আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এন্টিগল্প > বিটার মুন > পার্ট থ্রী

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
১৮+ সতের আঠার ঘন্টার বিরক্তিকর জার্নিটা একসময় শেষ হলো। ঢাকায় ফেরার পর অনেকটা দিন লেগে গেল ইমরানের স্বাভাবিক হতে। ডোনা তার হস্টেল জগতের চেনা নিয়মের মধ্যে ডুবে যাওয়ার আগে তিন-চারটা দিন উদ্ভ্রান্তের মত কাটাল। প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে যাওয়া এলএসডি নেওয়া হলো না। কানে রিং,ভ্রুর কোণায় রিং,গলায় ভারি ভারি চেইন লাগানো সেই জলন্ধরের শেখরও আর ডোনার ভাবনায় আসে না।

আনইউজ্যুয়াল একটা অসঙ্গত সম্পর্ক নিয়ে এভাবে ভাবতে হবে দেখে প্রায় কোন কিছুতেই রিএ্যাকশন না দেখানো ডোনা কিছুটা অবাকই হলো। ওর বয়সী ছেলেদের সাথে এর আগে যতবার ওর ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে সেই সব স্মৃতি একসাথে করে নতুন ভাবে আবিষ্কার করল ইমরানের সেই রাতের মুহূর্তগুলো যেন উইন্ড স্ক্রিনে আড়াআড়ি দাগ কেটে গেছে। দাগটায় হাত বুলিয়ে একটু একটু করে অবসেশনেও ডুবে যাওয়া চলে। ইমরান-জেরিনের 'পেন্টহাউস' সময়গুলোতে ডোনা আর কখনোই ইরিটেটিং ফ্যাক্টর হয়ে আসেনি। জেরিন আসতে দেয় নি।

দেখতে দেখতে একদিন চলে এলো ডোনার উইন্টার ভ্যাকেশন। আবারো স্থির হলো ইমরান আনতে যাবে। নিদৃষ্ট দিনে অন্য গার্ডিয়ানের সাথে ইমরানও ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে লাগল। একের পর এক মেয়েরা লাগেজ-টাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসছে। ডোনার খবর নেই! প্রায় সবার শেষে বেরিয়ে এলো ডোনা।

ভূত দেখার মত চমকে উঠল ইমরান! একি! এ কোন ডোনা? হঠাৎ করে যেন পাঁচ বছর বয়স বেড়ে গেছে, চোখের নিচে হালকা কালির পোঁচ,তিন-চারটা অসভ্য টাইপ ব্রণ ঢিবির মত ফুলে আছে! কালো কুঁচকুঁচে চুলে অন্য দু’তিন ধরণের রঙের পোঁচ,গলায় একগাছি কালো সূতোর সাথে একটা ক্রস ঝুলছে......ইমরানকে হা করে থাকতে দেখে একটু রাগ হয়েই ব্যাগট্যাগ গুলো মাটিতে ফেলে ডোনা বলল- ‘ব্যাপার কি,আমাকে নিতে এসেছ না দেখতে এসেছ?’ ‘সরি বেব। ’ কথা না বাড়িয়ে চার্টার করা ড্রাইভার আর ইমরান ডোনার ব্যাগট্যাগ বনেটে রেখে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি স্টার্ট নেওয়ারও আধা ঘন্টা কেউ কোন কথা বলল না। অবশেষে নিরবতা ভেঙ্গে ডোনাই বলল- ‘ম্যাম ভাল আছে?’ ‘হুমম’। ‘তুমি ভাল আছ’? ‘হুমম’।

‘কি হুমম হুমম করছ? কি হয়েছে তোমার ,এনি প্রবলেম?’ ‘নোও বেব,কিচ্ছু না, তোমাকে দেখে অবাক হয়েছি,মেলাতে পারছি না.....ক’মাস আগে কাকে রেখে গেলাম আর এখন কাকে নিয়ে যাচ্ছি?’ ‘মানে’? ‘মানে.তোমার এ কি অবস্থা ! তুমি কি নিজেকে দেখেছ তোমার কি হাল হয়েছে?’ ‘ইয়াপ, আই থিংক নো প্রব উইথ মি, হাউ ফানি তুমি এসব নিয়েও ভাব?’ মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠল যেন,কিন্তু মুখে কিছুই বলল না। কার্সিয়াং পেরিয়ে একটা ইউটার্ণে গাড়ি গুলো হল্টেজ নেয়। ওখানে কয়েকটা রেস্টুরেন্টমত আছে। ইমরান রেস্টুরেন্টে ঢুকেই চলে গেল পেছনে। ড্রিংকসের ব্যবস্থা আছে।

ঢকঢক করে তিনটা পেগ মেরে দিয়ে এসে দেখে ডোনা টেবিলে নেই! অথচ ওকে এখানে বসিয়ে কফির অর্ডার দিয়ে ইমরান পেছনে গেছিল! রেস্টুরেন্টের মালিকও কিছু বলতে পারল না। একটা পিচ্চি মত বয় হাত তুলে দেখিয়ে বলল-‘মেমসাব দো আদমি কো সাথ উধার'....বাকিটুকু আর শোনার অপেক্ষায় না থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো ইমরান.....কি এক অমঙ্গল আশঙ্কায় ও দৌঁড়াচ্ছে সেটা ও নিজেই বুঝতে পারছে না,শুধু এতটুকু বুঝতে পারছে ডোনা অচেনা হয়ে গেছে..... যে কোন সময় হারিয়ে যাবে ! মাইল খানেক যাবার পর ডোনার দেখা মিলল। একটা গ্যারেজের বেড়ায় ঠেস দিয়ে ডোনা দাঁড়িয়ে আছে,আর ওর কোমর পেঁচিয়ে দাড়ানো একটা ছেলে! হন হন করে হেঁটে গিয়ে ছেলেটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচন্ড জোরে ঘুসি মারল ও। তাল সামলাতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে গেল ছেলেটা। ডোনা নির্বিকার।

ছেলেটা উঠে দাঁড়াতেই আবার ঘুসি....তার পর তার বুকে পেটে লাথি মারতে মারতে যখন আর সে নড়ছে না তখন শান্ত হলো ইমরান। ডোনার হাত ধরে টানতে টানতে এনে গাড়িতে বসল। এতক্ষণ একটি কথাও বলেনি ডোনা। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর ঘাড় কাত করে ঠোঁটে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল-‘অমিতাভ না রজনীকান্ত? ফিল্মি রেসকিউ হলো ?’ কথাটা শুনেই গা-জ্বলে গেল ইমরানের, কিন্তু নিজেকে সংযত রাখতে পারল। সোজা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে ও।

মাথার ভেতর শত মাইল বেগে চিন্তাগুলো দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কি হয়েছে ডোনার? কেন? কবে থেকে? কোন কুল-কিনারায় পৌঁছুতে না পেরে নিজের ওপরই রাগ হলো ওর। আবার সেই হোটেল। আবার নাইট হোল্ড। আবার ডিনারের পর দুজন এক খাটে চলে আসা।

আবার ডোনা আগে সক্রিয় হওয়া.....কিন্তু এবার যখন ইমরানের মনে আগের মত সংশয় নেই,ও যখন পরিপূর্ণ ভাবে প্রস্তুত তখন কেন যেন ও বুঝতে পারল ডোনা ঠিক আগের মত সাড়া দিচ্ছে না। এবং এবার ডোনা কে অনেক ম্যাচিউর মনে হচ্ছে। ধিক ধিক করে জ্বলে ওঠা আগুন অনেকক্ষণ ধরে জ্বলল, দুজনেই সেই আগুনে শিক কাবাবের মত ঘুরে ঘুরে পুড়ল। এক সময় আগুন নিভে ঝড় শান্ত হলে ইমরান হঠাৎই ডোনাকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞেস করল- ‘একটা সত্যি কথা বলবে ডোনা?’ ‘হুমম’ ‘কি হয়েছে তোমার,এনি প্রবলেম?’ ‘নোওপ’ ‘আলবত হয়েছে,আমাকে লুকোবে না,প্লিজ ডোনা কি হয়েছে বল?’ মুখ তুলে অনেকক্ষণ ইমরানকে দেখল ডোনা, তার পর ইমরানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলতে শুরু করল- ‘আমি রেপড হয়ে যাচ্ছিলাম’.. ‘হোয়াট? কি বলছ এসব?’ ‘ঠিক। আমি রেপড হয়ে যাচিছলাম।

শেখর নামে আমার এক সিনিয়র ফ্রেন্ড আর তার দুজন ফ্রেন্ড আমাদের কেয়ার টেকারকে ঘুষ দিয়ে আমাকে মিরিক নিয়ে গেছিল.....’ ‘তার পর’? ‘ওখানে যেয়ে আমরা খুব মজাও করেছিলাম। ফেরার পথে গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে ওরা আমাকে গাড়ির মধ্যে জোর করে...... ‘স্টপ,প্লিজ স্টপ’ ‘কেন শোন না, ওরা প্রথমে..... ‘ডোনা আমি বলছি স্টপ..’ ‘হোয়াই ম্যান? শুনতে চাওনা কেন? রেপ ব্যাপারটা এক্সাইটিং.....অন্যরকম মজা.....কেমন একটা ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ব্যাপার.........ইমরানের আর সহ্য হচ্ছিল না, ঠাস করে চড় মেরে বসল । বিছানার ওপর লুটিয়ে পড়ল ডোনা। আত্মগ্লানিতে যখন ইমরান পুড়ে আবার গলে যেতে চাইছে সেই সময় খুব শান্ত গলায় ডোনা বলে উঠল- ‘ডু ইউ নো,হোয়াটস দ্য মিনিং অব লাইফ টু মি? নাথিং। আমি খুব ছোট বেলায় রামু কাকুর কাছে শুনেছি, ম্যাম বাবার সব এ্যাসেটের একা মালিক হওয়া জন্য বাবাকে খুন করেছে।

আমি বিশ্বাস করিনি। ম্যামকে দেখেছি অনেক রাত করে ক্লাব থেকে ফিরতে। আমি মেইডদের সাথে খেয়ে একা একা ঘুমিয়ে পড়েছি। কত দিন সখ হয়েছে ম্যামকে জড়িয়ে ধরে শোব........পারিনি! আমাকে ছ’বছর বয়সের সময় দার্জিলিং পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি রোজ রাতে কাঁদতাম, রোজ।

ও লেভেলে ওঠা পর্যন্ত মাঝে মাঝেই মনে হতো পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে যাই। যখন আমার বুকের এখানটায় ফুলে উঠতে শুরু করল,নিজের শরীরের এখানে ওখানে নিজের হাত লাগলেই শির শির করে ভাল লাগতে শুরু করল, তখন আমি নিজেকে অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করলাম.....আমার শরীর টা নিয়ে তখন আমার সারাদিন খেলতে ইচ্ছে করত। এই খেলার মধ্যেই আমার সব কিছু আমি খুঁজে পেতাম.... ‘ডোনা’,আলতো করে ডাকল ইমরান। বুকের সঙ্গে মুখ ঠেকিয়ে শুধু ‘উ’ বলল ডোনা। একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে শ্রান্ত।

বাড়ি ফেরার পর ইমরান খুব যত্ন করে ডোনাকে এড়িয়ে চলতে লাগল। ওর ভয় জেরিন সামান্য একটু আঁচ পেলেই বাকিটা মিলিয়ে নেবে। ডোনাও প্রথম কয়েক দিন বাড়ির চাকর-বাকর,কুকুর,বেড়াল,পাখি,মাছ নিয়ে কাটিয়ে দিল। একটু দূর থেকে দেখলে এই তিন জনের পরিবারটির কোথাও কোন অসঙ্গতি বা অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়বে না। এভাবে কেটে গেল আরো দিন সাতেক।

এক দিন বাইরে ঝম ঝম করে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শোঁ শোঁ শব্ধ আর অঝরে বৃষ্টি ঝরে চলেছে। আগের নিয়মেই ইমরান জেরিন ডোনা নিজ নিজ ঘরে । আজ আর ইমরান আসেনি জেরিনের ঘরে। জেরিন না ডাকলে অবশ্য আসেও না।

জেরিন তার প্রয়োজনে একটা বিশেষ পদ্ধতিতে ইমরানকে ডেকে নেন। জোরে বৃষ্টির শব্দে জেরিনের ঘুম ভেঙ্গে গেছিল। জানেন ব্যালকনিতেও বৃষ্টি পড়ছে তবুও হেঁটে হেঁটে ব্যালকনিতে এলেন। মুখে বৃষ্টির ছাঁটা লাগছে, মনটা কেন যেন প্রশান্তিতে ভরে গেল। তার পর কি মনে করে ডোনার রুমের দিকে গেলেন।

জানালার কার্টেন সরিয়ে অবাক হলেন! ডোনা ঘরে নেই! ভাবলেন হয়ত ওয়াশ রুমে আছে। ফিরতি পথে স্রেফ কৌতুহল বশে ইমরানের জানালার ধারে দাঁড়ালেন। বন্ধ। দেখার উপায় নেই। ফিরে যাবেন.....ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ একটা গোঙ্গানির মত শব্দ শুনলেন যেন, কৌতুহল বেড়ে যাওয়ায় সরে গেলেন না।

আর ঠিক তখনই চরমানন্দের শেষ শীৎকার কানে এলা ! বরফের মত জমে গেলেন ! মনে হলো কানে কেউ সীসা গলিয়ে ঢেলে দিয়েছে.....দেওয়াল ধরে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন.....অঝরে ঝরা বৃষ্টি নয়, মনে হলো ছোট ছোট পাথরখন্ড আকাশ থেকে পড়ে জেরিন কে জ্যান্ত কবর দিচ্ছে... চলবে......
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।