আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবার উপরে আমি সত্য তাহার উপরে নাই

০০

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রবনতা লক্ষ্য করলে একটা বিষয়ে সবাই একমত হবেন যে, এ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য এ রকম "সবার উপরে আমি সত্য তাহার উপরে নাই"। দল থেকে মনোনয়ন না পেলে অন্য দলে যোগ দেয়া, যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত আমাদের রাজনৈতিক গুরুবর্গ এ বক্তব্যটিকে ইতোমধ্যেই জাতীয় বক্তব্যে পরিনত করেছেন। আজ আমরা সকলেই এই অসাধারণ সদগুণটির অধিকারী। যদি আমাকেও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আমি ও হয়তো বলবো "সত্য বই মিথ্যা বলিবোনা,আমিও"। আজ আমরা প্রত্যেকেই আমিতন্ত্রবাদী।

এখানে আর কারো প্রবেশাধিকার নেই। স্বামীর মনে স্ত্রী নেই, স্ত্রীর মনে নেই স্বামী-সেখানে কেবলই আমির রাজত্ব। পিতাহীন পুত্র, পুত্রহীন পিতা; মা হীন সন্তান, সন্তানহীন মা; গুরুহীন শিষ্য, শিষ্যহীন গুরু। সর্বত্রই আমির জয়জয়কার। সেকালে মনসুর হাল্লাজ নামক জনৈক প্রভূ প্রেমিক প্রভূর প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত নিজেকেই প্রভূ বলা শুরু করেছিল।

আজকের এই আমিতন্ত্রের সূচনা কি তখন থেকেই? নাকি আরো আগে প্রভূর নির্দেশ অমান্য করে আদমের গন্ধম খাওয়া থেকে? যেখান থেকেই এর শুরু হোক না কেন, এই আমিতন্ত্রবাদ যে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। দীর্ঘ দু'বছর ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সেনাবাহীনি সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার যে 'লেসন' দিয়েছে তাতে আমার মত হয়তো অনেকেই ভেবেছিল এবার হয়তো এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোন গুণগত পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনে হয়তো ভাল লোকগুলো এগিয়ে আসবে। খারাপ লোকগুলো হয়তো ভুলেও এ পথ মাড়াবেনা। আমাদের এ ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেশের লোক দুর্ণীতিবাজদেরকেই ভোট দিয়েছে।

এতে প্রচার মাধ্যম সহ সুশীল সমাজের অনেকেই উল্লসিত হয়েছেন। একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের বর্থ্যতায় উল্লসিত হওয়াটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একটি বিষয় কি আমরা ভেবে দেখেছি এতে দুর্ণীতিকে মাইনাস করতে গিয়ে ডবল প্লাস দেওয়া হয়ে গেল! এজন্য সরকারের পদ্ধতিগত ত্রুটিও অনেকটা দায়ী। তারা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে শেষ পর্যন্ত পরিণত করেন রাজনীতি বিরোধী অভিযানে। ফলে তাদের সকল কাজকেই মানুষ অবিশ্বাস করতে শুরু করে।

দুর্ণীতিবাজদের মনে আগে যে ভয় ছিল সেটাও তারা ভেঙ্গে দেয়। দুর্ণীতিবাজরা এখন জানে এটা সেই দেশ যেখানে কোন পাপেরই শেষ পর্যন্ত বিচার হয়না। যদি রাজনৈতিক নেতা হওয়া যায় তাহলে সকল পাপাচারের লাইসেন্স পাওয়া যায়। যে কারণে এই নির্বাচনে খারাপ লোকগুলো আরও বেশীমাত্রায় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ কথা গ্যারান্টি সহকারে বলা যায়, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভবিষ্যতে এ দেশে দুর্ণীতির পরিমান বাড়বে।

যতদিন এ দেশের মানুষের মন থেকে 'আমিতন্ত্র' বিদায় নেবেনা, যতদিন এদেশের রাজনৈতিক গুরুবর্গ নিজের দলের পরিবর্তে সমগ্র দেশের নেতা হয়ে উঠবেনা, যতদিন আমরা ভালকে ভাল মন্দকে মন্দ বলার সৎসাহসের অধিকারী হবোনা- ততদিন আমরা প্রত্যেকেই দুর্ণীতিবাজ হয়েই থাকবো। দুর্ণীতি এবং রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে ততদিন আমাদের মুক্তি নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.