আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্পিত [শেষ পর্ব]

I realized it doesn't really matter whether I exist or not.
The Following episode of the story contains mature contents. Some part of the story maybe unsuitable for children and the readers audience of 13 and below. Parental Guidance is recommended. অনুগ্রহ করে আগে প্রথম পর্ব পড়ুন এবং তারপর প্রতিটি পর্ব পড়ে গল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন। Click This Link রহস্য, রোমান্স ও থ্রিলের সমন্বয়ে রচিত অর্পিত গল্পটি সা.ইনে তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। তবুও গল্পের ধারাবাহিকতা অটুট রেখে আজ প্রকাশ করছি এর শেষ পর্ব। আশা করছি সবার ভাল লাগবে। ============================= [পূর্বের পর] ১. চরম মুহুর্তে আছি আমি।

প্রমাদ গুণছি। নকশীর কম্পনের মাত্রা আর কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে না কমলে আমার মৃত্যু অবধারিত। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছি নকশীর গলার দিকে। অনবরত কেঁপেই চলেছে মালার মাথা দু'টো। খুব খারাপ লাগছে।

কোন রকমে মালাটা লাগানো হলে নকশী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হতে পারতো। তা না হয়ে..। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় অপেক্ষা করছি কখন মালাটা নকশীর গলা থেকে পড়ে যাবে আর ও ভ্যাম্পায়ারের হিংস্রতায় আমার দিকে তেড়ে আসবে। কিন্তু বিধাতা বোধহয় আমাকে আরো কিছুদিন নকশীর সংস্পর্শে রাখতে চাইলেন। হঠাৎই লক্ষ্য করলাম নকশীর চেহারার ভাবমূর্তি কেমন যেন পাল্টে গেল।

হঠাৎই যেন ও দুর্বল হয়ে পড়লো। গলা থেকে মালাটা মাটিতে পড়ে গেল সেই মুহুর্তে। আমার একটা হৃদস্পন্দন মিস হয়ে গেল। অপেক্ষা করলাম নকশীর তেড়ে আসা দেহটার জন্য। মানসিকভাবে তৈরি হলাম মৃত্যুর জন্য।

কিন্তু না। নকশী আমার দিকে তেড়ে এলো না। বরং মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেল। প্রবল বাতাসের চেয়ে ওর নিঃশ্বাসের শব্দ আরো জোরালো হয়ে আমার কানে আসছে। বিষয়টা বুঝতেই আনন্দে মনটা নেচে উঠলো।

এত আনন্দ আমি কখনো উপভোগ করিনি। মালাটার কার্যকারিতা ফলে এসেছে। নকশীর ভ্যাম্পায়ারত্ব ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে গোফরান হুজুরের সেই কালো গুটির মালা। বিষয়টা বুঝতে পেরে আর দেরি করলাম না। দৌড়ে গেলাম নকশীর দিকে।

ওর বিধ্বস্ত দেহটার কাছে গিয়ে বসলাম। ওকে জোরে জোরে ডাকলাম কয়েকবার। ক্লান্ত আধবোজা চোখে আমার দিকে তাকালো নকশী। আমি আমার কোলে ওর মাথাটা রেখে ওকে শুইয়ে রাখলাম। একবার নিচে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও এতটাই দুর্বল যে উঠতেই পারলো না।

আধবোজা চোখেই আমার দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে ক্ষীণ স্বরে নকশীর ধন্যবাদটা প্রচন্ড বাতাসের শো শো শব্দের মাঝেও আমার কানে ঠিকই পৌঁছালো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম নকশীর দুর্বলতাটা কাটিয়ে উঠতে। যখন ও একটু শক্তি ফিরে পেলো। তখন ওকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম। একটু চেষ্টা করে দাঁড়াতে সক্ষম হলো ও।

কিন্তু হাঁটতে না পারায় রেলিঙয়ে ভল করে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, অবশেষে তুমি আমাকে বাঁচিয়েছো। আমি কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না। ওর দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলাম। মনে পড়লো মালাটা পড়ানোর আগের মুহুর্তের কথা।

আশা করলাম নকশীর ঐসব কথা এখন আর মনে নেই। কিন্তু ওর ঠিকই মনে ছিল। ও আমার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। বলল, আমাকে ভয়াবহ সেই জীবন থেকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। আমি এবারো কিছু বলতে পারলাম না।

বুঝতে পারছি নকশী এরপর কোন বিষয়টা তুলবে। ও ঠিক সেই বিষয়টাই তুললো। "আমি তোমার কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। " আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। আগের বার ও যেমন করেছিল, এবার আমিও ঠিক তেমনই করলাম।

এক ঝটকায় ওকে বাহুর মধ্যে এনে ওর প্রাণবন্ত ঠোঁটদুটোর সঙ্গে আমার ঠোঁট মিলালাম। আর ঠিক তখনই ঝড়টা এলো। আকাশ থেকে শুরু হলো প্রবল বর্ষণ। একটু আগে এই ঝড়টাকে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন কেয়ার করি না।

যত খুশি ঝড় হোক। আই ডোন্ট কেয়ার। ২. সেদিন রাতে আন্টি আমাকে বারবার ধন্যবাদ দিলেন। আমি যতবারই তাকে ধন্যবাদ দিতে না করলাম, ততবারই তিনি ধন্যবাদ দিলেন। তার মেয়েকে সৃষ্টিকর্তা আমার মাধ্যমে ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বার কবল থেকে বাঁচিয়েছেন।

ধন্যবাদ দিতে হয় তো স্রষ্টাকে দিন। আমি তো মাধ্যমমাত্র। কিন্তু কে শোনে কার কথা। রাতে খাবারের টেবিলে। আজ বহুদিন পর নকশীদের বাসায় ফিরে এসেছে আগের সেই আমেজ।

নকশী হয়ে উঠেছে আগের মত প্রাণবন্ত। কিন্তু আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি সুন্দরী। অনেকদিন পর শিহাব ভাইয়া, আন্টির সঙ্গে মন খুলে কথা বললো নকশী। ওর মনটা এখন আগের মত চঞ্চল। রাতে খাবারের পর নকশীর বাসা থেকে চলে আসলাম।

অনেকদিন পর আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। রাতে ঘুম ভাল হল। এভাবে দিন কাটতে থাকলো আমাদের। আমি আবার ফিরে গেলাম আমার সাধারণ স্বাভাবিক জীবনে। আগের মত।

শুধু আমার জীবনের সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন এক অধ্যায়, নতুন এক জীবন, নকশী। ৩. আমাদের এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড হৈ চৈ চলছে। মাত্র ছয়দিনের ব্যবধানে চারজন লোক মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুগুলো অস্বাভাবিক। সবারই ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং সবারই মৃত্যু হয়েছে গভীর রাতের কোন এক সময়।

পুলিশ বা ডিটেকটিভ ফোর্স কেউ-ই ঘটনার কোন কূল কিনারা করতে পারছে না। জোঁকের মত সংবাদকর্মীরা পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছে সূত্রের খোঁজে আর প্রতিনিয়ত তারা পুলিশের বড় অফিসারদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। আঘাতগুলো ভ্যাম্পায়ারের।

কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছি না। শহরের মধ্যে ভ্যাম্পায়ার আসবে কোত্থেকে? নকশীর কথা মনে হলো একবার। কিন্তু নাহ। ওর বাসা অনেক দূরে। আর তাছাড়া ও সম্পূর্ণ সুস্থ বলেই আমার বিশ্বাস।

আবার ভাবলাম নকশীর মত আমাদের এলাকায় বসবাসরত অন্য কেউ নয় তো, যে নকশীর মত একই ঘটনার শিকার। কিন্তু না, বড় বেশি কাকতালীয় হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের মত আমিও ভেবে কোন কূল কিনারা করতে পারলাম না। শেষে ভ্যাম্পায়ারের আশঙ্কাটা বাদ দিলাম। আর দশজনের মত ভাবতে শুরু করলাম শহরে আশ্চর্যজনক কোন প্রাণী হানা দিচ্ছে।

গভীর রাতে কোন জংলা থেকে উঠে আসে এই প্রাণী। রাতে মানুষের উপর হামলা করে। সকাল হবার আগেই আবার লুকিয়ে পড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে। পুলিশের ধারণা এটা। হাস্যকর বটে, তবে এ ছাড়া আর কিছু ভাবার নেই।

নকশীর সঙ্গে পরেরবার যখন দেখা হলো। তখন ওকে আমি বিষয়টা খুলে বললাম। ও চিন্তিত হয়ে পড়লো। যতটা না বিষয়টা নিয়ে, তারচেয়ে বেশি আমাকে নিয়ে। বলল, তোমরা ঐ এলাকা ছেড়ে চলে আসো।

ওখানে আর থাকার দরকার নেই। কখন কি হয়ে যায়। কিন্তু আমি বললাম, এটা সম্ভব না। কোনভাবেই যখন আমাকে রাজি করাতে পারলো না। তখন নকশী বলল, ঠিক আছে।

থাকলে থাকো। কিন্তু প্লিজ রাতে বের হয়ো না। খুব বিপজ্জনক এলাকা ওটা। অতি জরুরি কাজ পড়লেও রাতে ভুলেও যেন না বের হও। আমি বললাম, আচ্ছা।

ও জিজ্ঞেস করল: আর খবর কী? আর কোন খবর নেই। এ বিষয়টাই ভাবিয়ে তুলেছে আমাকে। কী হতে পারে? কিছু আন্দাজ করতে পারো? নাহ। আন্দাজ করতে পারছি না কী হতে পারে সেটা। তবে কোন প্রাণী নয়, এটা আমার ধারণা।

পুলিশ একটা কিছু বলে বাঁচতে চাইছে। মূল ঘটনা অন্যকিছু্। একমত হলাম। তারপর ও আর আমি পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। আমি একমুহুর্তের জন্যও বিষয়টা মাথা থেকে বাদ দিতে পারছি না।

নকশী আমার মনকে অন্যদিকে সরানোর জন্য বলল: তুমি এত চিন্তা করছ কেন? চিন্তা করছই যখন, বাসা ছেড়ে অন্যদিকে চলে যাও। আমি বললাম, নিজেকে নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি কী হতে পারে সেটা। ধ্যাৎ! বাদ দাও ওটা। কিছুক্ষণ চুপ করে রইল নকশী।

তারপর আমার দিকে সরাসরি তাকাল। তোমার ঠোঁটগুলো শুকিয়ে আছে কেন? কিছু খাওনি নাকি? আমি আমার ঠোঁটে হাত দিলাম। খেয়েছি তো। তাহলে ঠোঁট শুকনো কেন? দাঁড়াও, আমি ভিজিয়ে দিচ্ছি। এই বলে নকশী সোজা আমার একেবারে কাছে এসে দাঁড়ালো।

আমার ঠোঁটে গভীরভাবে একটা চুমু খেলো। আমি কিছু বললাম না। ও সত্যিই আমার ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়েছে! ৪. একটা রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রিকশা চলছে ধীর গতিতে। আমি ভাবছি নকশীর কথা।

ও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বাসায় গিয়ে ওকে ফোন করে টেনশন করতে নিষেধ করতে হবে। অবশ্য তাতে কোন লাভ হবে না। তবুও, ও বেশি দুশ্চিন্তা করলে ওর শরীর খারাপ হয়ে যায়। এমনিতেই ভ্যাম্পায়ারের এক বিশাল ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে।

বাসার সামনে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম। ভাড়া দিয়ে রিকশা বিদায় করে বাসার বারান্দায় উঠে দেখলাম দরজা খোলা। নতুন একজোড়া জুতা দেখলাম বারান্দায়। মেহমান আছে বোধহয় ঘরে। আমি ঘরে ঢুকতে যাবো, এমন সময় কানে আসলো আম্মুর কিছু কথা।

যা আমার হৃদস্পন্দনকে আবারো থামিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল। আম্মু আগত মেহমানকে বলছে: সুমন বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে কোথায় যেন যায়। যাবার সময় আমি প্রত্যেকদিনই টের পাই। অনেকটা ঘোরের মধ্যে থাকে ও। গভীর রাতে বের হয়, আর যখন ফিরে আসে, তখন ওর শ্বাস প্রশ্বাস থাকে ঘন।

কেমন যেন উদভ্রান্ত। বলেন ভাবী, আমাদের এলাকার অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তার উপর যদি কেউ টের পেয়ে যায় সুমন রাতে বাইরে যায়, তাহলে সবার সন্দেহ সুমনের উপর পড়বে না? আর শুনতে পারলাম না। মাথাটা কেমন যেন মুহুর্তের মধ্যেই শূন্য হয়ে গেল। ভ্যাম্পায়ার যাকে একবার আঘাত করবে, সেও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে।

এই সত্যিটা টের পেলাম। বুঝতে পারলাম নকশীর ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বা কেন আমাকে কখনো আক্রমণ করেনি। একই সঙ্গে অনুভব করলাম এই ভয়ঙ্কর সত্যিটা: নকশীকে বাঁচানোর দায়িত্ব কাঁধ থেকে নেমে যাবার পরই নকশীর ভ্যাম্পায়ারত্বের ভয়ঙ্কর দায়িত্বটা আমার উপর অর্পিত হয়েছে। [সমাপ্ত] সবার কাছে পুরো গল্প নিয়ে মতামত আহবান করছি। গল্পটি উৎসর্গ করা হলো আফরোজা মিলি (আমার প্রিয় বড় বোন) কে - যে সর্বদা ভুতের ভয়ে কম্পমান।

লেখকের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারেন গল্প সংক্রান্ত মতামত বা অনুভূতি জানাতেঃ ধন্যবাদ।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.