আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এন্টিগল্প > বিটার মুন > পার্ট টু >

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
১৮+ তার পরও ইমরান গুম হয়ে পড়ে ছিল। বুকের ভেতর সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছিল। শরীরের কোন পার্টই আর শাসন মানতে চাইছিল না। নৈতিকতা,বিশ্বাস,ভালবাসা-স্নেহ সব ঘোট পাকিয়ে একবার ফলাফল ঘোষণার দিকে যাচ্ছিল আবার অন্ধকারে হারাচ্ছিল। কতক্ষণ এভাবে কাটল ঠাওর হয়নি,হঠাৎ এ সময় ডোনা ঘসে এসে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল....সাথে সাথে এতক্ষণ প্রবল চাপ ঠেকিয়ে রাখা বালির বাঁধ ভেঙ্গে গেল.. হড়হড় করে বাঁধভাঙ্গা জল ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব কিছু..... কারো কারো এরকম হয়,শরীরের সব অর্গান একসাথে সাড়া দেয় না।

কোন একটা বিশেষ অর্গান অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকে,সেখানে ছোঁয়া লাগলেই অগ্নুৎপাত হয়ে যায়। চুমু ব্যাপারটা ইমরানের কাছে সেরকমই। ওটা না হলে হয়ত এ যাত্রায় রক্ষা হলেও হতে পারত। এর পরে যে ভয়টা ছেঁকে ধরল সেটা ইম্ম্যাচিওর বডি নিয়ে ভয়। নৈতিকতা আর ওই সব বাধা-টাধা তখন পরাজিত হয়ে একেবার কোণায় আশ্রয় নিয়েছে।

কিন্তু সাবলিল ভাবে সব কিছু হয়ে যাবার পর আসল বিস্ময়। নিরেট বিস্ময়! এ কি করে সম্ভব ! ইমরান যখন ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল,তখন গুটিশুটি দিয়ে নিস্পাপ স্নিগ্ধ মুখটা গভীর ঘুমে অচেতন। শরীরী যন্ত্রণাগুলো শান্ত হওয়া পর আবার সেই কোণায় সরে যাওয়া নৈতিকতা বিষয়গুলো ডোমিনেটিং পজিশনে চলে এলো। এবার ইমরানের ভেতর সত্যি সত্যি গ্লানিবোধ সদলবলে উঠে আসতে লাগল। তবে সবখানেই দেখা যায় অনৈতিক বা অন্যায় ব্যাপারগুলোকে জয় করার জন্য মানুষের সামনে নানা ধরণের সঞ্চিত এবং অর্জিত ব্যাখ্যা হাজির হয়ে যায়।

ইমরান বুদ্ধিমান। তাই সে গ্লানিবোধ ঝেড়ে ফেলার জন্য পেয়ে গেল মোক্ষম এক যুক্তি ! ডোনার এটাই ফাস্ট টাইম নয়! শী ওয়াজ নট আ ভার্জিন! এক ঝটকায় গ্লানি এবং পাপবোধ কমে এলো ! তার জায়গায় অহেতুক এক ধরণের দায়িত্ববোধ উদয় হলো। কে কবে কি ভাবে এটা করল ? ডোনা কি কারো দ্বারা ইউজড ? নাকি কারো সাথে গভীর প্রণয় ? আবোল-তাবোল আরো কিছু ইম্পোজড ভাবনার সমাধি করে ও ঘরে এসে দেখল তখনো নিঃশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ডোনা। কি মনে করে ডোনার ব্যাগটা টেনে বের করল ও। এটা ওটা হাতড়ে অবশেষে পয়ে গেল ও যা সন্দেহ করেছিল সেটা! ড্রাগ! এলএসডি! এবার অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল।

এইটুকু মেয়ের একম আনএক্সপেক্টেড হট হয়ে ওঠার কারণ পাওয়া গেল। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে,তবুও বিষয়টা মাথায় খেলতে দিল ও। সে রাতে আর কোন ব্যাতিক্রমধর্মি কিছু ঘটেনি। সারা রাত আর একবারের জন্যও ডোনার ঘুম ভাঙ্গেনি। ওকে না ডেকে ইমরান অন্য বিছানায় শুয়ে পড়েছিল।

সকালে গোছগাছ করে আবার সুমো রিজার্ভ করে রওনা হলো ওরা। সকালে হোটেল রুমে বা গাড়িতে ইমরান একবারও সরাসরি ডোনার দিকে তাকাতে পারছিল না। অনেক সময় পর ও বুঝল,গত রাতের কোন কিছুই ডোনার মনে কোন কাজ করছে না। এতটুকু পরিমানে লজ্জা বা সংকোচ দেখা যাচ্ছে না ওর ভেতরে। এতে করে ইমরানও হালকা বোধ করতে লাগল।

ডোনাই প্রথম গুমোট পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করল। খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল- ‘তুমি এর আগে এখানে কোন দিন এসেছ?’ ‘নাহ্,এবারই প্রথম,অনেক শুনেছি এখানকার কথা। ’ ‘প্রথম প্রথম আমার খুব ভয় লাগত,ট্রেইল করার সময়, মনে হতো এই বুঝি গাড়িটা গড়িয়ে পড়ে যাবে.....সিট বেল্ট থাকার পরও সিট আঁকড়ে বসে থাকতাম....এখন আর ভয় লাগে না। ’ ‘হ্যাঁ আমার প্রথম তো,তাই একটু ভয় ভয় করছে.....’ খিল খিল করে হেসে উঠে বাচ্চা মেয়ের মত ইমরানের গায়ে থাবড়া দিয়ে ডোনা বলে উঠল- ‘এ্যা মা,তুমি এত্তো বড় মানুষ ভয় পাও ?’ ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে ডোনার দিকে তাকাল ইমরান। ডোনা গুন গুন করে একটা সুর ভেঁজে চলেছে জানালার বাইরে তাকিয়ে।

খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে এবার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো ইমরানের! হাত-পা শির শির করে চোখে জল চলে এলো! ডোনার নিঃষ্পাপ নিঃষ্কলঙ্ক ফুলের মত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছিল না.....ইচ্ছা হচ্ছিল ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করে চিৎকার করে বলে ওঠে......‘ডোনা,মাগো আমাকে ক্ষমা কর মা! আমি এ কি পাপ করে ফেললাম !’ কিন্তু ডোনা আবার ঝট করে ঘুরতেই সেটা আর বলতে পারল না। ডোনা কিছু একটা আন্দাজ করে অথবা এমনিতেই প্রশ্ন করে বসল- ‘তুমি কি কিছু ভাবছ?’ ‘কই না তো?’ ‘হ্যা ভাবছ,আমাকে বলবে না?’ ‘না না ,এই ভাবছি....আর কিছুক্ষণ পরে তোমাকে রেখে ফিরে আসতে হবে.....এই আর কি..’। ‘ম্যাম যখন আগে আগে আমাকে রেখে চলে যেত,আমারো তখন খুব কান্না পেত,হস্টেলের দোতলায় দাঁড়িয়ে দেখতাম ম্যামের গাড়িটা নেই হয়ে যেত। তখন খুব কাঁদতাম। পরের দিকে আর তেমন কান্না আসত না’।

ইমরানের কান্নাটা এবার সামলানো খুব কষ্টর হবে বুঝতে পেরে ডোনাকে কাছে টেনে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে আদর করতে লাগল.......হঠাৎ ডোনা দেখতে পেল ইমরানের চোখের জল! ‘তুমি কাঁদছ? কেন? আমি তো এখানেই থাকি,থাকব। তার পর আবার উইন্টারের ছুটিতে বাড়ি। ’ ‘না না কাঁদছি কোথায়,এমনি মনটা ভাল্লাগছে না..’ ‘জানি,তুমি আমার জন্য কাঁদছ...... আচ্ছা আমার ড্যাড থাকলেও মে বি এভাবে কাঁদত..?’ ইমরান অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগল এক পিতৃহীন অবুঝ মেয়ের পিতৃস্নেহের দুর্বার আকাঙ্খা আর অচেনা অজানা পিতার কথা ভেবে জানালা দিয়ে অসীম শূণ্যে পিতা খোঁজার অলিক চেষ্টা। অথচ কি আশ্চর্য্য গত রাতে এত কিছু ঘটে গেছে তার বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা ডোনার চোখে মুখে কোথাও নেই। একটা সময় ডোনার স্কুলের সামনে এসে থামল ওদের সুমো।

মালপত্র নামানো শেষ হলে ডোনা গেটে দাঁড়িয়ে ইমরানের হাত ধরল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। ইমরান ডোনার মুখটা তুলে ধরে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে চুমু খেল। হাত বুলিয়ে আদর করল। ও ইচ্ছা করলে আরো এক-দু’দিন থাকতে পারে,কিন্তু ডোনা আর বেরুতে পারবে না।

তাই ও এই গাড়িতেই ফিরে যাবে। কতক্ষণ কেটেছে কেউ জানে না,একসময় হাত ছেড়ে দেবার সময়ও ঘনিয়ে এলো। ইমরান হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল- ‘আমি আসি তাহলে ম্যাম’? ঝট্ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ডোনা বলে উঠল- ‘নোও, ডোন্ট সে ম্যাম,য়্যু আর নট মাই ড্যাড?’ ‘হোয়াই নট? তুমি বড় হয়েছ,বুঝতে পারছ না ?’ ‘রিমেম্বার ইয়োর লাস্ট নাইট,মিঃ ইমরান,আ্যাম নট আ বেইবি,ওক্কে?’ কথাটা শেষ করেই পেছন ফিরে ধীর পায়ে হেঁটে চলে গেল ডোনা। পেছনে দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে বড় আর ভারি পাথরটার মত দাঁড়িয়ে থাকল ইমরান। ইচ্ছা হলো দৌড়ে গিয়ে ডোনাকে ফিরিয়ে গড় গড় করে সব কথা বলে হাল্কা হয়,যে কথা গুলো ক্রমেই ডালপালা গজিয়ে বড় হচ্ছে,আর সারা শরীর ছড়িয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু কিছুই বলা হল না,কিছুই করা হল না। পাথরটা আরো ভারি হয়ে সুমোয় চেপে বসল। গিয়ার চেঞ্জ হলো সুমোর....সেকেন্ড,থার্ড,ফোরথ...........দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডোনার চোখ মোছার ঘটনাটা কেউ দেখতে পেল না। চলবে.........
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।