আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বধ্যভূমির অভিজ্ঞতা: অমি রহমান পিয়াল



আইরিন সুলতানার "১৯৭১ : বীরাঙ্গনা অধ্যায়" পোষ্টটা স্টিকি করার আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সাড়া দেননি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিবেলায় যে কারও একটি দলিল ভিত্তিক পোষ্ট আমি কপি-পেস্ট করে পোষ্ট করবো। হয়তো ব্লগ কর্তৃপক্ষ আমাকে এর শাস্তি দিবেন। যদি কেউ আমার সিদ্ধান্তটিকে মেনে না নেন তাহলে বলবেন; আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো।

অনুমতি না নেয়ার জন্য লেখকের কাছে ক্ষমা প্রার্থী -------------------------------------------------------------------------------- [ মোহাম্মদপুর ফিজিকাল ট্রেনিং সেন্টার ছিলো আল-বদরদের হেড কোয়ার্টার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবিদের ধরে এখানেই আনা হতো। অমানুষিক অত্যাচার চলত তাদের ওপর। আর তারপর রায়ের বাজর ও মীরপুরের শিয়ালবাড়িসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে গুলি করে মারা হতো। স্বাধীনতার পর মিলেছে তাদের বিকৃত লাশ।

ঢাকার গ্রিনল্যান্ড মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চিফ একাউনটেন্ট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ভাগ্যবান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আল-বদরদের হাত থেকে পালাতে পেরেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় ছাপা হয়েছিলো ‘বধ্যভূমির অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে তার সেই কাহিনী। দীর্ঘ বলে সংক্ষেপে দুই পর্বে দেয়া হলো ] ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টা। শান্তিবাগে আমার বাসায় শুয়েছিলাম।

হঠাত বাইরে ভারি পায়ের শব্দ পেলাম। বেড়ার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন রাইফেলধারী লোক আসছে। রাস্তার দরজায় এসে তারা জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগল। কর্কশ স্বরে তারা বলছিল- ‘ঘরে কে আছো, দরজা খোলো। ’ তারপর নানা কথাবার্তার পর তারা আমাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল।

বাসার পাশের একটি মেসের একটি ছেলেকেও তারা ধরে নিয়ে এল। আমাদের তারা মালিবাগ মোড়ে দাঁড় করানো একটি বাসে নিয়ে তুলল। বাসে তুলেই তারা আমার গায়ের জামা খুলে ফেলল এবং একটি কাপড় দিয়ে চোখ শক্ত করে কষে বেঁধে ফেলল। এছাড়া হাত দুটো নিয়েও পেছন দিকে শক্ত করে বেঁধে ফেলল। তারপর বাস ছেড়ে দিলো।

পথে আরো কয়েক জায়গায় তারা বাসটি থামালো। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমরা কোথায় যাচ্ছি। অনুমানে মনে হলো মোহাম্মদপুর, সেকেন্ড ক্যাপিটাল (শেরে বাংলা নগর) কিংবা ক্যান্টনম্যান্টের দিকে যাচ্ছে। এমনিভাবে ঘণ্টাখানেক চলার পর বাস এক জায়গায় থামল। তারপর আমাদের হাত ধরে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।

ততক্ষণে কথাবার্তায় আমি টের পেয়েছি আমি বদর বাহিনীর হাতে পড়েছি। খানিকক্ষণ পর আমাকে ও আরো একজনকে উপরতলায় নিয়ে গেল। দরজা খুলে একটি রুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। হুমড়ি খেয়ে পড়লাম মেঝের উপর। ঠিক পাকা মেঝের উপর নয়, কিছু লোকের উপর।

অনেক কষ্টে সোজা হয়ে বসলাম। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কক্ষের আর সব লোকেরো আমার মতো হাত-চোখ বাধা কিনা। শুধু বুঝতে পারছিলাম ঘরে আমার মতো আরো লোক আছে। এদিকে কষে বাঁধার জন্য আমার চোখ ও কানে দারুণ যন্ত্রনা হচ্ছে। আমি সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে শুরু করেছি।

মাথায় শুধু একটাই চিন্তা- কি করে এই বর্বর পশুদের হাত থেকে বাঁচতে পারি। আমি কি সত্যি বাঁচতে পারব? আল্লাহ আল্লাহ বলে আমি উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলাম। ভাবছিলাম বদর বাহিনীর লোকরা তো শুনেছি মাদ্রাসা ও ইসলামী শিক্ষা লাইনের ছেলে। আল্লাহর আহাজারিতে যদি বদর বাহিনীর লোকদের দয়া হয়। যদি দয়াপরবশ হয়ে চোখের ও হাতের বাঁধন একটু খুলে দেয়, নিদেনপক্ষে একটু ঢিলে করে দেয়।

অনেকক্ষণ কাঁদার পর কে যেন আমার হাতের বাঁধন খুলে দিল। ফিসফিস করে বলল- সাবধান। হাত খোলা দেখলে আপনাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। ’ কচি কণ্ঠ। বুঝলাম অল্পবয়সী কোনো ছেলে এবং সে বদর বাহিনীর কেউ নয়।

আমি তাড়াতাড়ি চোখের বাঁধন ঢিলে করে দিলাম। বাঁধন এমনভাবে রাখলাম, যাতে- আবছা আবছা দেখা যায়। এর মধ্যেই দেখে নিয়েছি, যে আমার হাতের বাঁধন খুলে দিল আট-নয় বছর বয়সী একটি ছেলে। তার দুহাতের চামড়া কাটা। হাত ফোলা।

সারা কক্ষে শুধু রক্ত আর রক্ত। এখন সেখানে ইতস্ততভাবে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তে রঞ্জিত জামা ও গেঞ্জি। আমার মতো প্রত্যেকের গায়েই গেঞ্জি। তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে কাটাছেড়ার দাগ। হাতের বা পায়ের আঙুল কাটা।

কারো দেহে দীর্ঘ ও গভীর ক্ষত। কারো হাতে হাত-পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। ছেলেটি আমার হাতে আবার কাপড় জড়িয়ে বাঁধনের মত করে দিল। আমি ভাবছিলাম- আমি কি করে এই জল্লাদদের হাত থেকে বাঁচব। কক্ষটিতে শুধু একটি কাঁচের জানালা, তবে মনে হলো বেশ মজবুত।

এল-টাইপের ত্রিতল অথবা চারতলা বাড়ি। বিরাট এলাকা দেয়াল দিয়ে ঘেরা। বাড়িটি সম্ভবত মোহাম্মদপুরের নিকটবর্তী এলাকার কোথাও হবে। এমনিভাবে সারাদিন কেটে গেল। সন্ধ্যার দিকে বদর বাহিনী বা রাজাকারের দলের লোকজন আরো কিছু লোককে ধরে নিয়ে এল।

সন্ধ্যার পর তিন-চারজন লোক আমাদের কক্ষে এলো জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। একেক করে সবাইকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করল। শুনলাম, কেউ বলছে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কেউ বলল আমি ডাক্তার, আমি সাংবাদিক, আমি চিফ একাউন্টেন্ট, আমি কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালের সার্জনের ছেলে। লোকগুলোর একজন বলে উঠল, শালা, তুমি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হয়ে এদ্দিন মন্ত্র পড়িয়েছো, আজ আমি তোমাকে পড়াব। তুমি তো গভর্মেন্ট অফিসার, সরকারের টাকা খেয়েছ আর গাদ্দারি করেছ।

এবার টের পাবে। জিজ্ঞাসাবাদের পর শুরু হলো প্রহার। এমনি ধুমধাম মার দেয়া শুরু হলো যে নিঃশ্বাস ফেলারও জো নেই। সবাই চিৎকার করে কাঁদছে। কেউ জোরে জোরে দোয়া দরুদ পড়ছে, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে।

কিন্তু পশুগুলোর সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই। মারধোর করে প্রায় আধঘণ্টা পরে লোকগুলো চলে গেলো। মার খেয়ে অনেকেই অচেতন হয়ে পড়েছে। রাত তখন অনুমান দশটা। এক অধ্যাপক সাহেব আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন।

দেয়ালে হেলান দিয়ে বললেন, ভাই, আপনার হাত কি খোলা? আমার বাঁধনটা একটু ঢিলে করে দেন। লুঙ্গিটা হাটু থেকে নিচে নামিয়ে দেন। খানিকপরে কোনোক্রমে দেয়াল ঘেষে বসে তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন। রাত দশটা থেকে অনুমান একটা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বদর বাহিনীর জল্লাদরা আমাদের খানিক পরপর দেখে গেল। রাত প্রায় সাড়ে বারোটায় আমাদের উপরতলা থেকে কয়েকজন মহিলার আর্তনাদ ভেসে এল।

সেই আর্তনাদের বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে রাস্তায় গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম। মারের চোটে প্রায় সবাই অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে। আমি জ্ঞান হারাইনি। আমি আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছি।

শেষবারের মতো আল্লাহর কাছে আমার যদি কোনো গুনাহ হয়ে থাকে, তার জন্য পানাহ চাইছি। ২য় পর্ব: রাত প্রায় একটার সময় পাশের ঘরে রাইফেলের গুলি লোড করার শব্দ এবং লোকজনের ফিস ফিস করে আলাপের শব্দ শুনতে পেলাম। সারা শরীরে আমার ভয়ের হিমস্রোত চকিতে ভরে উঠল। খানিকপর একটা লোক এসে আবার আমাদের দেখে গেলো। তারো খানিকপর কয়েকজন লোক আমাদের ঘরে ঢুকল।

তারাই আমাদের ঘরের বাইরে নিয়ে এল। এরপর বদর বাহিনীর একেকটি পশু আমাদের দুজন দুজন করে ধরে সিড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনল। তিনটি বাসে তারা আমাদের সবাইকে নিয়ে তুলল। তাদের হাবভাব, ফিসফিস করে কথাবার্তা শুনে মনে হলো- আর রক্ষা নাই। বাস ছেড়ে দিল, বাসের সব কটি জানালা উঠানো।

বুঝতে পারলাম, আমাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাস এসে থামল কতগুলো ঘরের পাশে। ঘরের দরজা বেশ বড় বড় এবং কোনাকুনি লাঠি দিয়ে আটকানো। কিন্তু তারা আমাদের ঘরে না ঢুকিয়ে ধরে নিয়ে চলল। কৌশলে চোখের বাঁধন আলগা রাখার সুযোগ হলো বলে দেখতে পেলাম সামনে বিরাট এক বটগাছ, তার সমুখে একটি বিরাট বিল, মাঝে মাঝে কোথাও পুকুরের মত রয়েছে।

বটগাছের আরো কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম ১৩০ থেকে ১৪০ জন লোককে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর মাঝে এক ফাঁকে সুযোগ বুঝে আমি আমার পরনের লুঙি হাটুর উপর উঠিয়ে রেখেছি। চোখ বাধা অবস্থায়ও আমি যে দেখতে পাচ্ছি তা বদর বাহিনীর লোকেরা বুঝতে পারেনি। বদর বাহিনীর লোকজনের হাবভাবে স্থির নিশ্চিত হলাম, আমাদের হত্যা করার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছে। আমি এখন আমার সমগ্র চেতনা কেন্দ্রীভূত করে ভাবছি- কি করে বাঁচা যায়।

দেখতে পেলাম- বদর বাহিনীর পশুরা আমার সামনের লোকদের হাত দড়ি দিয়ে বাঁধছে। আমাদের মতো বন্দি একজন চিৎকার করে বলে উঠলেন- আপনারা বাঙালী হয়ে আমাদের মারছেন! কোনো পাঞ্জাবি যদি মারত তাহলেও না হয় বুঝতে পারতাম, কেন আমাদের হত্যা করতে যাচ্ছেন? আমরা কি অন্যায় করেছি? ভদ্রলোকের গায়ে রাইফেলের এক ঘা দিয়ে বদর বাহিনীর এক জল্লাদ গর্জে উঠল- চুপ কর শালা। কে যেন একজন বলে উঠল- আমাকে ছেড়ে দিন, দশ হাজার টাকা দেব। কোন এক মহিলা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন- আপনারা আমার বাপ, ভাই। আমাকে মারবেন না।

চারিদিকে মাতম, আহাজারি, তা বর্ণনার ভাষা আমার নেই। সামনের লোকদের দলে দলে ভাগ করে তারা ফাকা মাঠে নিয়ে যাওয়া শুরু করল। আমার সারা শরীর যেন ভয়ে জমে যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে আমি বাচার আশায় পালাবার সম্ভাব্য সব উপায় ভাবতে শুরু করে দিয়েছি। মনে হচ্ছে- কোন উপায় আর নেই।

আবার মনে হচ্ছে, বাচার কি কোনো উপায় নেই! জল্লাদদের একজন আমার কাছে এসে দাঁড়াল। আমার পেছনের লোকের গেঞ্জির সঙ্গে সে আমার গেঞ্জি ভালো করে বেধে দিল। হঠাৎ সে সময় পেছনের লোকটি বলে উঠল- আজিজ ভাই তুমি! তুমি আমাকে মারতে নিয়ে এসেছো! তুমি থাকতে আমাকে মেরে ফেলবে! আপসোস। রাইফেলধারী লোকটি কোন কথা না বলে চলে গেল। এদিকে বেয়নেট দিয়ে জল্লাদের দল তাদের হত্যালীলা শুরু করে দিয়েছে।

ছুড়ছে গুলি। চারদিকে আর্তচিতকার, মাঝে মাঝে জল্লাদদের কেউ চিতকার করে বলে উঠছে- শালাদের খতম করে ফেল। সব ব্যাটাদের খতম করে ফেলব। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে আর্তচিৎকারের সঙ্গে পৈশাচিক হাসি। এমন নারকীয় তান্ডবলীলার মধ্যে আমি জীবনপণ করে আমার হাতের বাঁধন খুলে ফেললাম।

আমার সামনের প্রায় তিরিশজনকে ততক্ষণে সামনের মাঠে খতম করে ফেলেছে বদর বাহিনীর পশুরা। এক হাতে আমি আমার গেঞ্জির গিট খুললাম। বাঁহাতের দড়ির বাঁধন খুলে দড়িটা হাতের নিচে চাপা দিয়ে রাখলাম। হাত আবার পেছনে দিয়ে রাখলাম। বদর বাহিনীর এক দস্যু আমার সামনের কয়েকজন লোক নিয়ে তখন ব্যস্ত।

কে যেন বলে উঠলেন- আল্লাহর কাছে তোরা দায়ী থাকবি। লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লহ। মাগো...। আমি আমার চোখের বাধনের কাপড়টি সরিয়ে ফেলে খুব জোরে দৌড় দিলাম। প্রায় হাত কুড়ি যাওয়ার পর এই এই বলে হাঁকডাক শুনতে পেলাম।

আমার তখন কোনো দিকে খেয়াল নেই। শুনতে পেলাম গুড়ুম গুড়ুম করে দুটো আওয়াজ। অন্ধকারে প্রায় ৪০ গজ যাওয়ার পর সামনে পড়ল কাদা। কর্দমাক্ত জায়গাটি পার হওয়ার সময় আবার দুটি গুলির আওয়াজ শুনলাম। কিন্তু অন্ধকারে তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো।

আমি কাদার মধ্যে পড়ে গেলাম। প্রায় ৩ ফুট গভীর পানি। সমস্ত শক্তি নিয়োগ করে আমি পানি ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম। খানিকক্ষণ চেষ্টার পর শুকনো জায়গা পেলাম। উঠে আবার দৌড়ানো শুরু করলাম।

দূর থেকে আমার দিকে টর্চের এক ঝলক আলো ভেসে এলো। আবার দুটি গুলির শব্দ। সাথে সাথে আমি কাত হয়ে পড়ে গেলাম। গড়াতে গড়াতে পড়ে গেলাম আবার পানির মধ্যে। প্রাণপনে সাতার কেটে এগিয়ে চললাম।

এরপর শুকনো বিল আর নদী পেরিয়ে এগিয়ে চললাম। গায়ে শক্তি নেই, কিন্তু তখন আমি দিকভ্রান্ত। নিরাপত্তার জন্য নদীর পারে না উঠে উজানে এগিয়ে চললাম। রাতের তখন বেশি দেরি নেই। খানিক পর উঠে পড়লাম নদী থেকে।

বাকি রাতটা কাটিয়ে দিলাম নদীর তীরে এক ঝুপড়িতে। সকালে রোদ ওঠার পর চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। বুঝতে পারলাম না কোথায় এসেছি। গ্রামের আভাস যেদিকে পেলাম সেদিক পানে এগিয়ে চললাম। খানিকপর শুনলাম কারা যেন আমাকে ডাকছে।

প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝলাম এরা গ্রামবাসী। তাদের সব বললাম। বটগাছের বিবরন দিতে তারা বলল- ওটা রায়ের বাজার ঘাটের বটগাছ। সেখান থেকে পরে আমি আটির বাজারে মুক্তিফৌজের কমান্ডারের সাথে দেখা করি। তিনি আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন।

দু’দিন পর ফিরে এলাম স্বাধীন বাংলার রাজধানীতে। তখনো বুঝিনি, এখনো বুঝতে কষ্ট হচ্ছে যে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে সত্যি কিভাবে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।