আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৯

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৯ Click This Link রায়হান এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের হাইপোথিসিস হচ্ছে মাত্র দুটি : (১) ক্রিয়েটর আছে (ONE); (২) ক্রিয়েটর নেই (ZERO)। এই দু’য়ের মাঝামাঝি কোন সম্ভাবনা থাকতেই পারে না। অতএব মুসলিমরা ‘এয়াবসলিউট জেরো’ হাইপোথিসিসে বিশ্বাস করে না, যেটি সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক একটি বিশ্বাস। ইতোমধ্যে কিছু উদাহরণের সাহায্যে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে কীভাবে অন্যান্য ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস, ফিলসফি, ও রিচুয়াল ভুল, অবাস্তব, অমানবিক, অবৈজ্ঞানিক, ও ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। ইচ্ছে করলে এরকম আরো উদাহরণ দেওয়া সম্ভব।

আর ভার্স-বাই-ভার্স বিশ্লেষণে গেলে তো শেষ হবে না। তবে যুক্তিবাদীদের জন্য এটুকুই যথেষ্ঠ। এই যখন বাস্তবতা, তখন কোরানের পৃথিবী ‘সমতল’ নাকি ‘অনড়’ সেটা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে (অপ)বিজ্ঞানের নামে ‘গবেষণা’ চালিয়ে আমজনতাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। কোরানের আলোকে পৃথিবী যদি সত্যি সত্যি সমতল ও অনড় হত তাহলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পেইন করে একই বিষয় বার বার বুঝানোর দরকার পড়তো না নিশ্চয়। একবার ঠিকমত বুঝালেই সবাই বুঝে যেত।

প্রকৃতপক্ষে একমাত্র কোরান ছাড়া অন্য কোন ধর্মগ্রন্থকে ভুল, অবৈজ্ঞানিক, হেইটফুল, ভায়োলেন্ট, ও এয়ান্টি-উম্যান প্রমাণ করার জন্য প্রতারণা ও জোচ্চুরির আশ্রয় নিয়ে নামে-বেনামে নিয়মিত ক্যাম্পেইন করা হয় না। যাহোক, দ্বিতীয় পর্বে যুক্তির সাহায্যে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোরানের আলোকে পৃথিবী আসলে স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান; কোনভাবেই সমতল ও অনড় নয়। মজার বিষয় হচ্ছে, কোরানকে যতই ‘কালো’ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে ততই কোরানের ঔজ্জ্বল্য বাড়ছে। কোরানের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ নিয়ে স্টাডি করতে যেয়ে দেখা যাচ্ছে যে, কোরানে ঠিক তার বিপরীতটাই আছে! কোরানের মিরাকলের যেন শেষ নেই! কোরানের কোথাও যেহেতু পৃথিবীর আকারকে সরাসরি ‘সমতল’ বলা হয়নি … কোরানের কোথাও যেহেতু ‘পৃথিবী ঘুরছে না’ এমন কথা সরাসরি লিখা নেই … এবং কোরানে বিশ্বাসীরা যেহেতু কোরানকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে … সেহেতু তাদের অবশ্যই অধিকার আছে আয়াতগুলোকে পজেটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার। এক্ষেত্রে অযৌক্তিকতা বা অনৈতিকতার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

অন্যদিকে সুস্পষ্ট কোন যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই যারা কোরানের পৃথিবীকে জোর করে ‘সমতল’ ও ‘অনড়’ বানানোর জন্য বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পেইন করে তারা এয়ান্টি-ইসলামিক প্রোপাগান্ডিস্ট। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে অন্যান্য ধর্ম ও ফিলসফির দরজা যেখানে বন্ধ হয়ে আসছে সেখানে ইসলামের দরজা দিন দিন উম্মুক্ত হচ্ছে। আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ মনুষ্য রচিত ধর্ম ও ফিলসফি সময়ের সাথে বেশীদিন যে তাল মিলাতে পারবে না সেটা তো সবারই জানা। ফলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাই আসলে কিছু অযৌক্তিক, অমানবিক, অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, এবং ব্যাকডেটেড বিশ্বাস ও ডকট্রিনকে আঁকড়ে ধরে আছে।

তার মূল কারণ হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্তচিন্তার অভাব। তবে সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত রেসিজম ও ন্যাশনালিজম। “আপনি বলুন : যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? জ্ঞানবান লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। ” (কোরআন ৩৯:৯) মানুষ যত বেশী জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করবে … যত বেশী রেসিজম-ন্যাশনালিজম থেকে মুক্ত হবে … যত বেশী ব্রডমাইন্ডেড হবে … মানুষকে যত বেশী মুক্তচিন্তার সুযোগ দেওয়া হবে …… তত বেশী তারা ইসলাম-মুখী হবে। আর এ কারণেই এশিয়া-আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলো থেকে আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে যেয়ে মুসলিমরা ইসলাম পালনে বেশী সচেতন ও মনোযোগী হয়।

আর এ কারণেই এতটা প্রোপাগান্ডা ও বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমেরিকা-ইউরোপে ইসলাম গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশী। আমেরিকা-ইউরোপের ফ্রীডম ও জৌলুসকে স্যাক্রিফাইস করে ইসলামের স্ট্রিক্ট সিস্টেমের মধ্যে আসা চাট্রিখানি কথা নয়; যেখানে আবার ইসলাম, প্রফেট মুহাম্মদ, ও মুসলিমদেরকে ঠেররিস্ট, এক্সট্রিমিষ্ট, ফ্যানাটিক, স্যাটানিক, ইভিল, ব্যাকওয়ার্ড, অসভ্য, বর্বর, এয়ান্টি-উম্যান, ইত্যাদি বলে দিন-রাত প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও অন্যান্য অনুন্নত দেশে লোকজন ইসলামে ধর্মান্তরিত হয় না বললেই চলে! কারণটা কিন্তু সহজেই অনুমেয়। “তারা আপনার কাছে এমন কোন বিস্ময়কর সমস্যা নিয়ে আসেনি, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আপনাকে আমি দান করিনি। ” (কোরআন ২৫:৩৩) মুসলিমরা যেহেতু কোরানকে কাভার-টু-কাভার এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু তাদের ব্যাকডেটেড হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী কি কখনো ব্যাকডেটেড হতে পারে!?! দেড় বিলিয়নেরও বেশী মানুষ কোরানকে কাভার-টু-কাভার এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে … যথাসাধ্য ফলো করার চেষ্টা করে … এবং সেই সাথে ডিফেন্ডও করে। কোরানের অনেক মিরাকলের মধ্যে এটিও একটি মিরাকল। অন্যদিকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ইচ্ছে করলেও কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থকে কাভার-টু-কাভার এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস ও ফলো করতে পারবে না। আর এখানেই তারা বিপদে পড়ে গেছে। ফলে ধর্ম থেকে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে বের হয়ে কিছু ‘আকর্শনীয়’ লেবেলের মধ্যে মাথা গুঁজে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে।

ব্যাপারটা ‘আদার ওয়ে রাউন্ড’ হলে কিন্তু উল্টোদিকে সুর ধরা হত! “আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, এবং কারও প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলুম করা হবে না। যদি কারও আমল সরিষার বীজ পরিমাণও হয়, তবে তাও আমি হাজির করব। হিসাব-নিকাশ গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। ” (কোরআন ২১:৪৭) কোরান অনুযায়ী আল্লাহ্‌ হচ্ছেন এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর। কোরানে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর নিজেই কোরানকে তাঁর বাণী (Revelation) বলে দাবি করেছেন।

মুসলিমরাও বিগত চৌদ্দশ’ বছর ধরে ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করে আসছে। তাদের বিশ্বাসের স্বপক্ষে অনেক যুক্তি-প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে তাদের বিশ্বাস দুর্বল হওয়া তো দূরে থাক, দিন দিন বরং শক্তিশালীই হচ্ছে। এতটা চড়াই-উৎড়াই ও বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তারা তাদের অবস্থান থেকে এক চুল পরিমাণও পিছুটান দেয়নি। হাজার হাজার স্কলার থেকে শুরু করে মিলিয়ন মিলিয়ন উচ্চ শিক্ষিত কোরানে বিশ্বাসীরা অত্যন্ত জোর দিয়ে দাবি করছেন যে, কোরানে সুস্পষ্ট কোন ভুল-ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি বা অবৈজ্ঞানিক তথ্য নেই।

এ পর্যন্ত কোরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সবগুলো অভিযোগের যৌক্তিক জবাবও দেওয়া হয়েছে। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও রিচুয়ালের সাথে বিজ্ঞান ও মানবতাবাদের কোনরকম সংঘর্ষও নেই। ফলে কোরানে বিশ্বাসীরাই পজেটিভ এয়াপ্রোচ নিয়ে কোরানকে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে ম্যাচ করানোর যৌক্তিক ও নৈতিক অধিকার রাখে। অথচ তাদেরকে নিয়েই হাসি-তামাসা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহ তাদের দাবির বিরুদ্ধেই আবোল-তাবোল প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। তাছাড়া এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে যারা বিশ্বাস করে তারা তো স্রেফ অজ্ঞ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।

তবে এ কথাও সত্য যে, সবাই সহজ-সরল ভাবে সবকিছু মেনে নাও নিতে পারে। কিন্তু তাতে কোন সমস্যা নেই। মেনে নেওয়ার জন্য কাউকে তো জোর-জবরদস্তি করা হচ্ছে না। একদম চ্যালেঞ্জ করেই বলা যেতে পারে যে, কোরানে ‘ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই’, ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’, ‘সত্য তোমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে; অতএব যার ইচ্ছে হবে বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছে হবে অবিশ্বাস করুক’ - কথাগুলো অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ও যতবার বলা আছে, এই পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মগ্রন্থে ততটা সুস্পষ্টভাবে ও ততবার বলা নেই। নমুনা দেখুন : ২:২৫৬, ১০:১০৮, ১০৯:৬, ২২:৬৭-৬৯, ৪২:১৫, ১০:৪১, ২:১৩৯, ৪২:৬, ৬:১০৪, ১০:৯৯, ৩৯:৪১, ১১:১২১, ৭৩:১৯, ৪৩:৮৮-৮৯, ২:২৭২, ৭৬:২৯, ১৮:২৯, ৪২:৪৮, ৭৬:৩, ৩:২০, ৮৮:২১-২২, ১৫:৩, ১৭:৮৪, ৬:১১০, ১০:১১, ১১:১২১, ৫২:৪৫, ২:৬২, ২:১১১-১১২, ৫:৬৯, ২২:১৭, ৪:১৬০-১৬২, ১০৩:১-৩, ৩৪:২৮, ২১:১০৭, ২২:৬৭, ১০:৪৭, ৩৫:২৪, ১৬:৩৬, ৬৮:৫২, ৬:১০৭-১০৮, ৪৯:১১, ৬:৬৮, ৬০:৭-৯, ৩৯:৩, ১৬:১২৬-১২৮, ৭৩:১০, ১৯:৪৬-৪৭, ২৯:৪৬, ৪৯:১৩, ইত্যাদি।

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা থেকে যায়। যেমন একজন মাদ্রাসার ছাত্র যদি নিউটন-আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে হাসি-তামাসা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য শুরু করে দেয় এবং সেই সাথে বছরের পর বছর ধরে প্রোপাগান্ডা চালায় তাহলে সবাই তাকে পাগল ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না নিশ্চয়। সে হয় পাগল অথবা তার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিউটন-আইনস্টাইনকে ডিফেম করা। অনুরূপভাবে, আল-কায়েদা ঠেররিস্ট অথবা বাংলাভাই টাইপের কেউ যদি সেক্সপীয়ার-রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের মান নিয়ে বছরের পর বছর ধরে হাসি-তামাসা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ও প্রোপাগান্ডা চালায় সেক্ষেত্রেই বা কেমন লাগবে! তাঁদের লেখা বা তত্ত্বের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে রয়ে-সয়ে, চিন্তা-ভাবনা করে, যুক্তি দিয়ে, এবং যথাযথ সম্মান রেখেই তবে বলতে হবে। যে ধর্মগ্রন্থে নেই কোন ডাইনীদাহ প্রথা (বিশেষ অনার কিলিং), নেই কোন সতীদাহ প্রথা (বিশেষ অনার কিলিং), নেই কোন অনার কিলিং প্রথা, নেই কোন বর্ণবাদ প্রথা, নেই কোন জাতিভেদ প্রথা, নেই কোন ক্রীতদাস প্রথা, নেই কোন অস্পৃস্য প্রথা, নেই কোন যৌতুক প্রথা, নেই কোন নরবলি প্রথা, নেই কোন এয়াপোস্টেট হত্যা, নেই কোন ব্ল্যাসফেমার হত্যা, নেই কোন বিধর্মী হত্যা, নেই কোন পাথর মেরে হত্যা, নেই কোন আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, নেই কোন নারী শিশু হত্যা, নেই কোন পর্ণগ্র্যাফি, নেই কোন ইনসেস্ট, নেই কোন অরিজিনাল সিন, নেই কোন প্রিভিয়াস সিন, নেই কোন ম্যান গড, নেই কোন মাঙ্কি গড, নেই কোন ফাদার-সান-হলিঘোস্ট গড, নেই কোন প্রিস্টহুড, নেই কোন সন্ন্যাসবাদ, নেই কোন কুসংস্কার, নেই কোন, নেই কোন …… এর পরও এরকম একটি গ্রন্থের বিরুদ্ধে যারা বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আমজনতাকে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করে তারাই আসলে অযুক্তিবাদী, অন্ধবিশ্বাসী, অসৎ, প্রতারক, ফ্যানাটিক, ও প্রতিক্রিয়াশীল বাইগট।

শুধুমাত্র বিরোধীতার খ্যাতিরে কোন কিছুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেই অটোমেটিক্যালি প্রগ্রেসিভ ও ফ্রীথিংকার হওয়া যায় না। তা-ই যদি হত তাহলে এই পৃথিবীর সবাই আসলে প্রগ্রেসিভ ও ফ্রীথিংকার! কারণ এই পৃথিবীর প্রত্যেকেরই অবস্থান কোন-না-কোন কিছুর বিরুদ্ধে। ফলে এই যুক্তি অনুযায়ী হিটলার, স্ট্যালিন, পল পট, সাদ্দাম, প্যাট রবার্টসন, জন হ্যাগী, জর্জ বুশ, এল.কে. আদভানী, নরেন্দ্র মোদী, বিন লাদেন, ও বাংলাভাই টাইপের লোকজন কিন্তু সর্বকালের সেরা প্রগ্রেসিভ ও ফ্রীথিংকার হওয়ার কথা! কিন্তু সেটা তো কেউই মেনে নেবে না! অতএব কে বা কারা প্রকৃত প্রগ্রেসিভ ও ফ্রীথিংকার সেটা নির্ভর করবে তাদের বিশ্বাস কতটা লজিক্যাল, রাশনাল, মানবিক, বৈজ্ঞানিক, ও সর্বোপরি বাস্তবিক তার উপর। প্রকৃতপক্ষে এয়াবসলিউট ফ্রীথিংকার বা সংশয়বাদী বলে কিছু নাই। কারণ স্বঘোষিত ফ্রীথিংকার বা সংশয়বাদীরা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে না।

উদাহরণস্বরূপ, একজন মাদ্রাসার হুজুর যেমন গডের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে না তেমনি আবার প্রফেসর ডকিন্সও গডের অনস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন না। তাহলে এই দু’জনার মধ্যে কে বেশী বুদ্ধিমান ও যুক্তিবাদী? অবশ্যই মাদ্রাসার হুজুর! কারণ এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর না থাকার চেয়ে থাকার সম্ভাবনা অ-নে-ক অ-নে-ক গুণ বেশী। অধিকন্তু একজন মাদ্রাসার হুজুর যেমন হিটলার-স্ট্যালিন ও তার ভিকটিমদের ন্যায়বিয়ারে বিশ্বাস করে তেমনি আবার তার নিজের অপরাধের ন্যায়বিচারেও বিশ্বাস করে। কিন্তু প্রফেসর ডকিন্স এগুলোর কোনটাতেই বিশ্বাস করেন না! তাহলে দু’জনার মধ্যে কে প্রকৃত মানবতাবাদী? আবারো মাদ্রাসার হুজুর। অতএব ‘আমি নাস্তিক’ বা ‘আমি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী’ বুলি আউড়িয়েই সবকিছু থেকে খালাস হওয়া যায় না! সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরে অবিশ্বাসের সাথে যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানবাদী, মানবতাবাদী, প্রগ্রেসিভ, ও ফ্রীথিংকার হওয়ার কোনই সম্পর্ক নেই! নাকি আছে! “স্মরণ কর সেদিনের কথা, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে কথা বলবে এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ ফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।

” (কোরআন ৩৮:১-২) কোরানে বিশ্বাসীরা যেহেতু কোরানকে কাভার-টু-কাভার এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু তারাই নিজেদেরকে প্রকৃত যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানবাদী, মানবতাবাদী, ও প্রগ্রেসিভ হিসেবে দাবি করতে পারে। এমন ‘উদ্ভট’ কথা শুনে কারো কারো চোখ হয়ত কপালে উঠতে পারে এই ভেবে যে, কোথায় আমেরিকা আর কোথায় আফগানিস্তান! কোথায় নাসা আর কোথায় মাদ্রাসা! তারপরও এ-কী শুনি! মাথা-টাথা খারাপ হল নাকি! ওয়েল, আমেরিকার সাথে আফগানিস্তানের তুলনা না করে ওয়ান-টু-ওয়ান তুলনা করতে হবে। অর্থাৎ কোরানের আলোকে একজন মাদ্রাসা হুজুরের বিশ্বাসের সাথে অন্য যে কোন ধর্ম বা ফিলসফির আলোকে একজন নাসা বিজ্ঞানীর বিশ্বাসের তুলনা করলেই কে প্রকৃত হুজুর (‘হুজুর’ যদি কোন অপমানজনক পদবী হয়) সেটা একদম দিনের আলোর মতই পরিষ্কার হওয়ার কথা। একটা সময় মিশর ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে। তারপর হয়ত ছিল চায়না।

এক সময় হয়ত ভারত উপমহাদেশও ছিল। তারপর ইরাক বা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল। মধ্যপ্রাচ্য যে সময় জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে ছিল, আমেরিকা ও ইউরোপ সেই সময় একদম অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই সময় আমেরিকার কোন পাত্তাই ছিল না! এটি একটি ফ্যাক্ট। ফলে এভাবে তুলনা করে কোন লাভ নেই।

এগুলো আপেক্ষিক ও ক্ষণস্থায়ী বিষয়। বরঞ্চ ইসলামের সান্নিধ্য বা ছায়াতলে থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও স্পেন সেই সময় জ্ঞান-বিজ্ঞানে যথেষ্ঠ উন্নতি করেছে। অন্যদিকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্ম থেকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বের হয় যাওয়ার পরই কেবল তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করেছে। এমনকি ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ‘সভ্য’ ও ‘মানবিক’ হওয়া শুরু করেছে। এদিক-সেদিক থেকে বিভিন্নভাবে ঠেলা খেয়ে মুসলিমরা যেভাবে সচেতন হওয়া শুরু করেছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে তারা হয়ত আবারো জ্ঞান-বিজ্ঞান ও টেকনোলজিতে উন্নতি করতে পারে।

কোরানকে প্রতিস্থাপন করতে হলে কোরানের চেয়ে সুপিরিয়র তত্ত্ব ও ফিলসফি অফার করতে হবে, যেভাবে কোরানে করা হয়েছে (২৮:৪৭-৫০)। আর সেটাই যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক নিয়ম। কিন্তু চৌদ্দশ’ বছর আগের মৃত একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন বা তাঁর বেডরুমে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে বা তাঁকে মৃগী রুগী বানিয়ে দিয়ে বা তাঁর মাথায় বোমা পেঁচিয়ে হিটলার, বিন লাদেন, ঠেররিজম, ও সুইসাইড বোম্বিং এর সাথে লিঙ্ক করে কিছু গালিবল লোকজনকে ব্রেইনওয়াশ করা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হবার নয়। সভ্য সমাজ ও বিজ্ঞান মহলে এই ধরণের জংলি অসভ্যতার কোন স্থানও নেই। (চলবে …)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.