আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

0: একটি স্বর্গীয় পরিভ্রমণের গল্প (২)

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
0: একটি স্বর্গীয় পরিভ্রমণের গল্প (১): Click This Link শূন্যের শৈশব পবিত্র নবী ঈসা মসীহের (Jesus Christ) জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগের কথা--মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের সুমেরীয়্গণ (Sumerian) স্থানীয়্মান ভিত্তিক সূক্ষ্ম এক সংখ্যাপদ্ধতি গড়ে তোলে। সুমেরীয়দের কাছে সংখ্যা ছিল স্বর্গীয়, সংখ্যার মধ্য দিয়ে তারা প্রকাশ করত তাদের দেব-দেবীদের। তাদের কাছে ৬০ ছিল একটি পরিপূর্ণ সংখ্যা, তাই সকল দেব-দেবীর পিতা আনু'র সংখ্যা ছিল ৬০। অন্যান্য দেব-দেবীরা ছিল আনুর ভগ্নাংশ, যেমন চন্দ্রদেবতা নানা'র সংখ্যা ৩০, আর নানার মেয়ে দেবী ইশতার, যাকে গ্রিকরা আফ্রোদিতি এবং রোমানরা ভেনাস নামে অভিহিত করে, এর সংখ্যা ১৫।

তো সুমেরীয়দের সংখ্যাপদ্ধতি ছিল ৬০-ভিত্তিক, আমাদের মত ১০-ভিত্তিক না। তাই আমরা যদি ১৭ লিখি এর মানে হচ্ছে ১-দশ ৭-এক। কিন্তু সুমেরীয়রা যদি ১৭ লিখত তার মানে হত ১-ষাট ৭-এক বা আমাদের বর্তমান ৬৭-এর সমান। তবে তাদের তো আর আমাদের ১, ২, ৩ এর মত চিহ্ন ছিলনা; তারা মাত্র দুটি চিহ্ন ব্যবহার করত: Y-আকৃতির ১ ও কোণ আকৃতির ১০: খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ সালের দিকে সুমেরীয় সভ্যতার পতন ঘটে উত্তর থেকে আসা এক জাতির কাছে। এদের রাজার নাম হাম্মুরাবি (Hammurabi) আর এরা মহাপ্লাবনের নবী পবিত্র নূহের (Noah) বড় পুত্র সেম'র বংশধর, তাই এদেরকে বলা হ্য় সেমেটিক (Semitic) জাতি।

আবার মূল এলাকার নামানুসারে এদেরকে ব্যাবিলনীয়ও বলা হ্য়। এই ব্যাবিলনীয়রা (Babylonian) সুমেরীয়দের কাছ থেকে সংখ্যাপদ্ধতিসহ নানা জ্ঞান লাভ করে। সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে করতে এরা একসময় দেখল কিছু স্থানে কোন অংক রাখা যায় না। যেমন আমরা ১০৫ লেখি ১, ০, ৫ দিয়ে যার মানে ১-শত, কোন দশ নেই, ৫-এক। তেমনি ব্যাবিলনীয়রা তাদের ১০৫ লিখত এভাবেঃ মাঝখানে ফাঁকা জায়্গা মানে হচ্ছে 'কোন অংক এখানে বসবে না'।

কিন্তু এতে সমস্যা, পরে যারা পড়ত কেউ ভাবত ১০৫, কেউ ১৫। ফলে তারা ফাঁকা জায়গার পরিবর্তে দুটি তীর্যক গদার মত চিহ্ণ ব্যবহার করা শুরু করল। মেসোপটেমিয়ার কীশ নগরে পাওয়া মৃত্তিকালিপি (৭০০ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে দেখা যায় বেল-বান-আপলু (Bel-ban-Aplu) নামে একজন লেখক তিনটি হুকের মাধ্যমে লিখতেন। এভাবেই প্রথম শূন্যের প্রচলন ঘটে। অবশ্য ব্যাবিলনীয় এই শূন্য পরিপূর্ণ শূন্য ছিলনা কারণ এটি কখনো স্বতন্ত্র সংখ্যা হিসেবে ব্যবহৃ্ত হতো না, কিংবা কখনো সংখ্যার ডানে বসত না, মাঝে বসত।

"তাহলে তারা আট এবং আটশ'র মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করত?" জেরীনের চিন্তায় চমৎকৃত হই। কোন প্রসংগে সংখ্যা আলোচনা করছে তা দেখে। ধরো, ফারিনের কাঠপেন্সিলটার দাম যদি বলি আট, আবার এবার ঈদে আম্মু ফারিনকে যে ড্রেসটা দিয়েছেন তার দামও আট, তুমি কি বুঝবে? "বুঝেছি বাবা, আট টাকা আর আটশ টাকা। " মিশরীয়দের হায়ারোগ্লিফ (Hieroglyph) বা পবিত্রলিপিতেও সংখ্যাচিহ্নের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে মিশরীয়দের সংখ্যা ১০-ভিত্তিক হলেও আমাদের মত স্থানীয়মান ভিত্তিক ছিলনা; বড় বড় সংখ্যার জন্য তাদের আলাদা প্রতীক ছিল।

মিশরীয়্গণও সংখ্যাকে মনে করত স্বর্গীয়। তারা মনে করত নীলনদের দেবতা ওসিরিস (Osiris) ও উর্বরতার দেবী আইসিসের (Isis) পুত্র আকাশদেবতা হোরাসের (Horus) চোখ স্বর্গীয় ভগ্নাংশে গঠিত, তাই ভগ্নাংশের প্রতীক হিসেবে তারা বেছে নেয় হোরাসের চোখের বিভিন্ন অংশ। মিশরীয়দের হিসাবরক্ষণে দুই-ঘরা নগদান বইতে ন-ফ-র (nfr)নামে একটি চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়-অনেকের মতে এটিই তাদের শূন্য। গ্রিকরা ছিল মিশরীয়দের ছাত্র; বিভিন্নমাত্রার সংখ্যার জন্য তাদেরও ছিল নানা প্রতীক। অবশ্য ততদিনে ফিনিশীয়দের (Phoenician) বর্ণমালা পেয়ে যায় গ্রিকরা, গড়ে উঠে গ্রিক বর্ণমালা।

সংখ্যাপ্রতীক হিসেবে হায়ারোগ্লিফ চিহ্নের পরিবর্তে গ্রিকরা তাই তাদের বর্ণ ব্যবহার শুরু করে। গ্রিকরা সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেছে বহু, কিন্তু দৈনন্দিন বাস্তবজীবনে এর প্রয়োগ নিয়ে ভাবেনি তেমন। ঋণাত্মক সংখ্যারও যে অস্তিত্ম থাকতে পারে তা তারা বিশ্বাস করত না। তাদের যুক্তি ছিল যা কিছুই না তা আবার কি ধরনের সংখ্যা, আর এর চেয়ে ছোট কী-ই বা হতে পারে! তারা বলত, ex nihilo nihil fit--যা কিছুই না, তা থেকে যা আসে তাও কিছুই না। আর এর ফলে গ্রিকদের শূন্য বলে কোন সংখ্যা ছিলনা।

"আহারে বেচারা গ্রিক!" সহমর্মিতা ঝরে জেরীনের কন্ঠে। তোমরা যখন বড় হবে, তখন দক্ষিণ ইটালির এলিয়া শহরের এক প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকের কথা শুনবে, তার নাম জেনো (Zeno)। কিছু অদ্ভুত, অবাস্তব কথা বলে গিয়েছেন তিনি। যেমন তিনি একবার বলেছিলেন, গ্রিক বীর একিলিস পেছন থেকে দৌঁড়ে কখনো একটি কচ্ছপকে ধরতে পারবে না, তা একিলিস যত জোরেই দৌঁড়াক না কেন। তার এই অদ্ভুত কথাগুলিকে বলা হয় জেনো'র প্যারাডক্স।

"কিন্তু বাবা, বাস্তবে তো এটি সত্যি নয়!" হ্যাঁ, কিন্তু জেনো যেহেতু শূন্য চিনতে পারেন নি, তাই এই বিভ্রান্তিগুলি সৃষ্টি হয়েছিল। [চলবে]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.