আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরাক যুদ্ধবিরতির ৫ বছরের প্রাক্কালে



ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি বলেছেন ইরাকের নিরাপত্তা ও পুনর্গঠনের জন্য দখলদার সেনাদের এখানে থাকবার কোনো প্রয়োজন নেই, ইরাক নিজের নিরাপত্তা নিজেই করতে প্রস্তুত। অবশ্য ইরাক যে নিজের নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিজেই দেখভাল করবার ক্ষমতা রাখে- এই দাবিটা ইরাক করছে ২০০৫ সাল থেকেই, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাককে স্থিতিশীল এবং ইরাকের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে মানসম্মত মনে করছে না। সুতরাং তারা ইরাকী পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। এইসব প্রশিক্ষণার্থীদের একটা অংশ এসেছে অর্থের কারণে। সমস্ত ইরাকের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর।

উচ্চশিক্ষিত এবং যোগ্য মানুষেরা যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইরাক ছেলে পালিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। একটা সময়ে ইরাকে ১৪০ জনের বেশী পিএইচডি ডিগ্রীধারী ফার্মেসী গবেষক থাকলেও এখন ইরাকে এমন প্রশিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত গবেষকের সংখ্যা মাত্র ৬ জন। এই যুদ্ধের ভেতরেও মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াবার স্বপ্ দেখেছে, ইরাকের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন দেখছে ইরাকের জনগণ। ইরাকের একজন নির্বাচিত সাংসদের ধারণা ইরাকের শাসন ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সমাজকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন হয়তো ছিলো, হয়তো গণতন্ত্রায়নের প্রয়োজ ছইলো ইরাকের, দীর্ঘ মেয়াদের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের প্রয়োজন হয়তো ছিলো ইরাকের তবে সেই পরিবর্তনের দাবি উঠে আসা উচিত ছিলো ইরাকের জনগণের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে জোর করে পরিবর্তন চাপিয়ে দিয়ে কোনো পরিবর্তন আনা যায় না প্রচলিত ব্যবস্থায়, বরং এটা মানুষের জীবন ও জীবিকাকে আরও বেশী বিপন্ন করে দেয়। এই যুদ্ধের অন্যতম সমর্থক দুই রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক নেতা টনি ব্লেয়ার আমেরিকার নীতি ও কর্মকান্ডের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন দিলেও যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর এই যু্দ্ধে অংশগ্রহনের কোনো আগ্রহই ছিলো না, তাই তারা ৪০ হাজার সৈন্য প্রেরণ করলেও এখন বসরার নিরাপত্তা রক্ষায় সীমিত ব্রিটিশ সৈন্যদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই ব্যারাকে অবস্থান করতে হয়। তারা সম্পূর্ণ বসরার নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ। তবে টনি ব্লেয়ার কিংবা বুশ তাদের কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত নন, তাদের ধারণা এটা সঠিক একটা পদক্ষেপ ছিলো, এমন কি যুক্তরাজ্যের সরকারের মুখপত্রও মনেক করেন এটা সঠিক কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো কি না এটা বলবার সময় এখনও আসে নি। সাময়িক অবস্থা দর্শনে মনে হচ্ছে ইরাকে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো, কারণ সেখানের অমানবিক পরিস্থিতি, কিন্তু যদি পরিস্থিতি বদলে যায় এবং ইরাকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরে আসে তবে হয়তো ভিন্ন বিবেচনার সুযোগ থাকবে, তখন এই যুদ্ধের যৌক্তিকতা কিংবা ঔচিত্য অনৈচিত্য নিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে তিনি অস্বীকার করেছেন তেলের প্রয়োজনেই এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য বর্তমানে ইরাকের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে চায়, তারা শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়, ইরাকের প্রযুক্ত খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তারা। তারা এ কাজের জন্য যথাযথ কারিগরী সমর্থন দিতে আগ্রহী। ডিক চেনির বক্তব্য আগামী ৩০ বছরে প্রমাণিত হবে ইরাক আক্রমন করা একটা সময়োপযোগী কাজ হয়েছে। তবে ইরাকের পুনর্গঠন কি সমাপ্ত হয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পুননির্মাণের কাজে বরাদ্দ হয়েছে প্রচুর অর্থ, তবে এই অর্থ মূলত স্থাপনা নির্মান এবং নির্মিত স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষার খাতেই ব্যয় হয়েছে, সুতরাং বাগদাদে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেখানে বিদ্যুতের যোগান নেই।

হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, চিকিৎসা উপকরণ নেই, ধ্বসে পড়া কিংবা বিধ্বস্ত ভবনে চিকিৎসা চলছে, এবং এই পরিস্থিতি বদলের কোনো সম্ভবনা নেই। সুতরাং সাধারণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ইরাকের সাধারণ মানুষ। একটা যুদ্ধের দগদগে ক্ষত বয়ে নিয়ে চলছে ইরাক, এই ক্ষতের নিরাপময় হয়তো হবে সময়ের সাথে কিন্তু এই ক্ষতি ইরাকের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে এমন কি ইরাককে ক্ষতবিক্ষত ও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। রপ্তানী করা তেলের পরিশোধিত মূল্যের ভাগবাটোয়ারা যেখানে অন্যতম রাজনৈতিক দরকষাকষির মাধ্যম সেখানে যৌথ সরকার গঠন করে কি অখন্ডতা রক্ষা করা যাবে? অক্সফোর্ডের ইতিহাসের প্রফেসরের বক্তব্য ইতিহাস থেকে যুক্তরাজ্য শিক্ষা গ্রহন করে নি। ইরাক সব সময়ই স্বাধীনচেতা মানুষদের ভুখন্ড।

আর যারা বলছে ইরাকে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো, তারা হয় প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অনবগত কিংবা তারা বুঝে শুনে মিথ্যা বলছে। বারাক ওবামা সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তবে নির্বাচিত সাংসদের বক্তব্য যদি ইরাককে বর্তমানের অবস্থায় রেখেই সেনা প্রত্যাহার করা হয় তবে সেটা হবে ইরাকের বৃহত্তর জনগণের সাথে প্রবঞ্চনা। তারা পুনর্গঠিত ইরাক চাইছেন, যুদ্ধপূর্ব ইরাককেই তারা মানদন্ড ধরেছেন, একনায়কতান্ত্রিক ইরাকের অর্থনৈতিক ও নাগরিক সেবাগুলো ফেরত চাইছেন তারা। প্রশ্ন হলো ৫ বছর পুনর্গঠনের পরেও যদি মাত্র ৫০ দিনের যুদ্ধের ক্ষত মেরামত করা সম্ভব না হয়, তবে গণবিধ্বংসি অস্ত্র নির্মুলে চালানো আগ্রাসনের বিধ্বংসী চরিত্র কেমন ছিলো?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.