আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুষারের দেশে এক একটা দিন.......দশম পর্ব

অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা..... আগেরটুকু পড়তে চাইলে - তুষারের দেশে আমার এক একটা দিন - নবম পর্ব ব্যক্তিমানুষ, তুষার মানব আমি খুব আবেগপ্রবন। যেকোন কাজ করি, কেবল ক্ষনিকের ভালো লাগার জন্য, কখোনোবা কোন কিছু না ভেবেই। ভালো-মন্দের বিচারের কাঠ গড়ায় কোন দিন কেউকেই দাড় করাইনা।

চলার পথে, দেখা হবার এক পর্যায়ে পরিচিত মানুষগুলোকে আপন করে নেই, কোন বিবেচনা ছাড়া। ভালো লাগা- ভালোবাসার বাঁধনে জড়াতে কার্পন্য করিনা কোনদিন , কেউকে। সামান্য কিছু ভালো লাগার জন্য করতে পারি অনেক কিছু। কিন্তু জীবন চলার পথে, কোন বাঁকে যদিবা প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমার চলার পথের সঙ্গী, তবে তাকে বিবেচনার কাঠগড়ায় দাড় করাই নিরপেক্ষভাবে । তার বিচারের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নেই, পরের সিদ্ধান্ত।

তখন যদি আকড়ে ধরি, নিজের প্রানটা ছাড়া সব কিছুই তার জন্য । আর ছেড়ে দিলে, তার কোন আনন্দ-দুঃখ আর আমাকে ষ্পর্ষ করেনা, গুরুত্বও দেইনা এক মুহুর্তের জন্যও মানুষটাকে, তাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনার , কাটানো সময়ের। আর তাইতো, কোন সামান্য কিছু, কোন আচরন অথবা সামান্য কোন কথা , সামান্য কষ্ট , ছাড়তে বাধ্য করে অনেক কিছু। মুহুর্তে ছুড়ে ফেলে দিতে পারি অনেক ঘনিষ্ট মানুষকে সারা জীবনের জন্য। কয়েক মুহুর্তের সিদ্ধান্তে, আমি ঝেড়ে ফেলে দেই অনেক দিনের সম্পর্ক, চিরদিনের জন্য।

এ্যলেন থাকার কারনে আপাত দৃষ্টিতে কোন সমস্যই হচ্ছিলনা। কেবল চেষ্টা করতাম, এ্যলেন ফেরার আগেই নিজের সবকাজ গুছিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে আর সকালে এ্যলেন বের হবার পর নিজের ঘর থেকে বের হতে। রাতে যদিবা কোন কারনে বের হতেও হতো, তবে খুব একটা সমস্যা হতোনা। এ্যলেনের দরজা সবসময় ভেরানো থাকতো। তার পরও বাকি বিষয়গুলো সামলাতে খুব অসুবিধায় হয়নি, তা কেবল Joint Familyতে থাকার অভ্যেসের কারনে।

আসলে কোন অসুবিধা হবার জন্য তো উপকরন চাই, এ্যলেন কোন দিক থেকেই সে সুযোগ দিয়নি। প্রতিদিন আনন্দ ঘুম থেকে উঠবার আগেই এ্যলেন চলে যেত বাহিরে। প্রথম কয়েকদিন ভাবতাম ছেলেটা হয়তো খুব সাবধানে চলাফেরা করে তাই কোন শব্দ হয়না। কয়েকদিন এ্যলেনের চলে যাবার সময়টাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে বুঝেছিলাম, এ্যলেন ঘুম থেকে উঠে এক মুহুর্তও বাসায় থাকতোনা। দাত ব্রাস করাতো দুরের কথা।

রাতেও ফিরতো বেশ রাতে। কোনদিনই জেগে থাকা অবস্থায় ওকে কমন স্পেসে আসতে দিখিনি। বিষয়গুলো ভালো লাগলেও নিজের কাছে কেমন যেন অপরাধীর মতো মনে হতো। বিশেষ করে এ্যলেন ফ্রীজে কোন জিনিসও রাখতোনা, রান্না করা তো দুরের কথা, ওয়াসরুম পর্যন্ত ব্যবহার করেনি কোনদিন। তাই কিছুটা অস্বস্থি হবার কারনে, নিজ থেকেই একদিন রাতে এ্যলেনের জন্য একটা স্যন্ডুইচ আর থার্মোসে কফি করে রাখে দিয়ে ছিলাম, কমনস্পেসের ঢোকার মুখটায়, সাথে একটা ছোট্ট নোট।

"কফির আর স্যন্ডুইচের মূল্য ২ডলার, বাকিতে থাকলো, " আমি জানতাম, ধন্যবাদ দেবার ছলে হলেও এ্যলেন সামনে আসবে, তাই এই ব্যবস্থা। ***************** : তোমার ক্লাস কেমন চলছে। কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাতে ভুলে যেওনা। : না, তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমার জন্য তুমি খুব বিরক্ত হচ্ছো।

: আমি তেমন কোন সমস্যা এখোনো বোধ করিনি, তবে তুমি কেন তোমার স্বাভাবিক জীবন এখানে মেনে চলছো না। আমি জানি, আমার বাসাটা তেমন আরামদায়ক না, বিশেষ করে জায়গা ছোট, তার পর আবার আমি মেয়ে। : শোন, আমার এখানে কোন সমস্যাই হচ্ছেনা। বরং আমার জন্য তুমি অসুবিধায় আছো। আমি জানি, আমি কিছু করতে পারবোনা , তবে দয়া করে আমার প্রতি আর সৌজন্য দেখালে আমি বিব্রত বোধ করবো।

: আমি কোন কিছুর কারনে তোমাকে বিব্রত করলে দুঃখিত। বলবে কি , কোন বিষয়টাতে তোমার সমস্যা? : নাহ, তুমি ভুল বুঝছো, আমার কোন কিছুতেই কোন অসুবিধা হচ্ছেনা। কিন্তু তোমার এই কফির-স্যন্ডুইচ, এই সৌজন্যবোধ আমাকে আরো বিব্রত করছে। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি তোমাকে টাকা পরিশোধ করতে চাই। : আচ্ছা, এখন বুঝলাম ।

আমার তো কোন দরকার ছিলনা কফির-স্যন্ডুইচ দেবার। কিন্তু জানার ইচ্ছা ছিল, তুমি কি করে সব চালিয়ে নিচ্ছো? মানে, তুমি সকালেও থাকোনা, রাতেও ফেরো অনেক দেরীতে। তাই বলতে চাচ্ছিলাম, পড়া লেখার ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করোনা। তুমি তোমার মত করে থাকো, এভাবে চলতে থাকলে তোমার পড়ালেখায় ক্ষতি হবে। আর আমি তোমাকে এখানে থাকবার অনুমতি দিয়েছি কেবলই তোমার পড়ালেখার কথা ভেবে।

কিছুটা সময় নিয়ে এ্যলেনকে পরিস্কার করেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম । : তুমি এখানে আছো, পনের দিন। আজো তুমি কোন কিছু রান্না করোনি, কোনদিন গোছল করোনি। কোনদিন কোন খাবার কিনে ফ্রিজে রাখনি। আজ অবদি তুমি আমার ওয়াই-ফাইয়ের পাসওয়ার্ড জানতে চাওনি।

তাহলে তুমি কি করে তোমার পড়ালেখা অথবা সব কিছুই চালিয়ে নিচ্ছো? একটু পরে মনে হলো, প্রশ্নগুলো খুব বেশিই ব্যক্তিগত, এদের দেশে। বোধ হবার পর, অস্বস্থিও হলো। তাই একটু থেমে জানতে চাইলাম, : আসলে, আমি তোমাকে অনুরোধ করছিলাম, তোমার স্বাভাবিক কোন কাজে আমার সমস্যা নেই। আমি সারাক্ষনই মাথায় কাপড় দিয়েই রাখি, তাই তুমি তোমার কাজ করে নিও। আমার যদি কোন অসুবিধা হয়, আমি তোমায় বলবো।

আমার কথা শেষ হবার পর এ্যলেনের উত্তরে আমি কেবল আশ্চর্যই হইনি, বরং ওর প্রতি সম্মানবোধ বেড়ে গিয়েছিল অনেকগুন। সেদিন জেনেছিলাম, এ্যলেন ক্যাম্পাসের জীমে গোছল করতো আর লাইব্রেরী কিংবা কফি শপের ফ্রী ইন্টানেট ব্যবহার করতো। খাওয়া কিনে খেত দোকান থেকে। সকালে কিংবা রাতেও কোন দিন টয়েলেট ব্যবহার করতোনা আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা ভেবে। প্রথমদিন ছেলেটাকে ভালো লেগে ছিল ওর সহজ - সরল মুখটা দেখে।

বিশ্বাস করে নিয়ে ছিলাম কোন কারন ছাড়াই। যেখানে আমার রক্তে মিশে আছে অবিশ্বাসের দানা। যে আমি কোন দিন নিজের দেশের, নিজের ভাষায় কথা বলা মানুষগুলোকে, পাশে হাটতে দেখলে সন্দেহ করতাম, সেই আমি অচেনা একছেলেকে থাকতে দিলাম আমার ছোট্ট দুরুমের বাসাটায়। আর অমায়িক ব্যবহার - আচরনে সংযতভাব থেকে পরের দিন মায়া হয়েছিল বলেই , বলেছিলাম থেকে যেতে। নিজের কাছেও কিছুটা অস্বস্থি হচ্ছিলো অনেক আগপিছ ভেবে।

জানতাম না , ভবিষ্যতে কোন দিন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে কি ভাবে সামাল দেব। কি বলবো, মিথ্যা? আরো বেশি গুটিয়ে নেব সবকিছু থেকে? কোন সদুত্তর না পেয়ে, নিজের মনের ডাককে সায় দিয়ে ছিলাম বরাবরের মতো। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তো ওটাই, সব সময়ের মতো একরোখা ভাবে নিজের মনের সিদ্ধান্তে মেনে নেয়া। সেদিনও মেনে নিয়েছিলাম। আর সব সময়ের মতো সেবারের কাজটাও বুঝি ভুল হয়নি।

এ্যলেনের প্রতি যেন শ্রোদ্ধাটাও জন্মেছিল ওর বিবেচনাবোধ দেখে। ভীনদেশী এই মাটি থেকে উপরে পরা গাছ, যেন আমাকে শিক্ষা দিল অনেক কিছুর। সেদিন এ্যলেনকে বলেছিলাম, আমার যেকোন খাবার সে নিজের মনে করে খেয়ে নিতে পারে আর তার ভালো লাগার জন্য হিসাব রেখে দিতে পারে। হোক সে একটা ডিম কিংবা পাউরুটি। আমার কোন সমস্যা নেই টাকা নিতে।

তবে আগে ভালো ভাবে লেখাপড়া, পরে সব কিছু নিয়ে চিন্তা করা যাবে। আর আমি খুব সহজে কোন কিছুতে বিরক্ত হইনা, কিংবা আমার সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই নিজেকে মানিয়ে নিতেও পারি , যদি মন চায়। আসলেই, কোন দিন ভাবিনি - অচেনা এই ছেলেটার জন্য এতো কিছু মানিয়ে নেবার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। সব কিছু।

থাকা, খাওয়া, চলা-ফেরা। তবে এটাও সত্য, আমার সব কিছুই খুব বেশি আত্ব নির্ভর। প্রথম দিকে এ্যলেনের সব কিছুকে যেমন ভাবে আমার মনটার সিদ্ধান্তে সায় দিয়ে ছিলাম , ঠিক তেমনি পরেও নিজের ইচ্ছার কারনেই সব ছাড় দেয়া। হ্যা, এ্যলেনের কাজকর্ম, আচার-আচরন, চলাফেরা যে অনেকটা প্রভাবিত করেছে তা ঠিক। হয়তো এ্যলেনের জন্যই এত সব, অন্য কেও হলে এতকিছু করার কথা ভাবতেও পারতাম না ।

[ চলবে...........পাঠকের চাহিদার উপর নির্ভর করে, কখোনবা নিজের মনের চাহিদা থেকেই। ] বি.দ্র. ছবি নেট থেকে সংগ্রহকৃত।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.