আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ রেলওয়ে



ছোট বেলায় এত বেশী ট্রেনে উঠেছি যে ট্রেন জার্নির ব্যাপারে আমার আদিখ্যতা, উৎসাহ কোনটিই নেই। আমার বরং বাসই ভাল লাগে। ঈদে কয়েকজন বলল, এবার ট্রেনে যাওয়া যাক। যমুনা নদীর উপর সেতু হওয়াতে এখন সরাসরী খুলনা যায় ট্রেন। টিকেট করার জন্য ভোর হওয়ার অনেক আগেই কমলাপুর গিয়েও লম্বা একটা লাইনের পেছনে পড়ে গেলাম, বাঙালি এখন বেশ লাইন ধরতে শিখেছে, পথে, ঘাটে, মাঠে, অফিসে, সবখানে লাইন।

শেষ পর্যন্ত যখন কাউন্টারের সামনে যেতে পারলাম, তখন শুধুমাত্র এক্সট্রা বগিতে সিট আছে। অগত্যা তাই সই, এইবার ট্রেনেই যাব। ট্রেন সকাল বা ভোর ছয়টা ত্রিশে, ছাড়বে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে আর আমরা থাকি হাতিরপুল। এত সকালে লাট বহর নিয়ে ক্যাব কুব না পেলে এক যন্ত্রণা। এক পরিচিতজনকে তাই অনুরোধ করলাম, যদি দয়া করে আমাদেরকে একটু নামিয়ে দিয়ে আসেন তার গাড়িতে করে... তিনি রাজি হলেন।

নির্দৃষ্ট দিনে যথাসময়ে স্টেশনে পেঁৗছে শুনলাম, ট্রেন আসতে আজ লেট হবে। পাক্কা দুই ঘন্টা পর ট্রেন আসলো সাড়ে আটটায়। মেজাজ মুজাজ এমনিই খারাপ, তার উপর শালার ট্রেনে ক খ গ ঘ অনেশ্বর বিসর্গ সব বগি আছে মাগার এক্সট্রা বগি যে কোনটা, কেউ বলতে পারছেনা। এক কিলোমিটার লম্বা ট্রেনের একবার এইমাথা একবার ওই মাথা করতে করতে শেষে জানা গেল ইঞ্জিনের পরেরটাই এক্সট্রা। উঠলাম ট্রেনে।

মাত্র বসেছি সিটে, একজন এসে বলল, ভাই এই সিটগুলো আমাদের!! তার নাকের সামনে আমাদের টিকেট নাড়িয়ে আমরা দেখিয়ে দিলাম। উনিও একইভাবে তার টিকেট দেখালেন। উপরি পাওনা হিসেবে জ্ঞান দিলেন, এইটা হল এক্সট্রা বগি 'জ' আর আপনাদের হল এক্সট্রা বগি 'খন্ডত্ত'। তো খন্ডত্ত বগি কোথায়? জানা গেল, সেটা সাতাশটা বগির পর শেষ মাথায়। আবার বাক্স পেটরা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে উঠলাম সেই বগিতে।

ওমা! এখানে পুরো এলাহী কারবার! সারা বগির কোথাও দাড়ানোর যায়গাটুকুও নেই। ন্যাচারাল এক্রোব্যাটিক ক্যারিশমা দেখিয়ে সিটের কাছে পেঁৗছুলাম। সিট খালি থাকার প্রশ্নই আসেনা। সিটগুলো আমাদের, বলতেই তারা এমন একটা এক্সপ্রেশন দিল যেন এরকম আজগুবি কথা জীবনে এই প্রথম শুনছে!! এক্সট্রা বগিতে আবার সিট রিজার্ভ থাকে নাকি? একজন আবার গলা ঝেড়ে নির্দেশ দিয়ে দিল, ওই, কেউ উঠবিনা, দেখি কি করে.... অগত্যা আমরাই রণে ক্ষ্যান্ত দিয়ে ছুটলাম গাবতলীতে, যদি লঞ্চ পারাপার বাসও একটা পাই..... প্রসঙ্গ কথা বাণী বসুর একটা বই পড়েছিলাম, নামটা মনে আসছেনা। যথারীতি এ বইটাতেও প্রধান চরিত্র সদ্য একুশ পেরুনো কলকাতার প্রগতিশীল তরুণী মিঠু।

তো মিঠু দেশত্মবোধে উত্তাল আদিবাসী এক তরুণকে সাথে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে এক পৌঢ়াকে রিসিভ করার জন্য দাড়িয়ে আছে, এবং ট্রেন লেট। জনসমাগমের মধ্য থেকে কেউ একজন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে আর ভারতের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে। আর সেইটা শুনে দেশাত্মবোধযুক্ত আদিবাসি ছেলেটি জ্ঞান দিচ্ছে- যখন মাদার তেরেসা বা অমর্ত্য সেন নোবেল পায়, আমরা বলি আমার দেশের মানুষ, আর যখন কোন ভুল হতে থাকে তখন হল শালার ভারত.... এই টাইপ। আমাদের চরিত্রও কাছাকাছি। আশরাফুল কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিলে আমরা বাঙালী/বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত হই আর কোন উল্টা পাল্টা হলেই এই পোড়া দেশ..... আমারও এখন একটা গালি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়েকে।

অন্য দিক বাংলাদেশের বাইরে আমার একবার ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে যাতায়াত করার সুযোগ হয়েছিল। সবসময় কি হয় জানিনা, সেবার দেখেছিলাম, প্রতিটা বগির দরজায় সিট নাম্বার, প্যাসেন্জার এর নাম, এবং আমাদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট নাম্বারটাও কাগজে প্রিন্ট করে সেঁটে দেওয়া ছিল। পাশাপাশি দুটো দেশ অথচ কত পার্থক্য...... কবে যে সভ্য হব....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.