আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন হার না মানা মানুষের কথা - ৬

-

আগের পর্ব গুলির জন্যঃ ১ - ৫ Click This Link সুনীলের লেখনীতে-২ তারিখঃ অস্পষ্ট কি জানি ! আজীব ব্যাপার! দেখলাম 'সময়' ব্যাটা খুব ফাজিল। একে তো নিজে গড়িয়ে গড়িয়ে ফুরিয়ে যাচ্ছে; আবার আমাদের আপার চেম্বার থেকে অনেক উপযুক্ত শিক্ষা বেমালুম গায়েব করে দেয় । না হলে ক্লাস সেভেন এর ট্যালেণ্ট শো'র কথা শুনেই আমার ভিতরটায় অমন আকুলিবিকুলি করে উঠবে কেন? যেমন ভাবা - তেমন কাজ। লেগে গেলাম নিজের ট্যালেন্ট প্রদর্শনের নেশায়। অনুষ্ঠানের নাম 'বালার্ক' ।

আমি একটি গল্প বললাম। এর মাঝে কাহিনীর বিন্যাসে কোথাও ঘোড়ার ছুটে চলা, হেলিকপ্টার, দরজা খোলার শব্দ ইত্যাদি ইত্যাদি...। আমি 'হরবোলা' করে মোটামুটি জমায় ফেললাম। এরপর আমায় আর পায় কে ! অনুষ্ঠান হলেই ডাক পড়বে এই রকম সুখী সুখী ভাব নিয়ে আমার দিন কাটতে লাগলো। আর ঐ দিকে ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় গড়িয়ে যায় ব্যাটা 'সময়'।

মনে পড়ছে ক্লাস এইটের কাল্‌চারাল ইভ্‌নিং এর কথা। সেবার আমি নাম লেখালাম উপস্থাপক হিসেবে। এই ভাল । বেশ একটা একটা অর্গানাইজার গোছের ভাব এসে গেছে। দলীয় সঙ্গীত ঠিক হলো - প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ।

( সেই আমলে এই গানটি বাজারে চালু ছিল। ) বাংলার স্যার অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন এই গানটার শেষ পর্যায়ে একটু উঁচু স্কেলে হামিং দেয়া হবে -বাংলাদেশ-বাংলাদেশ -বাংলাদেশ। আর বাকিরা গানের শেষাংশ গাইতে থাকবে। নিঃসন্দেহে উত্তম পরিকল্পনা।

কিন্তু সমস্যা হলো সাইজ মত ঐ স্কেলের কোন গায়ক পাওয়া যাচ্ছে না। এ রকম হতাশাপূর্ণ এক পরিস্থিতিতে আমার উপস্থাপনার স্ক্রীপ্ট নিয়ে আমি গেলাম স্যারের কাছে। স্যারের হঠাৎ কি মনে হলো জানি না- উনি আমাকে একটা চান্স দিতে চাইলেন। বললেন চেষ্ঠা করতে। মন পুরোপুরি সায় না দিলেও হাল্কা কনফিউশন নিয়ে ঐ জায়গাটুকু করলাম।

স্যার বললেন- এইতো ! (মানে এতক্ষন কোথায় ছিলে ছুপা রুস্তম !!) এই কথা শুনে আমি বহুত মোরাল পেয়ে গেলাম। একেবারে চোখ বুজে চরম আবেগ নিয়ে গাইলাম আবার - বাংলাদেশ-বাংলাদেশ -বাংলাদেশ। স্যার এই বার সন্তুষ্ট হলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন - 'উত্তম রূপে অনুশীলন করো। উপস্থাপনা অন্য একজন করুক; তুমি বরং এই গানটাই করো।

' মনে কিঞ্চিৎ চোট পেলাম। যাইহোক উপস্থাপকের পদ খুইয়ে আমি গায়ক হিসেবে অভিষেক পাওয়ার জন্য একান্ত মনে নিবিষ্ট হলাম। আসলো অভিষেক দিবস। আমাদের অডিটরিয়াম হাউসফুল। (পরে শিখেছি - এর মধ্যেও গ্যাপ মারা কিছু পার্টি রয়ে যায় !) মঞ্চের মাঝখানে টেবিলে এক পাশে তবলা আর মাঝে হারমোনিয়াম।

আমরা সব মিলিয়ে ৭/৮ জন হবো। তিনটি মাউথপিসের ডিস্পোজাল হচ্ছে- একটি হারমোনিয়ামে- একটি তবলায়- আর অপরটি গায়কদের মাঝে। আমি 'হাই পিচ ভোকাল' বলে আমার অবস্থান মাঝে । যার অর্থ হচ্ছে- মাঝের মাউথ পিসটি ঠিক আমার সামনে। বেশ।

শুরু হলো আমাদের দলীয় সংগীত। কথায় বলে না - যখন ভাগ্যের চাকা ফাইস্যা যায় - তখন তা কোন দাড়ি-কমা'র ধার ধারে না। আমার ও বুঝি সেই হাল হলো ! গানের অন্তরা শেষ হতে না হতেই (পরে জেনেছি) কোন এক অজানা কারনে (হয়তো আমার অভিষেক ভাগ্য এরূপই হওয়ার কথা ছিল !) হারমোনিয়াম আর তবলার মাইক্রোফোন দুটি এক্কারে বোবা হয়ে গেল। আমরা যারা গান গাচ্ছিলাম- তাদের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব ছিল না। আর আমার তো প্রশ্নই ওঠে না।

কেননা আমি চরম আবেগে চোখ বন্ধ করে গাচ্ছিলাম। । ফলে ঘটনাটা হলো এরকম- পুরা অডিটরিয়ামে সুনশান নীরবতা। হারমোনিয়াম বা তবলার কোন বালাই নেই- মাঝ থেকে শোনা যচ্ছে শুধু একজন উঁচু স্কেলে গেয়ে যাচ্ছে - বাংলাদেশ-বাংলাদেশ -বাংলাদেশ। এই হলো আমার গায়ক হওয়ার অভিষেক দিবসের কথা।

'মিস্টার বাংলাদেশ' খেতাবটা কানের পাশ দিয়ে শাঁই করে কেটে বেরিয়ে যেয়ে আমার জান ছুটিয়েছে । (চলবে...)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.