আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাহেলা হত্যা মামলার রায় হলো আজ; ধন্যবাদ সামহোয়ার ইন,ধন্যবাদ মানবী

.
সাভারের গার্মেন্টস কর্মী রাহেলা আকতার লিমা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো আজ। এতে,রাহেলা হত্যা মামলার মূল আসামী লিটনের মৃত্যুদন্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছে আদালত। বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে ৩ আসামীকে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ কে এম মোস্তফা দেওয়ান এ রায় দেন। পেছনের ঘটনা: ২০০৪ সালের ২৯ শে আগস্ট রাহেলাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গলে ধর্ষণের পর জবাই করে ফেলে রাখা হয়।

৩৩ দিনের মাথায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় রাহেলা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া মৃত্যুকালিন জবান বন্দিতে রাহেলা তার ধর্ষকদের নাম প্রকাশ করে বিচার দাবী করেছিল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৪ আসামীকে অভিযুক্ত করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চার্জগঠন করা হয় ২০০৫ সালের ২৪শে অক্টোবর। রাহেলার স্বামী ও মা এবং জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট, ফরেনসিক পরীক্ষার ডাক্তারসহ আদালতে সাক্ষ্য দেন ২২ জন। যারা খালাস পেলো অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন আসামী দেলোয়ার, কবির ও ফজলু।

উল্লেখ্য,ঘটনার পর থেকেই লিটন পলাতক। দীর্ঘ ৫ বছরেও লিটনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তার মানে দাড়ালো এই যে,প্রমাণের অভাবে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় থাকা আসামীরা বেকসুর খালাস পেলো আর পলাতক আসামী লিটনের মৃত্যুদন্ড হলো। মনে হয় লিটন না পালালে সেও প্রমান করতে পারতো সেও বেকসুর খালাস পাওয়া উচিত। রাহেলা ধর্ষিত হয়নি, এমন করুণ কোন ঘটনা ঘটেনি এবং রাহেলা মারাও যায়নি! এখন যে দন্ড দেয়া হলো তা কার্যকর হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।

প্রথমত সে পলাতক। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যাকে গত ৫ বছরে ধরতে পারেনি পুলিশ তাকে আগামী ৫০ বছরেও ধরতে পারবে এমন ভরসা কোথায়? তাছাড়া, উচ্চ আদালতে আপীল কি করবে না লিটনের পরিবার! সব নিশ্চয়ই ঝুলে থাকবে ? আর সরকার বাদী এই মামলায় অন্য আসামীদের বেকসুর খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে এমন আশা না করাই ভালো। পিপি আজ বলেছেন,তারা পর্যালোচনা করে দেখবেন আপীল করা যায় কিনা। আজ বেকসুর খালাস পেয়ে ৩ আসামী খুশিতে আত্মহারা হয়ে দৌঁড়ে এজলাসের বাইরে চলে আসে ও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে!!! সব মিলিয়ে ভাবটা এমন দায়সারা ফুটলো যে, গরীবের মাইয়া ধর্ষণ কইরা মাইরা ফালাইছে, এমন কি আর ঘটনা! ধন্যবাদ সামহোয়ার ইন, ধন্যবাদ মানবী তবু আমি সামহোয়ার ইন ও মানবীকে ধন্যবাদ দিতে চাই।

আসলে শুধু তাদের ধন্যবাদ দিতেই এই লেখাটা । এই রায়ের পর কিছু লেখার ইচ্ছে হচ্ছিল না। যাই হোক,ধন্যবাদের কারণ, মানবী প্রায় বিস্মৃত এই করুণ ঘটনা বছর দুয়েক আগে এই ব্লগে তুলে ধরেন। ব্লগটির বহু সংখ্যক পাঠক লেখক নৃশংস এই ঘটনা জেনে শিহরিত হন। রাহেলার ঘটনা জানিয়ে মানবীর লেখাটি এর পর অসংখ্য ব্লগার তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে , লেখা লেখি করে, মানব বন্ধন করে ঘটনাটি প্রশাসনের চোখে তুলতে সক্ষম হন।

এই হত্যাকান্ড নিয়ে মানবীর অনুরোধে বিখ্যাত লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালও প্রথম আলোতে কলাম লিখেছেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম যাই হোক কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছে। বিচার চেয়ে সিগনেচার ক্যাম্পেইন হয়েছে । এত স্বাক্ষর করেছেন দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত ১ হাজার ৬৫ জন সচেতন বাংলাদেশী। যে পিটিশনটি পরে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের বরাবরে জমা দেয়া হয়।

মানবীর লেখাটা প্রকাশের পর ও বিভিন্ন স্তরে অনেকের ভুমিকার পর যখন মামলাটা আবার গতি পায় গত বছরের গোড়ার দিকে। তখন দেখা যায় মামলার নথি পত্র, এমন কি আলামতও গায়েব করে দেয়া হয়েছে। ব্লগারদের অনেকের সক্রিয় ভুমিকায় সেসব প্রয়োজনীয় দলিল ইত্যাদি পুনঃপয়দা করতে বাধ্য হয় পুলিশ। রাহেলাকে নিয়ে ব্লগার কৌশিকের অনুবাদে এই লেখায় সব বিষয় চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে মামলাটির এই অবস্থা যখন ছিল, তখন স্পষ্টতঃই বুঝা যায় এমনি এমনি আরো অনেক নারী নির্যাতন মামলার মতো বিচার তালিকার বাইরেই থাকতো এই মামলাটি। লিটন এখন অন্তত পলাতক আছে,এভাবে সামহোয়ার ইনে না উঠলে সে হয়তো এতো দিনে প্রকাশ্যেই ঘুরতো! উল্লেখ্য আজ রায় ঘোষনার দিন, রাহেলার মা বা স্বামী কেউ উপস্থিত ছিল না আদালতে।

তার মা জানতেনই না আজ রায় হবে। আর রাহেলার মৃত্যুর ৬ মাসের মধ্যেই বিয়ে করে সংসারী তার স্বামী চান মিয়া। রেফারেন্স: রাহেলা আকতার লিমা হত্যা মামলা এগিয়ে নিতে একজন অসম্ভব পরিশ্রমী ও ভালো মানুষ লাল দরজা র নীরব কাজে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন আগ্রহী যে কেউ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.