আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুষারের আমেরিকা : আমার ভাললাগা

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

সময়টা ছিল ৯৫ সাল। স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে সেটা ছিল সম্ভবত নভেম্বর মাস। অন্য দিনের মত সেদিনও সকালে ভেংগে যায় আমার ঘুম। স্বীকার করতেই হয় আমার এই সকালটা ছিল আর দশটা সকালের চেয়ে কিছুটা আলাদা। নূতনত্বকে স্পর্শ করার এক সকাল।

যা এত বছর পরেও আমার অনুভূতিতে তা চির অম্লান। টুকটাক কাজ শেষে রেডি হই ক্লাসে যাবার জন্য। ঘরের বার যখন হই তখন দেখি পুরো পৃথিবী সাদা হয়ে আছে তুষারে, এক শুভ্র পৃথিবী, মলিনতা যেন তাকে কখনই স্পর্শ করে নি। যেদিকে তাকাই সেদিকই বরফাবৃত। এক অদ্ভূত অনুভূতি আমাকে ছেয়ে গেল।

বিষ্ময়ই শুধু নয়, বরং সে অনুভূতিতে মিশ্রিত ছিল খানিকটা ভাল লাগাও। দিনের পর দিন মেঘাবৃত আকাশ আমাকে যে বিষন্নতা দিয়েছিল, তা যেন অনেকটাই কেটে গিয়ে একটা স্মিত প্রফুল্লতা মনকে ভরে দিল। আমার অবাক করা সেদিনের অনুভূতি স্ন্যাপশট হয়ে ঠাই করে নিল স্মৃতির কোঠায়। সে স্মৃতির তীব্রতা এখনও অমলিন, এখনও জীবন্ত। সেই আমার বরফ দেখার প্রথম অনুভূতি।

এরপরে আরো শীত এসেছে। প্রতিবারই বরফ পড়েছে। স্কিডিং, বরফে গাড়ী আটকে যাবার ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বরফের রাস্তায় স্কিডিং এ গাড়ী ঘুরে যায় নিজের মত করে। ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রন থাকে না।

ভয়ংকর সে অভিজ্ঞতা জীবনে একবারই যথেষ্ঠ। বরফের চাই এর মাঝখানে গাড়ী নিয়ে বসে অসহায় আমি, অপেক্ষা করছি সাহায্যের জন্য - এরকম কতই তো হল। পশ্চিমের শীতের রাস্তায় তো এসব অতি সাধারন কিছু ঘটনা। প্রতিবারই শীতের শুরু আমাকে আর আমার চেতনাকে নিয়ে যায় অতীতের এক দিনে, যেদিন আমি মহা বিষ্ময় নিয়ে থমকে দাড়িয়েছিলাম বরফাবৃত এক শ্বেত শুভ্র পৃথিবীর সামনে। আবিষ্কার করেছিলাম এক নূতন পৃথিবীকে।

আমার সেদিনকার এক রাশ বিষ্ময় আমাকে চুপি চুপি বলে যায়, এই পৃথিবী আসলে কখনই পুরোনো হয় না। করুনময় তার অজস্রতা দিয়ে যে পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন তার বৈচিত্র এবং নূতনত্ব আসলে কখনই শেষ হবার নয়। শীত নিয়ে আমার কত স্মৃতি। এরকম এক শীতের বিদায়কালে জন্ম হল আমার ছেলের। রাস্তা তখনও বরফ আর কাদায় মাখামাখি।

হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পরে গাড়ী থেকে নামাটা আমার জন্য ছিল ভয়ংকর কঠিন। সেটা ভয়ংকর কষ্টকে মনে করলে আমি এখনও শিউরে উঠি। এদিকে সদ্য মাতৃত্বের বিষন্নতাকে বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই শীত। শীত তখন শুধু আমার শরীরকে শীতল করেনি, সাথে সাথে শীতল করেছিল আমার অনূভূতিকেও। এই সব সত্ত্বেও আমি বরফকে ভালবাসি।

ভালবাসি এই পাতাশূন্য গাছের শীতকে। এবার জানুয়ারী মাস চলে গেল প্রায়। এই সময়টা শীতের চরম অবস্থা। কত উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটছে চারিদিকে। মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ওবামা শপথ নিলেন।

সে কি ভালবাসা! উপচে পড়া মানুষের ভিড়! এই মানুষগুলো এই প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে ভালবাসা জাণাতে এসেছে তাদের প্রিয় মানুষকে। শীতের এই বিরূপতা তাদের দমিয়ে দিতে পারেনি এক বিন্দুও। এবার তো বরফ এখনও পড়ে নি। এটা খুব ব্যতিক্রম। খুব লেট হলে হয় ডিসেম্বর।

কখনও তার পরে বরফ পড়া শুরু হতে দেখি নি। কিন্তু এবার তো এখনও দেখিনি বরফের রেখে যাওয়া চিহ্ন। গাড়ীর সামনের কাচে হালকা বরফের আস্তর থাকে ঠিকই, কিন্তু তাকে বরফ পড়ার অবস্থার সাথে তুলনা করা যায় না। রাস্তা ঘাট একদম ফকফকা। এবার বোধকরি কখনই লবন ছিটানো হয় নি।

আর এবারের শীতেও তাই গাড়ীর এক্সিডেন্ট কিছু কম দেখেছি। আচ্ছা, এমন যদি হয় যে এবার একেবারে বরফ পড়ল না! এমন কি তুষারপাতও নয়! এবারের শীত হল বরফবিহীন শীত!! তুষার বিহীন শীত!! সেক্ষেত্রে সেটাও হবে আমার আরেক স্মরনীয় অনুভূতি। কারন আমেরিকাতে এখনও বরফবিহীন কোন শীত পার করিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.