আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রোহের আগুনে উত্তাল চট্টগ্রাম

আমি যা বলতে চাই... কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বর। সেখানে সমবেত সব শ্রেণী পেশার মানুষের কণ্ঠে একটাই দাবি ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই। ’ ‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগ’র ডাকে এ কর্মসূচীতে বিভিন্ন শ্রেণির, বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়ো হয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জনতার ভিড়। নির্দিষ্ট সংগঠনের গন্ডি ছাড়িয়ে এ আন্দোলন পরিণত হয়েছে মুক্তির গণসংগ্রামে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই মোমবাতি ও মশাল প্রজ্বলন করে সমাবেশস্থল আলোকিত করে তোলে উপস্থিত তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যায় সমাবেশ ঘুরে দেখা যায়, সব বয়সের মানুষ এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকের সঙ্গে মিছিল নিয়ে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। মা কোলে নিয়ে এসেছেন শিশুকে। অফিস ফেরত কর্মজীবী, গৃহিনী, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, মসজিদের ইমাম আর বৌদ্ধ ভিক্ষু এসেছেন প্রাণের দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করতে।

জনতার দৃপ্ত শপথ ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই। ’ এর আগে বিকেলে সমাবেশস্থল উপস্থিত হয়ে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য হাসিনা মান্নান প্রমুখ। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে। তারা তা ধারণ করে।

তারাই মুক্তিযুদ্ধের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী। ’ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তরুণ প্রজন্ম আজ জেগেছে। ’ সাংসদ হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের মা- বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। এসব ঘাতকদের মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় ঠাঁই নেই।

’ এদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতিতে সবচেয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বন্ধু-বান্ধবসহ দল বেঁধে প্রেসক্লাব চত্ত্বরের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া সমাবেশের আগে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গণসঙ্গীত ও স্বাধীনতার গান পরিবেশন করেন। আর তরুণ প্রজন্মের সৈনিকরা যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-আলবদরদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করে তুলেছে প্রেসক্লাব চত্ত্বর ও তার আশপাশ এলাকা। জনতার উপস্থিতি ছড়িয়ে যায় জামালখান থেকে চেরাগী পাহাড় পর্যন্ত।

‘আর কোনো দাবি নয়, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’ এ শ্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। এ দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সমবেত হচ্ছে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। তারুণ্যের দীপ্ত কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দাবি আদায়ের সংগ্রাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচীতে প্রতিবাদী শ্লোগান সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ব্যাঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিকী ফাঁসি দেয়া হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গণ মঞ্চ এ কর্মসূচীর আয়োজন করে। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে মিলিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রাণের দাবিতে যোগ দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা এসময় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। একাত্তরের ঘাতক-রাজাকার-আলবদর নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আলী আশরাফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর চৌধুরী, সদস্য কুন্তল বড়ুয়া, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর এ কে এম জিয়াউর রহমান প্রমুখ। চট্টগ্রাম বিশ্বিবিদ্যায় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রফেডারেশনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠান উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।