আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমা কর হে বাংলাদেশ, তোমার সন্তানেরা আজ মৃত পরে আছে রাস্তায়, পারিনি পতাকা দিয়ে মুরে দিতে!

আজ আমার কোন অস্তিত্ব নাই, হ্য়ত কাল থাকবে, নয়তো কখনোই নয়।

সেনা পরিবারে আমার জন্ম। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি তাদেরকে। এই দূর্যোগে খুব ভয়ে ছিলাম আমার দুই আত্মীয়কে নিয়ে। কি তাদের অবস্থা।

ওরা আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি। আমি অনেক ছোট আমার ভাই বোনদের মাঝে। তাই আমার সাথে আমার ভাগ্নির সম্পর্ক ছিল ভাই বোনের মত। ছোটবেলায় আমরা একসাথে খেলতাম, এক সাথে মজা করতাম। ভাগ্নেটা ছিল আমার বেশ ৬ বছরের ছোট।

ওরা ২ জনই পাশ করার পর ডিফেন্সে কমিশনে ঢুকে। কিছুদিন আগে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। আমার ভাগ্নি মা হতে চলেছিল শুনে। রেগুলার ফোন করে ওর খোজ নিতাম। আর্মি বিডিআর গন্ডগোলের সময় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম ওদের জন্য।

কি অবস্থা..মোবাইলে কানেকশন পাই না, বাসায় ফোন করে কিচ্ছু জানতে পারি না। উল্টো শুনি আমাদের পরিচিত কর্নেল জাহিদের লাশ পাওয়া গেছে ৬ জনের মাঝে। ভয়ে আরও কেপে উঠে বুকটা। কি হবে আমার ভাগ্নে ভাগ্নির, ওরা কি সুস্থ আছে কিনা জানি না। এই দিকে বিডিআর ভায়েরাও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যা করেছে তার প্রতি একমত না হতে পারলেও তাদের দাবীগুলোকে উপেক্ষা করতে পারি না।

তাদের করুন অবস্থার কথা কল্পনা করে কুকড়ে উঠে ভেতরটা। রক্তের সম্পর্ক যে পারিবারিক বন্ধন দিয়ে হয় না শুধু আরেকবার টের পাই। ওরা আমাদের দেশের সূর্যসেনা। একপেটা খেয়ে অতন্দ্র প্রহড়ীর মত দেশকে রক্ষা করে চলেছে ওরা। আমরা নিজেদেরকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে কোনদিন সময় করে দেখা হয়ে উঠেনি বিডিআররা কেমন আছে! বিডিআর মানেই ভাবতাম বর্ডারে কিছু লোক যারা যুদ্ধ করছে, কিংবা ভারতের সেনাদের গুলিতে পারা যাচ্ছে।

চোখ খুলে দেখিনি তাদেরকে! কিন্তু একি হল! কিভাবে রক্তে রন্জিত হল আমাদের এই বাংলা! বহুদিনের অপ্রাপ্তির বেদানাকে জমদুতের রূপে নিয়ে বিডিআর ও আর্মিরা যা করল তাতে আমার সাধের বাংলা লজ্জায় রাংগা হয়ে উঠল। আমার আত্মীয়রা ভাল আছে। অনেক আর্মী অফিসার মারা গেছে। কিন্তু এখনও জানি না ঐ নিরন্ন বিডিআররা কি রকম আছে ? জানি না তাদের অভুক্ত সন্তানগুলোর কালকে কি হবে ? আজকে ওদের ঘরে খাবার কেনার পয়সা আছে কিনা। ভাবি মারা যাওয়া ঐ আর্মি অফিসারগুলোর কথা।

কত স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা ঢুকেছিল সেনাবাহিনীতে। মরলে মরব ভয় নাই, শত্রুকে নিয়ে মরব! এই ছিল তাদের মুলমন্ত্র। তবুও বাংলাকে শত্রুমুক্ত রাখব। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! নিজের লোকই শত্রু হয়ে আজ তাদের মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়িয়েছে। নিজের লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্বপ্নের সমাধি।

ঠিক একই ভাবে শত শত বিডিআরের স্বপ্নও অকালে ঝড়ে গেল অকালেই! আমরা কিছুই করতে পারি নাই। বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল তোমরা, পারিনি বিপদের সময় তোমাদের মাথায় হাত রেখে শান্তনা দিতে। পরিশ্রান্ত মুখের ঘামটা মুছিয়ে দিতে। আজীবন নিয়েই গেলাম তোমাদের কাছ থেকে, দেয়া আর হয়ে উঠল না। নিরুপায় এক বাংগালী আমি, বুকের এক পাজরে আর্মি ভায়ের মৃত দেহ রাখি, অন্য পাজরে রাখি বিডিআর ভায়ের অপ্রকাশিত কষ্টের লাশগুলোকে।

বুক আজ রক্তাত্ব। পারি নি আমাদের সূর্যসন্তানগুলোকে যোগ্য সন্মান দিতে। ক্ষমা কর হে বাংলাদেশ, তোমার সন্তানেরা আজ মৃত পরে আছে রাস্তায়, পারিনি পতাকা দিয়ে মুরে দিতে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.