আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরাঞ্চলের ৭২ আসনে মহাজোটের পক্ষে বিপুল গণজোয়ার



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, রাজশাহী রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ৭২টি আসনেই এবারের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থিরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিএনপি-জামায়াতের ভিআইপি প্রার্থিরা চরম ইমেজ সংকটে। জোট সরকারের দুর্নীতি, দলীয়করণ, লুটপাট, দুঃশাসন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু-আদিবাসী নির্যাতন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধীসহ নানান ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতিদের এবার ভরাডুবি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির সাথে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে মনোমালিন্য আর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থি মনোনয়নে তৃণমূলের সুপারিশ নিয়ে নানান প্রশ্ন আর ােভ-বিােভ থাকার পরও মাঠ পর্যায়ে বিপুল গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে মহাজোট প্রার্থিদের প। ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে একটা পরিবর্তনের মানসিকতা ল্য করা যাচ্ছে।

উত্তরের পঞ্চগড় থেকে রাজশাহী পর্যন্ত সরজমিন অনুসন্ধান আর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ৭২টি আসনের মধ্যে বিএনপি ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ১৪টি, আওয়ামী লীগ ৯টি এবং জামায়াত ৬টি আসনে জিতেছিল। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকায় ফলাফল ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে মহাজোটের পে বিপুল গণ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, জঙ্গিবাদ, দ্রব্যমূল্য, যুদ্ধাপরাধ, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ-পরিবেশ রার ল্েয গড়ে ওঠা জনআন্দোলনসহ নানান ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের তারকা প্রার্থিরা এবার বেহাল অবস্থার মধ্যে ছিলেন।

তাছাড়া যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের বিষয়ে এবারে সারাদেশের মানুষ সোচ্চার থাকায় জামায়াতের প্রার্থিরাও অনেকটা কোনঠাসা। সেই কারণে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ভরাডুবি ঘটতে পারে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে। রাজশাহীতে এবার একটি নতুন আসন যুক্ত হওয়ায় আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬টি। গত নির্বাচনে এখানে ৫টি আসনেই বিএনপি দলীয় প্রার্থিরা বিজয়ী হন। এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।

রাজশাহী সদর আসনে বিএনপির তারকা প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে লড়ছেন। বাদশার পে ইতোমধ্যে ব্যাপক জনস্রোত ল্য করা গেছে। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ আর দলীয়করণ ইস্যুতেই মিনুর জনপ্রিয়তায় ব্যাপকভাবে ধ্বস নেমেছে। রাজশাহী-১ আসনে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদদানের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার ৩১ বছরের কারাদন্ড হয়।

তিনি এখনও পলাতক। এই আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন তারই সহোদর সাবেক আইজিপি এনামুল হক। ভাইয়ের কর্মকান্ডের কারণে এনামুল হক ভোটারদের কাছে চরম বিবৃতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণাকালে। মহাজোট আশা করছে, এবার এই আসনে তারা বিএনপির দুর্গ ভেঙ্গে ফেলতে সম হবে। পবা ও মোহনপুর নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট কবির হোসেন ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

চারদলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের মহানগর আমির আতাউর রহমানও নির্বাচন করছেন দাঁড়িপাল্লা নিয়ে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নিরস প্রার্থী মেরাজ মোল্লা। জঙ্গি ও সর্বহারা অধ্যুষিত রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা সরদার আমজাদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগের তথা মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াত ঘরানার কোটিপতি ব্যবসায়ী-শিল্পপতি এনামুল হক। আর বিএনপি তথা চারদলের প্রার্থী হলেন আবদুল গফুর।

এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা। রাজশাহী-৫ আসনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুককে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পরও তা বাতিল করার ঘটনায় মাঠ লেবেলে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ােভের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তাজুল ফারুক মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে না নামায় দলীয় নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হয়ে কাজ করছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ এর প। ে এই আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী নজরুল ইসলাম তুলনামূলক বিচারে দুর্বল এবং তার নির্বাচনী কৌশলগত ত্র“টির কারণে মহাজোট প্রার্থীর দিকেই ভোটারদের পাল্লা ভারী বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। আর রাজশাহী-৬ আসনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি শাহরিয়ার আলম এর পইে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।

এখানে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা রায়হানুল হক মনোনয়ন না পেলে স্বতন্বত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে শাহরিয়ার আলম সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যান। নওগাঁ-৩ আসনে চারদলীয় জোটের তারকা প্রার্থী ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিক তার অতীত কর্মকান্ডের কারণে বিতর্কিত হজয়ে পড়েছেন। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছেন মহাজোট প্রার্থী মানবাধিকার বক্তিত্ব আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন চৌধুরী। তার পে এবার বদলগাছী-মহাদেবপুরে বিপুল জনসমর্থন ল্য করা গেছে ভোটারদের মাঝে।

জাতীয় সংসদের এক নম্বর আসন তথা পঞ্চগড়-১ আসনে খোদ স্পীকার ব্যারিষ্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মহাজোট প্রার্থি মোজাহারুল হক প্রধানের জনপ্রিয়তায়। এই আসনে মোট ৫ জন প্রার্থি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। স্থানীয় ভোটারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই আসনে স্পীকার বনাম মোজাহারুলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। সর্বশেষ নির্বাচনে (২০০১) এখানে বিজয়ী প্রার্থি ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন পান ৮১ হাজার ৭০২ ভোট। ৭০ হাজার ১৬৪ ভোট পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নূরুল ইসলাম।

আর জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থি শফিউল আলম প্রধান পেয়েছিলেন ৫০ হাজার ৮২৯ ভোট। পঞ্চগড়-২ আসনে চারদলীয় জোট প্রার্থি বিএনপির মোজাহার হোসেন ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পর পর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার আছেন বেকায়দায়। এই আসনে বিশিষ্ট আইনজীবী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নূরুল ইসলাম সুজনের নৌকা প্রতিকের পে বিপুল জনসমর্থন ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে পারে ধানের শীষের সৌধ। এখানে সিপিবির প্রার্থি আশরাফুল আলমসহ মোট চারজন প্রার্থি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ২০০১ এর নির্বাচনে মোজাহার পান ৮৩ হাজার ৬৫৩ ভোট, আর নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামী লীগের নূরুল ইসলাম সুজন ৭৯ হাজার ৬০২ ভোট পেয়েছিলেন।

বিএনপির তারকা প্রার্থী জনপ্রিয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও ১ আসনে সর্বশেষ নির্বাচনে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন পান ৯৬ হাজার ৯৪৮ ভোট। আর জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে আলহাজ্ব নূরে আলম চৌধুরী ১৬ হাজার ৬৪৭ ভোট পেয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনজন প্রার্থি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপির ফখরুল ইসলামের তুলনায় আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন প্রচার-প্রচারণা আর জনসমর্থনের দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছেন।

এবার রমেশ চন্দ্র সেনের বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়। অন্যদিকে এরশাদপ্রীতির কারণে রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের সবক’টি আসনে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির ভোট এক হয়ে গেলে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রার্থীরা মহাজোটের ভোটের স্রোতে ভেসে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারী কর্মকর্তা। বগুড়া, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাটে বিএনপির যে দুর্গ সেই দুর্গেও এবার মহাজোট প্রার্থীরা হানা দিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন আদায় করতে সম হয়েছেন বলে সেখানকার সূত্রগুলো জানায়। সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের বিশ্লেষণ হলো : অতীতের সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে আজকের (২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। #


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.