আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এইডস্‌ এর শুরু থেকে শেষ। / উৎসর্গ: এইডসের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ সকল নিস্পাপ শিশুদের

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আজ বিশ্ব এইডস দিবস। ভয়ঙ্গকর ভাইরাস HIV মানব সমাজের নতুন এক ত্রাস। এই ভাইরাস মানবদেহে যা করে তাকে বলা হয়, Acquired Immune Deficiency Syndrome। Immune Deficiency বলতে বুঝায় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস (Immune compromised)। Acquired দ্বারা বুঝায় এটা বাহ্যিক ভাবে লাভ করা হয়েছে, জন্মগত নয় (Not genetically)।

সিন্ড্রোম হচ্ছে যে কোন রোগের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (sing and symptoms) উভয় প্রকার লক্ষণের একটা সেট। অর্থাৎ, AIDS হচ্ছে সেই সব রোগের সমষ্টি যা বাহ্যিক কোন কারনে (যেমন ভাইরাস সংক্রমনে) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে সৃষ্টি হয়। এই ভাইরাস মানবদেহের প্রধানত সেই সব কোষকে আক্রমন করে যাদের পৃষ্টে CD4 অনু বিদ্যমান। এই অনুটি আমাদের রক্তের T-cell, Monocyte, Macrophages, Dendritic cells এর পৃষ্টে দেখা যায়। এগুলো সবই বিভিন্ন ধরণের শ্বেতরক্ত কনিকা (White Blood Cell বা Lymphocytes )।

ভাইরাস তার লিগান্ড (যে অনু দ্বারা সেটি শ্বেতরক্ত কণিকার উপরের রিসেপ্টর অনুর সাথে যুক্ত হয়) দিয়ে কোষপৃষ্টের CD4 অনুর সাথে যুক্ত হয়। ব্যাপারটাকে, অস্ত্র ভান্ডারের দরজার তালার সাথে তুলনা করা যায়। আপনি যদি যুদ্ধ্বের জন্য অস্ত্র নিতে অস্ত্রভান্ডারে ঢুকতে চান তবে আপনাকে দরজার তালায় চাবি ভরতে হবে এবং ভেতরে ঢুকতে হবে। তেমনই ভাইরাসও CD4 অনুটিকে ধরে শ্বেতরক্তকনিকা (দেহের রোগ প্রতিরোধের সৈনিক, অস্ত্রভান্ডার সব এরাই) ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে সংখ্যা বৃদ্ধি করে, একটা নির্দিষ্ট সংখ্যাক নতুন ভাইরাস তৈরির পরে আক্রান্ত কোষটিকে ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে।

নতুন ভাইরাস গুলো তখন আসে পাশের আরো নতুন কোষকে আক্রান্ত করে। অর্থাৎ, যতই ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি চলতে থাকে, দেহের রোগ প্রতিরোধের যোদ্ধা শ্বেতরক্তকনিকার সংখ্যা কমতে থাকে। সাথে সাথে নিশ্চিত ভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। মজার ব্যাপার, আমরা চাইলেও এই CD4 অনুটিকে Block করে দিতে পারি না। কারন তাহলে T-cell, Monocyte, Macrophages, Dendritic cells আর কাজ করতে পারবে না, যার ফলাফল দাঁড়াবে সেই Immune Deficiency।

আমরা মানুষেরা একা থাকি না। আমাদের দেহের নানা কোনে হাজারো ধরনের ব্যাক্টেরিয়া বাসা বেধে আছে। ব্যাক্টেরিয়া শুনে ভয় পাবার কিছু নেই, কারন এরা আমদের জন্য উপকারি। এই ব্যাক্টেরিয়ার দলকে বলা হয় Normal Flora. এরা সাধারণ অবস্থায় আমাদের কোন রোগ করে না। এদেরই একটা গ্রুপকে বলা হয় opportunistic ব্যাক্টেরিয়া।

অর্থাৎ এরা চান্স পেলে আমাদের ক্ষতি করে। HIV ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমাদের যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, এই opportunistic রা তখন আমাদের নানান ধরনের ছোটখাট রোগ করে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য কারনেও কিছু রোগ হয়। এইপর্যায়ে আমাদের Immune system আর বসে থাকে না। দেহকে বাঁচাবার জন্য তার সকল শক্তি দিয়ে আক্রমন করে।

শুরু হয় যুদ্ধ, মারা পরে অনেক ভাইরাস। প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস পেরে উঠে না, একপর্যায়ে দেহের বিভিন্ন শ্বেতরক্তকনিকায় লুকিয়ে পড়ে। আমরা আবার সুস্থ হয়ে উঠি। তবে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা কিন্তু থেমে থাকে না। অল্প অল্প করে হলেও সে ঠিকই তার সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যায়।

শুধু তাই নয়, রক্তপ্রবাহের সাথে সাথে ভাইরাস দেহের নানা কোনে ছড়াতেও থাকে। সেই সাথে Immune system এর যুদ্ধও চলতে থাকে। এই পর্যায়ে রক্তে ভাইরাসের সংখ্যা অনেক কমে যায়। তবে, Immune system এর যুদ্ধের অস্ত্র যে Antibody তা ঠিকই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় খুজে পাওয়া যায়। এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলা হয় HIV Positive, যদিও তাদের AIDS তখন নেই।

এই ব্যক্তিই সব চাইতে ক্ষতিকর অন্যদের জন্য। কারন আপাত দৃষ্টিতে সে সুস্থ। কিন্তু তার রক্তে ভাইরাস বিদ্যমান এবং সে অন্যদের মাঝে সেই ভাইরাসের বিস্তার ঘটিয়ে যায়। যেহেতু রক্তকনিকাতে ভাইরাসটি থাকে ফলে যে কোন ভাবেই হোকনা কেন যদি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত (HIV Positive) সুস্থমানুষের (HIV Negative) রক্তে পৌছে তাহলেই তার এইচআইভি ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকবে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনও ভাইরাস ছড়াতে পারে।

এই ক্ষেত্রে নারীদের আক্রান্ত হবার সম্ভবনা অনেক বেশী। এর অর্থ হল, HIV Positive পুরুষ ও HIV Negative নারীর মিলনে নারীর আক্রান্ত হবার সম্ভবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে, HIV Positive নারীর সাথে HIV Negative পুরুষের যৌন মিলনে পুরুষের আক্রান্ত হবার সম্ভবনা কম। আক্রান্ত নারীর সন্তান Delivery এর সময়, বুকের দুধ খাওয়ার সময় HIV আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া সমকামীরতার ক্ষেত্রেও একজন HIV আক্রান্ত হলে অন্যের মাঝে ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম।

এভাবে চলতে চলতে কয়েক বছর পর (সাধারনত প্রায় ৮-১০) বছর পরে হঠাৎ ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠে। মৃত্যু হয় এর প্রায় দুই বছর পরে। আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিতে তার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায়, এবং একএকটি ভাইরাসের আক্রমন ক্ষমতা প্রথম পর্যায়ের চাইতে অনেক বেশি হয়। দেহে CD4 positive Lymphocytes এর সংখ্যা দ্রুত নামতে থাকে। Immune system এই পর্যায়ে আর পেরে উঠেনা।

শুধু দেহের Normal flora এর ব্যাক্টেরিয়া নয়, আরো নানা রোগ যেমন মেনিনজাইটিস (Meningitis), নিউমোনিয়া (Pneumonia), যক্ষ্মাতে (Tuberculosis) প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয় রোগী। তাছাড়া opportunistic সেই সব Bacteria, Fungus, Protozoa ও অনান্য ভাইরাসএর আক্রমন তো থাকেই। একের পর এক নানাধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীর Immune system হাল ছেড়ে দেয়। এই অবস্থাকেই বলা হয় AIDS. একমাত্র মৃত্যুতেই রোগের অবসান হয়। প্রায় ১০০% ক্ষেত্রেই মৃত্যু নিশ্চিত।

তবে আফ্রিকার কয়েকটি অঞ্চলের আদিবাসী মেয়েদের মাঝে AIDS আক্রান্ত না হবার ক্ষমতা আছে বলে শোনা গেছে। তারা সবাই HIV POSITIVE কিন্তু তাদের AIDS হয় না। কারনটা এখনও গবেষণাগারে খোঁজা হচ্ছে। AIDS এর এখন পর্যন্ত কোন Effective চিকিৎসা নেই। Antibiotic এর মত উপকারি Antiviral agent এখনও পাওয়া যায় নি।

প্রতিরোধের জন্য Vaccine উৎপাদন এখনও সম্ভব হয়ে উঠে নাই। যা কিছু চিকিৎসা আছে, তা এতই দামী যে বিশ্বের হাতে গোনা কিছু ব্যক্তির পক্ষেই তা পাওয়া সম্ভব। HIV এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এখনও প্রতিকারের চাইতে উপযুক্ত অস্ত্র। এই পোস্টটি উৎসর্গ করলাম এইডসের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ সকল নিস্পাপ শিশুদের। যারা হয় তাদের আক্রান্ত পিতা-মাতাকে হারিয়েছে এবং হারাবে অথবা যারা নিজেরাই নিজের অজান্তে এইডস আক্রান্ত।

পোস্টের সাথে সম্পর্কহীন আলোচনা এখানে করুন
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।