আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিপ্পি আরসুয়াং পার্ট ৩ঃ রনীন পাড়া-ফিয়াং বিদান পাড়া

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
মেঘের রাজ্যে মেঘ ছোঁ-বার স্বপ্ন। সিপ্পি অভিযান পার্টঃ২ Click This Link প্রথম পর্ব ঃ Click This Link টানা একদিন পুরা হাটার পর ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে সন্ধ্যায় আমরা পাইখং পাড়ায় আসলাম। লালতুয়ার দাদার ঘরে থাকার ব্যাবস্থা করে দিল গ্রামের একটিং কারবারী পিতর বম। লালতুয়ার ছেং অবস্থাপন্ন লোক। তার ঘরে সোলার ইলেক্ট্রিসিটি আছে।

উঠানে (কয়েকটা বাড়ি মিলে কমন উঠান) সোলার প্যানেল গুলো দিনের আলোয় ব্যাটারি চার্জ করে, রাতে কয়েকটা লাইট এমনকি টেলিভিশনও চালাতে পারে। লাল তুয়ার দাদা বেশ সৌখিন লোক। উনার ঘরে সাউন্ড বক্স আর ডিভিডি প্লেয়ারও আছে। নিচে টানা বিছানা পাতা হলো। বমদের ট্রাডিশন হচ্ছে এরকম অতিথি সৎকার।

তাই এক্সট্রা কাথা বালিশ থাকে। সকাল থেকে একটানা হাটার ফলে ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছিলো। ধুম ধাম চিত হয়ে পড়লাম। অনেক উচু জায়গা তাই এখানে এফ এম রেডিওতে চট্টগ্রাম চ্যানেল ধরে। এক মেটাল গায়ক ভের ভের করে চিল্লাচ্ছিলো আর আর লালতুয়ার দাদা মহা উতসাহের সাথে সেটা লাউড স্পিকারে দিলে বাধ্যহয়ে উঠে কুয়াপারে গেলাম গোসল করতে।

সামনে একটা ভ্যালি আছে, ওখানে গোল পোস্ট পাতা। গ্রামের বাচ্চারা মহা উতসাহ নিয়ে আমাদের দেখছিল, মেয়েরা মাথা খারাপ করে দেবার মত সুন্দরী। থামি পরিহিত সুন্দরী মেয়েরা আশপাশ থেকে আমাদের দেখছে আর একজন আরেকজনকে কুনুইয়ের গুতোয় কি সব বলছে নিজেদের ভাষায় আর হি হি করে হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়ছে। আমার বম জ্ঞ্যান কয়েকটা অতি প্রয়জনীয় শব্দ যেমনঃ কালো মে (ধন্যবাদ), তি (পানি), আর (মুরগী), তি (ডিম) , ওদের হাসাহাসির অর্থ উদ্ধার এদিয়ে সম্ভব না। এদের সামনে গোসল করাটা বিব্রতকর।

কিন্তু ঝর্না থেকে পাইপ দিয়ে টেনে আনা ঠান্ডা পানির স্পর্শে সারাদিনের ক্লান্তি মুছে গেল। প্রচন্ড ঘুমের ঘোরে আধা সচেতন ভাবে ডিনার করলাম উঠনে বসে। সামনে পাহাড়ের নিচে অনেক অনেক দূর দেখা যায়। দুর্দান্ত আবহ দিচ্ছে জঙ্গলে নাম না জানা শব্দ গুলো। রাব্বি ভাই, হাসিব, শরিফ, লাল তুয়ার দা এবং আরেকজন (লাল তুয়ার দার ফ্রেন্ড, নামটা খুব কঠিন মনে রাখতে পারি নাই) খিচুরী আর ডিম ভুনা করেছে।

দুর্দান্ত লাগলো। যদিও পাহাড়ের চাল গুলো মোটা মোটা আর সহজেই গলে বিচিত্র হয়। কিন্তু খিদার চোটে অসাধারন। সবাইকে শেখ হোয়াইট সিগারেটে অভ্যস্থ হতে হবে, কিন্তু আমি চালাকি করে বেনসনের প্যাকেট অনেক গুলা নিয়ে গেছি, কিপ্টার মত করে খরচ করলাম। রাতের বেলা জঙ্গলে সম্ভবত বন্য শুয়োর বের হইছিলো।

গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। যেটা খুব বিরল। গ্রামের সবগুলো কুকুর পাগলের মত চিল্লা চিল্লিতে ঘুমের বারোটা বাজায় দিল। গোদের উপরে বিষ ফোড়ার মত একটা টক্কে (একধরনের লিজার্ড, দেখতে রক্তচোষার মত, কিন্তু কালো) ঘরের ভিতরে ডাকা ডাকি করে ঘুম আসার সব সম্ভবনা দূর করে দিল। কয়েকবার গায়ের উপরেও উঠে বসে এরকম বদ।

পায়ের কাছে কান ফাটানো টক্কে টক্কে করলে কুম্ভকর্নও ঘুমাতে পারতো না। নাহ, সমস্যা বোধহয় শুধু আমার। হাসিব ঘুমের ঘোরে বার বার আমার গায়ে পা তুলে দেয় আর আমি লাথি মেরে পা নামিয়ে দেই। ঘুমের ঘোরে রাহাত ভাই একবার লাফ দিয়ে উঠে বলে ,"মফিজ ভাই মফিজ ভাই, নৌকা ছাড়েন জোয়ার আসে তো। " বুঝলাম ঘুমের ঘোরে এখনো সে নৌকায় বে অফ বেঙ্গল এডভেঞ্চার শেষ করতে পারে নাই।

রনীন পাড়ায় , কেয়া আপ ক্লোজ আপ কারতে হ্যায়? সকাল বেলা উঠে নাস্তা বানাতে বসলো সবাই। আমি আর জ্যাজ (শরীফ) টুথ পেস্ট হাতে কুয়া পারে চলে গেলাম। জ্যাজ কিভাবে কিভাবে জানি মেয়েগুলোর সাথে একটা যোগাযোগ করে ফেলেছে। ভাষা সমস্যা তাই ইশারায় কথা বাত্রা। হিংসায় আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো।

সবচেয়ে সমস্যা বাথরুমে। বড় বাথরুম সবার বন্ধ। রাব্বী ভাই টিস্যু পেপার নিয়ে জঙ্গলের ভিতরে রাতের বেলা গেছলো। দুটো বাশ দিয়ে একটু উচুতে ঘেরাও দেওয়া বাথরুম। অনেক চেষ্টা করেও কিছু না হওয়ায় উলটা শুয়রের ধাওয়া খেয়ে ফিরছেন।

ছোট বাথরুমের কালার দেখে সবাই অবাক। খাচ্ছিলাম স্যালাইন গুলানো পানি বের হচ্ছে ট্যাং। আমরা চিড়া গুর আর পানি মিশিয়ে সকালের নাস্তা খেয়ে হাটা শুরু করলাম। আজকের ডেস্টিনেশন রনীন পাড়া। খুব বেশী দূর না।

কিন্তু অনেক বেশী বৈচিত্রময়। রনীন পাড়া যেতে বেশী সময় লাগবে না। কিন্তু ফর্মালেটিজ শেষ করে আমাদের রাতে থাকাই লাগবে। আগামী কাল সবচেয়ে কঠিন দিন যাবে। আমরা সিপ্পির ২ নাম্বার পিক (আরসুয়াং তথা মোরগের সবচাইতে উচু ঝুটি) সামিট করবো।

সারা রাত রেস্ট নেবার ফলে সবার গায়েই জোশ চলে আসছে। বাঁশে ভর দিয়ে জোর কদমে হাটা। পাইখং পাড়া গ্রামটা কোন ভ্যালিতে নয় বরং পাহাড়ের গায়ে ধিরে ধিরে উঠে গেছে। আমরা জোর কদমে উঠে পাহাড়টা টপকালাম। বেশ উচু আর বিশাল এই রেঞ্জটা।

রেঞ্জটা পার হতেই জঙ্গল অনেক ঘন হলো। আজকে আমাদের কোন গাইড নেই। কাউকে রাজী করাতে পারলাম না। আল্লাহ ভরষা করে অচেনা পাহাড়ে রওনা হলাম। হঠাত খেয়াল করলাম অতি উতসাহে আমি আর জ্যাজ মুল দল ছেড়ে অনেক বেশি আগে চলে আসছি।

চুড়ায় দাঁড়িয়ে ওদের দেখার চেষ্টা করলাম জঙ্গলের কারনে কিছুই দেখিনা। তবে বন্দুকধারী এক বয়স্ক লোকের সাথে দেখা হলো। কিন্তু বেচারা একবর্ন বাংলা বুঝে না, ইশারায় বুঝলাম তারা দল নিয়ে বের হয়েছে, মুল দল সামনে। জোরে হেটে সামনের দলকে ধরে ফেললাম। এরা শিকারী।

পাইখং পাড়া থেকে আসছে। ঐ বুড়ো আসলে লাল তুয়ার দাদার চাচা। দলে একজন বাংলা জানে, তবে খুব বেশী ভাঙ্গা ভাঙ্গা। সবার সাথেই কুকুর, কাধে কাপড়ের ঝোলা, আর হাতে প্রাচীন যুগের রাইফেল। পয়েন্ট টুটু বোর।

মিলিটারী একাডেমীতে আমি চাইনিজ রাইফেলে একবার আড়াই ইঞ্চি গ্রুপিং করছিলাম। সেটা এটার প্রায় সাতগুন সেভেন পয়েন্ট ফোর টু বোর। পয়েন্ট টু টু বোর খেলনার মত, এয়ার গান টাইপ। কিন্তু নিশানা হয় দারুন। শুনে অবাক হতে হয় ওরা এইসব খেলনা নিয়ে জঙ্গলে যায় শিকার করতে।

খরগোশ কিংবা সজারুর জন্যে ঠিক আছে। কিন্তু এইজঙ্গলে ভাল্লুক, চিতাবাঘ (পাহাড়িরা বলে, প্রমান নেই) এবং বন্য শুয়োরের সামনে খেলনা। ওরা গতকাল একটা বন্য শুয়রকে গুলি করছিলো। শুয়রটা মরে নাই কিন্তু আহত হয়ে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে গেছে। বন্য শুয়র দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে (চিটাগাং এর বড়লোকের ছেলেদের কিছু দল চন্দ্রনাথের গভীরে শিকার করতে যায়) তারা জানেন শুয়র আহত হলে সবসময় ধাওয়া লাগায় শিকারীকে।

তখন দাঁতালো শুয়র অত্যন্ত মারাত্মক এক প্রেডিটর। উদাহরন হাতের সামনেই। কথক শিকারীর কুকুরটার একটা পা ফালা ফালা হয়ে আছে। আহত শুয়র কামড়ে পায়ের বিশাল কিছু মাংস ফেলে দিয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি, এই জঙ্গলে একটা আহত বন্য শুয়র ঘুরছে ব্যাপারটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হলো না।

শিকারীর দল সামনেই মোড় ঘুরে নিচে নেমে গেল সামনে জুম ক্ষেতেই শুকরের পাল বেশি থাকে। আমাদের বলে গেল সোজা রাস্তা যখনি ওয়াই জাংশান পাবো সবসময় বামের রাস্তায় যেতে হবে। সোজা হিসাব। এই হালকা পয়েন্ট টুটু দিয়ে এরা বন্য শুকর শিকার করে। আমরা এবার আরাম করে করে হাটলাম।

পিছের পার্টি বেশ পিছে। বন্য শুয়রের ভয়ে চলার সময় যতোটা নিঃশব্দে যাওয়া যায় ততই ভালো। সাপ কিংবা অন্য জন্তুদের সতর্ক করে দিতে শব্দ করে করে হাটা লাগে, একটু পরে পরে টারজান স্টাইলে চিল্লা চিল্লি করা লাগে, বনের জানোয়ার ভাইয়েরা সাবধান তোমাদের চেয়েও বন্য আরেক জন্তু "মানুষ" এদিক দিয়ে যাচ্ছে, এদিকে আইসো না। কিন্তু শুকর শব্দ শুনলে উলটা ভাবে তাকে আক্রমন করতে আসছে। আমার লাঠিটা সেগুন কাঠের বেশ মোটা।

লাগলে কশে দুঘা লাগানো যাবে। সামনে হঠাত পাহাড়টা শেষ হয়ে গেল। প্রায় হাজার দেড়েক ফুট দেয়ালের মত সোজা নেমে গেছে। সামনে অনেক অনেক দূর দেখা যায়। অনেক দূরে আর্মি ক্যাম্প জঙ্গলের শেষে।

আরেকদিকে রনীন পাড়া। তারো অনেক অনেক দূরে রাজার মত গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা তুলে অলস ভাবে বসে আছে দাম্ভিক সিপ্পি আরসুয়াং। ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু। চমতকার ভিউ। অনেকক্ষন কথা সড়লো না মুখে।

এখানে বসার জন্যে বাশের বেঞ্চি আছে। এখানে বাশ প্রচুর, সবার সাথেই দা থাকে। চোখের নিমিশে বাশ কেটে বাশের ছিলকা দিয়ে বেধে একটা বেঞ্চি বানিয়ে ফেলে , সময় লাগে দু থেকে তিন মিনিট। আমরা বেঞ্চিতে বসে থাকলাম। মাথার পিছে কে জানি চাকু দিয়ে পাহাড় কেটে লিখে রেখেছে বাংলা, ইংরেজী আর চায়নিজ ঘরানার কোন বর্নমালায়।

বুঝলাম আমাদের আগে সপ্তাহ খানেক আগে একটা ক্লাব আসছিল রনীন পাড়া পর্যন্ত ওদের কাজ। 'ওয়েল কাম টু সিপ্পি"। দলের বাকীরা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। ওরাও একই রকম বাক্যহারা হয়ে গেল। বাঞ্জি জাম্পিং, গ্লাইডার ফ্লাই, কিংবা ফ্রি ফলের জন্যে বাংলাদেশে কোন স্পট খুজলে এটা নাম্বার ওয়ান।

দূরে সিপ্পির চুড়া, টিনের ঘর গুলো আর্মি ক্যাম্প। এবারে টানা দেড় হাজার ফুটের মত নামা। পাহাড়ের গা বেয়ে চিকন রাস্তা। সাবধানে নামলাম। এরপরে বড় বড় ঘাসের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া।

হঠাত ঘাস বনে বিচিত্র ঘোত ঘোত আওয়াজে ভয় পেয়ে গেলাম। পাইখং পাড়ার আহত শুয়রটা নাতো। আমাদের ভয় দূর করে ঘাস বন থেকে বিশাল দেহি একদল জানোয়ার বের হয়ে এল। বন্য মহিশের মত পেশিবহুল বিশাল বডি আর দেশি গরুর মত গোবেচারা মাথা। এরা আসলে আমাদের দেশি গরুর আদি পিতা।

গয়াল বা গয়ার। কেউ বলে বন গরু। জঙ্গলে জল্পাই গাছ প্রচুর। আমরা সবাই রাশি রাশি জল্পাই খেলাম । আরো কিছু বুনো ফল পেলাম।

আরাম করে হেলে দুলে ইচ্ছে করেই দেরী করে আর্মি ক্যাম্পে ঢুকলাম। জুম্মার নামাযের সময় হয়ে যাবে, ক্যাম্পে বেশিক্ষন দেরী করিয়ে দেবে না। আমাদের আশায় গুড়ে বালি। ক্যাম্পের লোকজন অতি উতসাহে আমাদের ধরলো। সামনেই হেলিপ্যাড তাই বুঝলাম এখানে যোগাযোগের একমাত্র ব্যাবস্থা আকাশপথ।

দুর্গম এই ক্যাম্পে ওদের জন্যে বাঙ্গালী ভাইয়ের দেখা পাওয়া বিরল। পাহাড়িদের মাঝে বিচিত্র স্বভাব সবাই নিজেদের অঞ্চলের পাহাড়টাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া বলে। আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার জনৈক জেসিওর দেখলাম এই পাহাড়ি স্বভাব। উনিও বলে দিলেন সাকা হাফলং কেওকারাডং বাদ, এটাই সবচেয়ে উচু পাহাড়। জিপিএস রিডিং বলে অন্যকথা সেটা তাকে বলে আর দেরী করানোর ইচ্ছা ছিল না।

আমাদের সাথে কথা বলছিলেন জেসিও ভদ্রলোক। ক্যাম্পের অন্যান্যরাও সুযোগ ছাড়লো না। একজন দুজন করে সবাই আসে কথা বলতে। সবার এক কোয়েশ্চেন, আপনাদের দেশের বাড়ি কই? একটূ পরেই, একজন এসে জিজ্ঞেস করে, আপনাদের মাঝে সিলেটী কে আছেন? আপনাদের মাঝে বরিশাল বাড়ি কার? দেশি মানুষ পেলেই হয় বিশাল গল্প জুড়ে দেয়। কমান্ডার যখন শুনলেন আমার দেশের বাড়ি রংপুর, তখন উতসাহে লাফ দিলেন, এখানে নাকি ২০জন সৈনিক আছে রংপুরের।

আমি প্রমাদ গুনলাম। আগে রনীন পাড়া গ্রামটা পাহাড়ের উলটা দিকের ভ্যালিতে। উচু উচু ঘাস বনের মধ্যে দিয়ে যেতে একটা গোরস্তান। রাশি রাশি ক্রস লাগানো। প্রথমে বম পাড়া এর পরে রণীন পাড়া, পিছে পাহাড়ের ভিতরে ফিয়াং বিদান পাড়া।

বম পাড়াতে লোকজন সবাই ভীর করে আমাদের দেখছিল। এখানে বাংলা বলতে পারে এরকম লোক খুবই কম। অনেকেই আমাদের অতিথি করতে চাইলো, কিন্তু ভদ্রভাবে আমরা অগ্রাহ্য করলাম। আমাদের কন্টাক্ট রনীন পাড়ার আরাম বম। আরাম দা বছর তিরিশেকের স্বাস্থ্যবান সুদর্শন তরুন।

কিছু করে না। সমতলে বেকার ছেলেরা কিছু না করলেও মাঠে কাজ করে, কিন্তু এখানে মেয়েরা সেই কাজ করায় প্রচুর ছেলে আছে বেকার। আরাম বম সামনে একটা বাসার দাওয়ায় দুই সুন্দরীর সাথে ফ্লার্ট করছিল। আমাদের দেখে এগিয়ে এল। কারবারীর ছোট ভাই নতুন বাড়ি করেছে দোতালা কাঠের বাড়ি।

সেখানে নিয়ে এল। বাড়িটা চমতকার, লোকজন অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। সমস্যা একটাই বাড়িতে কেউ বাংলা জানেনা। কারবারীর ভাই জানেন, কিন্তু উনার স্ত্রী, শালী, তিন বাচ্চা, কেউ বাংলা বুঝে না। বাচ্চা গুলো দারুন কিউট।

ভাষা সমস্যার কারনে ওদের নাম জানা হলো না। ছোটটা ভিষন দুরন্ত। তাই ওর নাম রাখা হলো টারজান, আর ওর বোনের নাম রাখা হলো ফারজান। গয়াল দুপুরে সামনে চৌবাচ্চায় পাহাড়িদের সাথে ভির করে গোসল করলাম। আমার দায়িত্ব পড়লো পেয়াজ কাটা।

এখানে কোন দোকান নাই। আরাম দা সব বাসাতে ঘুরেও কোন ডিম বা মুরগী যোগার করতে পারলেন না। পেয়াজ কাটার সময় কান্না কাটি না করতে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি টারজান তার সমবয়সীদের সাথে বিচিত্র একটা মজার খেলা খেলছে। কিছু চাকতি একখানে রাখা হয়, একটা কাঠের গোল হুইল অনেকটা ক্যারামের স্ট্রাইকারের মত দূর থেকে এক পা তুলে পায়ের ফাক দিয়ে ছুড়ে মারে, এর পরে চাকাটা আবার গড়িয়ে দেয়। খুব মজাদার খেলা, বাচ্চারা বাংলা জানেনা দেখে নাম জানতে পারলাম না খেলাটার।

লিখা আছে, ওয়েলকাম টু সিপ্পি, সিপ্পি আরো দেড় দিনের পথ। টারজান আর ফারজান। আগামী পর্বঃ সিপ্পির চুড়ায়।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।