আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীসভায় দিন বদলের ছোঁয়া কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় প্রতিশোধের বিচ্ছুরণ

নীল রক্ত বাহিত কীট পতঙ্গ যুগে যুগে করিয়াছে ইতিহাস রচনা, আমি তারই ধারাবাহিকতা মাত্র

আকাঙ্খিত জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক উত্তেজনা থিতিয়ে এসেছে তোমধ্যেই, এখন অনাগত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। নতুন সরকারের মন্ত্রীসভা কাজী নজরুল ইসলামের যৌবনের গানকে মনে করিয়ে দেয়। প্রায় সব মুখই শিক্ষিত, স্মার্ট, নতুন এবং তার মধ্যে আবার তারুণ্যের আধিক্য। এই প্রণোচ্ছল, উদ্দীপনাময় মুখগুলো দেশের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে; আম জনতার একজন হিসেবে সে আশায় আমিও আশান্বিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর নিজের জন্য যে মন্ত্রীসভাটি বেছে নিলেন, সামগ্রিকভাবে মানুষের আশা এবং আকাঙ্খার সাথে সেটি কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তা ভেবে দেখার বিষয়।

অসাংবিধানিক সরকারের মাইনাস টু ফর্মুলার প্রণোদনায় দেশের প্রধান দুটি দলের মধ্যে গজিয়ে ওঠা সংস্কারের পক্ষে যারা সে সময় হাত উঁচু করেছিলেন, খালি চোখে তাদেরকে সুবিধাবাদির বাইরে কোন কিছুই ভাবা যাচ্ছিল না। দলে সংস্কার হতেই পারে এবং গণতান্ত্রিক দলে কোন সদস্যের দলের যে কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকতেও পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে নিদৃষ্ট দলীয় ফোরামে, নিদৃষ্ট পদ্ধতিতে। সংস্কারপন্থীরা সে ধারণার বাত্যয় ঘটিয়ে দল যখন চরম সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে, বিশেষ করে দু নেত্রী যখন রাজনৈতিক চিপায় খাবি খাচ্ছে সেসময় সংস্কার আন্দোলন শুরু করায় খুব সহজেই নিজেদের সুবিধাবাদী চরিত্র উম্মোচিত করেছেন। এটা সত্য।

তবুও এর পেছনে কথা থেকে যায়। তা হলো, আমাদের দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল দুটির অভ্যন্তরীন গনতান্ত্রিক পরিবেশ কতটুকু উদার? দলের ভেতর থেকে এখানে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ কি টিকে থাকতে পেরেছে? কাদের সিদ্দিকী বা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ইতিহাস আমাদেরকে সে কথা বলেনা। দলীয় ফেটিশ এর বিপক্ষে কথা বলায় তাঁরা উভয়েই এখন রাজনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে গেছেন। এরকম উদাহরণ আরো আছে। আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রীসভাও সেই রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে মাত্র।

সংস্কারবাদীদের ক্ষেত্রে দু'দলের প্রধান একই পদক্ষেপ নিলেও শেখ হাসিনা রাজনৈতিক চতুরতায় এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন যোজন যোজন। আবেগের কাছে পরাজিত এবং চারপাশে থাকা চাটুকার শ্রেণীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাসে খালেদা জিয়া যেখানে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে মান্নান ভূঁইয়াসহ অন্যান্য উচ্চমাত্রার নেতাকে বহিষ্কার করে ফেললেন সেখানে শেখ হাসিনা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়ার স্বার্থে তাঁর দলের সংস্কারপন্থীদের নিজের সাথেই রাখলেন এবং তাদের ভেতরে আস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেন। এই আপাত ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ নির্বাচন পার করল অভূতপূর্ব ফলাফল নিয়ে, তারপরেই শেখ হাসিনা তাদেরকে জানিয়ে দিলেন, আমি আসলে কিছুই ভুলিনি। একই সাথে শেখ হাসিনা উত্তরকালে শেখ পরিবার থেকে যে নেতৃত্ব আওয়ামীলীগের হাল ধরবে, তাঁর আনুগত্যের উপর হুমকি আসতে পারে এরকম বয়জ্যোষ্ঠদেরও বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রীসভার বাইরে রেখে দিলেন। দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় শক্তির ভরকেন্দ্রে না থাকতে পারা এইসব উচ্চশক্তিমানসম্পন্ন নেতৃবৃন্দ অতিদ্রুতই দৃশ্যপটের বাইরে চলে যাবেন এবং আবির্ভাব ঘটবে এমন এক ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রেনীর যারা ভয়ে বা ভালবাসায় নিরংকুশভাবে শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্যশীল।

তা না হয়েও উপায় নেই। নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের মধ্য দিয়েই তাদের কাছে এই বার্তা পেঁৗছে দেয়া হয়েছে যে আনুগত্যে ঘাটতির পরিণাম কত ভয়াবহ! শেখ হাসিনা এমন একটি মন্ত্রীসভা বানিয়েছেন যারা শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুনগান এবং তার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই করবে। দেশের চেয়ে দলীয় প্রধানের প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্যশীল এই মন্ত্রীসভা শেষ বিচারে সম্ভাবনার পরিবর্তে শুধু আতংকই ছড়াচ্ছে। মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.