আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব-৪

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব-৪ Click This Link রায়হান খ্রিস্টান ট্র্যাডিশন অনুযায়ী মাতা মেরীর কোন স্বামী ছিল না। ফলে তাঁর সন্তান তথা যীশুখ্রিস্টের প্রসবের খবর শুনে ইহুদীরা তাঁকে অসতী নারী বলে অপবাদ ও ভর্ত্‌সনা শুরু করে দেয়, যেহেতু তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুরুষ ছাড়া একজন নারীর পক্ষে সন্তান ধারণ করা অসম্ভব। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা যেহেতু মাতা মেরীকে সতী নারী হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু তাদের পক্ষে ইহুদীদের অপবাদকে মেনে নেওয়াও অসম্ভব। ফলে তারা (পরবর্তীতে) যেটা আবিষ্কার করল সেটা হচ্ছে : (১) পুরুষ ছাড়া একজন নারীর পক্ষে সন্তান ধারণ করা অসম্ভব; (২) মাতা মেরীর কোন পার্থিব স্বামী নাই এবং তিনি একজন সতী নারী; (৩) অতএব যীশুখ্রিস্টের পিতা হচ্ছেন স্বয়ং গড! আর এ কারণেই নিউ টেস্টামেন্টে যীশুখ্রিস্টকে গডের জন্মদাতা পুত্র (Begotten son of God) বলা হয়েছে (John 3:16)। আর গডের জন্মদাতা পুত্র লিখা থাকার কারণে যীশুখ্রিস্টকেও গড হিসেবে বিশ্বাস করা হয়।

তাদের যুক্তি হচ্ছে : (১) যীশুখ্রিস্টের যেহেতু পার্থিব কোন পিতা নেই সেহেতু তাঁর পিতা হচ্ছেন স্বয়ং গড; (২) মানুষের সন্তান যেমন মানুষ হয় … পশু-পাখির সন্তান যেমন পশু-পাখি হয় … মাছের সন্তান যেমন মাছ হয় … গডের সন্তানও তেমনি গড হতে হবে! কিন্তু গডের সন্তান আবার মানুষ তথা যীশুখ্রিস্ট! বিশ্বাস না হলে নীচের ছবিতে দেখুন। তাহলে তাদেরই যুক্তি অনুযায়ী তাদের গডও একজন মানুষ হওয়ার কথা! Figure 1: Jesus Christ Figure 2: Richard Dawkins আচ্ছা পাঠক, ছবিতে যীশুখ্রিস্টকে দেখে ক্ষণিকের জন্যও কি কোন যুক্তিবাদী মানুষের মনে হতে পারে যে তিনি এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর? অথচ খ্রিস্টানরা কিন্তু ঠিক তা-ই বিশ্বাস করে! নিউটন, আইনস্টাইন, বার্টান্ড রাসেল, চার্লস ডারউইন, রিচার্ড ডকিন্স, এবং নাসা ও ন্যাশনাল আকাডেমি অফ সায়েন্স এর বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই অসহায় মানুষটাকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর হিসেবে বিশ্বাস করবে বলুন! ডাজ ইট মেক এনি সেন্স এয়াট অল! আর এ জন্যই মনে হয় অনেকে অক্সফোর্ড প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্সকে ‘গড’ হিসেবে বিশ্বাস করা শুরু করেছে! ইট মেকস্‌ মোর সেন্স, কী বলেন পাঠক! বিশ্বাস না হলে ছবিতে তুলনা করেই দেখুন না! মজার বিষয় হচ্ছে, যীশুখ্রিস্ট আসলে গড নাকি গডের পুত্র সেটা খ্রিস্টানরা কোনভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে না। কারণ তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাদার, সান, ও হলিঘোষ্ট একই সত্তা; তিনজন আলাদা সত্তা নয়! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যীশুখ্রিস্ট একই সাথে মানুষ ও এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর! একই সাথে পিতা ও পুত্র! একই সাথে মাতা মেরীর স্বামী ও পুত্র! এই পাজলের যৌক্তিক জবাব কারো পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয় (Because it doesn’t mean anything at all)। তাছাড়া তাদের যুক্তি অনুযায়ী কারো পিতা না থাকা মানেই সে যদি গড অথবা গডের পুত্র হয় তাহলে প্রথম সৃষ্ট মানুষ বা জীবও গড বা গডের পুত্র হওয়ার কথা, যেহেতু প্রথম সৃষ্ট জীবের এমনকি পিতা-মাতা কেহই ছিল না। তাহলে প্রথম সৃষ্ট মানুষ তথা আদমকে তারা গড বা গডের পুত্র হিসেবে ওয়ার্শিপ করে না কেন? এই প্রশ্নেরও যৌক্তিক কোন উত্তর তারা দিতে পারে না।

মনুষ্য সৃষ্ট গড হলে যা হয়! যাহোক, তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ইহুদীরা অজ্ঞতাবশত মাতা মেরীকে অসতী নারী বলে অপবাদ দিয়ে এক এক্সট্রিমে চলে গিয়েছিল। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা আবার ইহুদীদের অপবাদকে ঠেকাতে গিয়ে চরম অজ্ঞতাবশত এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরকে মাতা মেরীর স্বামী তথা যীশুখ্রিস্টের জন্মদাতা পিতা বানিয়ে দিয়ে আরেক (পারভার্টেড) এক্সট্রিমে চলে গিয়েছিল। অথচ বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে নিম্ন শ্রেণীর কিছু প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন যারা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই ডিম দিয়েছে। পাসাপাসি ক্লোনিং তো আছেই। বর্তমান যুগে পুরুষের শুক্রাণু ছাড়াই নারীরা সন্তান ধারণ করতে পারে।

অতএব নিছক অজ্ঞতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনগ্রসরতার কারণেই ইহুদী ও খ্রিস্টানরা চরম এক্সট্রিমে চলে গিয়েছিল এবং এখন পর্যন্তও তারা সেই বিশ্বাস-ই ধারণ করে আছে! আর এ জন্যই কোরানে তাদেরকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে : "O People of the Book, do not transgress the limits of your religion, and do not say about God except the truth. The Messiah, Jesus, the son of Mary, was a messenger of God, and His word that He had sent to Mary, and a revelation from Him. Therefore, you shall believe in God and His messengers. You shall not say, "Trinity." You shall refrain from this for your own good. God is only one God. Be He glorified; He is much too glorious to have a son. To Him belongs everything in the heavens and everything on earth. God suffices as Lord and Master." (Quran 4:171) এমনকি ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে মাতা মেরী ও যীশুখ্রিস্টকে অত্যন্ত আজে-বাজে ভাষায় গালিগালাজ ও অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পলিটিক্যাল কারণে এগুলোকে চেপে যেয়ে কোরান-হাদিসের মধ্যে (টেররিষ্ট ও ইন্ট্যলারান্ট) ইহুদী-খ্রিস্টানদের সম্পর্কে কী লিখা আছে না লিখা আছে সেগুলো উদ্ঘাটন করতে অনেকেই ব্যস্ত (৫:৫৭-৬১, ৬০:৮-৯)! যাহোক, ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে জাকির নায়েকের ডিবেট মনোযোগ দিয়ে শুনলে বাইবেল সম্পর্কে সম্যক একটা ধারণা পাওয়া যাবে। পাসাপাসি আরো অনেক ডিবেট তো আছেই। সেই ডিবেটে ড. ক্যাম্পবেলের মত একজন প্রমিনেন্ট স্কলারও বাইবেল থেকে উল্লেখ করার মত তেমন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। (কোরানকে ডিসক্রেডিট করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য ধর্মের কেহ বাইবেলের ‘স্বপক্ষে’ কী বললো না বললো তাতে নিশ্চয় কেহ পাত্তা দেবে না।

) এমনকি বাইবেলের উপর উত্থাপিত জাকির নায়েকের অভিযোগের জবাবও উনি দিতে পারেননি। জবাব দেওয়া আসলে সম্ভবও নয়। কিন্তু একজন বাইবেলে বিশ্বাসী ও বড় মাপের স্কলার হিসেবে এবং দর্শক-শ্রোতাদেরকে হতাস না করার জন্য উনি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বেশী কিছু লিখে সময় অপচয় না করাই উত্তম। কারণ তারা নিজেরাই এ বিষয়ে অবগত।

তাছাড়া প্রথম পর্বে অত্যন্ত পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে : প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অথার মিলে শত শত বছর ধরে বাইবেল লিখা হয়েছে। যুক্তির খ্যাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয় যে বাইবেলে সত্যি সত্যি গোটা চার-পাঁচেক বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে তথাপি এই গোটা চার-পাঁচেক বৈজ্ঞানিক তথ্যকে যদি চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অথারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে প্রত্যেকের ভাগে প্রায় ০.১ টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে! দশটি বৈজ্ঞানিক তথ্য ধরে নিলে প্রত্যেক অথারের ভাগে প্রায় ০.২ টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে! পঁচিশটি বৈজ্ঞানিক তথ্য ধরে নিলে প্রত্যেক অথারের ভাগে প্রায় ০.৫ টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে! পঞ্চাশটি বৈজ্ঞানিক তথ্য ধরে নিলেই কেবল প্রত্যেক অথারের ভাগে ১ টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে! ওহ্‌ মাই! এও বলা হয়েছিল যে, একটি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে শত শত বা এমনকি হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক তথ্য কোনভাবেই একজন মানুষকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর বা ক্রিয়েটরের (জন্মদাতা) পুত্র প্রমাণ করে না। ফলে ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য’ এই ধরণের বিশ্বাসের স্বপক্ষে কোন যুক্তিই বহন করে না। এর পরও এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কারো মাথায় না ঢুকলে তার ব্রেইনসেল পরিবর্তন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না। (চলবে …)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.