে কখনো। আজকে হটাৎ করেই লিখেছিলাম লাইনটা। ...কোন জবাব নেই।

৫ এপ্রিল ২০.. সম্ভবত চৈত্রের শেষ চলছে। অসহ্য গরমের মাঝে আজকে অনেকদিন পরে আকাশ মেঘলা ছিল প্রায় সারাদিন। ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে হুট করেই। সামনে ফাইনাল, তার প্রস্তুতি। কাজ গুছিয়ে নেওয়ার চাপ।

নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি টিচিং এসিস্ট্যান্টশিপের বেগাড় খাটা। সব মিলিয়ে একটা বড় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তার সাথে এমন গুমোট আবহাওয়া আরো অসহ্য। চারপাশের সব কিছুই কেমন যেন থমকে আছে। ছাই রঙের আকাশ, মানুষগুলোর ব্যাস্ততায় ক্লান্ত মুখগুলো, শহরের সেই পুরানো কোলাহল, নিজের জীবন, তনুর নিঃশব্দতা... সব কিছুই অসহ্য।

সম্ভবত ভালবাসা মানুষকে কিছুটা অধৈয্যও করে তোলে। ...কিছুক্ষণ আগে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোটা পড়া আরম্ভ করেছে। সাথে হালকা বাতাসের জাপটা। জানালার কাচের উপর জমে থাকা ধূলোতে বৃষ্টির ফোটাগুলো আকিবুকি কাটার চেষ্টা করছে। এবছর তাহলে চৈত্রতেও আকাশের দয়া হল।

..বাহ বেশ! সম্ভবত মেঘে বিদ্যুৎ-চমকাচ্ছে... গুড়ুক-গুড়ুক শব্দ হচ্ছে। আচ্ছা... ঠিক এই মূহুর্তে তুমি কি করছ? পাশে থাকতে ইচ্ছে করছে খুব। অন্ধকারে ঢেকে যাক চারপাশ। দমকা বাতাস সব শব্দগুলোও ঝেটিয়ে নিয়ে যাক। শুধু মাঝে মাঝে যখন বাজ পড়ার এক ঝলক আলো আসবে, সেই আলোতে খুব অল্প সময়ের জন্য তোমার মুখটা দেখব।

প্রত্যেকটা আলোর ঝলক আমাকে আশ্বাস দিয়ে যাবে... হ্যাঁ, তুমি আমার খুব কাছেই আছ। ৬ এপ্রিল ২০.. আজকে একটাই ক্লাস ছিল সকালে। শেষ হবার পরে, চতুর্থ সেমেস্টারের পোলাপানের ইলেকট্রনিক্স-১ ল্যাবের ল্যাব ফাইনাল নেওয়াতে স্যারকে সাহায্য করার জন্য যেতে হয়েছে। নিয়ম মতই সেলফোন বন্ধ ছিল। থিওরি অংশের পরীক্ষার সময় জানালার সামনে এসে দাড়িয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য।

আকাশ আজকে পুরো অন্ধকার ভাব ধরেছে। মেঘদল বেশ অস্থির হয়ে ছুটোছুটি করছে। ছোটবেলায় নানি বলত ‘অস্খির মেঘে কোন বৃষ্টি হয় না। এরা শুধু দূরেই চলে যায়। ' থিওরির পর প্রাকটিক্যাল অংশ আরম্ভ হতে কিছুটা সময় লাগবে।

সেল ফোনটা অন করতেই দেখি তনুর মেসেজ। ‘নিচে এসো, ঢাকা ব্যাংকের সামনে দাড়িয়ে আছি’। মানে বুঝতে কিছুটা সময় লাগল। আরো কয়েকবার পড়লাম। মেসেজ পাঠানো হয়েছে প্রায় পঁচিশ মিনিট আগে।

...চারপাশের সবকিছু ঘোলাটে লাগছে। নিচে আসতে বলেছে মানে তনু এখন ঢাকায়! কিভাবে সম্ভব! আর এখন পরীক্ষার ডিউটি রেখে নিচে যাওয়া মানে ফাঁকি মারতে হবে। স্যারের সামনে গিয়ে বেশ কাঁচুমাচু মুখে বললাম... ‘ইয়ে.. মানে... স্যার... ’। নিচের ফ্লোরে এসে দেখি বাইরে হালকার উপর ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। নিয়ম ভেঙ্গে অস্থির মেঘ আজকে এখানেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।

সম্ভবত ষড়যন্ত্রে দমকা বাতাসেরও কোন ভূমিকা ছিল। সাথে বৃষ্টি থেকে বাঁচবার মত কিছুই নেই। বৃষ্টিতে ঝাপসা কাঁচের দরজা ঠেলে যখন বাইরে বেরিয়ে এলাম তখন প্রথম আদরটা ঝাপটা বাতাসে মাখানো বৃষ্টির-ছাটটাই করল। চোখ বাচাঁতে হাতটা চোখের সামনে এনে চশমার কাচ মোছার চেষ্টা করতে করতে রাস্তার ওপাড়ে তনুকে খুজছিলাম। বৃষ্টির জন্য অপ্রস্তুত নগরবাসীর ফুটপাথটা একটু একটু করে ফাকা হয়ে আসছে।

গাড়ির টেইললাইটের লাল আলোয়- বৃষ্টিধোয়া কালো পিচে লালচে আভা। উল্টোপাশে ঢাকা ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে বেশ ঝাকড়া কয়েকটা মেহেগুনি গাছ আছে। মাঝে মাঝে মাধবীলতার ঝোপে প্যাঁচানো। ফুটপাতে এক বাদামওয়ালা পলিথিন দিয়ে বাদাম ঢাকতে ঢাকতে চৈত্রের এই বৃষ্টির দিকে অবাক তাকিয়ে আছে। এসব কোনকিছুতেই আমার কোন মনোযোগ নেই আজকে।

আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছি মাধবীলতার নিচে- আঁচল দিয়ে মাথা ঢাকতে ব্যাস্ত তনুর দিকে। সম্ভবত ওকে কখনো কথায় কথায় বলেছিলাম... নীল রঙ আর নীল রঙের শাড়ি হচ্ছে একটা মেয়ের জন্য আমার চোখে সবথেকে প্রিয় পোশাক। ...আজকে তনু নীল রঙের শাড়ি পড়ে এসেছে। তার মানে কি ...? মানে বোঝার আর চেষ্টা করি না। আমার প্রশ্নেরও কোন উত্তর আর দরকার নেই।

চৈত্রের এই বেহিসেবি বৃষ্টিরও কোন অজুহাত খুজতে ইচ্ছে করছে না। তনুকেও হুট করে চিটাগং ছেড়ে ঢাকা আসার কারণ জিজ্ঞেস করতেও আর মন চাইছে না। শুধু ইচ্ছে করছিল... ইশশ সময়টাকে যদি অনন্তকালের জন্য ঠিক এখানেই থামিয়ে রাখা যেত। তনু কি জানে ওকে কি ভয়াবহ সুন্দর লাগছে? ঈর্ষাকাতর মেঘগুলো পর্যন্ত বৃষ্টির চাদর টানার চেষ্টা করছে। ... এপর্যন্ত এসে শফিকুল থেমে যায়।

পৃষ্ঠা উল্টোতে আর ইচ্ছে করে না। আজকে ১৪ই এপ্রিল। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। তারমানে লেখাগুলো খুব বেশি পুরানো না। আর পড়ার দরকারও নেই।

যা খুজছিল তা পাওয়া গেছে। নাম আর ঠিকানা, নূণ্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোল নম্বরটা। পৃষ্ঠাগুলোর মাঝে গুজে রাখা একটা পুরানো লাইব্রেরী স্লিপে সব পাওয়া গেছে। পহেলা বৈশাখের বিকেলটা আজকে বেশ মেঘলা। তাই ঘরের আলো কমে এসেছে।

দরজার ওপাশের সেন্ট্রিকে বললেই বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে যাবে। তারপরও শফিকুলের ইচ্ছে করে না। সকাল থেকে মেজাজ খিচড়ে ছিল পহেলা বৈশাখেও ডিউটি পড়ায়। বউয়ের কাছে মুখ দেখানো যাবে না। বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর, শফিকুল সেন্ট্রিকে ডাকার জন্য হাঁক ছাড়ে, ‘হারুন..’।

মনের আড়স্টতা কাটানোর জন্য প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি চড়ে যায় সম্ভবত গলাটা। সামনে দাড়ানো সেন্ট্রিকে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করে- ‘আর কিছু পাওয়া যায়নি?’ ‘না স্যার। ব্যাগটা কান্ধে ছিল তাই আছে। মুবাইল, মানিব্যাগ সবই পইড়া গ্যাছে মনে হয়’। ‘বাসটা ধরা গেছে..’।

‘নাহ স্যার। লোকজন পয়লা বৈশেখ নিয়েই ব্যাস্ত। সকালে একসিডেনের অনেকক্ষণ পরে আমরা খোজ পাইছি’। ‘হুমম... ঠিকাছে। নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে।

খবর দাও- বডি মর্গে পাঠানো হয়েছে। মানুষজন যে ক্যামনে রাস্তঘাট পার হয়। ...বুঝিনা!’ শেষ লাইনটা নিজেকেই যেন শোনায় শফিকুল। আবার ব্যাস্ত হাতে কাগজ টেনে নেয়। দূর্ঘটনায় অপমৃত্যুর জন্য সাধারণ ডায়েরি করতে হবে প্রথমে।

নাম: মুর্শেদ চৌধুরী বয়স: আনুমানিক তেইশ ...
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।